বুর্জোয়াদের বিশ্বকাপ

Brazil-v-Argentina

বুর্জোয়াদের বিশ্বকাপ

(জুলাই, ’৯০)

বিশ্বজুড়ে বিশ্বকাপের উন্মাদনা এখন থিতিয়ে এলেও বিশ্বকাপ নিয়ে পর্যালোচনা শেষ হয়নি। এদেশের জনগণের মধ্যেও এর রেশ এখনো কিছুটা রয়েছে। কঠোর জীবন সংগ্রামের সম্মুখীন ব্যাপক জনগণ রেফারীর ন্যায়-অন্যায় আলোচনা নিয়ে এ পর্যায় যখন সমাপ্ত করে আনছেন, তখন এদেশের বুর্জোয়াশ্রেণীর একাংশ ম্যারাডোনাকে এদেশে আনার প্রচার দিয়ে বিগত হয়ে যাওয়া উন্মাদনাকে চাঙ্গা করতে নতুন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণ খেলাধুলা, শিল্প, সঙ্গীত নিয়ে মেতে ওঠেন, কারণ এগুলো তারা ভালবাসেন এবং এগুলো জীবনেরই প্রয়োজন। সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলকে নিয়ে মানুষ মেতে উঠবেন এটাও অসঙ্গত নয়। সাম্রাজ্যবাদী ও বুর্জোয়ারা এটা জানে বলেই আর সবকিছুর মত খেলাধুলাকেও তারা শ্রেণীর উর্ধ্বে বলে প্রচার করে তাদের নিজস্ব ধারায় জনগণকে চালিত করার চেষ্টা চালায়- যাতে সেটা বুর্জোয়া ব্যবস্থার পক্ষেই কাজ করে।
ক্রীড়া শৈলী, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, সুর, ছন্দ- এসবের নিজস্ব শ্রেণীচরিত্র নেই, যেমন সাহিত্য, শিল্প, রাজনীতি, অর্থনীতি- এসবের শ্রেণীচরিত্র রয়েছে। কিন্তু প্রথমোক্তগুলো কোনক্রমেই শ্রেণীর উর্ধ্বে নয়, কারণ ওগুলো প্রতিটি শ্রেণীই ব্যবহার করে তার মত করে, নিজস্ব শ্রেণী আধারে। তাই, শ্রেণী উর্ধ্ব বস্তুগত সত্য বা সকল মানুষের বস্তুগত প্রয়োজনগুলোও শ্রেণীচরিত্র ধারণ করে এই শ্রেণী বিভক্ত বিশ্ব ব্যবস্থায়, আমাদের এই সমাজে। বিশ্বকাপের ঘটনাবলী তা আবারো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে গেল।
আমাদের দেশেও বিশ্বকাপ উন্মাদনার পাশাপাশি কেউ কেউ বিশ্বকাপ নিয়ে রাজনীতির নিন্দা করেছেন ও করছেন (যেমন- মন্ত্রী জাফর ইমামরা ম্যারাডোনাকে এদেশে এনে জনপ্রিয়তা পেতে চায়), কেউ কেউ বিশ্বকাপের বিশাল খরচেরও সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এগুলো একতরফা ও ভাসাভাসা সমালোচনায় পর্যবসিত হতে পারে। খেলাধুলা, আমোদ-প্রমোদের জন্য সর্বহারা শ্রেণী অর্থ ব্যয় করবে না তা-তো নয়ই, বরং বুর্জোয়াদের চেয়ে অনেক ব্যাপক পরিসরেই তা করবে। সুতরাং জনগণের শ্রমঘণ্টার অপচয় অথবা অর্থ ব্যয়- শুধু এভাবেই বিষয়টাকে সমালোচনা করলে চলবে না। দেখতে হবে এই খরচটা হচ্ছে কীসের জন্য? এবং কোন শ্রেণী ও কোন দিকগুলো এতে লাভবান ও শক্তিশালী হচ্ছে? নতুবা সর্বহারা শ্রেণীকে বুর্জোয়ারা ঐ “দরিদ্র থাকার ব্যবস্থা” হিসেবে যেভাবে অপপ্রচারণা করে থাকে তাতেই আরো শক্তি যোগান দেয়া হবে।
