পাহাড়ী জনগণ তাক করা বন্দুকের নলের মুখেই রয়ে গেছেন
Posted: June 11, 2016 Filed under: আদিবাসী, লাল সংবাদ/Red News | Tags: আদিবাসী, পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত “শান্তি” আলোচনা পাহাড়ী জনগণ তাক করা বন্দুকের , পাহাড় Leave a commentপার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত “শান্তি” আলোচনা
পাহাড়ী জনগণ তাক করা বন্দুকের নলের মুখেই রয়ে গেছেন
(ফেব্রুয়ারি/’৯৩)
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী জনগণ বিশ বছর যাবত রাষ্ট্রীয় সামরিক বাহিনীর বুটের তলায় রয়েছেন। পাহাড়ী জনগণের খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবন-যাপনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সামরিক কর্মকর্তাদের অনুমতিপত্র ছাড়া চলে না। হাট-বাজার, কৃষি কাজের জন্য লাঙ্গল নিয়ে মঠে যাওয়া, স্কুল-কলেজে লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হতে যাওয়া, আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া- যে কোন ক্ষেত্রেই এই অনুমতি অবশ্য অবশ্যই লাগবে। নচেৎ জেল বা মারপিট খেয়ে ‘দুষ্কৃতকারী’ হতে হয়। এই হচ্ছে গত বিশ বছর যাবৎ পাহাড়ী জনগণের জীবন ব্যবস্থা। সেখানে এই জনগণ প্রতি পদে পদে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সন্ত্রাসী শাসনে পদদলিত। এই রাষ্ট্রীয় সামরিক সন্ত্রাসী শাসনের আওতায়ই খালেদার সরকার এখন নতুন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। এই জন্য সংসদীয় কমিটি গঠন করে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘শান্তিবাহিনী’র সাথে। দু’দফা আলোচনা ইতিমধ্যে হয়েছেও। এই আলোচনা নাকি ওখানকার জনগণের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। এ ব্যাপারে উভয় পক্ষ থেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রচার চালানোও হচ্ছে। কথিত এই ‘শান্তি’ আলোচনা পাহাড়ী জনগণের জীবনে কেমন ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠা করবে তা সহজেই বলে দেওয়া যায়, শুধুমাত্র একটি বাস্তবতাকেই বিচার করে। আলোচনায় দুই পক্ষই পাহাড়ী জনগণের জীবনকে সামরিক শাসকের অনুমোদনপত্রের শৃঙ্খলে রেখেই আলোচনা চালাচ্ছে। এটা হচ্ছে পাহাড়ী জাতি ও জনগণকে বন্দুকের নলের মুখে রেখে আলোচনা চালানো। কীভাবে এই আলোচনা সৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে পারে?
পাহাড়ী জনগণের বুকে বন্দুকের নল তাক করে রেখে সরকারী পক্ষের এই আলোচনা তার বর্বর ফ্যাসিস্ট নিপীড়ক চরিত্রই পুনরায় প্রমাণ করছে। অন্যদিকে শান্তিবাহিনীর নেতারা নির্লজ্জ আপোস ও জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার পথই অনুসরণ করছে। এ আলোচনা যখন থেকে শুরু হয়েছে তারপর কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েছে। উভয় পক্ষের কিছু কিছু কূটনৈতিক কথাবার্তা ও ফাঁকা ‘আশাবাদ’ ছাড়া জনগণ কিছুই পায়নি। অথচ এ ক’মাসেই আলোচনা চলাকালীনও এই জাতীয় নিপীড়ক সরকার রাডার, জুম্মকণ্ঠ ও স্যাটেলাইট নামে তিনটি পত্রিকা পরপর নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ পত্রিকাগুলো পাহাড়ী জনগণের উপর সেনাবাহিনী ও বাঙালী অত্যাচারীদের বর্বর নির্যাতনের অল্প কিছু সত্য চিত্র তুলে ধরেছিল মাত্র। এ সময়ই লোগাং গণহত্যার তথাকথিত তদন্ত রিপোর্ট এই ফ্যাসিস্ট সরকার প্রকাশ করে। এতেও নিপীড়নকে আড়াল করা হয়েছে। সুতরাং পাহাড়ী জনগণ কীভাবে এই সরকার ও শাসক শ্রেণীর সাথে এমন একটি আলোচনায় নিজেদের অধিকার পাবে আশা করতে পারেন?
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানের যে কোন উদ্যোগের প্রাথমিক পূর্বশর্ত হতে পারে পাহাড় থেকে ফ্যাসিস্ট বাঙালী সেনাবাহিনীর অপসারণ এবং পাহাড়ে বাঙালী পুনর্বাসন বন্ধ। এছাড়া সমস্ত আলোচনা ব্যর্থ হতে বাধ্য। পাহাড়ী জনগণের স্বার্থের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে কিছু বেঈমান নিজেদের ভাগ্য হয়তো গড়তে পারবে, কিন্তু পাহাড়ী জনগণের জীবনে এক বিন্দু শান্তি বর্ষিত হবে না। ❑
সূত্রঃ পাহাড় ও সমতলে আদিবাসী জাতিসত্ত্বার সংগ্রাম সম্পর্কে নিবন্ধ সংকলন, আন্দোলন প্রকাশনা
Advertisements