পুঁজিবাদ যেভাবে আমাদের মেরে ফেলছে -বেলেন ফার্নান্দেজ

maxresdefault

বেশ কয়েক বছর আমি আর আমার এক বন্ধু ভেনেজুয়েলায় ছিলাম। সেখানে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চিরশত্রু বলে পরিচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকগুলোতে আমার বিনা মূল্যে যে চিকিৎসাসেবা নিয়েছি, তা ভুলবার নয়। আমার দেশ আমেরিকায় আমি বিনা মূল্যে এমন উন্নত চিকিৎসাসেবা কল্পনাও করতে পারি না। এর কারণ হলো, পুঁজিবাদের ধ্বজাধারী আমেরিকা যুদ্ধ বাধানো এবং করপোরেট মুনাফা অর্জনের পেছনে এত বেশি সময় দেয় যে মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় সে পায় না। ভেনেজুয়েলার একটি ক্লিনিকের একজন নারী চিকিৎসক আমাকে বলছিলেন, বিশ্বের যেখানেই যুদ্ধ সেখানেই মার্কিন সেনাবাহিনীর দেখা পাওয়া যাবে। আর সেসব যুদ্ধবিধ্বস্ত জায়গায় কিউবার লোকও থাকে। তবে তারা সেনা নন, তাঁরা চিকিৎসক।

২০১৭ সালে জাতিসংঘের তীব্র দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার  একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, চীন, সৌদি আরব, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ভারত, ফ্রান্স ও জাপান সম্মিলিতভাবে জাতীয় নিরাপত্তা খাতে যত অর্থ ব্যয় করে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেই যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী উন্নত বিশ্বের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার ওই সময় বিশদ তথ্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছিলেন। সেখানে তিনি আমেরিকার সমাজব্যবস্থাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অসম সমাজ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, আমেরিকায় অন্তত চার কোটি মানুষ দরিদ্র। সেখানে মৃত্যুহার বাড়ছে এবং সামাজিক অস্থিরতা ও নেশার কবলে পড়ে বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, এই সবকিছুর পেছনে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা একটি বড় ভূমিকা রাখছে।

আমেরিকান সমাজে এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদক। এই সমাজের একটি বিরাট অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। অর্থ আর মুনাফা অর্জনের সীমাহীন নেশা এখানকার মানুষের জীবনকে এতটাই অস্থির করে তুলছে যে বহু মানুষের পক্ষে আক্ষরিক অর্থেই এই সমাজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার এই অস্থির ও নির্বান্ধব জীবনকে মেনে নিতে না পারায় সমগ্র দেশের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে।

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নব্য উদার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষ অর্থের পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্রমাগত একা হয়ে যাচ্ছে। পারস্পরিক বন্ধন ছুটে যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এই নিষ্ঠুর নিঃসঙ্গতা মানুষের জীবনে হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষ ভোগবাদী জীবনের অস্থিরতার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিষণ্নতা থেকে আরোগ্যলাভের জন্য সেখানে ‘বিষমিশ্রিত’ বিশাল বিশাল ওষুধ কোম্পানি খোলা হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানিগুলো কোটি কোটি ডলারের মুনাফা তুলে নিলেও দিন শেষে বিষণ্ন মানুষগুলোর জীবনে প্রাণখোলা হাসি–আনন্দ আসছে না।

মার্কিন পুঁজিবাদ শুধু যে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা আশপাশের দেশের মানুষের পারিবারিক বা সামাজিক বন্ধনের জন্য হুমকি, তা নয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও ভোগবাদী সমাজ সম্প্রসারণের কারণে পণ্যের অতি ব্যবহার, অপব্যবহার ও বিষক্রিয়া বাড়ছে। এটি গোটা পৃথিবীকে এমন এক ধ্বংসের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব হবে না। ১৯৮৯ সালের আগে মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল সুইজি বলেছিলেন, অধিক ভোগ ও উৎপাদন প্রবণতার কারণে গ্রিনহাউস ইফেক্ট বা কার্বন নিঃসরণ ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। পুঁজিবাদ যত বেশি বিকশিত হবে, এই ধারা তত বাড়তে থাকবে। ক্রমেই পৃথিবী ধ্বংসের দিকে যেতে থাকবে।

 এক্সট্রিম সিটিজ: দ্য পেরিল অ্যান্ড প্রমিজ অব আরবান লাইফ ইন দ্য এজ অব ক্লাইমেট চেঞ্জবইয়ের লেখক অ্যাশলে ডওসোন গত ডিসেম্বরে ভারসো বুকস ওয়েবসাইটে লেখা একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘উগ্র পুঁজিবাদ’ এবং ‘পরিবেশবাদীদের বিক্ষোভকে অপরাধ সাব্যস্ত করার চেষ্টা’ দিয়ে গোটা বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। অ্যাশলে ডওসোন বলছেন, ট্রাম্প নিজেও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে আটকা পড়ে গেছেন। এ থেকে তিনি বের হতে পারবেন না। আমেরিকাও বের হতে পারবে না।

পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে এই ধনতান্ত্রিক অস্থির সমাজকে ভাঙতেই হবে। বিশ্বকে জাগতেই হবে।

