এন্ট্রান্স পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা ব্যবসায়ীদের স্বার্থবাহী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে USDF এর বিবৃতি
Posted: May 10, 2016 Filed under: অন্যান্য, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: ইউনাইটেড স্টুডেন্টস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট, United Students Democratic Front-USDF, usdf Leave a commentসারা দেশে একক মেডিকেল এন্ট্রান্স পরীক্ষাঃ শিক্ষা ব্যবসায়ীদের স্বার্থবাহী এই পদক্ষেপ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে-
দু’বছর ধরে মামলা চলার পর অবশেষে সারা দেশে একক মেডিকেল এন্ট্রান্স পরিক্ষার পক্ষে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ এই বছর থেকে আর রাজ্য ভিত্তিক পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না ছাত্রছাত্রীরা। এতদিন অব্দি রাজ্যভিত্তিক মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা থাকার ফলে রাজ্যের এক বড়ো সংখ্যক ছাত্রছাত্রী মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হও য়ার কিছুটা হলেও সুযোগ পেত। কিন্তু বর্তমানে প্রস্তাবিত এই কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় মূলত CBSE বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্নপত্র হওয়ার ফলে বিভিন্ন রাজ্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়বে, এবং বাধ্য হবে আকাশ-বাতাস-পাথফাইন্ডার প্রভৃতি শিক্ষা ব্যবসায়ী সংস্থা গুলির দারস্থ হতে; যেখানে হাজার হাজার টাকায় শিক্ষার বেচা কেনা চলে। সুতরাং এক বড়ো অংশের ছাত্রছাত্রী, যারা মূলত শ্রমজীবী পরিবার থেকে আসে তাদের সামনে মেডিকেল পড়ার কোন সুযোগই আর অবশিষ্ট থাকছে না, এবং মেডিকেল ক্ষেত্রে একচেটিয়া ভাবে উচ্চবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের এই অগণতান্ত্রিক রায় শুধু যে এক বড়ো অংশের ছাত্রছাত্রীদের মেডিকেল পড়া থেকে বঞ্চিত করবে তাই নয়, এই রায় আরও বেশি পরিমানে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসায় মদত দেবে, শিক্ষার বেসরকারিকরনের নীতিকে আরও পুষ্ট করবে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী।
আমরা, ইউনাইটেড স্টুডেন্টস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট, সুপ্রিম কোর্টের এই অগনতান্ত্রিক রায়ের তীব্র বিরোধিতা করছি, এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে এই রায় অবিলম্বে প্রত্যাহার করে পুনরায় রাজ্যভিত্তিক মেডিকেল এন্ট্রান্স পরীক্ষা চালু করার দাবী জানাচ্ছি।
সৌম্য মণ্ডল
সাধারণ সম্পাদক
ইউনাইটেড স্টুডেন্টস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট
তারিখ: 10/05/2016
তুরস্কে মাওবাদী-সেনাবাহিনী সংঘর্ষঃ শহীদ ২ মাওবাদী, খতম ৩ সেনা
Posted: May 10, 2016 Filed under: গণযুদ্ধের সংবাদ, তুরস্ক, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: TKP / ML – TIKKO Leave a commentঅনূদিতঃ
তুরস্ক ও উত্তর কুর্দিস্তান: গত ৬ই মে সন্ধ্যায় শুরু হয়ে পরেরদিন পর্যন্ত তুরস্কের দারসিম অঞ্চলে মাওবাদী TKP / ML (Communist Party of Turkey / Marxist-Leninist) এর সাথে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে ২ মাওবাদী শহীদ ও ৩ সেনা খতম হয়েছে। মাওবাদী দুই যোদ্ধার লাশ Elazig শহরের ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
ঐ দিন রাতেই ফ্যাসিস্ট তুর্কি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী দারসিমের ওকূলার গ্রামে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে স্থল ও বিমান অভিযান শুরু করে।
উল্লেখ্য যে, দারসিম অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সহিংস আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায়, মাওবাদী Tikko গেরিলারা পুলিশের বিশেষ বাহিনীকে বহনকারী একটি বাস গত সপ্তাহে ধ্বংস করে দেয়। ইতিপূর্বে সিজরে, নুসাইবিন, সিলোপী’র মত এই এলাকায়ও এই সপ্তাহে AKP সরকার কারফিউ ঘোষণা করার প্রতিবাদে মাওবাদীরা এই সশস্ত্র অ্যাকশনে নামে।
সূত্রঃ http://ozgurgelecek.org/manset-haberler/20284-yenilendi-geyiksuyunda-operasyon-suerueyor-2-tikko-gerillas-ehit-duetue.html
