বিপ্লবী চলচ্চিত্রঃ ‘Machuca/মাচুকা’
Posted: January 13, 2016 Filed under: বিপ্লবী চলচ্চিত্র, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: চলচ্চিত্র, machuca Leave a comment‘মাচুকা/Machuca‘ একটা চিলিয়ান ছবি।
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত চিলির সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট সালভেদর আলেন্দের বিরূদ্ধে ১৯৭৩ সালের শেষদিকে মার্কিন সমর্থিত সমাজের ধনিক শ্রেনীর পৃষ্টপোষকতায় বুর্জোয়া ধ্যানধারী সামরিক নেতা আগস্টো পিনোশের নেতৃত্বে যে মিলিটারী ক্যূ ঘটেছিল তারই পটভুমিকায় নির্মিত এই ছবি। ছবির কাহিনী একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় গড়ে উঠলেও ‘রাজনীতি’ বা ‘সমাজনীতি’ নয়, ছবির মূখ্য উপাদান হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থান থেকে উঠে আসা তিন কিশোর-কিশোরীর মধ্যেকার বন্ধুত্ব। অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়, নীতিবান এবং আপোষহীন চরিত্রাধিকারী ফাদার ম্যাকেনরো পরিচালিত প্রধানত এলিট শ্রেণীর বাচ্চাদের হাইস্কুলে পড়তে আসে গরীব শ্রেণীর পেদ্রো মাচুকা এবং আরো গুটিকয় ছেলে। কিন্তু শ্রেণী বৈষম্যের বাস্তবতায় অভিজাতদের কাছে ওরা প্রত্যকেই একদিকে যেমন হয় লাঞ্ছিত, নির্যাতিত অন্যদিকে নিজেরাও ভোগে আত্মহীনমন্যতায়। এর মাঝেও বস্তিবাসী মাচুকার সাথে ক্রমেই আশ্চর্যরকম বন্ধুত্ব গড়ে উঠে ধনী পরিবারের অন্তর্মূখী চরিত্রের গনযালো’র। সাথে যোগ দেয় মাচুকার প্রতিবেশী সমবয়সী কিশোরী সিলভানা। এভাবে মাচুকা-গনযালো দুই বন্ধু একে অন্যের চোখে নিজেদের থেকে ভিন্ন এক সমাজ, ভিন্ন এক জীবনধারা দেখতে থাকে আর তাদের মাঝখানে ঠাই হয়ে থাকে সিলভানার কোমল-কঠোর সাহচর্য। কিন্তু সবকিছুই পাল্টে যায় সময়ের সাথে, রাজনৈতিক ঘটনাচক্রে, সামাজিক বাস্তবতায়। সমাজতন্ত্রী আর বুর্জোয়াদের সংঘাতে মিলিটারী জায়গা দখল করে, প্রতিবাদীরা হয় নির্যাতিত। একদিকে সমাজে বাড়ে অস্থিরতা, অন্যদিকে সম্পর্কে জন্মে অবিশ্বাস। একপক্ষের যা জয়, অন্যপক্ষের জন্য তা পরাজয় মনে হলেও কঠিন সত্যটা আসলে হলো এই যে- সমাজে ধনী-গরীব, পাওয়া আর না-পাওয়াদের যে ব্যবধান আছে সেটা সবচে বেশী প্রকট হয়ে উঠে তখনি। তাই প্রতিবাদে সিলভানার হয় মৃত্যু, মাচুকার রক্তে বয় ঘৃণা আর গনযালো শেষ পর্যন্ত আড়াল খোজে তার অভিজাত পরিচয়ে। ক্রমবর্ধনশীল সামাজিক বৈষম্যের উৎকট বাস্তবতার মাঝেও ফাদার ম্যাকেনরো যে শ্রেণী-সংহতির উদাহরণ গড়তে চেয়েছিলেন সেটা তাই অধরাই থেকে যায়। রাজনীতি যুগে যুগে এভাবেই কলুষিত করে আসছে মানুষের নিষ্পাপতা আর কোমলতাকে।