রোজাভা থেকে তুরস্কের মাওবাদী TKP/ML-র গেরিলা যোদ্ধার চিঠি (ইংরেজি থেকে অনুবাদ)
Posted: May 27, 2017 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: চিঠি, তুরস্কের মাওবাদী, রোজাভার চিঠিঃ, TKP-ML/TİKKO Leave a commentরোজাভার চিঠিঃ “আমরা যুদ্ধ করার মধ্য দিয়েই যুদ্ধ শিখি”
চিঠিটা লিখেছেন তুরস্কের একজন TKP/ML গেরিলা যোদ্ধা (ইংরেজি থেকে অনুবাদ)
বিপ্লব একটা পথ; জনগণ যখন এ পথে পা বাড়ায় তারা একটা অচেনা পৃথিবীর দরজাই খোলে। আমরা এ পথে এসেছি আগুন ও মাটিকে ভালবেসে। আমরা এ পথে হাটা শুরু করেছি ব্যক্তিগত সম্পদের সাথে সব ধরনের যোগসুত্র ছিন্ন করে, একজন নবজাতকের মত জীবনে পদার্পণ করতে পেরে যে খুব খুশি ও আশাবাদী। আমরা এ পথে হাটা শুরু করেছি মধ্যরাত্রে, চাঁদের আলো আমাদের পথ দেখিয়েছে। যে বন্ধুরা আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে তারা সতর্কবাণী দিয়েছে, আমরা হাটতে শুরু করেছি। উচু উচু পর্বত, প্রমত্ত নদী ও গম ক্ষেতের বিষাক্ত গন্ধ পেরিয়ে আমরা অবশেষে রোজাভায় এসে পৌঁছেছি। আমাদের ভ্রমন ছিল মোট চৌদ্দ ঘন্টা, কোন রুটি, কোন পানি ও সিগারেট ছাড়া। এমন সব মানুষের সাথে যাত্রা যাদেরকে আমরা আগে কখনো দেখিনি….রাতের অন্ধকারের কারনে, এসব বন্ধুদের মুখ পর্যন্ত দেখতে পাইনি। এটা অবাক করার মত, হতে পারে তাদের কারো কারো সাথে পাশাপাশি যুদ্ধ করছি একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে। হতে পারে অন্যের বাহুতেই শেষ নিশ্বাসটি নিয়েছি কিন্তু জানা হয়নি তার প্রিয় বই কিংবা প্রিয় মুভি কি।
আমরা এখন রোজাভায়। এখানে কেবল অস্ত্রধারীরাই মিলিত হয় আর চুমু খায়। একটা উষ্ণ অভ্যর্থনার পর আমরা চা পান করলাম,চিজ দিয়ে রুটি খেলাম। সবার উৎসুক দৃষ্টি। প্রত্যেকের চোখ অন্যের চোখের উপর, অন্যের দিকে তাকিয়ে এমনতর কমরেডসুলভ হাসির মধ্যে যেন তলিয়ে গেছে সমস্ত ক্লান্তি।
তিন/চার দিন অপেক্ষার পর সংগঠন আমাদেরকে ফ্রন্টে নিয়ে গেল, যেখানে আমরা যুদ্ধ করব। উভয় পাশে দুটো পর্বত দাঁড়িয়ে : একটা ধুলো দিয়ে তৈরি অন্যটা ধোয়ায়। এক পাশে আব্দুল আজিজ পর্বত অন্য পাশে সেনগাল পর্বত। আর বাকী যা তা হল বিশাল শুন্যতা, এক উষর প্রান্তর সমতল ও অনুর্বর, গাছের চিহ্নমাত্র নেই। তাপমাত্রা যে কারো চোখকে বিষন্ন করে দিতে পারে। প্রত্যেক দিনই ধুলিঝড় দৃষ্টিসীমা শুন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসে। আমরা যেখানে আছি সেখানে কমরেডরা এসেছে কুর্দিস্তানের চার কোনা থেকে- টার্কি, ইরান,ইরাক ও সিরিয়া থেকে। সবাই তরুন যোদ্ধা জীবনী শক্তিতে ভরপুর। এটা আমাকে আহমেদ আরিফের কবিতা মনে করিয়ে দেয় : ‘যদি তুমি আমার ভাই বোনদের জান, তারা কতোটা ভাল তবে আমিও তোমাকে জানাব ‘।