একচেটিয়া তথা লগ্নিপুঁজির লক্ষ্যে পুঁজিবাদী চীন অগ্রসর হয়ে চলেছে
Posted: May 10, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: চীন, পুঁজিবাদ Leave a commentএকচেটিয়া তথা লগ্নিপুঁজির লক্ষ্যে পুঁজিবাদী চীন অগ্রসর হয়ে চলেছে
বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীন তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক শক্তিকে বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করছে। চীনে আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পুঁজির কেন্দ্রিকরণ ও কেন্দ্রিভবনের মধ্যদিয়ে একচেটিয়া পুঁজি এবং ব্যাংক পুঁজি ও শিল্প পুঁজি একীভূতকরণের মধ্যদিয়ে লগ্নিপুঁজি অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে চীনের আলীবাবা সামনে রয়েছে। যার সম্পদের পরিমাণ ২৪.৮ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৮০ কোটি) ডলার। চীনের আলীবাবা তার পুঁজির শক্তি বৃদ্ধি করতে অন্যান্য ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ করা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিট শেয়ার বাজার, যুক্তরাজ্যের লন্ডন শেয়ার বাজারসহ বিভিন্ন শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হয়ে চলেছে।
গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল কর্পোরেশন বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম টায়ার কোম্পানি ইতালির পিয়েরেলিকে ৭.১ বিলিয়ন (৭১০ কোটি) ইউরো দিয়ে ক্রয় করে। তাছাড়া চীন ইতালিতে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ইউরো মূল্যের সম্পদ নিয়ন্ত্রণে আনে। ২০১৪ সালে চীন ইউরোপে ২২ বিলিয়ন (২ হাজার ২০০ কোটি) ইউরো বিনিয়োগ করে। ২০১৫ সালে এ পর্যন্ত ইউরোপে চীনের বিনিয়োগ ১১.৯ বিলিয়ন (১ হাজার ১৯০ কোটি) ডলার। ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডে চীনের পুঁজির বিনিয়োগ বেশি হচ্ছে। ইউরো জোনের বাইরে যুক্তরাজ্যে চীনা পুঁজির বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিনিয়োগ ছিল ১৫.৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৫৬০ কোটি) ডলার যা ২০১৪ সালে দাঁড়ায় ১৭ বিলিয়ন (১ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ ফিল্ড নামক শুকর মাংস কোম্পানি চীন ৪.৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার দিয়ে কিনে নেয়।
চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৪ সালে ২৪ বছরে সর্বনিম্ন ৭.৪% হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১ম কোয়ার্টারে ২০০৯ সালের পর সবনিম্ন ৭% হয়। চীনের জিডিপির পরিমাণ ২০১৪ সালে ১০.৩৮০৪ ট্রিলিয়ন (১০ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি) ডলার। চীনের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ৯.২%, শিল্প খাতে ৪২.৬% এবং সেবা খাতে ৪৮.২%। চীনের অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য সরকার ১১ মে সুদের হার ০.২৫% কমালে তা দাঁড়ায় ৫.১%। গত ৬ মাসে এটা হচ্ছে তৃতীয় দফা সুদের হার হ্রাস। চীনে হাউজিং সেক্টরে/আবাসিক খাতে অতি উৎপাদন সঙ্কটের লক্ষণসমূহের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। ২০১৫ সালের ১ম কোয়ার্টারে স্টিল উৎপাদন ১.৭%, শিল্পক্ষেত্রে মুনাফা ২.৭%, এপ্রিল মাসে বাণিজ্যে ১০.৯% কমে গেছে, চীনের শেয়ার বাজারে দরপতন হলে সরকার সুদের হার হ্রাস করে শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করে। চীনের অর্থনীতিতে সামাজিক অর্থায়নে ২০১৩ সাল থেকে ১২০.৪ বিলিয়ন (১২ হাজার ৪০ কোটি) ডলার কমিয়ে ২০১৪ সালে ২.৬৮ ট্রিলিয়ন (২ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি) ডলার করা হয়। চীনে সরকারি বা অন্যান্য পন্থায় কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার যে ঋণ প্রদান করা হয় তা আদায় হওয়া নিয়ে সংশয় বেড়ে চলেছে। ২০১৪ সালে চীনের ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১.৫৮ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ ৫৮ হাজার কোটি) ডলার ঋণ প্রদান করে। এ সময়ে চীনের অর্থনীতিতে নগদ ও অনগদ তহবিল ১২.২ ট্রিলিয়ন (১২ লক্ষ ২০ হাজার কোটি) ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০ ট্রিলিয়ন (২০ লক্ষ কোটি) ডলারে দাঁড়ায়।