এটা ঠিক যে, চরম দারিদ্র পীড়িত ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এ বিশ্বে বিশ্বকাপ নিয়ে এই এলাহী কারবার, প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের খরচ (বাংলাদেশের প্রায় ৫ বছরের বাজেটের সমান অর্থ), সেই সূত্রে আমাদের দেশেও লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ, জনগণের অর্থের এই অপচয়- যখন এ দেশে ৮০% কৃষক-শ্রমিক নিয়মিত দু’মুঠো ভাত পান না, তাকে আমাদের অবশ্যই কঠোর সমালোচনা করতে হবে। তবে এর সাথে আরো বিষয়ের উন্মোচন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনায় ভুগছে কারা? এদেশের ৯০% শ্রমিক বা কৃষক সাধারণভাবে এ উন্মাদনায় ভোগার মত মানসিক, শারীরিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও পরিবেশগত পরিস্থিতিতে নেই।
একজন গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে দুইবারের বেশি তিনবার প্রস্রাব করতে গেলে কর্তৃপক্ষের ধমক খান, একজন রিক্সা শ্রমিক বা কৃষক সারাদিন অমানুষিক শ্রম করার পর অপর্যাপ্ত খাবার খেয়ে রাতে মরার মত ঘুমাতে বাধ্য- সেখানে রাত ৯টা থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত বিশ্বকাপের এই প্রদর্শনী কাদের জন্য? সুতরাং এই অর্থ খরচ হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের জন্যই- এটা খুবই স্পষ্ট। কেন তবে একজন শ্রমিক বা একজন কৃষক এই “আনন্দোৎসব”-কে সহজভাবে মেনে নেবেন?
আমাদের শাসক শ্রেণী নিছক তাদের সুবিধা ও প্রত্যক্ষ আনন্দেই এইসবের মহা আয়োজন করেছে তা নয়। তারা এই উন্মাদনা সৃষ্টি করে অত্যন্ত সচেতন রাজনৈতিক উদ্দেশে- যেমন তাদের প্রভুরা, সাম্রাজ্যবাদীরাও বিশ্বকাপের আসর বসায় তাদের শ্রেণীর প্রত্যক্ষ আনন্দ ছাড়াও সচেতন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই। এর মূল দিকটা হচ্ছে ব্যাপক শোষিত, নিপীড়িত জনগণকে তাদের জরুরী গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চেতনা থেকে সরিয়ে অন্য কিছুতে ভুলিয়ে রাখা। জনগণ বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে থাকুক, এজন্য যত টাকা ঢালা দরকার সরকার ঢালবেন, আর এই ফাঁকে তারা তাদের বাজেট ও এ জাতীয় সব অপকর্ম বিনা বাধায় পার করে নেবেন- এটাই তাদের উদ্দেশ্য, এবং সাম্রাজ্যবাদীদেরও উদ্দেশ্য এটাই।
এই চক্রান্তটা সারা বিশ্বজুড়ে সাম্রাজ্যবাদীরা ও তাদের দালালরা আজ চালাচ্ছে- আজ খেলা, কাল সিনেমা, পরশু যৌন আবেদন, তারপরে ক্রাইম- ইত্যাদি সব বিষয়ে জনগণকে মাতিয়ে রাখতে পারলেই তাদের লাভ। তাহলে নির্বিঘ্নে তাদের শোষণ কর্মটা চালিয়ে যাওয়া যাবে। আসলে অর্থনীতি-রাজনীতির মত খেলাধুলা-শিল্প-জনসেবা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেও বুর্জোয়া লাইন কাজ করে, কিন্তু তাকে উদ্ঘাটন করা কঠিন। বিশেষত ব্যাপক মানুষ এসব ক্ষেত্রে বুর্জোয়া মূল্যবোধই ধারণ করে থাকেন এবং হালকা আবেগ ও তাড়নায় তারা ভেসে যান, যতক্ষণ পর্যন্ত বিপ্লবী রাজনীতিক সচেতনতা তাদেরকে সঠিক পথটা না দেখায়। তাই বিশ্বজুড়ে বুর্জোয়ারা