২২ এপ্রিল লেনিন দিবস -লেনিনবাদকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরুন
Posted: April 20, 2017 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: লেনিন, লেনিনের জন্মদিন, ২২শে এপ্রিল, lenin Leave a comment২২ এপ্রিল হলো কমরেড লেনিনের জন্মদিন। এই দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণ লেনিন দিবস হিসাবে পালন করে থাকে। ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল কমরেড লেনিন রাশিয়ার ভলগা নদীর তীরবর্তী সিমবিস্ক শহরে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি মস্কোতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্রের উপর লেখাপড়া করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময়েই তিনি জার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এই ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়ার কারণে জার সরকার তাকে সাইবেরিয়াতে নির্বাসনে পাঠায়। লেনিন যে সময়ে রাশিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন সেই সময়ে রাশিয়ায় নৈরাজ্যবাদী বাকুনিনপন্থীদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। এই বাকুনিনপন্থীরা ব্যক্তি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করতো। তাদের ধারণা ছিল রাশিয়ার জনগণের সমগ্র দুর্দশার জন্য দায়ী হলো রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিচালনায় নিযুক্ত মুষ্টিমেয় কয়েকজন শীর্ষ কর্তা ব্যক্তি। তাই এই শীর্ষ কর্তাদের যে কোন পন্থায় অপসারণ করতে পারলেই জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে বিজয় অর্জিত হবে। সেই প্রেক্ষিতেই তারা রাশিয়ার জারকে খুন করে। আর এই খুনের দায়ে লেনিনের বড় ভাইয়ের ফাঁসি হয়। কমরেড লেনিন সেই থেকে শিক্ষা নিয়ে নৈরাজ্যবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে মার্কসবাদের পথ অনুসরণ করেন এবং রুশ দেশে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে অক্টোবর বিপ্লব সম্পন্ন করে পৃথিবীর বুকে প্রথম শোষণমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা শ্রমিক শ্রেণীর রাষ্ট্ররূপ সোভিয়েতে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেন। তিনি শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রেণী সংগ্রামের বিকাশের গতিধারায় বিপ্লবী সংগ্রামের ভিতর দিয়ে পশ্চাৎপদ সমাজ ব্যবস্থা তথা জারতন্ত্রের উচ্ছেদ করে শ্রমিক শ্রেণীসহ অন্যান্য শোষিত জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে অগ্রসর করতে ব্রতী হন।
মানব জাতির ইতিহাসে উৎপাদন শক্তি বিকাশের প্রক্রিয়ায় আদিম সাম্যবাদী সমাজের ভাঙনের পর সৃষ্টি হয় শ্রেণী বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র। এই শ্রেণী বিভক্ত সমাজ সৃষ্টির সাথে সাথে সমাজে দেখা দেয় শ্রেণী শোষণ ও শ্রেণী সংগ্রাম। শোষিত নিপীড়িত শ্রেণী তার ওপর চেপে বসা শোষণ থেকে মুক্তির জন্য শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে বার বার বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। কিন্তু শোষিত জনগণ শ্রেণী শোষণ থেকে মুক্তি অর্জন করতে পারেনি। ইতিহাসের গতিধারায় বুর্জোয়া ব্যবস্থা বিকাশের সাথে সাথে বুর্জোয়া শ্রেণীর বিপরীতে শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। বুর্জোয়া শ্রেণী বিভিন্ন দেশে সামন্তদের হটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। সৃষ্টি হয় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার। বুর্জোয়া ব্যবস্থার যত বিকাশ ঘটতে থাকে শ্রমিক শ্রেণীরও ততই বিকাশ ঘটে। বুর্জোয়া শ্রেণীর বিপরীতে শ্রমিক শ্রেণী ছাড়া বুর্জোয়া ব্যবস্থা তার অস্তিত্বের শর্ত হারায়। বুর্জোয়া ব্যবস্থায় গোটা উৎপাদন প্রক্রিয়া হলো সামাজিক, কিন্তু মালিকানা হলো ব্যক্তিগত। বুর্জোয়া ব্যবস্থায় জমি, বাড়ি, কলকারখানা সকল সম্পদের মালিক হচ্ছে বুর্জোয়া শ্রেণী। কিন্তু তারা উৎপাদন করে না, উৎপাদন কাজ চালায় হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী। কিন্তু এই উৎপাদিত সামগ্রির মালিক হয় বুর্জোয়া শ্রেণী। ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে বুর্জোয়া শ্রেণীর বিপরীত শ্রেণী হিসাবে শ্রমিক শ্রেণীর আবির্ভূত হয়। শ্রমিক শ্রেণী এমন একটি শ্রেণী যা বুর্জোয়া সমাজের কবর খননকারী। কিন্তু বুর্জোয়া সমাজে বুর্জোয়া শ্রেণীর বিপরীত শ্রেণী শ্রমিক শ্রেণীর অস্তিত্ব ছাড়া বুর্জোয়া উৎপাদন ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। পুঁজিবাদী সমাজে এই পরস্পর বিরোধী স্বার্থযুক্ত দুই শ্রেণীর মধ্যে শুরু হয় তীব্র শ্রেণী সংগ্রাম।