চীন তার অর্থনীতির ম্যানুফ্যাকচারিং পর্যায় থেকে আর্থিক পর্যায়ে, নিম্ন প্রযুক্তি থেকে উচ্চ প্রযুক্তিতে উন্নীত করার লক্ষ্যে সাংহাই অর্থনৈতিক জোনের মত আরও ৩টি জোন প্রতিষ্ঠা করেছে। চীনের ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। চীনের গণকংগ্রেসে শতাধিক ধনকুবের (বিলিয়নারী) সদস্য রয়েছে। চীনের সবচেয়ে ধনী ১,২৭১ জনের মধ্যে ২০৩ জন গণকংগ্রেসের সদস্য। টেনসেন্ট-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সিইও পনি মাহুয়াতেং যার সম্পদ ১৭ বিলিয়ন (১ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার, জিয়াও মি’র প্রতিষ্ঠাতা লেই জুন-এর সম্পদের পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন (১ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার তারাও এই তালিকায় আছে। চীনের সবচেয়ে ধনী সংসদ সদস্যদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮৪ বিলিয়ন (১৮ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারেরও বেশি। চীনের সবচেয়ে ধনী সংসদ সদস্যের ২০৩ জনের সম্পদের মোট পরিমাণ ৪৬৩.৮ বিলিয়ন (৪৬ হাজার ৩৮০ কোটি) ডলার। চীনের রিয়েল স্টেট সেক্টরে স¤্রাট ওয়াং জিয়ানলিং-এর সম্পদ স্টক মার্কেটের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তার সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৮.১ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮১০ কোটি) ডলার। ফলে সে এশিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের ১১তম শীর্ষ ধনীতে পরিণত হয়।
২০১৫ সালের ১২ মে প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের ২ হাজার বৃহত্তম কোম্পানির যথাক্রমে মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬২ ট্রিলিয়ন (১৬২ লক্ষ কোটি) ডলার, বার্ষিক রাজস্ব ৩৯ ট্রিলিয়ন (৩৯ লক্ষ কোটি) ডলার, লাভ করে ৩ ট্রিলিয়ন (৩ লক্ষ কোটি) ডলার এবং বাজার মূল্য ৪৮ ট্রিলিয়ন (৪৮ লক্ষ কোটি) ডলার। ৬১টি দেশ ও অঞ্চলকে মূল্যায়ন করে এই ২ হাজার বৃহত্তম কোম্পানি নির্ধারণ করা হয়। এই তালিকায় প্রথম বারের মত চীনের বড় ৪টি ব্যাংক শীর্ষস্থানে রয়েছে। আইসিবিসি ব্যাংক পরপর ৩ বছর ১ম স্থান লাভ করে। এখন বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক হচ্ছে আইসিবিসি।
ক্রমিক কোম্পানির নাম বিক্রি (ডলার) মুনাফা (ডলার) সম্পদ (ডলার) বাজার মুল্য(ডলার)
১ম. ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড কমার্সিয়াল ব্যাংক অব চায়না ১৬৬.৮ বিলিয়ন ৪৪.৮ বিলিয়ন ৩.৩২২ ট্রিলিয়ন ২৭৮.৩ বিলিয়ন
২য়. কনস্ট্র্রাকসন ব্যাংক অব চায়না ১৩০.৫ ” ৩৭.০ ” ২.৬৯৯ ” ২১২.৯ ”
৩য়. এগ্রিকালচার ব্যাংক অব চায়না ১২৯.২ ” ২৯.১ ” ২.৫৭৫ ” ১৮৯.৯ ”
৪র্থ. ব্যাংক অব চায়না ১২০.৩ ” ২৭.৫ ” ২.৪৫৮ ” ১৯৯.১ ”
৮ম. পেট্রো চায়না ৩৩৩.৪ ” ১৭.৪ ” ৩৮৭.৭বিলিয়ন ৩৩৩.৬ ”
২০১৫ সালের ৩ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের ১৩তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়ান তার রিপোর্ট উপস্থিত করেন। ১৫ মার্চ তা গৃহীত হয়। এই গণকংগ্রেসে চীনের অর্থনীতি উত্তরণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিন ৪ সামগ্রিকতা প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মোটামুটি একটি সমৃদ্ধ সমাজ, সংস্কার, আইনের শাসন এবং পার্টির শৃঙ্খলা। চীন তার অর্থনৈতিক উত্তরণের লক্ষ্যে বিরাজমান বৈশ্বিক মন্দা ও আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বীয় লক্ষ্য অর্জনে ‘নিউ নরমাল’ নামে নতুন অর্থনৈতিক মতবাদ উপস্থিত করে। এই মতবাদের মধ্যে আলোচিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এই গণকংগ্রেসে বিগত বছরের ১৩০ বিলিয়ন (১৩ হাজার কোটি) ডলার প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে বৃদ্ধি করে চলতি বছরে ১৪৫ বিলিয়ন (১৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার প্রতিরক্ষা বাজেট নির্ধারণ করা হয়। প্রতিরক্ষা ব্যয়ের তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয় চীনের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ৪ গুণ। ৯ মার্চ চীন তার দ্বিতীয় বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের কাজ অগ্রসর করার বিষয়টি সমর্থন করে চীনের গণমুক্তি ফৌজ। এটা চীনের একমাত্র বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ লিয়াও লিং থেকে আধুনিক ও উন্নততর প্রযুক্তি সজ্জিত। চীনা নৌবাহিনীর ডিজেল ও পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের বহরকে শক্তিশালী করছে। ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক চীনের কাছ থেকে ৩.৪ বিলিয়ন (৩৪০ কোটি) ডলার মূল্যের দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা ক্রয় করতে অগ্রসর হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা মার্কিন কোম্পানি রেথিয়ন এবং ফ্রাঙ্কো-ইতালীয়া কোম্পানির দরপত্র গ্রহণ না করে চীনের ‘প্রিসেসন মেশিনারি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কর্পোরেশন’-এর দরপত্র গ্রহণ করে। তুরস্কে ন্যাটোর সামরিক ব্যবস্থার সাথে এটা সঙ্গতিপূর্ণ না হলেও এবং ন্যাটোর হুমকি প্রদান সত্ত্বেও তুরস্ক চীনের কাছ থেকে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে অগ্রসর হচ্ছে। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চ্যাং ওয়ানকুয়ান ৬ ফেব্রুয়ারি ২ দিনের থাইল্যান্ড সফর করেন। উভয়পক্ষ আগামী ৫ বছরের জন্য সামরিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চুক্তিবদ্ধ হয়। থাইল্যান্ডের নিরাপত্তা ও সামরিক প্রযুক্তি সহযোগিতা করতে; যৌথ সামরিক মহড়া বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়। সরাসরি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করলেও সকল পর্যায়ে সহযোগিতা করতে উভয় দেশ সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে থাইল্যান্ডের মৈত্রীর পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নকে দেখা হচ্ছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম মজুদ মুদ্রার তহবিল। চীন স্বীয় লক্ষ্য অর্জনে সামনে এনেছে ‘সিল্ক রুট’ও ‘একবিংশ শতাব্দীর মেরিটাইম সিল্ক রুট’ পরিকল্পনা। চীনা স্বপ্নকে তুলে ধরা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে চীন ব্রিকসের ‘নতুন উন্নয়ন ব্যাংক’ (NDB) প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াও এ সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে ‘এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক’(AIIB) প্রতিষ্ঠার তৎপরতা অগ্রসর করে। এর প্রাথমিক পুঁজি ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলার যার বড় অংশই চীন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রেক্ষিতে ৫৭টি দেশের প্রতিনিধিরা সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ৩ দিনব্যপী বৈঠকে ২৩ মে এই সংস্থার খসড়ায় একমত পোষণ করে যা জুন মাসে চূড়ান্ত করা হয়। এটা একক পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব, শক্তি ও অবস্থানের উপর আঘাত স্বরূপ। মার্কিন আপত্তি সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের মার্কিন মিত্র জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালিসহ ইউরোপের অনেক দেশ এতে যোগদান করে। নয়াঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী, পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী দেশ মিলে মোট ৫৭টি দেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার আবেদন করে। পুঁজি ও শক্তি অনুপাতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী শক্তি সম্পর্কের যে পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলছে এটা তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন। এটা পরস্পরের পরিপূরক, সম্পূরক ইত্যাদি বক্তব্য দেওয়া হলেও মার্কিন নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ ও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সামনে আসছে। তাছাড়া চীন ‘এক বেল্ট, এক রাস্তা’(One belt, one road) কর্মসূচিতে ৪০ বিলিয়ন (৪ হাজার কোটি) ডলারের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রেক্ষিতে চীন আরেকটি তহবিল গঠন করে ‘সাংহাই উন্নয়ন ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়। এভাবে চীন বিশ্বের অনেক দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার নয়াঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী দেশগুলোতে এবং এমন কি পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে তার পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি করে চলেছে।