ব্যাটেলিয়নে যৌথজীবন পদ্ধতি। যা কিছু করা হবে তার পরিকল্পনা যৌথভাবেই হয়। এখানে আমাদের বন্ধুত্বটাই আসল। অনেক বন্ধুরা TKP-ML/TiKKO সম্পর্কে জানেনা। এটা তাদের জন্য উৎসুকের ব্যাপার যে YPG/YPJ ছাড়াও তাদের জন্য আরেকটি সংগঠন রয়েছে। যখন আমরা বলি, আমাদের রোজাভায় আসার কারন আমাদের পার্টি, আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ হয় এবং একে অপরের প্রতি আত্মবিশ্বাস প্রসারিত হয়।আমাদের ব্যাটেলিয়নে আমাদের একটা স্লোগান আছে,” চা, সিগারেট এবং যুদ্ধ “।এই তিনটা জিনিস যেন এখানে দৃঢভাবে গেঁথে আছে।
আমরা সম্মুখ সমরে। ISIL গ্যাংদের থেকে আমাদের অবস্থান মাত্র সাতশত মিটার দুরে। প্রতিদিনই কোন না কোন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয়। মর্টার, মিসাইল, বুলেট আমাদের কালোরাতকে আলোকিত করে। রাতে আমরা এম্বুশের জন্য অপেক্ষা করি, আমাদের ক্ষেত্র তৈরি করি । কোন কোন দিন আট থেকে দশ ঘন্টা সারভেইলেন্স ডিউটি থাকে। আমাদের মনোবল দৃঢ় কারন আমরা যুদ্ধের মধ্যেই তাকে কেন্দ্রীভূত করতে পেরেছি। এখানে শহর ও যুদ্ধক্ষেত্র সম্পর্কে অনেককিছু শিখেছি, আমাদের নেতা কমরেড ইব্রাহিম কায়পাক্কায়া ঠিক যেমনটি আমাদের শিখিয়েছিলেন :” আমরা যুদ্ধ করার মধ্য দিয়েই যুদ্ধ শিখি”। স্বাধীনতা মানে হল নিজের আবশ্যক বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং পার্টির নির্দেশনা মতো আমরা সর্বহারা শ্রেণীর ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত। আত্মবিশ্বাসের সাথে ছোট ছোট পদক্ষেপে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব, আমরা এটাও অবশ্যই বিনয়ের সাথে স্মরন করব- আমাদের ক্ষমতা ও আদর্শের ব্যাপ্তি।
কমরেড সেফাগুল কেশকিন আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন : “প্রত্যেকে অবশ্যই তাদের দায়িত্ব পালন করবে”। আমরা আমাদের নির্দেশনা পেয়েছি, আমরা আমাদের কাজের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। সে সব কাজ আজ রোজাভায়, আগামীকাল দারসিমে তারপর কৃষ্ণসাগরে- আমরা আমাদের কাজ করে যাব। আর সবসময় এই কথাটিই স্মরন করব, পুনরাবৃত্ত করব: যেখানে নিপীড়ন আছে, সেখানে প্রতিরোধ আছে এবং কমরেড ইব্রাহিম সেখানেই আছেন।
রোজাভা থেকে একজন TKP/ML গেরিলা যোদ্ধা।
অনুবাদঃ সাইফুদ্দিন সোহেল
সূত্রঃ http://www.signalfire.org/2016/03/16/hi-comrades-a-letter-from-a-tkpml-tikko-fighter-in-rojava/