সূত্রঃ আল–জাজিরা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

বেলেন ফার্নান্দেজ- মার্কিন লেখক ও গবেষক

prothomalo.com


একচেটিয়া তথা লগ্নিপুঁজির লক্ষ্যে পুঁজিবাদী চীন অগ্রসর হয়ে চলেছে

china-share-market

একচেটিয়া তথা লগ্নিপুঁজির লক্ষ্যে পুঁজিবাদী চীন অগ্রসর হয়ে চলেছে

 

বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীন তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক শক্তিকে বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করছে। চীনে আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পুঁজির কেন্দ্রিকরণ ও কেন্দ্রিভবনের মধ্যদিয়ে একচেটিয়া পুঁজি এবং ব্যাংক পুঁজি ও শিল্প পুঁজি একীভূতকরণের মধ্যদিয়ে লগ্নিপুঁজি অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে চীনের আলীবাবা সামনে রয়েছে। যার সম্পদের পরিমাণ ২৪.৮ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৮০ কোটি) ডলার। চীনের আলীবাবা তার পুঁজির শক্তি বৃদ্ধি করতে অন্যান্য ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ করা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিট শেয়ার বাজার, যুক্তরাজ্যের লন্ডন শেয়ার বাজারসহ বিভিন্ন শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হয়ে চলেছে।

গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল কর্পোরেশন বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম টায়ার কোম্পানি ইতালির পিয়েরেলিকে ৭.১ বিলিয়ন (৭১০ কোটি) ইউরো দিয়ে ক্রয় করে। তাছাড়া চীন ইতালিতে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ইউরো মূল্যের সম্পদ নিয়ন্ত্রণে আনে। ২০১৪ সালে চীন ইউরোপে ২২ বিলিয়ন (২ হাজার ২০০ কোটি) ইউরো বিনিয়োগ করে। ২০১৫ সালে এ পর্যন্ত ইউরোপে চীনের বিনিয়োগ ১১.৯ বিলিয়ন (১ হাজার ১৯০ কোটি) ডলার। ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডে চীনের পুঁজির বিনিয়োগ বেশি হচ্ছে। ইউরো জোনের বাইরে যুক্তরাজ্যে চীনা পুঁজির বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিনিয়োগ ছিল ১৫.৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৫৬০ কোটি) ডলার যা ২০১৪ সালে দাঁড়ায় ১৭ বিলিয়ন (১ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ ফিল্ড নামক শুকর মাংস কোম্পানি চীন ৪.৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার দিয়ে কিনে নেয়।

চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৪ সালে ২৪ বছরে সর্বনিম্ন ৭.৪% হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১ম কোয়ার্টারে ২০০৯ সালের পর সবনিম্ন ৭% হয়। চীনের জিডিপির পরিমাণ ২০১৪ সালে ১০.৩৮০৪ ট্রিলিয়ন (১০ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি) ডলার। চীনের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ৯.২%, শিল্প খাতে ৪২.৬% এবং সেবা খাতে ৪৮.২%। চীনের অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য সরকার ১১ মে সুদের হার ০.২৫% কমালে তা দাঁড়ায় ৫.১%। গত ৬ মাসে এটা হচ্ছে তৃতীয় দফা সুদের হার হ্রাস। চীনে হাউজিং সেক্টরে/আবাসিক খাতে অতি উৎপাদন সঙ্কটের লক্ষণসমূহের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। ২০১৫ সালের ১ম কোয়ার্টারে স্টিল উৎপাদন ১.৭%, শিল্পক্ষেত্রে মুনাফা ২.৭%, এপ্রিল মাসে বাণিজ্যে ১০.৯% কমে গেছে, চীনের শেয়ার বাজারে দরপতন হলে সরকার সুদের হার হ্রাস করে শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করে। চীনের অর্থনীতিতে সামাজিক অর্থায়নে ২০১৩ সাল থেকে ১২০.৪ বিলিয়ন (১২ হাজার ৪০ কোটি) ডলার কমিয়ে ২০১৪ সালে ২.৬৮ ট্রিলিয়ন (২ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি) ডলার করা হয়। চীনে সরকারি বা অন্যান্য পন্থায় কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার যে ঋণ প্রদান করা হয় তা আদায় হওয়া নিয়ে সংশয় বেড়ে চলেছে। ২০১৪ সালে চীনের ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১.৫৮ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ ৫৮ হাজার কোটি) ডলার ঋণ প্রদান করে। এ সময়ে চীনের অর্থনীতিতে নগদ ও অনগদ তহবিল ১২.২ ট্রিলিয়ন (১২ লক্ষ ২০ হাজার কোটি) ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০ ট্রিলিয়ন (২০ লক্ষ কোটি) ডলারে দাঁড়ায়।