১৯৬৯ সালে নির্দিষ্ট বিনিময় হারের ব্রিটেন উডস্ ব্যবস্থা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ায় আইএমএফ মজুদ মুদ্রার ঝুঁড়ি ব্যবস্থা চালু করে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের বৃহত্তম ক্রেতা চীন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছেই সবচেয়ে ঋণগ্রস্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর পরিমাণ ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে জাপানের স্থান থাকে দ্বিতীয়। চীন ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মজুদ হিসেবে ট্রেজারি বন্ড ধীরে ধীরে কমাতে থাকে। ১৭ মার্চ চীন ৫ম বারের মত ৫.২ বিলিয়ন (৫২০ কোটি) ডলারের বন্ড ছেড়ে দিলে ফেব্রুয়ারি’১৫ মাসের শেষে মার্কিন বন্ডের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১.২২৩৭ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ ২২ হাজার ৩৭০ কোটি) ডলার। অপরদিকে জাপান মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ক্রয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় জানুয়ারি মাসে ৭ বিলিয়ন ডলার ক্রয় করায় তা দাঁড়ায় ১.২২৪৪ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ ২২ হাজার ৪৪০ কোটি) ডলার। এভাবে জাপান মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে চীনকে ছাড়িয়ে গেল। অপরদিকে ৩য় বৃহত্তম মার্কিন বন্ডের ক্রেতা হিসেবে বেলজিয়াম ডিসেম্বর’১৪ থেকে ১৯.৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৯৬০ কোটি) ডলার মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করলে তার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১৫.৬ বিলিয়ন (৩১ হাজার ৫৬০ কোটি) ডলার। এ দিকে চীন সোনা ক্রয় বৃদ্ধি করে চলেছে। ইতিমধ্যে তা ৩ (তিন) হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে। যদিও সরকারিভাবে তা ১ হাজার ৭ টন বলে বলছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনা মুদ্রা রেন মিনবি বা ইউয়ানকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে চীন মূল্যবান ধাতু বিশেষ করে সোনার মজুদ বৃদ্ধি করে চলেছে। মার্কিন রেটিং সংস্থাগুলোর একচেটিয়া কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণকে মোকাবেলায় চীন-রাশিয়া ও ব্রিকস নিজস্ব রেটিং সংস্থা গড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে চীনের নিজস্ব রেটিং সংস্থা দ্যাগঙ্গ ক্রিয়াশীল রয়েছে। চীন মহাকাশে মার্কিন উপগ্রহ মোকাবেলায় পাল্টা সামর্থ ও অগ্রগতি ঘটাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট জ্যামারসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ভাবন করছে। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় করছে।
আফ্রিকায় চীনের বিনিয়োগ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। চীন, নাইজেরিয়া ও জিম্বাবুয়েতে ৫.৫ বিলিয়ন (৫৫০ কোটি) ডলারের রেল অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করছে। ২০১৫ সালের ১ম কোয়াটারে বিদেশে চীনের এফডিআই বিনিয়োগ ১১.৩% বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.৮৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৪৮৮ কোটি) ডলার দাঁড়ায়। এর ফলে ওডিআই দাঁড়ালো ৬৭২.১ বিলিয়ন (৬৭ হাজার ২১০ কোটি) ডলার। এই প্রথম চীন দেশের অভ্যন্তেের পুঁজি আসার তুলনায় বিদেশে চীনা পুঁজি বিনিয়োগ বেশি হল।
২২ মার্চ চীনের রাজধানী বেইজিং-এ ‘চীন উন্নয়ন ফোরামে’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে আইএমএফ-এর প্রধান ক্রিষ্টিন লাগাডে উপস্থিত থাকেন। সম্মেলনে তিনি চীনের অর্থনীতির ‘নিউ নরমাল’পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে কাঠামো সংস্কারসহ ৩টি করণীয় তুলে ধরেন।