আজ এগুলোই জনগণের সামনে তুলে ধরছে। এসব ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তিকে ষ্টার বানিয়ে মানুষকে ঐসব ষ্টারের ভক্ত বানানো এবং মানুষের মাঝে ঐ জাতীয় ষ্টার হবার আকাংখা গড়ে তোলাটাই বুর্জোয়াদের কাজ। বুর্জোয়ারা আজ এটা করছে এ কারণেই যে, তাদের রাজনীতি, তাদের সামাজিক আদর্শ, তাদের নেতৃত্বরা আজ ঘৃণীত, উন্মোচিত ও পরিত্যক্ত, অথবা মানুষের আগ্রহ টানতে তারা অসমর্থ- এটা তারা জানে। আর তাই এদেশেও মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের ঘরে ঘরে বুর্জোয়া কোন রাজনীতিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক বা জ্ঞানী ব্যক্তির ছবি নয়, বেশি স্থান পায় বরং মাইকেল জ্যাকসন, ইমরান খান, ম্যারাডোনা, রেখা, অমিতাভ বচ্চন, অঞ্জুঘোষ- এ জাতীয় বুর্জোয়া সমাজের শো-বয়দের ছবি।
বুর্জোয়া বিশ্ব ব্যবস্থা মানুষকে এখানেই টেনে নামিয়েছে। এবং বুর্জোয়ারা চায় মানুষ যেন রাজনীতি ও সমাজ প্রগতির মানদণ্ডে এগুলোকে বিচার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ষ্টারমোহ, যৌনচর্চা, অর্থলোভ আর ব্যক্তি বীরত্ববাদের ফাঁদেই আটকা পড়ে থাকে।
তাই, বিশ্বকাপের ফলে ক্রীড়ার মান বেড়েছে, বিশ্বের অনেক মানুষ শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াশৈলী দেখার সুযোগ পেয়েছেন- এই ইতিবাচক দিকগুলো সত্ত্বেও বিশ্বকাপের আসর বিশ্ব জনগণের রাজনৈতিক চেতনাকে ভোঁতা করে দেয়ার, তাদেরকে বুর্জোয়া মূল্যবোধ ও আবেগে কলুষিত করার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুতেই পর্যবসিত হচ্ছে না। পশ্চিমা বিশ্বে এর অত্যন্ত কুপ্রভাব ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে, যা আগামীতে আরো ব্যাপক ক্ষতিকর মূর্তি নিয়ে অবধারিতভাবেই আবির্ভূত হবে- যদিনা এ মুহূর্তেই এসব প্রশ্নে প্রতিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলা যায়।
পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশে বুর্জোয়া শ্রেণী কর্তৃক শ্রমিক ও জনগণকে বিপ্লবী চেতনা থেকে দূরে রাখার প্রধানতম অস্ত্র হচ্ছে তাদের বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে শ্রমিক মুক্তির জন্য প্রথম কাজটিই হচ্ছে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদকে স্পষ্টভাবে বর্জন করা এবং “শ্রমিক শ্রেণীর কোন দেশ বা জাতি নেই”- এই আন্তর্জাতিকতাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়া। অথচ বিশ্বকাপ কী করেছে? ঠিক এর বিপরীত মতাদর্শটাই ওখানে শক্তিশালী করেছে এবং তা এবার প্রকাশিত হয়েছে অত্যন্ত জঘন্যরূপে। বিশেষত ইংল্যান্ড, জার্মানী ও হল্যান্ড- এইসব বনেদী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সমর্থকরা এত জঘন্য জাতীয়তাবাদী উন্মাদনার গুণ্ডামিতে মেতেছিল যে, বিশ্বজুড়ে ফুটবল মোহাচ্ছন্ন