চীন তার অর্থনীতির ম্যানুফ্যাকচারিং পর্যায় থেকে আর্থিক পর্যায়ে, নিম্ন প্রযুক্তি থেকে উচ্চ প্রযুক্তিতে উন্নীত করার লক্ষ্যে সাংহাই অর্থনৈতিক জোনের মত আরও ৩টি জোন প্রতিষ্ঠা করেছে। চীনের ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। চীনের গণকংগ্রেসে শতাধিক ধনকুবের (বিলিয়নারী) সদস্য রয়েছে। চীনের সবচেয়ে ধনী ১,২৭১ জনের মধ্যে ২০৩ জন গণকংগ্রেসের সদস্য। টেনসেন্ট-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সিইও পনি মাহুয়াতেং যার সম্পদ ১৭ বিলিয়ন (১ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার, জিয়াও মি’র প্রতিষ্ঠাতা লেই জুন-এর সম্পদের পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন (১ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার তারাও এই তালিকায় আছে। চীনের সবচেয়ে ধনী সংসদ সদস্যদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮৪ বিলিয়ন (১৮ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারেরও বেশি। চীনের সবচেয়ে ধনী সংসদ সদস্যের ২০৩ জনের সম্পদের মোট পরিমাণ ৪৬৩.৮ বিলিয়ন (৪৬ হাজার ৩৮০ কোটি) ডলার। চীনের রিয়েল স্টেট সেক্টরে স¤্রাট ওয়াং জিয়ানলিং-এর সম্পদ স্টক মার্কেটের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তার সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৮.১ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮১০ কোটি) ডলার। ফলে সে এশিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের ১১তম শীর্ষ ধনীতে পরিণত হয়।

২০১৫ সালের ১২ মে প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের ২ হাজার বৃহত্তম কোম্পানির যথাক্রমে মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬২ ট্রিলিয়ন (১৬২ লক্ষ কোটি) ডলার, বার্ষিক রাজস্ব ৩৯ ট্রিলিয়ন (৩৯ লক্ষ কোটি) ডলার, লাভ করে ৩ ট্রিলিয়ন (৩ লক্ষ কোটি) ডলার এবং বাজার মূল্য ৪৮ ট্রিলিয়ন (৪৮ লক্ষ কোটি) ডলার। ৬১টি দেশ ও অঞ্চলকে মূল্যায়ন করে এই ২ হাজার বৃহত্তম কোম্পানি নির্ধারণ করা হয়। এই তালিকায় প্রথম বারের মত চীনের বড় ৪টি ব্যাংক শীর্ষস্থানে রয়েছে। আইসিবিসি ব্যাংক পরপর ৩ বছর ১ম স্থান লাভ করে। এখন বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক হচ্ছে আইসিবিসি।

ক্রমিক কোম্পানির নাম বিক্রি (ডলার) মুনাফা (ডলার) সম্পদ (ডলার) বাজার মুল্য(ডলার)
১ম. ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড কমার্সিয়াল ব্যাংক অব চায়না ১৬৬.৮ বিলিয়ন ৪৪.৮ বিলিয়ন ৩.৩২২ ট্রিলিয়ন ২৭৮.৩ বিলিয়ন
২য়. কনস্ট্র্রাকসন ব্যাংক অব চায়না ১৩০.৫ ” ৩৭.০ ” ২.৬৯৯ ” ২১২.৯ ”
৩য়. এগ্রিকালচার ব্যাংক অব চায়না ১২৯.২ ” ২৯.১ ” ২.৫৭৫ ” ১৮৯.৯ ”
৪র্থ. ব্যাংক অব চায়না ১২০.৩ ” ২৭.৫ ” ২.৪৫৮ ” ১৯৯.১ ”
৮ম. পেট্রো চায়না ৩৩৩.৪ ” ১৭.৪ ” ৩৮৭.৭বিলিয়ন ৩৩৩.৬ ”

২০১৫ সালের ৩ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের ১৩তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়ান তার রিপোর্ট উপস্থিত করেন। ১৫ মার্চ তা গৃহীত হয়। এই গণকংগ্রেসে চীনের অর্থনীতি উত্তরণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিন ৪ সামগ্রিকতা প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মোটামুটি একটি সমৃদ্ধ সমাজ, সংস্কার, আইনের শাসন এবং পার্টির শৃঙ্খলা। চীন তার অর্থনৈতিক উত্তরণের লক্ষ্যে বিরাজমান বৈশ্বিক মন্দা ও আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বীয় লক্ষ্য অর্জনে ‘নিউ নরমাল’ নামে নতুন অর্থনৈতিক মতবাদ উপস্থিত করে। এই মতবাদের মধ্যে আলোচিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