প্রতি বছরের মত এবারেও ২৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত চীনের হাইনান প্রদেশে ‘বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া’(BAF) অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বিষয়বস্তু ছিল ‘সাধারণ স্বার্থের গোষ্ঠীর অভিমুখে’। এবারের সম্মেলনে সারা বিশ্ব থেকে ২ হাজারের বেশি রাজনৈতিক নেতা, বৃহৎ ব্যবসায়ী এবং প্রসিদ্ধ ও নামকরা গুণিজ্ঞানী জন উপস্থিত থাকেন। ‘বেল্ট-রোড’ এবং এআইআইবি শ্লোগানকে সামনে রেখে এবারের সম্মেলনে ‘চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য এলাকা’ (CAFTA), আসিয়ান+৩, আসিয়ান+৬ সমন্বিত করে আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গঠনে ‘আঞ্চলিক সামগ্রিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব’(RCEP) ইত্যাদিকে অগ্রসর করা হয়। চীন-আসিয়ান বাণিজ্য এ বছরের ৫০০ বিলিয়ন (৫০ হাজার কোটি) ডলারকে ২০২০ সালে ১ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ কোটি) ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়। বিশ্বব্যাপী ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ৩টি অর্থনৈতিক এলাকা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়া। পূর্ব এশিয়ার জিডিপি বিশ্ব জিডিপির ২৪.৫%। যা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে গেলেও উত্তর আমেরিকার চেয়ে কিছুটা কম। তবে পূর্ব এশিয়ার প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
৮-৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চীন-সিলাক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম বৈঠক চীনের রাজধানী বেজিং-এ অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট কোস্টরিকা, ইকোয়েডার, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ও বাহামার প্রধানমন্ত্রীসহ ল্যাটিন আমেরিকার ৩০টি দেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান। সভায় উভয়পক্ষ রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস, সহযোগিতা বিস্তৃত করা এবং ফোরামের উন্নয়ন অগ্রসর করতে সম্মত হয়। এইভাবে ‘ওয়ান+এন’বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক নেটওয়ার্কের নতুন অংশে পরিণত হলো এই প্লাটফর্ম। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য চীন-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, চীন-আফ্রিকা, চীন-আরব সহযোগিতা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সাথে সাথে মধ্য-এশিয়া ও রাশিয়াকে নিয়ে গঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থাকে অগ্রসর করে চলেছে চীন।
এ সময়ে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো চীন সফরকালে দু’দেশের মধ্যে জ্বালানি, শিল্প এবং সামাজিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে ২০ বিলিয়ন (২ হাজার কোটি) ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ‘অরিনকো হুগো শ্যাভেজ তেল বেল্ট’যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম তেলের মজুদ রয়েছে সেখানে চীন চুক্তি অনুযায়ী তার অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে। উভয় দেশের মধ্যে ২৫৬টি কর্মসূচিতে ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় হবে। চীন ভেনিজুয়েলায় নতুন স্কুল, অ্যাপার্টমেন্ট, জলবিদ্যুৎ ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যোগাযোগ, প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে। চীন হচ্ছে ভেনিজুয়েলার প্রধান বিনিয়োগকারী। যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন ২য় বৃহত্তম তেল ক্রয়কারী দেশ। এ সব তৎপরতার মধ্যদিয়ে চীন তার লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করছে।
লেখকঃ -মাহবুব উল্লাহ (খাদেম)
সূত্রঃ
পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি(এমএল-জনযুদ্ধ) এর সম্পাদক আব্দুর রশিদ মালিথা ও রিক্তা হত্যাকাণ্ড নিয়ে রিপোর্ট
Posted: May 10, 2016 Filed under: গণযুদ্ধের সংবাদ, বাংলাদেশ, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: তপন মালিথা, দাদা তপন, পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি Leave a commentপূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি(এমএল-জনযুদ্ধ) এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে তপন ওরফে দাদা তপন(৪৫)। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি(এমএল) থেকে বের হয়ে এসে ২০০৩ সালে দাদা তপন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ) নামে নতুন পার্টি গঠন করেন। ২০০৮ সালের ১৮ই জুন র্যাবের কথিত ক্রসফায়ারে জনযুদ্ধের নারী শাখার প্রধান রিক্তাসহ নিহত হন তিনি।
