বিপ্লবী চলচ্চিত্রঃ ‘চক্রব্যূহ/Chakravyuh’
Posted: May 12, 2016 Filed under: বিপ্লবী চলচ্চিত্র, লাল সংবাদ/lal shongbad Leave a commentভারতের নকশাল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা রাজনৈতিক যুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘চক্রব্যূহ’। এতে দেখা যায়, কবির নামে পুলিশের IPS ট্রেনিং হতে বরখাস্ত এক যুবক তারই কলেজ বন্ধু পুলিশের এসপি আদিলকে সহযোগিতার জন্যে চর হয়ে নকশালদের মাঝে ঢুকে পড়ে, নকশাল কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকার এক পর্যায়ে নকশালদের সংগ্রামের সঠিক সত্যতা খুঁজে পেয়ে সে নিজেই নকশাল হয়ে উঠে।
Part – 1
Part – 2
Part – 3
১০ ঘণ্টার অভিযানে শীর্ষ নকশাল নেত্রী নিহত
Posted: May 12, 2016 Filed under: গণযুদ্ধের সংবাদ, ভারত, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: নকশাল, মাওবাদী Leave a commentঅনূদিতঃ
গতকাল মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের গাদচিরোলি জেলার ধানুরা তপসিলভুক্ত হুররেকেসা গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী ১০ ঘণ্টারও বেশী অভিযান চালিয়ে কথিত এনকাউন্টারের নামে চাটগাঁও এলাকা কমিটির সম্পাদক রজিথাকে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথার জন্যে পুলিশ প্রশাসন ১৬ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। অভিযানে অংশ নেয়া C 60 কম্যান্ডোরা এ সময় গ্রামে একনাগাড়ে গুলি বর্ষণ করে। ১০ ঘণ্টার অ্যাকশন অভিযানের পর অর্ধ দগ্ধ অবস্থায় গুলিবিদ্ধ নকশাল নারী নেত্রীকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
গ্রামের যে বাড়ীতে তিনি শেল্টার নিয়েছিলেন, সে বাড়ীর পরিবারকে দিয়ে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হলে তিনি আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেন। এরপর তিনি দলমের(মাওবাদীদের সশস্ত্র স্কোয়াড) অন্যান্য সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে দিতে পুলিশের বিরুদ্ধে একাই AK-47 রাইফেল হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমৃত্যু যুদ্ধ চালিয়ে যান। নিজ কমরেডদের বাঁচানোর জন্যে এসময় তিনি গুলি ছুঁড়ে ১০ ঘণ্টা ধরে পুলিশকে ব্যতি-ব্যস্ত করে রাখেন। পুলিশ তাকে নিরস্ত্র করতে না পেরে ওই বাড়ীতে under barrel grenade launcher (UBGL) হামলা চালালে বাড়িটি উড়ে যায়। উড়ে যাওয়া বাড়িটি থেকে নকশাল নেত্রী রজিথার গুলিবিদ্ধ অর্ধ দগ্ধ মৃতদেহ, একটি AK-47 ও .303 রাইফেল উদ্ধার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য যে, ২০১১ সালের আগস্টে সাবেক চাটগাঁও এর দলম কমান্ডার রনিতা হিছামি ওরফে রামকো’র ক্ষেত্রেও একই ঘটনা হয়েছিল।
সূত্রঃ http://timesofindia.indiatimes.com/city/nagpur/Top-Naxal-woman-cadre-killed-in-10-hr-operation/articleshow/52213495.cms
তুরস্কের শহীদ কমরেড হায়দার ও কমরেড মুরাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের ছবি
Posted: May 12, 2016 Filed under: গণযুদ্ধের সংবাদ, ছবির সংবাদ, তুরস্ক, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: Haydar Arğal, Murat Tekgöz (Rıza), TKP / ML – TIKKO Leave a commentনোটঃ গত ৬ই ও ৭ই মে তুরস্কের দারসিম অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সাথে মাওবাদীদের গণযুদ্ধে শহীদ হন কমরেড হায়দার ও কমরেড মুরাদ। দারসিম অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সহিংস আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায়, মাওবাদী Tikko গেরিলারা পুলিশের বিশেষ বাহিনীকে বহনকারী একটি বাস গত সপ্তাহে ধ্বংস করে দেয়। ইতিপূর্বে সিজরে, নুসাইবিন, সিলোপী’র মত এই এলাকায়ও এই সপ্তাহে AKP সরকার কারফিউ ঘোষণা করার প্রতিবাদে মাওবাদীরা এই সশস্ত্র অ্যাকশনে নামে।
এতদঞ্চলে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী মেরুকরণ প্রক্রিয়ার প্রভাব
Posted: May 12, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: এতদঞ্চলে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী মেরুকরণ প্রক্রিয়ার প্রভাব Leave a commentএতদঞ্চলে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী মেরুকরণ প্রক্রিয়ার প্রভাব