জনগণও তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। ইতালীর মত একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রকেও গুণ্ডামি প্রতিরোধে ও নিরাপত্তা রক্ষায় অকল্পনীয় শক্তি সমাবেশ করেও হিমশিম খেতে হয়েছে। বুর্জোয়া প্রচারযন্ত্রের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসা কিছু খবরে বোঝা যায় কি বর্বর, জাতীয়তাবাদী গুণ্ডামিতে ঐসব দেশের যুব সমাজকে মাতিয়েছে এই বিশ্বকাপ। এটা যদি আগামীতে ইউরোপ জুড়ে জঘন্যতম জাতিগত হানাহানির মতাদর্শিক প্রস্তুতি গড়ে তোলে তাতে অবাক কী?
অবাক যে হওয়া যায় না তার প্রমাণ জার্মানীর জয়লাভের পর জার্মানীতে ফ্যাসিস্ট শক্তির পেশী প্রদর্শনী- বিদেশি মাত্রই সেখানে বিজয়ানন্দের জোয়ারে আক্রান্ত হয়েছে। “জার্মান শ্রেষ্ঠ”, “দুই বিশ্বযুদ্ধ, এক বিশ্বকাপ”- এসব শ্লোগান জার্মানীর আকাশ বাতাস কলুষিত করেছে। এর মাঝেই আবার হচ্ছে বুর্জোয়া উদ্যোগে দুই জার্মানীর একত্রীকরণ। সমগ্র জার্মানীতে এসব কিছু বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের বিষ কী পরিমাণে বাড়িয়ে তুলবে তা-কি সহজেই অনুমেয় নয়? এবং ফের আরেক হিটলার যদি এখন জার্মানীর এই মতাদর্শকে প্রতিনিধিত্ব করে পুনরায় বিশ্ব জয়ে নামতে চায় তাহলে তাকে কি বিশ্বকাপের উন্মাদনার ফসলে অভিষিক্ত না বলে উপায় থাকবে ?
এই হচ্ছে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের বিষ যা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর জনগণকে “উন্নত মানব” এবং তৃতীয় বিশ্বের জনগণকে ও কালো মানুষকে “নিকৃষ্ট জীব” হিসেবে দেখতে শিখিয়েছে এবং অব্যাহতভাবে তা শিখাচ্ছে। তার প্রমাণই নগ্নভাবে প্রকাশিত হয় যখন সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গ সাংবাদিক কালো আফ্রিকার ক্যামেরুনের সাফল্যে ঈর্ষা ও হিংসায় সাধারণ শালীনতাকে পর্যন্ত ভঙ্গ করে কালো খেলোয়াড়কে “জংলী” বানানোর চেষ্টায় প্রশ্ন করার ঔদ্ধত্য দেখায়-“আপনারা কি সিংহ খান?” সেই ইতালী তরুণীর বর্বর ও অশ্লীল ঘোষণাও এখানে উল্লেখ্য, আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যাবার পর ম্যারাডোনার উদ্দেশ্যে যে বলেছিল “আমাদের খেয়ে পরে আমাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা।”
বুর্জোয়া প্রচার যন্ত্র তাদের সমাজের দগদগে ঘা-গুলোকে রেখে-ঢেকেই নিশ্চয়ই প্রদর্শন করেছে। কিন্তু বিশ্বের বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের ফুটবলমোদীরা এতেই হাড়ে হাড়ে প্রমাণ পেয়েছেন যে, সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়ারা এই বিশ্বকাপ সংগঠিত করে ও পরিচালনা করে কতটা উগ্র জাতিদম্ভ থেকে এবং তৃতীয় বিশ্বকে তারা কী চোখে দেখে থাকে? কালো আফ্রিকার ক্যামেরুনকে জোর করে হারানো, সেমি ফাইনাল ও ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে নির্লজ্জ অবিচার, রেফারীদের নগ্ন পক্ষপাতিত্ব, তথাকথিত স্টারদের ব্যর্থতা সত্ত্বেও বুর্জোয়া প্রচারযন্ত্রের স্টারপ্রচার পদ্ধতি, টিকিটের কালোবাজারী, গুণ্ডামিকে রুখবার জন্য ঐ দেশের সদা প্রয়োজনীয় মদ বিক্রয় নিষেধ করতে বাধ্য হওয়া, হোটেলগুলোতে নগ্ন নারী দিয়ে খরিদ্দার বাগানোর কম্পিটিশন, বিজয়ের জন্য বর্বরোচিত ফাউলের ছড়াছড়ি ও ক্রমবর্ধিত লালকার্ড হলুদকার্ড, নগ্ন নারী দেহ প্রদর্শনী, কালো আফ্রিকা থেকে দু’টোর বেশি দলকে না নেয়া, অথচ এক বৃটেনেরই চারটি দলকে অনুমোদন, সর্বোপরি ফিফা কর্মকর্তাদের ফ্যাসিস্ট একনায়কসুলভ আচরণ ও আইনকানুন- এসবই বুর্জোয়ারা “নির্মল” খেলাধুলাকে কীভাবে কলুষিত করে ও করতে বাধ্য তা প্রমাণ করে।
সর্বহারা শ্রেণী বিশ্ব রঙ্গমঞ্চে বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হলে এমন বিশ্ব ক্রীড়ার আয়োজন করবে না, মোটেই তা নয়। কিন্তু তা হবে এই বুর্জোয়া বর্বর জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ, উপনিবেশবাদী মানসিকতা, নারীকে পণ্য বানানো, ব্যক্তি- বীরত্ববাদ, পরিচালনায় একনায়কত্ববাদ এবং শুধুমাত্র সুবিধাভোগী শ্রেণীর বিনোদন-এসব কিছু থেকে মুক্ত। বিশ্ব জনগণ নিশ্চয়ই এর চেয়ে বহুগুণ উন্নত ক্রীড়াই তখন উপভোগ করবেন, যা হবে সত্যিকারেই মানুষোচিত, মানবিক, সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ববন্ধনে প্রাণবন্ত। বিশ্বক্রীড়া হবে বিশ্ব জনতার ঐক্য-ভ্রাতৃত্ব-বন্ধুত্বের উন্নয়ন এবং একে অন্য থেকে ক্রীড়াশৈলী শিক্ষা গ্রহণের একটি শ্রেষ্ঠ উপায়।
আর বর্তমানে বুর্জোয়ারা একে চালাচ্ছে জঘন্য জাতীয়তাবাদী হানাহানির বর্বর মতাদর্শ উস্কানোর মধ্য দিয়ে এবং সাম্রাজ্যবাদী সাদা প্রভুদের দ্বারা কালো জনগণ, তথা তৃতীয় বিশ্বের বিরুদ্ধে অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন, আক্রমণ, অবদমন ও তাচ্ছিল্যকে নগ্ন করে ও তাকে বাড়িয়ে তুলে।
সুতরাং বুর্জোয়া বিশ্বকাপের এই উন্মাদনাকে সচেতন সর্বহারা শ্রেণী ও বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীদেরকে অবশ্যই বর্জন করতে হবে এবং এই খেলাকে ব্যবহার ক’রে সাম্রাজ্যবাদী ও বুর্জোয়া শাসক শ্রেণীর যে চক্রান্ত তাকে রুখতে প্রস্তুত হতে হবে।
আমরা বিশ্বকাপ চাই না, আমরা চাই বিশ্ববিপ্লব। আমরা বুর্জোয়া স্টার চাই না, আমরা চাই শ্রমিক-কৃষকের বিপ্লবের নায়ক। আমরা চাই বিশ্ব-জনগণ বিপ্লবী মতাদর্শ রাজনীতিতে সজ্জিত হোক। বিপ্ল¬বের জন্য সংগঠিত হোক।

সূত্রঃ সংস্কৃতি বিষয়ক, আন্দোলন সিরিজ ৩, আন্দোলন প্রকাশনা


One Comment on “বুর্জোয়াদের বিশ্বকাপ”

  1. AYAN DAS says:

    SUDHU BISWACUP KENO?IPL EO ETA ARO PROKOT HOCCHE

    Like


Leave a reply to AYAN DAS Cancel reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.