২০০৮ সালের ৮ই অগাস্টের প্রকাশিত সংবাদে বলা হচ্ছে তপন মালিথা এবং তার সঙ্গীনি রিক্তার মৃত্যু ক্রসফায়ার জনিত কোনো দুর্ঘটনা নয় বরং পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, এবং একই সময়ে সেখানে কুষ্ঠিয়ার পুলিশ সুপার যখন বলেন, মাঝে মাঝে একজন কুখ্যাত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ধরতে গিয়ে ১০ জন নিরীহ মানুষ খুন হয়ে যেতেই পারে তখন পুলিশকে মানুষের বন্ধু ভাববার কারণ খুঁজে পাই না। একই প্রতিবেদনে র্যাবের ক্যাপ্টেন বলেছে- আমাদের নিরীহ ১০ জনকে খুন করা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা খোলা ছিলো না, আমাদের যেকোনো মুল্য তপনকে হত্যা করতে হতো। তপনকে খুন করা হয় ১৮ই জুন , সেদিন র্যাবের ভাষ্য ছিলো, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রিক্তার বাসার দিকে যাওয়ার সময় অতর্কিতে তাদের উপরে হামলা চালায় রিক্তার বাসায় অবস্থান নেওয়া সন্ত্রাসীরা। পরে গোলাগুলি থামলে তারা উদ্ধার করে সেখানে তপন মালিথা মৃত- এবং তার শরীরে ৬টা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলো। একই সময়ে তার পাশে পড়ে ছিলো তার কথিত বান্ধবী রিক্তার লাশ- রিক্তার মাথা এবং পায়ে গুলি বিঁধেছিলো। একই ঘটনা নিয়ে তপনের ভাই আকাশের বক্তব্য হচ্ছে- তাকে রাত দুইটার সময় বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রিক্তার ওখানে, সেখানেই তপন অবস্থান করছিলো। র্যাব অফিসার প্রথমেই আকাশকে লাথি মেরে ফেলে দেন এবং তার পাঁজরের হাড় ভেঙে দেন, এরপর আহত আকাশকে নিয়ে তারা রিক্তার বাসায় যান, সেখানে তারা ঠান্ডা মাথায় তপনকে খুন করেন, এবং পরবর্তীতে রিক্তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয় এবং একটা গুলি করা হয় পায়ে। রিক্তা অবশ্য তপনের পরিচিত, এবং পরিচিতির কারণেই রিক্তাকে খুন হতে হয়, এমনি তে তার নামে কোনো থানায় কোনো মামলা নেই, তবে তার সবচেয়ে বড় অপরাধ তপন তার পরিচিত এবং তপনের মৃত্যু দিনে তপন তার সাথে অবস্থান করছিলো। যদিও র্যাব নিশ্চিত হয়ে জানাতে পারে নি রিক্তা তপনের বান্ধবী কিংবা স্ত্রী- তবে তারা নিশ্চিত হয়েই খুন করতে এসেছে। রিক্তার শরীরে আঘাতে আলামত খুঁজে পাওয়া গেছে সুরত হালের প্রতিবেদনে। রিক্তা মৃত্যুর আগে প্রতিরোধ করেছিলো, নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছিলো।
অধিকার রিপোর্ট–
ঢাকা, আগস্ট ০৭(bdnews24.com) – পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বরাত দিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর অনুসন্ধান বলছে, ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে চরমপন্থী নেতা আব্দুর রশিদ মালিথা (দাদা তপন), তার সঙ্গী নাছিমা আক্তার রিক্তা মারা যাননি; র্যাব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তাদের। বৃহস্পতিবার অধিকার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অভিযোগ সম্পর্কে র্যাবের অতিরিক্ত মহা পরিচালক কর্নেল গুলজার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে আমরা আগেই বক্তব্য দিয়েছি। তারা বন্দুকযুদ্ধের সময়েই নিহত হয়। এ সম্পর্কে তাই নতুন করে কিছু বলার নেই।” কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাড়াদি গ্রামে গত ১৮ জুন ভোররাতে গুলিতে নিহত হন চরমপন্থী সংগঠন জনযুদ্ধের শীর্ষ নেতা দাদা তপন (৪৮) ও তার সঙ্গী রিক্তা। র্যাব বিষয়টিকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত্যু দাবি করলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তপনের ভাই গোলাম হোসেন আকাশ ‘অধিকার’কে বলেন, “র্যাব সদস্যরা ১৮ জুন ভোররাতে বাড়ির ভিতরে ঢুকে তপনকে কাছ থেকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে। ওই বাড়িতে থাকা রিক্তাকেও একইভাবে মাথায় ও পায়ের পাতায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।” কুষ্টিয়ার মুখ্য বিচারবিভাগীয় হাকিম আদালতের হেফাজতে থাকা অবস্থায় আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জাফরের মাধ্যমে অধিকারের সঙ্গে কথা বলার কয়েকদিনের