আজ গোটা পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা গভীর সঙ্কটে পতিত হয়েছে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মন্দাবস্থা গভীর মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার সংস্থাসমূহ মন্দা কেটে যাওয়ার পূর্বাভাস বার বার প্রদান করলেও সব পূর্বাভাসকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে মন্দাবস্থা অব্যাহত থেকে গভীর ও জটিলতর হচ্ছে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদীরা মন্দা থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য উদ্ধার কর্মসূচি, উদ্দীপক কর্মসূচি, কৃচ্ছ্রতা সাধনের কর্মসূচি, পরিমাণগত সহজীকরণ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করলেও অর্থনীতি মন্দা থেকে উদ্ধার হচ্ছে না। এই সময়ে মার্কিন অর্থনীতির সঙ্কট আরও তীব্র হওয়ার প্রেক্ষিতে পরিমাণগত সহজীকরণ কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬৩ বিলিয়ন ডলার সিকুস্টার বা ব্যয় হ্রাসের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইউরোপের অর্থনীতিকে রক্ষার জন্য উদ্ধার ও উদ্দীপক কর্মসূচির পরিবর্তে আবারও কৃচ্ছ্রতাসাধনের কর্মসূচির দিকে যেতে হচ্ছে। এই সময়ে সব থেকে গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে জাপানে। জাপানের অনুসৃত অ্যাবেনোমিক্স মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত কোয়ার্টারে জাপানের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে চীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিক নির্দেশ করছে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদীরা বাজার ও প্রভাব বলয় বণ্টন পুনর্বণ্টন নিয়ে বিভিন্ন দেশে আগ্রাসী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েও অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্ত হতে পারছে না।
পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিক সঙ্কটকে গভীর করছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদীরা বাজার ও প্রভাববলয় বিস্তারের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করেছে। যার প্রেক্ষিতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সাম্রাজ্যবাদীদের বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। এই সময়ে বিশ্বের সব থেকে আলোচিত বিষয় হিসাবে সামনে আসছে পুঁজিবাদী চীনের উত্থান। পুঁজিবাদী চীন জিডিপি’র হিসাবে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি এবং পিপিপি’র হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে চীনের অর্থনীতি ২০১৯ সালেই মার্কিন অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে শীর্ষস্থান দখল করবে। এই প্রেক্ষাপটে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ভারত মহাসাগরীয় এলাকা আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ জোটসঙ্গীদের নিয়ে এতদঞ্চলে তার সামরিক উপস্থিতির পুনর্বিন্যাস করেছে। আবার পুঁজিবাদী চীন সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার সাথে জোটবদ্ধ হয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা গঠন করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পাল্টা জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে চীন তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক তথা সামগ্রিক প্রস্তুতি প্রক্রিয়া জোরদার করে চলেছে।
দুই পরস্পর বিরোধী জোটের এই প্রতিযোগিতা এতদঞ্চলে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী মেরুকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করছে। বিবাদমান সকল পক্ষই এই অঞ্চলের দেশগুলোকে তাদের জোটভুক্ত করতে সচেষ্ট রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে দুই পক্ষই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক তথা সামগ্রিক প্রস্তুতি প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। এই অবস্থায় এই অঞ্চলের দেশগুলোর জোটবদ্ধ হওয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও সম্ভাবনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং এই অঞ্চলের কয়েকটি রাষ্ট্র স্বীয় স্বার্থের অবস্থান বিবেচনা করে দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এই অঞ্চলে যেমন পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র রয়েছে, তেমনি অসংখ্যা নয়া ঔপনিবেশিক আধা সামন্তবাদী রাষ্ট্র বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমানে এতদঞ্চলে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী মেরুকরণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত রূপ না পেলেও মেরুকরণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিন্যাস পুনর্বিন্যাস প্রচেষ্টা ও নতুন নতুন সম্ভাবনার দিক সামনে আসছে।
দূরপ্রাচ্যের দেশ জাপান একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দুই ক্ষেত্রেই জাপান জার্মানির পক্ষ হয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ জাপানে পরমাণু বোমার হামলা চালিয়ে হিরোসিমা ও নাগাসাকি নগর ধ্বংস করে। জাপান মার্কিনের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং জাপানে মার্কিন সেনা উপস্থিতি ও ঘাঁটি গড়ে ওঠে, যা এখনও বহাল রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে জাপানের জনগণের সাথে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধের দিক রয়েছে। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মার্কিন একচেটিয়া পুঁজি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যার ভিতর দিয়ে জাপানের একচেটিয়া পুঁজির সাথে মার্কিন একচেটিয়া পুঁজির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। জাপানের সাথে মার্কিনের এখনও ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে, তবে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের দরকষাকষি ও টানাপোড়েনে দিকটিও মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয়ে থাকে। দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চীন জাপানের মধ্যে চলমান বিরোধকে কেন্দ্র করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ জাপানের পক্ষ নিয়ে জাপানকে মার্কিনের জোটভুক্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছে।
আবার পুঁজিবাদী চীনের সাথেও জাপানের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। চীন হচ্ছে জাপানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীন ও জাপান দুই দেশই পরস্পর পরস্পরের দেশে ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগ করছে। গত কয়েক বছর ধরে চীনের সাথে জাপানের দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ও পূর্ব চীন সাগরের জলসীমা নিয়ে বিরোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘটনায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ জাপানের পক্ষ নিয়ে চীনের সাথে বিরোধ উস্কে দিয়ে স্বীয় স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। চলতি বছরের প্রথম দুই কোয়ার্টারে জাপানের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে। এই অবস্থায় জাপানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টার দিকটি সামনে আসছে। জাপান ও চীনের মধ্যে বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার আলোচনা, অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করা এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করার ওপর গুরুত্বারোপ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
এই অঞ্চলে ভারত একটি নয়া ঔপনিবেশিক আধা সামন্তবাদী রাষ্ট্র হলেও ভারতের মুৎসুদ্দি পুঁজির ব্যাপক স্ফীতি ঘটেছে। তাছাড়া ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ভারতের রয়েছে বিশাল ভূরাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্ব। যার প্রেক্ষিতে ভারতকে পক্ষে রাখার জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের সামন্ত-মুৎসুদ্দি শ্রেণী সকল সাম্রাজ্যবাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে নিজেদের মুৎসুদ্দি পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করে থাকে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে স্বীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখে কোন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জোটভুক্ত হওয়ার দিকও রয়েছে। যেমন ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারত সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের জোটভুক্ত হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিচ্ছে, ভারত যে কোন সাম্রাজ্যবাদী জোটের সাথে গাঁটছড়া বাধবে- সেই দিন বোধ হয় আর খুব বেশি দূরে নয়। বিভিন্ন পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতকে তাদের জোটভুক্ত করার জন্য জোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নতুন প্রতিরক্ষা রণনীতি তথা রিব্যাললন্সিং টু এশিয়া রণনীতিতে জাপানকে ভিত্তি ও ভারতকে লিঞ্জপিন হিসাবে ব্যবহার করে এতদঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা অবস্থান দাঁড় করাতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র তার রণনীতিতে ভারতের ‘এ্যাক্ট টু এশিয়া’কে সমন্বিত করছে। সেই প্রেক্ষিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভারতকে এই অঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে স্বীকার করে নিয়ে ভারতের সামন্ত-মুৎসুদ্দি শ্রেণীর আকাঙ্খা পূরণের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভারতকে এ শতাব্দীর বিশ্বশক্তিতে পরিণত করতে চায়- ইত্যাদি ইত্যাদি বক্তব্যও দিচ্ছে। একই সাথে ভারতের সাথে অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করে সম্পর্কের ভিত মজবুত করার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাথে মার্কিনের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সর্বোচ্চ প্রয়াস চালানোর দিকটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভারতকে জোটভুক্ত করার জন্য জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। ২০১৫ সালের ২৫ থেকে ২৭ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারত সফরে আসেন। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে এই প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ‘সবার অংশগ্রহণ, সবার জন্য অগ্রগতি’শীর্ষক যৌথ ঘোষণা প্রচারিত হয়। ভারতের সামন্ত-মুৎসুদ্দি শ্রেণী সাম্রাজ্যবাদের মদতে এতদঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়। এই প্রেক্ষিতে উভয় নেতা একটি যৌথ রণনীতিগত ভিশন ঘোষণা করে। বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়ানোর সাথে সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রদান করে। সে ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সহযোগিতা, সমন্বয়, যৌথ উদ্যোগ, যৌথ উন্নয়ন অগ্রসর করা, নৌ নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীরতর করতে একমত পোষণ করে। সন্ত্রাস দমন, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রশ্নে আলোচনায় উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফরের ধারাবাহিকতায় গত ২ জুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এস্টোন কার্টার ভারত সফর করেন। এ সময়ে তিনি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পানিকরের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা কাঠামো চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে ভারতে যৌথভাবে জেট ইঞ্জিন, এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ডিজাইন ও নির্মাণসহ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন করা। এই চুক্তির আওতায় উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে রণনীতিগত আলোচনা, দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করা হবে। এই চুক্তিতে নৌ নিরাপত্তা যৌথ প্রশিক্ষণের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে এস্টোন কার্টার ভারতে কারখানা স্থাপনে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করার কথা বলেন। বৈঠকে আফগানিস্থানসহ অঞ্চলিক বিষয়ে সহযোগিতা সম্প্রসারণে আলোচনা হয়।
মার্কিনের প্রতিপক্ষ শক্তি চীন-রাশিয়ার প্রচেষ্টাও নজরে পড়ার মতো। ভারতের সাথে রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রাশিয়ার অবদান সব থেকে বেশি। পরমাণু প্রযুক্তি, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প ও মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে চালু রয়েছে ভারতের সহযোগিতার সম্পর্ক। এই ধারাবাহিকতার ওপর ভিত্তি করেই রাশিয়া ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করার প্রয়াস চালাচ্ছে। চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ থাকলেও চীনা পক্ষ ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে অগ্রসর হতে চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে চীন ভারতের সব চেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ভারতের মুৎসুদ্দি শ্রেণীর আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে চীন ভারতে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রস্তাবও দিয়ে চলেছে। চীন-রাশিয়া ভারতকে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার পূর্ণ সদস্যপদ প্রদানের জন্য অগ্রসর হচ্ছে। বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত হয়েছে ব্রিকস। এ বছরই এই দেশগুলো মিলে বিশ্বব্যাংক আইএমএফ’র বিকল্প হিসাবে এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। চীনের উদ্যোগে বিসিম প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারকে নিয়ে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলছে। এইভাবে নয়া ঔপনিবেশিক ভারতকে জোটভুক্ত করার জন্য রাশিয়া-চীন জোরদার প্রয়াস চালাচ্ছে।
এই সময়ে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নেও আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। পাকিস্তানের সামন্ত-মুৎসুদ্দি শ্রেণীর সাথে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধারাবাহিকভাবে গভীর সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। আফগানিস্তানে মার্কিনের তথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাষ্ট্র। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা প্রদানকারী রাষ্ট্র। পাকিস্তানের সাথে মার্কিনের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পাকিস্তানকে যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইন রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এতদঞ্চলে তাদের সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করার তত্ত্বের প্রেক্ষিতেই ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মুৎসুদ্দি শ্রেণীর সাথেই সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। মার্কিনের অনুসৃত এই নীতির কারণেই পাকিস্তানের মুৎসুদ্দি শ্রেণীর সাথে মাঝে মাঝে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। মার্কিনের প্রতিপক্ষ শক্তি তারই সুযোগ গ্রহণের প্রচেষ্টা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চীনের সাথেও পাকিস্তানের সামন্ত-মুৎসুদ্দি শ্রেণীর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার ধারাবাহিকতা লক্ষ্য যায়। ১৯৬২ সালের চীন ভারত যুদ্ধ, ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ এই সব বড় বড় আঞ্চলিক সংঘাতে চীন-পাকিস্তান অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করতে সক্ষম হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী চীনের সহযোগিতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পাকিস্তান হলো চীনের অস্ত্র রপ্তানির অন্যতম প্রধান বাজার।
পাকিস্তানের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হলো চীন। পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। সম্প্রতি এই সম্পর্কের গভীরতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার দিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়াদরে চীন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে চলেছে। ইতিমধ্যে গোয়াদর বন্দরের সাথে চীনের মূল ভূখন্ডের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। গোয়াদর বন্দরের সাথে চীনের মূল ভূখন্ডের সাথে সংযোগকারী রেলপথ স্থাপনের কাজও চালিয়ে যাচ্ছে চীন। চীন আজাদ কাস্মীরে বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ, পাকিস্তান-চীন অর্থনৈতিক করিডোর, শিল্প পার্ক স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে । তাছাড়া চীনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি নিম্ন প্রযুক্তির শিল্প কারখানা বাইরের দেশে স্থানান্তর প্রকল্পের অন্যতম পছন্দনীয় স্থান হয়ে উঠেছে পাকিস্তান।
চীনা প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সফরের সময়ে পাকিস্তানে ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। গত ২০-২১ এপ্রিল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিন পাকিস্তান সফর করেন। এই সফরকালে শি জিনপিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে শীর্ষবৈঠকে মিলিত হন। এই সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও ৫১ দফা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর, জ্বালানি অবকাঠামো, শিক্ষা, কৃষি, গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রকল্প ও চুক্তির সম্পর্ক থাকে। উভয় পক্ষ গোয়াদর সমুদ্রবন্দর, জ্বালানি, যাতায়াত অবকাঠামো ও শিল্প সহযোগিতা এই চারটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা অগ্রসর করতে সম্মত হয়। শীর্ষবৈঠকের পর ২০-দফা যৌথ বিবৃতি প্রচারিত হয়। দু’পক্ষের মধ্যে বর্তমান ১৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য আগামী ৩ বছরের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। পাকিস্তান-চীন যৌথ সহযোগিতা সংলাপকে পুরোপুরি বিকশিত করতে সম্মত হয়। উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় সকল রূপের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অগ্রসর করতে সম্মত হয়। তাছাড়া সম্প্রতি চীন এক চুক্তির আওতায় পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দরসমূহ ভারত মহাসাগরে চলাচলকারী চীনের নৌবহরের ব্যবহারের সুবিধা লাভ করেছে।
সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়াও সম্প্রতি পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে ১৬ এপ্রিল রাশিয়া সফর করেন। এই সময়ে তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সুইগোর সাথে বৈঠক করে সামরিক প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সামরিক সাজসরঞ্জাম নিয়ে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২৩ নভেম্বর পাকিস্তান ও রাশিয়া ১.৭ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান ও রাশিয়া ১৬ ফেব্রুয়ারি জেএফ-১৭ যুদ্ধ বিমানের জন্য রাশিয়া থেকে সরাসরি ইঞ্জিন আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ মার্চ পাকিস্তান রাশিয়া থেকে এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার গানশিপ, আর ডি-৯৩ জেট ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন সামরিক সাজসরঞ্জাম ক্রয়ের পদক্ষেপ অগ্রসর হয়। পাকিস্তান ও রাশিয়া যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত করতে সম্মত হয়। তাছাড়া আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দুই দেশ কী কী ভূমিকা নিতে পারে তা নিয়ে আলোচনায় উভয়পক্ষ একমতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