মার্কসবাদের তিনটি অপরিহার্য অংশ হলো (১) মার্কসীয় দর্শন- দ্বান্দ্বিক ঐতিহাসিক বস্তুবাদ; (২) সর্বহারা শ্রেণীর শ্রেণী সংগ্রামের মতবাদ; (৩) রাজনৈতিক অর্থনীতি। তৎকালীন ইউরোপের সবচেয়ে অগ্রসর তিনটি দিক জার্মান দর্শন, ফ্রান্সের শ্রেণী সংগ্রাম ও ইংল্যান্ডের বিকাশমান বুর্জোয়া অর্থশাস্ত্রের সারসঙ্কলন করে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন মার্কসবাদ। বুর্জোয়া ব্যবস্থার এই বিকাশের যুগে শ্রমিক শ্রেণীর শ্রেণী সংগ্রামের মতবাদ প্রচার করেন মহামনীষী কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলস। মহামনীষী মার্কস দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের আবিষ্কারক। দর্শনের ক্ষেত্রে তিনি হেগেলের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ও ফয়েরবাখের বস্তুবাদকে গ্রহণ করে সৃষ্টি করে বিশ্বের বুকে সম্পূর্ণ নতুন দর্শন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ। মার্কস ও এঙ্গেলস হেগেলের দ্বান্দ্বিকতার যুক্তিসঙ্গত সারভাগ গ্রহণ করেন এবং ভাববাদী জঞ্জাল বর্জন করেন। সেই সাথে ফয়েরবাখের বস্তুবাদের অন্তর্নিহিত সারভাগ গ্রহণ করেন এবং বর্জন করেন তার অধিবিদ্যক পদ্ধতিকে। মার্কস ও এঙ্গেলস ফয়েরবাখের বস্তুবাদী ভিত্তি এবং হেগেলের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিকে উন্নত করে সমন্বিত করে এক গুণগত উন্নয়ন ঘটিয়ে সৃষ্টি করেন সর্বহারা শ্রেণীর মুক্তির দর্শন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ। মহামনীষী মার্কস দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের আলোকে সমাজ ব্যবস্থার বিবর্তনের ধারা বিশ্লেষণ করে দেখান যে, সভ্যতার ইতিহাস হলো শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। মহামনীষী মার্কস পুঁজিবাদী শোষণের মর্মবস্তুকে আবিষ্কার করেন। তিনি আবিষ্কার করেন উদ্বৃত্তের মূল্যতত্ত্ব। মহামনীষী মার্কস তার অবদান সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে ১৮৫২ সালের ৫ মার্চ লন্ডন থেকে ইয়ো. ভেইদেমেয়ারের কাছে লিখিত এক চিঠিতে তিনি নিজেই বলেছেন, “এখন আমার প্রসঙ্গে ধরলে, বর্তমান সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর অস্তিত্ব আবিষ্কারের বা তার মধ্যে সংগ্রাম আবিষ্কারের কৃতিত্ব আমার নয়। আমার বহু পূর্বে বুর্জোয়া ঐতিহাসিকেরা এই শ্রেণী সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিকাশের ধারা এবং বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদেরা বিভিন্ন শ্রেণীর অর্থনৈতিক শরীরস্থান বর্ণনা করেছেন। আমি নতুন যা করেছি তা হচ্ছে এইটা প্রমাণ করা যে, (১) উৎপাদন বিকাশের বিশেষ ঐতিহাসিক স্তরের সঙ্গেই শুধু শ্রেণীসমূহের অস্তিত্ব জড়িত; (২) শ্রেণী সংগ্রামের অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে প্রলেতারীয় একনায়কত্ব; (৩) এই একনায়কত্বটা সমস্ত শ্রেণীর বিলুপ্তি ও শ্রেণীহীন সমাজে উত্তরণের পর্যায় মাত্র।” [মার্কস এঙ্গেলস রচনা সঙ্কলন- দ্বিতীয় খন্ড, দ্বিতীয় অংশ, পাতা ১৩৮, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো]।
লেনিন শুধু মার্কস এঙ্গেলসের শিক্ষাকে কার্যকরী করেননি। তিনি ছিলেন এই শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষাকারী। তিনি সাম্রাজ্যবাদী যুগে বিকাশের নতুন পর্যায়ের সাথে, পুঁজিবাদের নতুন পর্যায়ের সাথে মার্কস ও এঙ্গেলসের শিক্ষাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে একে আরও বিকশিত করেন। এর অর্থ হলো শ্রেণী সংগ্রামের নতুন অবস্থাধীনে মার্কসবাদকে আরও বিকশিত করতে গিয়ে পুঁজিবাদের বিকাশের যুগে মার্কস ও এঙ্গেলস কর্তৃক যা সৃষ্ট হয়েছিল তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সাম্রাজ্যবাদ ও সর্বহারা বিপ্লবের যুগে মার্কসবাদের জ্ঞানভান্ডারে নতুন নতুন অবদান যুক্ত করেন।
মার্কস ও এঙ্গেলস তাদের মতবাদ প্রচার করেন প্রাক সাম্রাজ্যবাদের যুগে, পুঁজিবাদের বিকাশের যুগে। যখন পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রবেশ করেনি। অর্থাৎ বিকশিত সাম্রাজ্যবাদের যখন জন্ম হয়নি, শ্রমিক শ্রেণী যখন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, শ্রমিক বিপ্লব যখন কার্যক্ষেত্রে আশু ও অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠেনি সেই প্রাক বিপ্লব যুগে মার্কস ও এঙ্গেলস তাদের কার্যকলাপ চালান। মার্কস ও এঙ্গেলসের সুযোগ্য শিষ্য লেনিন তার কাজ চালিয়েছেন বিকশিত সাম্রাজ্যবাদের যুগে, শ্রমিক বিপ্লব যখন আশু করণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলস যখন শ্রেণী সংগ্রামের মতবাদ প্রচার করেন, তখন বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণীর সাথে বুর্জোয়া শ্রেণীর দ্বন্দ্বই ছিল মৌলিক দ্বন্দ্ব। আর লেনিন যখন তার কার্যকলাপ চালান তখন পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদী যুগে প্রবেশ করেছে। পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদী যুগে প্রবেশের সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী তিনটি মৌলিক দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল হয়। (ক) পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দেশে বুর্জোয়া শ্রেণীর সাথে শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্ব; (খ) ঔপনিবেশিক দেশের নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সাথে সাম্রাজ্যবাদের দ্বন্দ্ব; (গ) এক সাম্রাজ্যবাদী দেশের সাথে আর এক সাম্রাজ্যবাদী দেশের দ্বন্দ্ব। কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি ১৯১৭ সালে রুশ দেশে শ্রমিক বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল ও সাম্যবাদের লক্ষ্যে শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পর আরও একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব যুক্ত হয়। তা হলো (ঘ) সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার দ্বন্দ্ব। আবার ১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক আলবেনিয়ার পতনের পর বিশ্বব্যাপী কোন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র না থাকায় সমাজতন্ত্রের সাথে পুঁজিবাদের দ্বন্দ্ব- এই দ্বন্দ্বের কোন অস্তিত্ব বর্তমানে নেই।
মার্কসবাদ- লেনিনবাদের অন্যতম অনুসারি কমরেড স্তালিন লেনিনবাদের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘লেনিনবাদ হলো সাম্রাজ্যবাদ ও সর্বহারা বিপ্লবের যুগের মার্কসবাদ। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, লেনিনবাদ হলো সাধারণভাবে শ্রমিক বিপ্লবের মতবাদ ও রণকৌশল এবং বিশেষভাবে এ হলো শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্বের মতবাদ ও রণকৌশল। বিকশিত সাম্রাজ্যবাদের যখন জন্ম হয়নি, সর্বহারা শ্রেণী যখন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে শ্রমিক বিপ্লব যখন কার্যক্ষেত্রে আশু এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠেনি সেই প্রাক বিপ্লব যুগে (এখানে আমরা শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবের কথাই বলছি) মার্কস আর এঙ্গেলস তাদের কার্যকলাপ চালাতেন। আর মার্কস-এঙ্গেলসের শিষ্য লেনিন তাঁর কাজ চালিয়েছেন বিকশিত সাম্রাজ্যবাদের যুগে, শ্রমিক বিপ্লবের বিকাশের যুগে- যখন শ্রমিক বিপ্লব একটি দেশে ইতিমধ্যে জয়যুক্ত হয়েছে, বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে চূর্ণ করে, শ্রমিক শ্রেণীর গণতন্ত্রের সোভিয়েততন্ত্রের যুগের সূত্রপাত করেছে। এই কারণেই লেনিনবাদ হলো মার্কসবাদের আরও বিকশিত রূপ।’ [লেনিনবাদের ভিত্তি- কমরেড স্তালিন]।
মার্কস ও এঙ্গেলস প্রাক সাম্রাজ্যবাদের যুগে পুঁজি গ্রন্থে পুঁজিবাদের মূল ভিত্তিগুলোর বিশ্লেষণ প্রদান করেন। আর কমরেড লেনিন পুঁজি গ্রন্থের মূল নীতিমালার ভিত্তিতে পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর সাম্রাজ্যবাদ গ্রন্থে- সাম্রাজ্যবাদের এক মার্কসবাদী বিশ্লেষণ উপস্থিত করেন। কমরেড লেনিন সাম্রাজ্যবাদকে সংজ্ঞায়িত করেন। কমরেড লেনিন বলেন যে, পুঁজিতন্ত্রের একচেটিয়া স্তরই হলো সাম্রাজ্যবাদ।’ তিনি সাম্রাজ্যবাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদের ৩টি চরিত্র ও ৫টি বৈশিষ্ঠ্য আলোচনা করেন। তাঁর আলোচিত সাম্রাজ্যবাদের এই ৩টি চরিত্র হলো (১) সাম্রাজ্যবাদ হচ্ছে একচেটিয়া পুঁজিবাদ; (২) সাম্রাজ্যবাদ হচ্ছে ক্ষয়িষ্ণু বা পরজীবী পুঁজিবাদ; (৩) সাম্রাজ্যবাদ হচ্ছে মুমূর্ষু বা মৃতপ্রায় পুঁজিবাদ। লেনিন সাম্রাজ্যবাদের ৫টি মূলগত বৈশিষ্ঠ্য তুলে ধরেন। এই বৈশিষ্ঠ্যগুলি হলো- (১) উৎপাদন ও মূলধনের কেন্দ্রীভবন এমন উঁচু স্তরে উন্নীত হয়েছে যে, তা থেকে একচেটিয়া কারবারের উদ্ভব ঘটেছে আর এই সমস্ত একচেটিয়া কারবারই অর্থনৈতিক জীবনের অধিনিয়ন্তার ভূমিকা গ্রহণ করেছে; (২) ব্যাঙ্ক পুঁজির সাথে শিল্প পুঁজির সহমিলন ঘটেছে আর এই মহাজনি মূলধনের ভিত্তিতে মহাজনি মোড়লতন্ত্রের অভ্যুদয় ঘটেছে; (৩) পণ্য রপ্তানি থেকে স্বতন্ত্র যে মূলধন রপ্তানি তা অসাধারণ গুরুত্ব অর্জন করেছে; (৪) আন্তজাতিক একচেটিয়া পুঁজিবাদী সমাহারের আবির্ভাব ঘটেছে। আর এই সমস্ত সমাহার পৃথিবীকে নিজেদের মধ্যে বেঁটে নিতে শুরু করেছে; (৫) বৃহত্তম পুঁজিতান্ত্রিক শক্তিবর্গের মধ্যে সমগ্র বিশ্বের ভূখন্ড ভাগবাঁটোয়ারা পরিসমাপ্ত