মাথায় ২৬ জুন আকাশও র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। আকাশ ‘অধিকার’কে জানান, ১৮ জুন রাত ২টার দিকে তিনি নিজের বাসার গেটে কড়া নাড়ার শব্দ পান। গেট খোলার পর র্যাব সদস্যরা তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে কোমরে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর বন্দুকের নল দিয়ে পাঁজরে আঘাত করে এবং উপুড় করে ফেলে বুট দিয়ে মাড়িয়ে তার বাম পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি-এমএল জনযুদ্ধের প্রতিষ্ঠার পর তপন অস্ত্র, গুলি ও রাজনৈতিক বইপত্র ভাইয়ের বাড়িতে রাখতেন বলে জানান ভাই আকাশ। ঘটনা সম্পর্কে আকাশের স্ত্রী আজমেরী ফেরদৌসী আঁখি ‘অধিকার’কে জানান, গভীর রাতে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর র্যাব সদস্যে বাড়ি ভরে যায়। তারা তার স্বামীকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আকাশ ঘরে থাকা দেড় হাজার গুলি, একটি পিস্তল, জনযুদ্ধের প্রায় পাঁচ হাজার মাসিক বুলেটিন ও রাজনৈতিক বইপত্র, একটি কম্পিউটার, ফ্যাক্স মেশিন ও প্রিন্টার বের করে দেন। ভোর ৪টার দিকে একদল র্যাব সদস্য আকাশকে নিয়ে তপনকে খুঁজতে বাইরে চলে যায় এবং অন্য একদল বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। তিনি জানান, সকাল ৭টার দিকে র্যাব সদস্যরা আবার তার স্বামীকে নিয়ে ফিরে আসে। র্যাবের পিটুনিতে আকাশের কপাল, বাহু মারাত্মকভাবে জখম ছিল এবং তার আঙ্গুল থেকে রক্ত ঝরছিল। আঁখি অভিযোগ করেন, আকাশ প্রস্রাব করতে চাইলে হাতকড়া পরা অবস্থায় তাকে টয়লেটে নেওয়ার পর দেখা যায় তার মুত্রনালী থেকে রক্ত ঝরছে। যন্ত্রণায় তিনি চিৎকার করছিলেন। আকাশ স্ত্রীকে জানান, র্যাব তপন ও রিক্তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। ঘরের সব মালামাল জব্দ করে সকাল ১১টার দিকে আকাশকে নিয়ে চলে যায় র্যাব। তপনের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত রিক্তার মা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আলেয়া বেগম (৪৫) জানান, তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট রিক্তা (১৮) দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর সংসারের হাল ধরেন। তিনি কুষ্টিয়া থেকে শাড়ি ও থ্রি-পিচ কিনে এনে তাতে হাতের কাজ করে ঝিনাইদহে বিক্রি করতেন। আলেয়া বেগম জানান, হাতের কাজ ভালভাবে শেখার জন্য মারা যাওয়ার প্রায় এক মাস আগে আরো দুটি মেয়ের সঙ্গে রিক্তা কুষ্টিয়ায় একটি বাড়িতে ওঠে। ১৮ জুন সকালে টেলিভিশনে মেয়ের মৃত্যর খবর পান তিনি। সন্ধ্যা ৬টার দিকে র্যাব ও পুলিশের পাহারায় রিক্তার লাশ বাড়িতে আসে। তার মাথায় ও পায়ে একটি করে গুলির চিহ্ন ছিল। আলেয় বেগম দাবি করেন, তার মেয়ে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডিও নেই। এরপরও মেয়ের কোনো অপরাধ থাকলে তার বিচার না করে কেন হত্যা করা হলো? গোলাগুলির পর ঘটনাস্থলে যাওয়া গ্রাম পুলিশ আনছার আলী জানান, তপনের বুকের বিভিন্ন জায়গায় এবং বাম বাহুতে মোট ছয়টি গুলি লেগেছিল। তার পাশেই পড়ে ছিল রিক্তার লাশ। রিক্তার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, মৃত্যুর আগে কারো সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। গুলিতে রিক্তার মাথার খুলি এবং মুখের ডান পাশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রিক্তার মৃত্যু সম্পর্কে কুষ্টিয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাবুল উদ্দিন সরদার ‘অধিকার’কে বলেন, “একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে মারতে গিয়ে ১০ জন ভাল মানুষ নিহত হলেও কিছু করার নেই।” এ সম্পর্কে র্যাব- ১২ এর ক্যাপ্টেন মাহমুদের ভাষ্যও একই রকম। ‘অধিকার’কে তিনি বলেন, “তপনকে মারতে গিয়ে আরো ১০ জন ভাল মানুষ মরলেও র্যাবের কিছু করার ছিল না।” তার দাবি, আকাশকে নিয়ে পাশের গ্রাম বাড়াদীতে অভিযান চালিয়ে র্যাব তপনের সন্ধান পায়। র্যাব সদস্যরা তপনের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে তপন ভেতর থেকে গুলি ছোড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়ে ভিতরে ঢুকে দেখতে পায় তপন ও রিক্তা নিহত হয়েছে।
সুত্রঃ
http://amader-kotha.com/page/491922
http://amader-kotha.com/page/492914