এই গণকংগ্রেসে বিগত বছরের ১৩০ বিলিয়ন (১৩ হাজার কোটি) ডলার প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে বৃদ্ধি করে চলতি বছরে ১৪৫ বিলিয়ন (১৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার প্রতিরক্ষা বাজেট নির্ধারণ করা হয়। প্রতিরক্ষা ব্যয়ের তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয় চীনের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ৪ গুণ। ৯ মার্চ চীন তার দ্বিতীয় বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের কাজ অগ্রসর করার বিষয়টি সমর্থন করে চীনের গণমুক্তি ফৌজ। এটা চীনের একমাত্র বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ লিয়াও লিং থেকে আধুনিক ও উন্নততর প্রযুক্তি সজ্জিত। চীনা নৌবাহিনীর ডিজেল ও পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের বহরকে শক্তিশালী করছে। ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক চীনের কাছ থেকে ৩.৪ বিলিয়ন (৩৪০ কোটি) ডলার মূল্যের দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা ক্রয় করতে অগ্রসর হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা মার্কিন কোম্পানি রেথিয়ন এবং ফ্রাঙ্কো-ইতালীয়া কোম্পানির দরপত্র গ্রহণ না করে চীনের ‘প্রিসেসন মেশিনারি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কর্পোরেশন’-এর দরপত্র গ্রহণ করে। তুরস্কে ন্যাটোর সামরিক ব্যবস্থার সাথে এটা সঙ্গতিপূর্ণ না হলেও এবং ন্যাটোর হুমকি প্রদান সত্ত্বেও তুরস্ক চীনের কাছ থেকে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে অগ্রসর হচ্ছে। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চ্যাং ওয়ানকুয়ান ৬ ফেব্রুয়ারি ২ দিনের থাইল্যান্ড সফর করেন। উভয়পক্ষ আগামী ৫ বছরের জন্য সামরিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চুক্তিবদ্ধ হয়। থাইল্যান্ডের নিরাপত্তা ও সামরিক প্রযুক্তি সহযোগিতা করতে; যৌথ সামরিক মহড়া বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়। সরাসরি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করলেও সকল পর্যায়ে সহযোগিতা করতে উভয় দেশ সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে থাইল্যান্ডের মৈত্রীর পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নকে দেখা হচ্ছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম মজুদ মুদ্রার তহবিল। চীন স্বীয় লক্ষ্য অর্জনে সামনে এনেছে ‘সিল্ক রুট’ও ‘একবিংশ শতাব্দীর মেরিটাইম সিল্ক রুট’ পরিকল্পনা। চীনা স্বপ্নকে তুলে ধরা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে চীন ব্রিকসের ‘নতুন উন্নয়ন ব্যাংক’ (NDB) প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াও এ সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে ‘এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক’(AIIB) প্রতিষ্ঠার তৎপরতা অগ্রসর করে। এর প্রাথমিক পুঁজি ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলার যার বড় অংশই চীন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রেক্ষিতে ৫৭টি দেশের প্রতিনিধিরা সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ৩ দিনব্যপী বৈঠকে ২৩ মে এই সংস্থার খসড়ায় একমত পোষণ করে যা জুন মাসে চূড়ান্ত করা হয়। এটা একক পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব, শক্তি ও অবস্থানের উপর আঘাত স্বরূপ। মার্কিন আপত্তি সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের মার্কিন মিত্র জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালিসহ ইউরোপের অনেক দেশ এতে যোগদান করে। নয়াঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী, পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী দেশ মিলে মোট ৫৭টি দেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার আবেদন করে। পুঁজি ও শক্তি অনুপাতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী শক্তি সম্পর্কের যে পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলছে এটা তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন। এটা পরস্পরের পরিপূরক, সম্পূরক ইত্যাদি বক্তব্য দেওয়া হলেও মার্কিন নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ ও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সামনে আসছে। তাছাড়া চীন ‘এক বেল্ট, এক রাস্তা’(One belt, one road) কর্মসূচিতে ৪০ বিলিয়ন (৪ হাজার কোটি) ডলারের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রেক্ষিতে চীন আরেকটি তহবিল গঠন করে ‘সাংহাই উন্নয়ন ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়। এভাবে চীন বিশ্বের অনেক দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার নয়াঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী দেশগুলোতে এবং এমন কি পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে তার পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি করে চলেছে।
১৯৬৯ সালে নির্দিষ্ট বিনিময় হারের ব্রিটেন উডস্ ব্যবস্থা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ায় আইএমএফ মজুদ মুদ্রার ঝুঁড়ি ব্যবস্থা চালু করে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের বৃহত্তম ক্রেতা চীন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছেই সবচেয়ে ঋণগ্রস্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর পরিমাণ ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে জাপানের স্থান থাকে দ্বিতীয়। চীন ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মজুদ হিসেবে ট্রেজারি বন্ড ধীরে ধীরে কমাতে থাকে। ১৭ মার্চ চীন ৫ম বারের মত ৫.২ বিলিয়ন (৫২০ কোটি) ডলারের বন্ড ছেড়ে দিলে ফেব্রুয়ারি’১৫ মাসের শেষে মার্কিন বন্ডের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১.২২৩৭ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ ২২ হাজার ৩৭০ কোটি) ডলার। অপরদিকে জাপান মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ক্রয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় জানুয়ারি মাসে ৭ বিলিয়ন ডলার ক্রয় করায় তা দাঁড়ায় ১.২২৪৪ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ ২২ হাজার ৪৪০ কোটি) ডলার। এভাবে জাপান মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে চীনকে ছাড়িয়ে গেল। অপরদিকে ৩য় বৃহত্তম মার্কিন বন্ডের ক্রেতা হিসেবে বেলজিয়াম ডিসেম্বর’১৪ থেকে ১৯.৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৯৬০ কোটি) ডলার মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করলে তার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১৫.৬ বিলিয়ন (৩১ হাজার ৫৬০ কোটি) ডলার। এ দিকে চীন সোনা ক্রয় বৃদ্ধি করে চলেছে। ইতিমধ্যে তা ৩ (তিন) হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে। যদিও সরকারিভাবে তা ১ হাজার ৭ টন বলে বলছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনা মুদ্রা রেন মিনবি বা ইউয়ানকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে চীন মূল্যবান ধাতু বিশেষ করে সোনার মজুদ বৃদ্ধি করে চলেছে। মার্কিন রেটিং সংস্থাগুলোর একচেটিয়া কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণকে মোকাবেলায় চীন-রাশিয়া ও ব্রিকস নিজস্ব রেটিং সংস্থা গড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে চীনের নিজস্ব রেটিং সংস্থা দ্যাগঙ্গ ক্রিয়াশীল রয়েছে। চীন মহাকাশে মার্কিন উপগ্রহ মোকাবেলায় পাল্টা সামর্থ ও অগ্রগতি ঘটাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট জ্যামারসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ভাবন করছে। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় করছে।