হয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার মার্কসীয় মৌলিক ভাবনার বাস্তবে রূপায়ন করেন। এক্ষেতে মার্কসবাদের জ্ঞান ভান্ডারে লেনিনের নতুন অবদান হলো- (১) তিনি সোভিয়েত ব্যবস্থাকে সর্বহারা শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় রূপ হিসাবে আবিষ্কার করেন। এপ্রেক্ষিতে তিনি প্যারি কমিউন ও রুশ বিপ্লবের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। (২) তিনি সর্বহারা শ্রেণীর মিত্রের সমস্যার দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বকে সংজ্ঞায়িত করেন পরিচালক হিসাবে সর্বহারা শ্রেণী আর পরিচালিত হিসাবে অসর্বহারা শ্রেণীসমূহের শোষিত জনগণের মধ্যেকার শ্রেণী মৈত্রীর বিশেষ রূপ হিসাবে। (৩) তিনি এই বাস্তব ঘটনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন যে, সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব হলো শ্রেণী বিভক্ত সমাজে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ রূপ। সর্বহারা গণতন্ত্রের এই রূপ পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থকেই অভিব্যক্ত করে।
তিনি প্রমাণ করেন, পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী পরিবেষ্টিত একটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করে সাফল্যের সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক বির্নিমাণ ও শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রযাত্রা সম্ভব। মার্কসবাদের মৌলিক নীতিমালার ভিত্তিতে তিনি সোভিয়েত রাষ্ট্রে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণে বিশেষ সাফল্য স্থাপন করেন। এক্ষেত্রে মার্কসবাদের জ্ঞানভান্ডারে তার নতুন অবদান হলো- (১) তিনি প্রমাণ করেন যে, সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক পরিবেষ্টিত সর্বহারা একনায়কত্বাধীন একটি দেশে পরিপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। (২) তিনি আবিষ্কার করেন অর্থনীতির কর্মনীতির সুনির্দিষ্ট গাইডগুলো, যার দ্বারা সর্বহারা শ্রেণী অর্থনীতির মূল অবস্থানগুলোর অধিকারী হওয়ার সুবাদে সমাজতান্ত্রিক শিল্পকে কৃষির সাথে সংযুক্ত করে সমগ্র জাতীয় অর্থনীতি সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে পরিচালিত হতে পারে। (৩) তিনি আবিষ্কার করেন সমবায়ের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক বিনির্মানের গতিপথে কৃষক সমাজের মূল অংশকে ক্রমান্বয়ে পরিচালনা করার ও টেনে নিয়ে আসার সুনির্দিষ্ট পন্থার, যে সমবায় হলো সর্বহারা একনায়কত্বের হাতে ক্ষুদে কৃষক অর্থনীতির রূপান্তর সাধনের ও সমাজতন্ত্রের ভাবধারায় কৃষক সমাজের মূল অংশকে পুনর্শিক্ষিত করে গড়ে তোলার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।
তিনি মার্কস-এঙ্গেলসের মৌলিক গাইড লাইনের আলোকে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার অবসান ও সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা নিপীড়িত জাতি ও জনগণের জাতীয় মুক্তি অর্জনের আকাঙ্খা বাস্তবায়নের সমস্যার সমাধান করেন। এই ক্ষেত্রে মার্কসবাদী জ্ঞানভান্ডারে তার নতুন অবদান হলো- (১) লেনিন সাম্রাজ্যবাদের যুগে জাতীয় ও ঔপনিবেশিক বিপ্লব সম্পর্কিত ধারণাগুলোকে একটি একক সামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতির মতামতে একত্রীভূত করেন। (২) তিনি জাতীয় ও ঔপনিবেশিক প্রশ্নকে সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদের প্রশ্নের সাথে সম্পর্কযুক্ত করেন। (৩) তিনি জাতীয় ও ঔপনিবেশিক প্রশ্নকে আন্তর্জাতিক সর্বহারা বিপ্লবের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে ঘোষণা করেন।
লেনিনের এই সব গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে ধারণ করে আজও বিশ্বের দেশে দেশে সংগ্রামী শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণ শ্রেণী সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে অগ্রসর করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। লেনিনবাদ বিশ্বের দেশে শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িত জাতি জনগণের মুক্তির সংগ্রামে পথ নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে চলেছে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে সমাজতন্ত্র তথা সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই ও নয়া ঔপনিবেশিক দেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তির লড়াই এক অভিন্ন লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক তথা সামগ্রিক সঙ্কটের উদ্ভব ঘটেছে বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণ তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার দুর্বলতম গ্রন্থী ছিন্ন করার ফল হিসাবে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দেশের শ্রমিক শ্রেণী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও নয়া ঔপনিবেশিক দেশের শ্রমিক শ্রেণী এবং জনগণ সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই কাজে শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণ তখনই সাফল্য অর্জন করতে পারবে যখন লেনিনবাদের মৌলিক অবদানসমূহকে ধারণ করে তা সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করতে পারবে। বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণ আজ সেই মহান ব্রত পালনের লক্ষ্যেই অগ্রসর হচ্ছে।
মাটি খুঁড়ে কমরেড লেনিনের মাথাটি উদ্ধার করলেন শ্রমিকরা
Posted: September 11, 2015 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: লেনিন Leave a commentবার্লিন: রুশ বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের বিশাল মূর্তির মাথার অংশ মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করেছেন শ্রমিকরাই। যে শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার আদায়ের জন্যে বিপ্লবে নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই শ্রমিকরাই উদ্ধার করলেন তাদের কমরেডের মূর্তির মাথা।
অপসারণের ২৪ বছর পরে বৃহস্পতিবার বার্লিনের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের এক নির্জন জঙ্গলের ভেতর থেকে গ্রানাইটের ওই মূর্তির মাথাটি উদ্ধার করা হয়। সম্পূর্ণ মূর্তিটির সন্ধান না পেলেও স্পাদনদাউ সিতাদেল জাদুঘরে স্থান পাচ্ছে ওই মূর্তির সাড়ে তিন টন ওজনের মাথা।
বেশ কয়েক বছর ধরেই ঐতিহাসিকরা এই মূর্তি উদ্ধারের জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। অবশেষে শ্রমিকরাই মাটি খুঁড়ে কেবলমাত্র মাথাটি উদ্ধার করেন।
তৎকালীন কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির রাজধানী বার্লিনে প্রসঙ্গত, লেনিনের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৭০ সালের ১৯ এপ্রিল পূর্ব জার্মানিতে ২ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ৬২ ফুট(১ দশমিক ৭ মিটার।) উচ্চতার এই মূর্তিটি উদ্বোধন করা হয়। ইউক্রেনের গোলাপী গ্রানাইট পাথর খোদাই করে তৈরি হয়েছিল ওই মূর্তির মাথা। শরীরের পাথুরে ব্লকগুলো রাশিয়া থেকে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্ত ১৯৯১ সালে পুঁজিবাদী দুই জার্মানির পুনর্মিলনের অংশ হিসেবে বার্লিন দেয়ালের পতন ঘটে। সেসময় পুঁজিবাদী শাসকদের নেতৃত্বে লেনিনের মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং ধ্বংসাবশেষ নির্জন বনের মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
৩.৫ টন ওজনের লেনিনের বিশাল মাথাটি শ্রমিকরা ক্রেনে করে মাটি থেকে উদ্ধার করেন।
পুঁজিবাদী পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি একীভূত হওয়ায় ১৯৯১ সালে লেনিনের মূর্তিটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন বার্লিনের তৎকালীন মেয়র। পাথরের তৈরি ওই মূর্তি ভাঙতে কয়েক মাস সময় লেগেছিল। লেনিনের মূর্তিকে ১২০ টুকরো করার পর একটি জঙ্গলে বালুর ভেতর পুঁতে রাখা হয়েছিল এর মাথাটি।
সূত্র: এনডিটিভি
৭১ বছর আগে কেন আর্নেস্ট থালমানকে হত্যা করা হয়েছে
Posted: August 7, 2015 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: আর্নেস্ট থালমান, একনায়কত্ত্ব, কমিউনিস্ট, কার্ল মার্ক্স, পার্টি, পুঁজিবাদ, পূঁজি, বিপ্লব, মাও, মাওবাদী, যুদ্ধ, রোমান্টিকতা, লাল সংবাদ, লেনিন, সমাজ, সমাজতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ Leave a commentহিটলার ও হিমলারের সরাসরি নির্দেশে আর্নেস্ট থালমানকে ১৮ আগস্ট ১৯৪৪-এ এগার বছরেরে নির্জন কারাবাসের পর হত্যা করা হয়। এর আগে তাকে বুটজেন কাগাগার থেকে ওয়েইমারের কাছে বুচেনওয়াল্ড কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে সরিয়ে আনা হয়, যেখানে তাকে হত্যা করে তার দেহকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
তাই তার কোন কবর হয়নি। এই ঘটনাটি এতটাই গোপনে ঘটানো হয়েছে যে নাৎসি সংবাদপত্র “ভয়শের অবজারভার” রিপোর্ট করে যে থালমান ২৪ আগস্ট মিত্র বাহিনীর “সন্ত্রাসী বোমা”য় নিহত হয়েছেন।
নাৎসিরা সত্য প্রকাশে এতটা ভীত ছিল কেন? কেননা আর্নেস্ট থালমান ধারণ করতেন একটা দৃষ্টিভঙ্গী, একটা তৎপরতা, এক সংস্কৃতি আর এক মতাদর্শ। আর্নেস্ট থালমান মানে হচ্ছে জাতীয় সমাজতন্ত্র থেকে মুক্তি, যুদ্ধ থেকে মুক্তি, গণফ্রন্টের মাধ্যমে, আর জনগণতন্ত্রের লক্ষ্যে!