নয়া ঔপনিবেশিক দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর থেকেই এখানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যেখানে প্রায় ৩৭ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। মার্কিন একচেটিয়া পুঁজির আনুকূল্য লাভ করেই দক্ষিণ কোরিয়াতে মুৎসুদ্দি পুঁজির বিকাশ ঘটেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রয়েছে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা বজায় রেখে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই ভূখন্ডে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার পক্ষে পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক মহড়া চালিয়ে এতদঞ্চলে তাদের প্রতিপক্ষ শক্তির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নিচ্ছে। এর পাল্টা কৌশল হিসাবে চীন দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বাণিজ্যিকর অংশীদার হলো চীন। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চীন অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে দক্ষিণ কোরিয়ার মুৎসুদ্দি শ্রেণীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অগ্রসর করার পলিসি গ্রহণ করেছে।
মিয়ানমারের সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারকে বর্জন করার নীতি চালিয়ে আসছিল। এই সুযোগে চীন মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। তেল, গ্যাসসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ মিয়ানমারের অধিকাংশ খনিজ উত্তোলন প্রকল্পে চীনারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। মিয়ানমারে রয়েছে চীনের নৌঘাঁটি। মিয়ানমারের সিত্তুতে একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এই বন্দরের সাথে চীনের সরাসরি সড়ক যোগাযোগও স্থাপিত হয়েছে। এই বন্দর থেকে চীনের মূল ভূখন্ড পর্যন্ত তেল গ্যাসের পাইপ লাইনও নির্মাণ করেছে চীনারা। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে জ্বালানি সরবরাহ মালাক্কা প্রণালী এড়িয়ে চীনে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা বিধানের জন্যই এই কৌশলগত বিকল্প পথ। মিয়ানমারকে সম্পূর্ণরূপে চীনের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিপদ অনুধাবন করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বাধীন অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদীরা সম্প্রতি কৌশল পরিবর্তন করেছে। মিয়ানমারের ওপর আরোপ করা তাদের বিভিন্ন অবরোধ শিথিল করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। মিয়ানমারে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানো ও মিয়ানমারের সাথে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে মার্কিনের দালাল অং সান সুকির দল এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। তবে এখনও ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল অং সান সু কি’কে মিয়ানমারের রাজনীতিতে পুনর্বাসন ও ক্ষমতায় আনার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার রয়েছে বিশেষ ভূরাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্ব। বিগত সময়ে শ্রীলঙ্কাতে তামিল বিদ্রোহ দমনের প্রশ্নে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীরা শ্রীলঙ্কার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পুঁজিবাদী চীন এই সুযোগকে কাজে লাগায়। চীন শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করে তামিল বিদ্রোহীদের নির্মূলে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করে। এর মধ্যে দিয়ে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজাপক্ষে সরকারের সাথে চীনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের ভিত গড়ে ওঠে ও উত্তরোত্তর নিবিড় হয়। শ্রীলঙ্কায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে তোলায় চীন সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করে। বিগত মহেন্দ্র রাজাপক্ষে সরকারের সময়ে শ্রীলঙ্কার সমুদ্রবন্দরসমূহে চীনা নৌবহরের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। যা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। চলতি বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে মাইথ্রিপালা সিরিসেনা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। নির্বাচনের সময়ে সিরিসেনা শ্রীলঙ্কার সমুদ্রবন্দরে চীনের সামরিক উপস্থিতি বন্ধ কর, শ্রীলঙ্কাতে চীনের বিভিন্ন অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ স্থগিত করা; প্রতিবেশী ভারতসহ পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের পর সিরিসেনা শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন নৌবন্দরে চীনা সামরিক উপস্থিতি বন্ধ করে দেয়। তবে চীনের সাথে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এখনও