আফ্রিকায় চীনের বিনিয়োগ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। চীন, নাইজেরিয়া ও জিম্বাবুয়েতে ৫.৫ বিলিয়ন (৫৫০ কোটি) ডলারের রেল অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করছে। ২০১৫ সালের ১ম কোয়াটারে বিদেশে চীনের এফডিআই বিনিয়োগ ১১.৩% বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.৮৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৪৮৮ কোটি) ডলার দাঁড়ায়। এর ফলে ওডিআই দাঁড়ালো ৬৭২.১ বিলিয়ন (৬৭ হাজার ২১০ কোটি) ডলার। এই প্রথম চীন দেশের অভ্যন্তেের পুঁজি আসার তুলনায় বিদেশে চীনা পুঁজি বিনিয়োগ বেশি হল।

২২ মার্চ চীনের রাজধানী বেইজিং-এ ‘চীন উন্নয়ন ফোরামে’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে আইএমএফ-এর প্রধান ক্রিষ্টিন লাগাডে উপস্থিত থাকেন। সম্মেলনে তিনি চীনের অর্থনীতির ‘নিউ নরমাল’পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে কাঠামো সংস্কারসহ ৩টি করণীয় তুলে ধরেন।

প্রতি বছরের মত এবারেও ২৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত চীনের হাইনান প্রদেশে ‘বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া’(BAF) অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বিষয়বস্তু ছিল ‘সাধারণ স্বার্থের গোষ্ঠীর অভিমুখে’। এবারের সম্মেলনে সারা বিশ্ব থেকে ২ হাজারের বেশি রাজনৈতিক নেতা, বৃহৎ ব্যবসায়ী এবং প্রসিদ্ধ ও নামকরা গুণিজ্ঞানী জন উপস্থিত থাকেন। ‘বেল্ট-রোড’ এবং এআইআইবি শ্লোগানকে সামনে রেখে এবারের সম্মেলনে ‘চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য এলাকা’ (CAFTA), আসিয়ান+৩, আসিয়ান+৬ সমন্বিত করে আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গঠনে ‘আঞ্চলিক সামগ্রিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব’(RCEP) ইত্যাদিকে অগ্রসর করা হয়। চীন-আসিয়ান বাণিজ্য এ বছরের ৫০০ বিলিয়ন (৫০ হাজার কোটি) ডলারকে ২০২০ সালে ১ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ কোটি) ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়। বিশ্বব্যাপী ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ৩টি অর্থনৈতিক এলাকা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়া। পূর্ব এশিয়ার জিডিপি বিশ্ব জিডিপির ২৪.৫%। যা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে গেলেও উত্তর আমেরিকার চেয়ে কিছুটা কম। তবে পূর্ব এশিয়ার প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

৮-৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চীন-সিলাক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম বৈঠক চীনের রাজধানী বেজিং-এ অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট কোস্টরিকা, ইকোয়েডার, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ও বাহামার প্রধানমন্ত্রীসহ ল্যাটিন আমেরিকার ৩০টি দেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান। সভায় উভয়পক্ষ রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস, সহযোগিতা বিস্তৃত করা এবং ফোরামের উন্নয়ন অগ্রসর করতে সম্মত হয়। এইভাবে ‘ওয়ান+এন’বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক নেটওয়ার্কের নতুন অংশে পরিণত হলো এই প্লাটফর্ম। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য চীন-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, চীন-আফ্রিকা, চীন-আরব সহযোগিতা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সাথে সাথে মধ্য-এশিয়া ও রাশিয়াকে নিয়ে গঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থাকে অগ্রসর করে চলেছে চীন।

এ সময়ে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো চীন সফরকালে দু’দেশের মধ্যে জ্বালানি, শিল্প এবং সামাজিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে ২০ বিলিয়ন (২ হাজার কোটি) ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ‘অরিনকো হুগো শ্যাভেজ তেল বেল্ট’যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম তেলের মজুদ রয়েছে সেখানে চীন চুক্তি অনুযায়ী তার অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে। উভয় দেশের মধ্যে ২৫৬টি কর্মসূচিতে ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় হবে। চীন ভেনিজুয়েলায় নতুন স্কুল, অ্যাপার্টমেন্ট, জলবিদ্যুৎ ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যোগাযোগ, প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে। চীন হচ্ছে ভেনিজুয়েলার প্রধান বিনিয়োগকারী।  যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন ২য় বৃহত্তম তেল ক্রয়কারী দেশ। এ সব তৎপরতার মধ্যদিয়ে চীন তার লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করছে।

লেখকঃ -মাহবুব উল্লাহ (খাদেম)

 