জাতীয় সমাজতন্ত্র সত্যিকার সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি করেছিল, জার্মানীর জন্য সঠিক লাইন খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছিল। ফল হল যুদ্ধ, দারিদ্র, ধ্বংস, আর নৈতিক অবক্ষয়, আর এ সবই পুঁজিবাদবিরোধী রোমান্টিকতাবাদের ফসল, যার লক্ষ্য ছিল সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা, “পরজীবী”দের অপসারণ করতেঃ যার আসল অর্থ ছিল “লগ্নি পুঁজির সর্বাধিক সাম্রাজ্যবাদী উপাদানসমূহের সর্বাধিক প্রতিক্রিয়াশীল, সবচেয়ে জাতিদম্ভী প্রকাশ্য সন্ত্রাসবাদী একনায়কত্ব”।
আর্নেস্ট থালমান আসন্ন ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। ১৯২৪ থেকে তিনি জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন, যে পার্টি রোজা লুক্সেমবার্গ ও কার্ল লিবনেখট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ব্যাপক জনগণকে সমাবেশিত করার সর্ব প্রকার প্রচেষ্টা চালান, যে জনগণ সমাজ গণতন্ত্র কর্তৃক পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল, কারণ জার্মান সমাজ গণতন্ত্রী পার্টি (এসপিডি) না ছিল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পক্ষে, না সত্যকার ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রামের পক্ষে।
কমিউনিস্ট পার্টি তার পক্ষে যা করা সম্ভব সবই করে যাতে পুঁজিবাদবিরোধী ও ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম এক গণ আন্দোলনে পরিণত হয়; তাই লাল ফ্রণ্ট যোদ্ধাদের মোর্চাঃ ফ্যাসিবিরোধী একশনও প্রতিষ্ঠিত হয়। এই লড়াই সমাজ গণতন্ত্রের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নয় বরং এসপিডির আত্মসমর্পণ লাইনের বিরুদ্ধে চালানো হয়। জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি যুক্তফ্রন্টের লাইনকে রক্ষা করে, আর স্পেন ও ফ্রান্সে যেমনটা হয়েছে, গণফ্রন্টের লাইনের জন্য এগিয়ে যায়।
নাৎসি ধারার মধ্যেকার যেসকল জনগণ বন্দী হয়েছিলেন তাদেরকেও কখনো ভোলা হয়নি। যেমনট আর্নেস্ট থালমান জানুয়ারি ১৯৩৩-এ ব্যাখ্যা করেনঃ
“কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের ব্যাপক জনগণের প্রতিও লক্ষ্য রাখে।
এসএ ও এসএস বাহিনীর মধ্যে এক ভয়ানক পার্থক্য ছিল, শ্রমিক এলাকায় দাঙ্গা বাঁধানোর মধ্যে, অথবা শ্রমিকদের ঘরবাড়ী ও ক্ষেত্রগুলিতে ঘেরাও আক্রমণ, ব্যাপক জনগণের মধ্যেওঃ সংকটাক্রান্ত শ্রমিক, কর্মচারী, নিম্ন মধ্যবিত্ত, হস্তশিল্পী ও ছোট ব্যবসাদারদের দুর্দশার মধ্যে পার্থক্য ছিল, যারা জাতীয় সমাজতন্ত্রকে সমর্থন দিয়েছে যেহেতু তারা হিটলার, গোয়েবলস ও স্ট্র্যাসার প্রভৃতির গলাবাজির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে।…
আমাদেরকে ধৈর্যশীল শিক্ষিতকরণের মাধ্যমে জনগণকে দেখাতে হবে যে হিটলার পার্টির সত্যিকার ভুমিকা হচ্ছে লগ্নি পুঁজির সেবা করা, ট্রাস্ট রাজ রাজরাদের, বৃহৎ ভুস্বামীদের, কর্মকর্তাদের ও প্রিন্সদের সেবায় কাজ করা।” [কার্ল লিবনেখটের বাড়ির সামনে নাৎসি উস্কানী এবং কিছু শিক্ষা, ২৬ জানুয়ারি ১৯৩৩]
আর এটাও জানা দরকার যে, নভেম্বর ১৯৩২-এর সাধারণ নির্বাচনে নাৎসি পার্টির ভোট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। যদিও নাৎসিদেরকে এককোটি দশ লাখ জনগণ ভোট দিয়েছিল, জুলাইয়ের থেকে ২০ লাখ ভোট কম পেয়েছে তারা। নাৎসি আন্দোলন ক্ষয়প্রাপ্ত হতে শুরু করেছিল, তাই, হিটলারকে দ্রুত ক্ষমতায় বসানো হয়েছিলঃ যা কোন ক্ষমতা দখল ছিলনা, বরং ক্ষমতার বদল।
যেমনট আর্নেস্ট থালমান অক্টোবর ১৯৩২-এ নির্বাচনের আগেই উপলব্ধি করেনঃ
“জাতিদম্ভী ঢেউয়ের কারণে ফ্যাসিবাদী গণ আন্দোলনের বিপুল বৃদ্ধি ফ্যাসিবাদী শাসকদের ক্ষমতা দখলে অনুমোদন দেয়।
