কমরেড শ্রীধর শ্রীনিবাসনের মৃত্যুতে সিপিআই (মাওবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি
Posted: September 23, 2015 Filed under: অনুবাদ, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: অনুবাদ, কেন্দ্রিয়, কেন্দ্রীয়, মাওবাদী, মাওবাদী ফিচার, শ্রীধর শ্রীনিবাসন, সিপিআই (মাওবাদী), cpi(maoist), Sridhar Srinivasan Leave a comment
[লাল সংবাদ কর্তৃক অনূদিত]
গত ১৮ই আগস্ট ২০১৫, আমাদের দেশের নিপীড়িত জনগণ ও ভারতীয় বিপ্লবের অনুকরণীয় আদর্শের এক কমিউনিস্ট নেতৃত্বকে হারিয়েছে। এক উজ্জ্বল বিপ্লবী বুদ্ধিজীবী-কমরেড শ্রীধর শ্রীনিবাসন, যিনি বিপ্লবী শিবিরে ‘বিষ্ণু ও বিজয়’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, একটি তীব্র হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। সিপিআই(মাওবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটি, এই কেন্দ্রীয় সদস্যের মৃত্যুতে বিনীত লাল শ্রদ্ধা জানাচ্ছে এবং যার জন্যে তিনি বেঁচে ছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেন, সেই বিপ্লবী আদর্শ পূর্ণ করার প্রতিজ্ঞা করছে।
একজন বিপ্লবী হিসেবে তার পথচলা –
এটা ছিল ১৯৭৮-৭৯, মুম্বাইয়ের এলফিনস্টোন কলেজে আর্টসের তরুণ ছাত্র থাকাকালীন কমরেড শ্রীধর বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি প্রভাবিত হন ও দেশের নিপীড়িত জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার পড়াশুনা ছেড়ে দেন। এর পরের ৩৫ বছর তিনি অকুতোভয় মনোভাব এবং দৃঢ় সংকল্পের সাথে জনগণের সেবা করে যান। কমরেড শ্রীধর শ্রীনিবাসন ছাত্রদের সংগঠিত করেন এবং বিদ্যার্থী প্রগতি সংগঠন (ভিপিএস) এর ব্যানারে মুম্বাইতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৭৯ সালে ছাত্রদের কর্তৃক মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে(ফি বাড়ানোর বিরুদ্ধে) আন্দোলনের অন্যতম ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ছিলেন। আন্দোলন যখন তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তিনি আবার নওজোয়ান ভারত সভার (NBS) ব্যানারে তরুণদের সংঘবদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৮০ সালের শুরুর দিকে মিলের শ্রমিকদের ধর্মঘট চলাকালে NBS, দত্ত সামন্তের নেতৃত্বাধীন মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে মিলে শ্রমিকদের সংগঠিত করেন।ধর্মঘট চলাকালে তিনি অনেক সামরিক অ্যাকশনের মূল সংগঠক ছিলেন। এই সময় তিনি নগর কমিটির সদস্য হন এবং নিকটবর্তী শিল্পাঞ্চল থানে, ভিওান্ত ও সুরাত সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন প্রসারিত করেন। পরে, ১৯৯০ সালে পার্টির সিদ্ধান্তে তিনি বিদর্ভ অঞ্চলে যান, যেখানে চন্দ্রপুর, ভানি এবং এর কাছাকাছি এলাকা গুলোতে খনি শ্রমিকদের সংগঠিত করেন।
যখন পার্টি মহারাষ্ট্র রাজ্য কমিটির গোন্দিয়া-বালঘাট বিভাগের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন, তখন তিনি দায়িত্বটি নেন এবং বিদর্ভ অঞ্চলের দৃষ্টিকোণ থেকে আন্দোলনটি বিকাশের জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে, তিনি দক্ষতার সাথে মহারাষ্ট্রের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে পার্টির নেতৃত্ব দেন । তিনি ২০০১ সালে সিপিআই (মাওবাদী) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ঐক্য কংগ্রেসে (৯ম কংগ্রেস) কেন্দ্রীয় কমিটিতে পুনর্নির্বাচিত হন। তিনি আন্দোলনের ভালো এবং খারাপ সময়গুলোতে অবিচল ভাবে পার্টির লাইন রক্ষার করেন। পার্টি ও এর লাইনের প্রতি তার অটল আস্থা ছিল। তিনি পার্টির ভেতরে জেগে উঠা যে কোন সুবিধাবাদী প্রবণতাকে বিরোধিতা করতেন। তিনি আন্দোলনের প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন সত্ত্বেও দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পার্টি তাকে বিশ্বস্ততার সাথে যে দায়িত্ব দিতেন, তিনি পিছু হটে না গিয়ে স্তম্ভের মত দাঁড়িয়ে থেকে সেই দায়িত্ব পালন করতেন।