সূত্রঃ

13076745_715535491921699_3304914592563662269_n


জার্মানির জনগণ মনে করে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার জন্য দায়ী পুঁজিবাদ

capitalism2

জার্মানির জনগণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই মনে করে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার জন্য দায়ী পুঁজিবাদ । বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটির চালানো এ জরিপের ফল গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়। ১ হাজার ৪০০ লোকের ওপর চালানো ওই জরিপে দেখা যায়, জার্মানির সাবেক কমিউনিস্ট পূর্বাঞ্চলের ৫৯ শতাংশ অধিবাসী মনে করে, কমিউনিস্ট ও সাম্যবাদী আদর্শ সমাজের জন্য একটি ভালো আদর্শ। আর কমিউনিস্ট আদর্শকে ভালো মনে করে পশ্চিমের অধিবাসীদের ৩৭ শতাংশ। বার্লিন প্রাচীর পতনের ২৫ বছরের বেশি সময় পরও জার্মানির পূর্বাঞ্চলে সশস্ত্র বাম দল এখনো শক্তিশালী। ৬০ শতাংশের বেশি নাগরিক মনে করে, জার্মানিতে প্রকৃত গণতন্ত্র নেই, কারণ দেশটির রাজনীতিতে শিল্পবাণিজ্য মহলের প্রভাব খুব বেশি।

সুত্রঃ  রয়টার্স


বিশ্বে গণহারে গুলিবর্ষণের ঘটনার শীর্ষে পুঁজিবাদী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ

নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণ করা মার্কিন এক স্কুলে গণ গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত ২ ব্যক্তির ছবি

নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণ করা মার্কিন এক স্কুলে গণ গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত ২ ব্যক্তির ছবি

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গণহারে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে পুঁজিবাদী আমেরিকায়। বন্দুক সহিংসতায় একই সঙ্গে একই স্থানে অনেক ব্যক্তি আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনাকে আমেরিকায় গণ গুলিবর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পুঁজিবাদী মার্কিন সমাজে বিরাজমান অস্বাভাবিকতার জন্য এ জাতীয় ঘটনা ঘটে বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

আমেরিকার অ্যালবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিদ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম লাংফোর্ড এ সমীক্ষা চালিয়েছেন। এতে আরো বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমেরিকায় পাঁচ গুণ বেশি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আরো দেখা গেছে, ১৯৬৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্বে ২৯১টি গণ গুলিবর্ষণের লিপিবন্ধ ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৯০টি অর্থাৎ ৩১ শতাংশই ঘটেছে আমেরিকায়। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফিলিপাইন এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া।

এ ধরণের অপরাধ অধিকহারে আমেরিকার ঘটার পেছনে যে সব কারণ তুলে ধরেছেন তার মধ্যে আমেরিকায় ব্যাপক হারে অস্ত্র থাকা, গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের নিয়ে ব্যাপক মাতামাতি করা এবং পুঁজিবাদী মার্কিন সমাজে বিরাজমান অস্বাভাবিকতা রয়েছে বলে মনে করেন অ্যাডাম লাংফোর্ড।

এ ছাড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় মার্কিন গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা জড়িত ব্যক্তিরা অধিকহারে একাধিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় এ ক্ষেত্রে মার্কিনীরা ৩.৬ গুণ বেশি একাধিক অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে এ সমীক্ষায় দেখা গেছে।


৭১ বছর আগে কেন আর্নেস্ট থালমানকে হত্যা করা হয়েছে

হিটলার ও হিমলারের সরাসরি নির্দেশে আর্নেস্ট থালমানকে ১৮ আগস্ট ১৯৪৪-এ এগার বছরেরে নির্জন কারাবাসের পর হত্যা করা হয়। এর আগে তাকে বুটজেন কাগাগার থেকে ওয়েইমারের কাছে বুচেনওয়াল্ড কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে সরিয়ে আনা হয়, যেখানে তাকে হত্যা করে তার দেহকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

তাই তার কোন কবর হয়নি।thaelmann1 এই ঘটনাটি এতটাই গোপনে ঘটানো হয়েছে যে নাৎসি সংবাদপত্র “ভয়শের অবজারভার” রিপোর্ট করে যে থালমান ২৪ আগস্ট মিত্র বাহিনীর “সন্ত্রাসী বোমা”য় নিহত হয়েছেন।

নাৎসিরা সত্য প্রকাশে এতটা ভীত ছিল কেন? কেননা আর্নেস্ট থালমান ধারণ করতেন একটা দৃষ্টিভঙ্গী, একটা তৎপরতা, এক সংস্কৃতি আর এক মতাদর্শ। আর্নেস্ট থালমান মানে হচ্ছে জাতীয় সমাজতন্ত্র থেকে মুক্তি, যুদ্ধ থেকে মুক্তি, গণফ্রন্টের মাধ্যমে, আর জনগণতন্ত্রের লক্ষ্যে!

জাতীয় সমাজতন্ত্র সত্যিকার সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি করেছিল, জার্মানীর জন্য সঠিক লাইন খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছিল। ফল হল যুদ্ধ, দারিদ্র, ধ্বংস, আর নৈতিক অবক্ষয়, আর এ সবই পুঁজিবাদবিরোধী রোমান্টিকতাবাদের ফসল, যার লক্ষ্য ছিল সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা, “পরজীবী”দের অপসারণ করতেঃ যার আসল অর্থ ছিল “লগ্নি পুঁজির সর্বাধিক সাম্রাজ্যবাদী উপাদানসমূহের সর্বাধিক প্রতিক্রিয়াশীল, সবচেয়ে জাতিদম্ভী প্রকাশ্য সন্ত্রাসবাদী একনায়কত্ব”।