লগ্নি পুঁজির পলিসি, যা হিটলারের ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন কর্তৃক সরকারী ক্ষমতার অনুশীলনকে বর্জন করে, একদিকে আভ্যন্তরীণ ও বাইরের সংঘাতসমূহের অতিদ্রুত পোক্ত হওয়ার ভীতি থকে উদ্ভূত হয়, অন্যদিকে ফ্যসিবাদী গণ আন্দোলনের মজুদকে যতদূর সম্ভব সুদৃঢ়ভাবে বজায় রাখার বুর্জোয়াদের আকাঙ্খা থেকে, যাতে একই সাথে তাকে “সজ্জিত’ করা যায়, অর্থাৎ তাকে ফ্যাসিবাদী একনায়কত্বের নিরাপদ যন্ত্র বানানো যায় বাঁধাদানকারী উপাদানসমূহকে অতিক্রম করে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের এ পর্যন্ত অগ্রগমন এখন থমকে দাঁড়িয়েছে আর অবনতির জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছে যে কারণে তা হল সর্বহারা শ্রেণীর বাড়ন্ত অগ্রগমন, পাপেন সরকারের রাজনীতির মাধ্যমে দারিদ্রকরণ ও হিটলারের সীমাহীন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিপীড়িত মধ্যবিত্তের জাগড়নরত রেডিকেলকরণ এবং জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির ফ্যাসিবিরোধী গণসংগ্রামের প্রচণ্ড অগ্রগতি।
বাঁধাহীন শোষণের সমর্থন হিসেবে হিটলার পার্টির ভুমিকা, পুঁজিবাদী, জাঙ্কার ও জেনারেলদের সরকারের জন্য সাহায্য প্রদানে এর অবস্থান, লাউসান্নে স্বীকৃতি চুক্তি, বিপ্লবী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ফাসিবাদী খুনী সন্ত্রাসের ভুমিকা—এ সবই জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের অনুসারী নিপীড়িত জনগণের হতাশার সূচনা করে…
এনএসডিএপির সারি ভেঙ্গে পড়ার আর জাতীয় সমাজতন্ত্রী ঢেউয়ের অবনতির শুরুর কারণে হিটলারের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মতাদর্শিক আক্রমণাভিযানের বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের অনুসারীদের সারিতে প্রচণ্ড আঘাত হেনে ভাঙন ঘটানো গুরুত্বপূর্ণ করণীয়।
কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী শ্রমিকদেরকে সর্বহারা ও জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের নিপীড়িত অনুসারীদের জয় করতে হবে মজুরী ও সহায়তা সংকোচন এবং পাপেন একনায়কত্বের বিরুদ্ধে, আর তাদের বোধগম্য করতে হবে যে হিটলারের পার্টি হচ্ছে লগ্নি পুঁজির সন্ত্রাসী ও প্রতিবন্ধকতা ভাঙার সংগঠন।
জনগণকে জাতিদম্ভী উস্কানী প্রদান, জার্মান বুর্জোয়ার সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ পলিসি ও সমরবাদী সশস্ত্রকরণের মোকাবেলায় তাকে ভার্সাই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামে সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদ বিকশিত করতে হবে ফরাসি বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে ফরাসী কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী শ্রমিকদের সংগ্রামের সাথে ঘনিষ্ঠ সংযোগ বজায় রেখে।
জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি পাপেন সরকারের সমরবাদী সশস্ত্রকরণ ও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ পলিসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে, দাবি করে যুদ্ধের শিকার ও বেকার জনগণের জন্য শত শত কোটি টাকা, বুর্জোয়াদের ও সমগ্র প্রতিবিপ্লবের নিরস্ত্রকরণ, সর্বহারা শ্রেণীর নিকট ক্ষমতা ও ক্ষমতার যন্ত্রের পুর্ণ অর্পন এবং জার্মান শ্রমিক জনগণের সামাজিক ও জাতীয় মুক্তির।” [আর্নেস্ট থালমান, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের নির্বাহী কমিটির দ্বাদশ প্লেনাম এবং জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির কর্তব্য, ১৭ অক্টোবর ১৯৩২]