একজন মহান নেতা হিসেবে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বিপ্লবের প্রতি তার অটল অঙ্গীকার, ইস্পাতের মত দৃঢ় শক্তি ও সংকল্প নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন।
গ্রেফতার এবং তার জেল জীবন–
২০০৭ সালের আগস্টে তিনি গ্রেফতার হন। এ সময় দিনের পর দিন তিনি জিজ্ঞাসাবাদ ও মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও শত্রুর কাছে নত হননি। রাষ্ট্র চালাকি করে তার বিরুদ্ধে ৬০টি মামলা সাজিয়ে তাকে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ করে রাখার সাধ্যমত চেষ্টা করে এবং মিথ্যা মামলায় ৬ বছর ধরে দোষী সাব্যস্ত করে রাখে। তিনি তার সাথে জেলে থাকা তরুণ কর্মীদের শিক্ষিত করার পাশাপাশি অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি কখনই বিশ্রাম নিতেন না, বই পড়ে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির নিয়ে পড়াশুনা করেই সময়কে কাজে লাগাতেন। তিনি বিভিন্ন ইসলামী কর্মীদের সাথে পারস্পরিক আলোচনার পাশাপাশি তাদের আন্দোলনকে বোঝার চেষ্টা করতেন। ভোরের সময়টিতে তিনি বিভিন্ন জেলে বন্দি কমরেডদের প্রতি বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক লেখা ও দীর্ঘ চিঠি লিখে সময়কে ব্যবহার করতেন। ২০১৩ সালের আগস্টে তিনি মুক্তি পান।
জেল জীবন তার মনোবলকে ভাঙ্গতে পারেনি, যদিও তার শরীরের উপরে এর মাশুল নিয়েছে। মুক্তির পর তিনি পরিবারের সাথেই থাকতেন এবং সভার কাজ ও আন্দোলন সম্পর্কে প্রচার করে এই সময়গুলোকে কাজে লাগাতেন। তিনি তার কমরেডদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু, তাদের সঙ্গে দেখা করার পথে তিনি মারা যান।তার ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে গেছে। কমরেড শ্রীধরের শাহাদাত আন্দোলনের জন্য বড় ধরণের আঘাত। আমাদের দেশের সর্বহারা শ্রেণী ও নিপীড়িত জনগণ তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ এক সন্তানকে হারিয়েছে যিনি নিঃস্বার্থ ভাবে, তাদেরই স্বার্থ ও তার হৃদয়ে থাকা বিপ্লবী স্বার্থের জন্যে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে তাদের সেবা করে গেছেন।
কমরেড শ্রীধর লক্ষ লক্ষ ভারতীয় জনসাধারণ ও পার্টির পদে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।আমাদের পার্টি কমরেড শ্রীধরের আদর্শকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরছে। আমরা নিরলস ভাবে তার স্বপ্ন পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের সিপিআই(মাওবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটি তার প্রতি মাথা নুইয়ে লাল শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং তাদের দুঃখে সম অংশীদার হিসেবে এটা প্রেরণ করছি।
কমরেড শ্রীধর শ্রীনিবাসন যার জন্যে প্রাণ দিলেন সেই মহান আদর্শকে পরিপূর্ণ করতে চলুন আমরা আবারো নিজেদের অঙ্গীকার করি।
(অভয়)
মুখপাত্র
কেন্দ্রীয় কমিটি
সিপিআই (মাওবাদী)
অনুবাদ সূত্রঃ http://www.signalfire.org/2015/09/22/cpi-maoist-cc-statement-on-the-death-of-comrade-sridhar-srinivasan/