আর্নেস্ট থালমান আসন্ন ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। ১৯২৪ থেকে তিনি জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন, যে পার্টি রোজা লুক্সেমবার্গ ও কার্ল লিবনেখট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ব্যাপক জনগণকে সমাবেশিত করার সর্ব প্রকার প্রচেষ্টা চালান, যে জনগণ সমাজ গণতন্ত্র কর্তৃক পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল, কারণ জার্মান সমাজ গণতন্ত্রী পার্টি (এসপিডি) না ছিল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পক্ষে, না সত্যকার ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রামের পক্ষে।

কমিউনিস্ট পার্টি তার পক্ষে যা করা সম্ভব সবই করে যাতে পুঁজিবাদবিরোধী ও ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম এক গণ আন্দোলনে পরিণত thaelmann2হয়; তাই লাল ফ্রণ্ট যোদ্ধাদের মোর্চাঃ ফ্যাসিবিরোধী একশনও প্রতিষ্ঠিত হয়। এই লড়াই সমাজ গণতন্ত্রের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নয় বরং এসপিডির আত্মসমর্পণ লাইনের বিরুদ্ধে চালানো হয়। জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি যুক্তফ্রন্টের লাইনকে রক্ষা করে, আর স্পেন ও ফ্রান্সে যেমনটা হয়েছে, গণফ্রন্টের লাইনের জন্য এগিয়ে যায়।

নাৎসি ধারার মধ্যেকার যেসকল জনগণ বন্দী হয়েছিলেন তাদেরকেও কখনো ভোলা হয়নি। যেমনট আর্নেস্ট থালমান জানুয়ারি ১৯৩৩-এ ব্যাখ্যা করেনঃ

“কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের ব্যাপক জনগণের প্রতিও লক্ষ্য রাখে।

এসএ ও এসএস বাহিনীর মধ্যে এক ভয়ানক পার্থক্য ছিল, শ্রমিক এলাকায় দাঙ্গা বাঁধানোর মধ্যে, অথবা শ্রমিকদের ঘরবাড়ী ও ক্ষেত্রগুলিতে ঘেরাও আক্রমণ, ব্যাপক জনগণের মধ্যেওঃ সংকটাক্রান্ত শ্রমিক, কর্মচারী, নিম্ন মধ্যবিত্ত, হস্তশিল্পী ও ছোট ব্যবসাদারদের দুর্দশার মধ্যে পার্থক্য ছিল, যারা জাতীয় সমাজতন্ত্রকে সমর্থন দিয়েছে যেহেতু তারা হিটলার, গোয়েবলস ও স্ট্র্যাসার প্রভৃতির গলাবাজির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে।…

আমাদেরকে ধৈর্যশীল শিক্ষিতকরণের মাধ্যমে জনগণকে দেখাতে হবে যে হিটলার পার্টির সত্যিকার ভুমিকা হচ্ছে লগ্নি পুঁজির সেবা করা, ট্রাস্ট রাজ রাজরাদের, বৃহৎ ভুস্বামীদের, কর্মকর্তাদের ও প্রিন্সদের সেবায় কাজ করা।” [কার্ল লিবনেখটের বাড়ির সামনে নাৎসি উস্কানী এবং কিছু শিক্ষা, ২৬ জানুয়ারি ১৯৩৩]

আর এটাও জানা দরকার যে, নভেম্বর ১৯৩২-এর সাধারণ নির্বাচনে নাৎসি পার্টির ভোট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। যদিও নাৎসিদেরকে এককোটি দশ লাখ জনগণ ভোট দিয়েছিল, জুলাইয়ের থেকে ২০ লাখ ভোট কম পেয়েছে তারা। নাৎসি আন্দোলন ক্ষয়প্রাপ্ত হতে শুরু করেছিল, তাই, হিটলারকে দ্রুত ক্ষমতায় বসানো হয়েছিলঃ যা কোন ক্ষমতা দখল ছিলনা, বরং ক্ষমতার বদল।

যেমনট আর্নেস্ট থালমান অক্টোবর ১৯৩২-এ নির্বাচনের আগেই উপলব্ধি করেনঃ

“জাতিদম্ভী ঢেউয়ের কারণে ফ্যাসিবাদী গণ আন্দোলনের বিপুল বৃদ্ধি ফ্যাসিবাদী শাসকদের ক্ষমতা দখলে অনুমোদন দেয়।

লগ্নি পুঁজির পলিসি, যা হিটলারের ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন কর্তৃক সরকারী ক্ষমতার অনুশীলনকে বর্জন করে, একদিকে আভ্যন্তরীণ ও বাইরের সংঘাতসমূহের অতিদ্রুত পোক্ত হওয়ার ভীতি থকে উদ্ভূত হয়, অন্যদিকে ফ্যসিবাদী গণ আন্দোলনের মজুদকে thaelmann3যতদূর সম্ভব সুদৃঢ়ভাবে বজায় রাখার বুর্জোয়াদের আকাঙ্খা থেকে, যাতে একই সাথে তাকে “সজ্জিত’ করা যায়, অর্থাৎ তাকে ফ্যাসিবাদী একনায়কত্বের নিরাপদ যন্ত্র বানানো যায় বাঁধাদানকারী উপাদানসমূহকে অতিক্রম করে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের এ পর্যন্ত অগ্রগমন এখন থমকে দাঁড়িয়েছে আর অবনতির জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছে যে কারণে তা হল সর্বহারা শ্রেণীর বাড়ন্ত অগ্রগমন, পাপেন সরকারের রাজনীতির মাধ্যমে দারিদ্রকরণ ও হিটলারের সীমাহীন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিপীড়িত মধ্যবিত্তের জাগড়নরত রেডিকেলকরণ এবং জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির ফ্যাসিবিরোধী গণসংগ্রামের প্রচণ্ড অগ্রগতি।