জাতীয় সমাজতন্ত্র যে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের মাধ্যমে ও ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে পুঁজিবাদের রক্ষাকবচ, আর্নেস্ট থালমান তার জীবন্ত প্রমান। তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে প্রকৃত সমাজতন্ত্রকে নির্দিষ্টভাবে সংগ্রাম করতেই জাতীয় সমাজতন্ত্র সেখানে ছিল।
তার জীবন ছিল জাতীয় সমাজতন্ত্রের এক পালটা প্রতিপাদ্য, আর নাৎসিরা জেনেছিল যে তাদের পরাজয় থালমানের বিজয় ডেকে আনবে। আর্নেস্ট থালমান এক বৈজ্ঞানিক অনুপ্রেরণা হতে পারতেন, তিনি একটা “পথনির্দেশক চিন্তাধারা” জন্ম দিতে পারতেন বাস্তবতার বৈজ্ঞানিক প্রতিফলন হিসেবে; থালমান মানে ছিল এক লাইন যা জার্মান সমাজকে বহু বছরের গণতন্ত্র বিরোধী দুর্দশার পর গণতন্ত্রের দিকে নির্দেশ করে।
উল্লেখ্য যে জুলিয়েন লাহাউটকে বেলজিয়ামে তার বাড়ীর সামনে হত্যা করা হয় ১৮ আগস্ট ১৯৫০ এ। রাজতন্তের বিরুদ্ধে প্রজাতন্তের সংগ্রামে তিনি ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব। তিনি ছিলেন বেলজিয়ামের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৪১ সালে ১০০,০০০ শ্রমিকের এক বিরাট ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন, তারপর নাৎসিরা তাকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠায়, সেখানে তার উপর নির্যাতন চালায়, যা তিনি সর্বদাই প্রতিরোধ করেছেন।
জুলিয়েন লাহাউটও বিপ্লবী লাইন, বিপ্লবী প্রেক্ষিত ও নিজ দেশের এক উপলব্ধিকে ধারণ করেছেন। তাই, লাহাউট ও থালমান অমর।
সূত্রঃ http://sarbaharapath.com/?p=1082
“মার্কসবাদের তিনটি উৎস সম্পর্কে” – লেনিন, ১৯১৩(ভিডিও)
Posted: May 27, 2015 Filed under: অডিও-ভিডিও সংবাদ | Tags: মার্কসবাদের তিনটি উৎস সম্পর্কে, লেনিন Leave a comment
সংস্কারবাদীদের মঞ্চ এবং বিপ্লবী সমাজ গণতন্ত্রীদের মঞ্চ সম্পর্কে লেনিন (ভিডিও)
Posted: May 25, 2015 Filed under: অডিও-ভিডিও সংবাদ | Tags: লেনিন, lenin Leave a comment
ছবিতে কমরেড লেনিনের জীবনী –
Posted: April 23, 2015 Filed under: ছবির সংবাদ, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: লেনিন, lenin Leave a commentভ্লাদিমির লেনিনের ১৪৫তম জন্মদিনে দি মস্কো টাইমসের এই বলশেভিক বিপ্লবীর জীবনকে ফিরে দেখা–
১৮৮৭ সালে ১৭ বছর বয়সে তোলা লেনিনের ছবি.
লেনিন ১৮৭০ সালের ২২ শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন – –
শেষ আন্ডাগ্রাঊণ্ড মিটিংয়ে লেনিনের ছদ্মবেশ
১৯০৮ সালের এপ্রিলে ইটালির কাপ্রিতে লেখক ম্যাক্সিম গোর্কির(মাঝে) সাথে সাক্ষাৎকালে অ্যালেক্সান্ডার বোগদানোবের(বামে) সাথে দাবা খেলা রত লেনিন(ডানে)।
লেনিন, সুইডিশ রাজনৈতিক কর্মী টুরে নেরমান এবং সুইডিশ রাজনীতিবিদ কার্ল লিন্ধাজেন ১৯১৭ সালের এপ্রিলে স্টকহোম এর সেন্ট্রাল স্টেশনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
১৯২০ সালের ৫ই মে মস্কোর সভেরদলভ স্কয়ারে এক সভায় বক্তব্য রাখছেন লেনিন। প্ল্যাটফর্ম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিল লিওন ট্রটস্কি এবং লেভ কামেনেভ।
১৯১৯ সালের মার্চ মাসে লেনিন (ডানে) এবং তার যোগ্য উত্তরসূরি জোসেফ স্তালিনের ছবি।
১৯২০ সালে রাশিয়া কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে থাকাকালীন লেনিনের ছবি ।
ক্রেমলিনের বাসভবনে গবেষণারত লেনিন
১৯২১ সালে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের ৩য় কংগ্রেসে বক্তব্য রাখছেন লেনিন।
১৯২৩ সালে মস্কোর গোর্কি অঞ্চলে অসুস্থতার সময় লেনিন।
সুত্র– http://www.themoscowtimes.com/multimedia/photogalleries/lenins-life-in-pictures/5619.html