অব্যাহত রয়েছে। শ্রীলঙ্কাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীরা নয়া ঔপনিবেশিক ভারতের সাথে সমন্বিত হয়ে ভূমিকা নিয়ে ক্ষমতার পট পরিবর্তন ঘটিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলে অনেকের ধারণা। সম্প্রতি সিরিসেনা সরকার পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। সেই মোতাবেক শ্রীলঙ্কাতে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে মাহেন্দ্র রাজাপক্ষে ও রনিল বিক্রমাসিংঘে উভয়ের দলই অংশ নেয়। তবে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বিক্রমাসিংঘে সমর্থন করে। নির্বাচনে রনিল বিক্রমাসিংঘে সংঘ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। তবে মাহেন্দ্র রাজাপক্ষে রনিল বিক্রমাসিংঘের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনেও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতকে ব্যবহার করে রনিল বিক্রমাসিংঘকে ক্ষমতায় আনতে ভূমিকায় রাখে বলে গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। ভারত মহাসাগরের এই গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে তীব্র আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতার দিকটি সামনে আসছে।
পূর্ব এশিয়ায় ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ব্রুনাই ইত্যাদি দেশের সাথে দক্ষিণ চীন সাগরের সমুদ্রসীমা নিয়ে চীনের বিরোধ রয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এই বিরোধে এই সকল দেশের পক্ষ নিয়ে এই বিরোধ উস্কে দিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। এখানে উল্লেখ্য ফিলিপাইনে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ও ঘাঁটি রয়েছে এই সময়ে তাইওয়ান নিয়েও টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন তাইওয়ানকে তাদের নিজেদের ভূখন্ড বলে দাবি করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে তাইওয়ানের ব্যাপারে চীনের দাবি স্বীকার করে নেয়। তবে তাইওয়ানে এখনও মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। বিগত ১৯৪৯ সালে চীনের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পর চিয়াং কাই শেক চীনের মূল ভূখন্ড থেকে পালিয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং একটি সরকার গঠন করে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাইওয়ানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করে এবং তাইওয়ানের মুৎসুদ্দি শ্রেণীর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সঙ্কট ও চীনের অর্থনীতির বিকাশের প্রেক্ষিতে তাইওয়ানে ব্যাপক চীনা বিনিয়োগ হচ্ছে। বর্তমানে চীন হচ্ছে তাইওয়ানের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। তাইওয়ানের মোট রপ্তানির ৬৫ শতাংশ চীনে রপ্তানি হয়। তাইওয়ানের অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় চীন সর্বাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে। সেই সাথে তাইওয়ানকে চীনের সাথে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে চীনের প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন রাষ্ট্র মালয়েশিয়ার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার জন্য সম্প্রতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জোরদার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। এইভাবে গোটা এশীয় প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরীয় এলাকা আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
লেখকঃ আবু সাইয়ীদ (অভি)
সূত্রঃ
১৩ই মে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমরেড সতনাম স্মরণে DSU এবং PDFI এর শোক সভা
Posted: May 12, 2016 Filed under: ইভেন্ট, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: মাওবাদী, সতনাম, dsu, jangalnama, NAXALITE, PDFI, satnam Leave a commentআগামীকাল ১৩ই মে, শুক্রবার, বিকেল ২টা-৪টা, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের(উত্তর ক্যাম্পাস) কলা ভবনে কমরেড ‘সতনাম’ স্মরণে শোক সভা ও বস্তারের যুদ্ধের উপর লেখা ‘জঙ্গলনামা’ এর উপর আলোচনা সভার আয়োজন করেছে নকশালপন্থী সংগঠন DSU এবং PDFI।
Red Homage to Comrade Satnam…