বাঁধাহীন শোষণের সমর্থন হিসেবে হিটলার পার্টির ভুমিকা, পুঁজিবাদী, জাঙ্কার ও জেনারেলদের সরকারের জন্য সাহায্য প্রদানে এর অবস্থান, লাউসান্নে স্বীকৃতি চুক্তি, বিপ্লবী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ফাসিবাদী খুনী সন্ত্রাসের ভুমিকা—এ সবই জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের অনুসারী নিপীড়িত জনগণের হতাশার সূচনা করে…

এনএসডিএপির সারি ভেঙ্গে পড়ার আর জাতীয় সমাজতন্ত্রী ঢেউয়ের অবনতির শুরুর কারণে হিটলারের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে thaelmann4মতাদর্শিক আক্রমণাভিযানের বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের অনুসারীদের সারিতে প্রচণ্ড আঘাত হেনে ভাঙন ঘটানো গুরুত্বপূর্ণ করণীয়।

কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী শ্রমিকদেরকে সর্বহারা ও জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের নিপীড়িত অনুসারীদের জয় করতে হবে মজুরী ও সহায়তা সংকোচন এবং পাপেন একনায়কত্বের বিরুদ্ধে, আর তাদের বোধগম্য করতে হবে যে হিটলারের পার্টি হচ্ছে লগ্নি পুঁজির সন্ত্রাসী ও প্রতিবন্ধকতা ভাঙার সংগঠন।

জনগণকে জাতিদম্ভী উস্কানী প্রদান, জার্মান বুর্জোয়ার সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ পলিসি ও সমরবাদী সশস্ত্রকরণের মোকাবেলায় তাকে ভার্সাই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামে সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদ বিকশিত করতে হবে ফরাসি বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে ফরাসী কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী শ্রমিকদের সংগ্রামের সাথে ঘনিষ্ঠ সংযোগ বজায় রেখে।

জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি পাপেন সরকারের সমরবাদী সশস্ত্রকরণ ও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ পলিসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে, দাবি করে যুদ্ধের শিকার ও বেকার জনগণের জন্য শত শত কোটি টাকা, বুর্জোয়াদের ও সমগ্র প্রতিবিপ্লবের নিরস্ত্রকরণ, সর্বহারা শ্রেণীর নিকট ক্ষমতা ও ক্ষমতার যন্ত্রের পুর্ণ অর্পন এবং জার্মান শ্রমিক জনগণের সামাজিক ও জাতীয় মুক্তির।” [আর্নেস্ট থালমান, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির thaelmann5সম্মেলন, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের নির্বাহী কমিটির দ্বাদশ প্লেনাম এবং জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির কর্তব্য, ১৭ অক্টোবর ১৯৩২]

জাতীয় সমাজতন্ত্র যে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের মাধ্যমে ও ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে পুঁজিবাদের রক্ষাকবচ, আর্নেস্ট থালমান তার জীবন্ত প্রমান। তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে প্রকৃত সমাজতন্ত্রকে নির্দিষ্টভাবে সংগ্রাম করতেই জাতীয় সমাজতন্ত্র সেখানে ছিল।

তার জীবন ছিল জাতীয় সমাজতন্ত্রের এক পালটা প্রতিপাদ্য, আর নাৎসিরা জেনেছিল যে তাদের পরাজয় থালমানের বিজয় ডেকে thaelmann6আনবে। আর্নেস্ট থালমান এক বৈজ্ঞানিক অনুপ্রেরণা হতে পারতেন, তিনি একটা “পথনির্দেশক চিন্তাধারা” জন্ম দিতে পারতেন বাস্তবতার বৈজ্ঞানিক প্রতিফলন হিসেবে; থালমান মানে ছিল এক লাইন যা জার্মান সমাজকে বহু বছরের গণতন্ত্র বিরোধী দুর্দশার পর গণতন্ত্রের দিকে নির্দেশ করে।

উল্লেখ্য যে জুলিয়েন লাহাউটকে বেলজিয়ামে তার বাড়ীর সামনে হত্যা করা হয় ১৮ আগস্ট ১৯৫০ এ। রাজতন্তের বিরুদ্ধে প্রজাতন্তের সংগ্রামে তিনি ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব। তিনি ছিলেন বেলজিয়ামের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৪১ সালে ১০০,০০০ শ্রমিকের এক বিরাট ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন, তারপর নাৎসিরা তাকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে 640px-Ernst_Thaelmann_Berlinপাঠায়, সেখানে তার উপর নির্যাতন চালায়, যা তিনি সর্বদাই প্রতিরোধ করেছেন।

জুলিয়েন লাহাউটও বিপ্লবী লাইন, বিপ্লবী প্রেক্ষিত ও নিজ দেশের এক উপলব্ধিকে ধারণ করেছেন। তাই, লাহাউট ও থালমান অমর।

সূত্রঃ http://sarbaharapath.com/?p=1082