DSU and PDFI pay revolutionary salute and tribute to Comrade Satnam who left us few days back. Comrade Gurmeet Singh, or Comrade Satnam Jangalnama, as he came to be known popularly after his famous travelogue called ‘Jangalnama’ on Bastar, was the man of Revolution. In 1970s, he rejected the formal education and left his graduation to become a foot-soldier of Naxalite movement and to live and fulfill the dream of a classless world. He dedicated his entire life for the cause of New Democratic Revolution by becoming a professional Revolutionary, in its true Leninist sense. Since then, he worked immensely with the working class by becoming a daily wage earner and organized them for cause of Indian Revolution. Comrade Satnam was at the forefront in the fight against operation Green hunt, unleashed by the ruling class to brutally suppress peoples’ struggle against corporate loot and exploitation of the Adivasis. Being a central committee member of Peoples’ Democratic Front of India (PDFI), he played an important role in organizing Red Homage to Comrade Satnam…
DSU pays revolutionary salute and tribute to Comrade Satnam who left us few days back. Comrade Gurmeet Singh, or Comrade Satnam Jangalnama, as he came to be known popularly after his famous travelogue called ‘Jangalnama’ on Bastar, was the man of Revolution. In 1970s, he rejected the formal education and left his graduation to become a foot-soldier of Naxalite movement and to live and fulfill the dream of a classless world. He dedicated his entire life for the cause of New Democratic Revolution by becoming a professional Revolutionary, in its true Leninist sense. Since then, he worked immensely with the working class by becoming a daily wage earner and organized them for cause of Indian Revolution. Comrade Satnam was at the forefront in the fight against operation Green hunt, unleashed by the ruling class to brutally suppress peoples’ struggle against corporate loot and exploitation of the Adivasis. Being a central committee member of Peoples’ Democratic Front of India (PDFI), he played an important role in organizing Minorities at various fronts in the aftermath of Gujarat genocide 2002, orchestrated by the Hindutva Fascist RSS-BJP. He intensely campaigned against Indian occupation of Kashmir, North East and atrocities on oppressed nationalities and stood in solidarity for the freedom movement of Kashmir, Manipur and Nagalim. As a prolific writer, he penned down his raging words in both Punjabi and English under various names in ‘Peoples’ March’, ‘Jan Pratirodh’ ‘Jaikara’ etc and had written several short stories also.
Comrade Satnam has always been the inspiration for those, who dreams of a better world, fight against oppression. He left us at a moment, when there is an all pervasive attack by the fascist forces on the toiling masses, on oppressed nationalities, minorities and on the people of Bastar, by another round of operation green hunt. His sudden demise will immensely affect the Revolutionary movement in India, but his contribution to the movement, which is enriched by Marxism-Leninism-Maoism and lived experience from the Revolutionary movement in India, will always be a guide for us.
DSU conveys condolences to the family and Comrades of Comrade Satnam.
Red Salute to Comrade Satnam ! Let us take the pledge to fulfill his dream!
dsu and stood in solidarity for the freedom movement of Kashmir, Manipur and Nagalim. As a prolific writer, he penned down his raging words in both Punjabi and English under various names in ‘Peoples’ March’, ‘Jan Pratirodh’ ‘Jaikara’ etc and had written several short stories also.
Comrade Satnam has always been the inspiration for those, who dreams of a better world, fight gainst oppression. He left us at a moment, when there is an all pervasive attack by the fascist forces on the toiling masses, on oppressed nationalities, minorities and on the people of Bastar, by another round of operation green hunt. His sudden demise will immensely affect the Revolutionary movement in India, but his contribution to the movement, which is enriched by Marxism-Leninism-Maoism and lived experience from the Revolutionary movement in India, will always be a guide for us.
DSU conveys condolences to the family and Comrades of Comrade Satnam.
Red Salute to Comrade Satnam ! Let us take the pledge to fulfill his dream!
Please join us for a condolence meeting at Arts Faculty, North Campus, Du on 13th May, Friday from 2 PM to 4 PM …