অধ্যাপক সাইবাবাসহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবীতে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছে RDF
Posted: March 11, 2017 Filed under: গণযুদ্ধের সংবাদ, ভারত, লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: আরডিএফ, জিএন সাইবাবা, ভারভারা রাও, RDF Leave a commentগত ১০ মার্চ বিপ্লবী গণতান্ত্রিক মঞ্চ (RDF) এর সর্ব ভারতীয় সভাপতি ভারভারা রাও এক বিবৃতিতে অধ্যাপক সাইবাবা সহ ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ায় গড়চিরলি কোর্টের রায়কে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন। এই রায় প্রসঙ্গে সরকার পক্ষের উকিলের বক্তব্য – এই প্রথম হোয়াইট কলার মাওবাদীদের শাস্তি দেওয়া হল, এই রায় বাইরে থাকা মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বুদ্ধিজিবিদের বার্তা দেবে এবং ৮২৭ পাতার রায় ব্যাখ্যা করে ভারভারা রাও দেখিয়েছেন যে, বিচার প্রক্রিয়া ছিলো প্রতিহিংসা পরায়ণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর আগে জেলে থাকাকালীন অধ্যাপক সাইবাবা সহ ৬ জনের উপর শারীরিক অত্যাচার এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের চিকিৎসায় বাধাদানেরও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। RDF এর পক্ষ থেকে সাইবাবাদের মুক্তি এবং গণতন্ত্র বিরোধী UAPA আইনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে সামিল হওয়ার জন্য সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ, গণসংগঠন, রাজনৈতিক পার্টিগুলোর কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে ।
সূত্রঃ http://virasam.org/article.php?page=414
এক বিকলাঙ্গ ভারতীয় অধ্যাপকের ‘দেশবিরোধী যুদ্ধ’!
Posted: March 8, 2017 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: জিএন সাইবাবা, মাওবাদী, saibaba Leave a commentশারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ তিনি। একটি হুইল চেয়ার তার নিত্য সঙ্গী। ভুগছেন জটিল হৃদরোগে। স্নান-খাওয়া থেকে শুরু করে শরীর-হাত-পা পরিষ্কার, সবকিছুই করতে হয় অন্যের সহায়তা নিয়ে। এমনকী, বাথরুমে যাওয়ার জন্যও কারও না কারও সাহায্য লাগে তার। সেই মানুষটিই কিনা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে!
এটি ৪৯ বছর বয়স্ক এক ভারতীয় অধ্যাপকের আখ্যান। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি সাহিত্য পড়াতেন তিনি। মঙ্গলবার নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকা ও জাতীয়তাবিরোধী কার্যকলাপে ইন্ধন জোগানোর অপরাধে আরও ৫ জনের সঙ্গে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিএন সাইবাবারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি সুরাকান্ত সিন্ধে তাদের বিরুদ্ধে মাওবাদ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কথা জানান। তিনি ভারতবিরোধী যুদ্ধে রত বলেও রায় দেয় ভারতীয় আদালত। কেবল বিচারিক সাজা নয়, অধ্যাপক সাইবাবা রোষানলে পড়েছেন নিজের কর্মপ্রতিষ্ঠানেও। ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাম লাল আনন্দ কলেজের অধ্যাপক সাইবাবার বেতন অর্ধেক করে দেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। ওই কলেজ-চত্বরে কয়েকবার লাঞ্ছনারও শিকার হন তিনি।
তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তার পক্ষে অনলাইন প্রচারণা শুরু করেছে তারা। সোচ্চার হয়েছেন বুকারজয়ী নন্দিত ভারতীয় লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধতী রায়ও। গত বছর মে মাসে ওই শিক্ষকের মুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়ার কথা জানিয়েছিলেন ন্যায় ও সমতার পক্ষের বলিষ্ঠ এই কণ্ঠস্বর।
হুইলচেয়ার-বন্দি এই অধ্যাপক সাইবাবাকে ২০১৪-র মে মাসে গ্রেফতার করা হয়। স্নান, খাওয়াদাওয়া, গা, হাত-পা পরিষ্কার করা, এমনকী, বাথরুমে যাওয়ার জন্যেও কারও না কারও সাহায্য লাগে অধ্যাপক সাইবাবার। জেলে থাকার সময় দেহরক্ষীরা যে ভাবে তাঁকে টানাহেঁচড়া করেছেন, তাতে ঘাড় থেকে তাঁর বাঁ কাঁধ পর্যন্ত স্নায়ু ছিঁড়ে যায়। অসাড় হয়ে যায় তাঁর বাঁ হাতটি। তাঁর ১৪ মাসের জেল-জীবনে বেশ কয়েক বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। জেলে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে জানালে গত বছরের জুনে তাঁর জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট।
রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি সুরাকান্ত সিন্ধে সাইবাবার বিরুদ্ধে মাওবাদ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কথা জানান। অভিযুক্তরা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রত ছিল বলেও দাবি করেন তিনি। একই অভিযোগে আরও ৫ জনের যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন হেম মিশ্র নামে নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। প্রশান্ত রাহি নামের একজন প্রাক্তন সাংবাদিকও রয়েছেন সাজাপ্রাপ্তদের তালিকায়। আদালত জানায়, দেশদ্রোহের অভিযোগে ইউএপিএ-র ১৩, ১৮, ২০, ৩৮ এবং ৩৯ নম্বর ধারায় সাজা হয়েছে সাইবাবা এবং তাঁর সহযোগীদের।
ভারাতীয় নিরাপত্তা সূত্রের দাবি অনুযায়ী, বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মাওবাদী নথিপত্র, হার্ড ডিস্ক ও পেন ড্রাইভ উদ্ধার হওয়ায় ২০১৩-এ গ্রেফতার হন হেম ও প্রশান্ত। সেই সূত্র ধরেই পরের বছর মে মাসে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয় দিল্লি ইউনিভার্সিটির রামলাল আনন্দ কলেজের অধ্যাপক সাইবাবাকে। যদিও পরে শারীরিক কারণে জামিন পেয়ে যান ওই অধ্যাপক।
অধ্যাপক সাইবাবার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চে আপিল করবেন।
সূত্র: এনডিটিভি, আউটলুক, ফার্স্ট পোস্ট, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বাংলা ট্রিবিউন
৯০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী জেএন সাইবাবাকে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট
Posted: April 4, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: জিএন সাইবাবা, মাওবাদী, gn saibaba Leave a commentমাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে জেলবন্দি জেএন সাইবাবাকে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে শর্তসাপেক্ষে কয়েক মাসের জন্য জামিন পেলেও সেই জামিন বাতিল করে দেয় বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ,৯০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে নাগপুর জেলের কুখ্যাত আন্ডা সেলে ফেরত পাঠান হয় সাইবাবাকে। প্রায় ১৪ মাস জেলে থাকার পর চিকিত্সার জন্য গতবছরের ৩ জুলাই সাইবাবাকে জামিন দিয়েছিল বোম্বে হাইকোর্ট। ২০১৪ সালের মে মাসে কার্যত অপহরণ করে পরে গ্রেফতার দেখান হয় তত্কালীন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপককে।
(অনূদিত)
এ কোনও প্রতিবাদের গল্প নয়
Posted: December 25, 2015 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: জিএন সাইবাবা, মাওবাদী Leave a comment
শ্রদ্ধেয়
ড. জি এন সাইবাবা
নাগপুর সেন্ট্রাল জেল, নাগপুর
মহারাষ্ট্র৷
জানি না কোনওদিন এ চিঠি আপনার হাতে পৌঁছবে কিনা৷ না পৌঁছনোটাই স্বাভাবিক৷ তবু কেন লিখছি পৌঁছনোর অনিশ্চয়তা নিয়েও? লিখছি কোনও আবেগ বা আপনার প্রতি আমার সঙ্গোপন শ্রদ্ধা যতটা না আপনাকে জানাতে, তার চেয়ে অনেক বেশি আপনার কথা আমার এই বাংলার মানুষকে জানাতে৷ তাই এত প্রকাশ্য চিঠি, এক ভিন্নস্বরের মানুষ হওয়ার জন্য আপনার দুর্দশার সব অন্তরাল যথাসম্ভব ভাঙতে৷
আপনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামলাল আনন্দ কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক৷ গত বছরের গ্রীষ্মে সারা দেশ যখন তাপপ্রবাহের পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনের উত্তেজনায় ফুটছে, তারই মধ্যে মে মাসের ৯ তারিখ সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বাড়ির ফেরার পথে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু লোক আপনাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়৷ অধ্যাপক সাইবাবা, ছোটবেলায় পোলিও হওয়ার পর থেকে আপনার কোমর থেকে নিম্নাঙ্গ অসাড়৷ আপনি প্রতিবন্ধী৷ হুইলচেয়ার ছাড়া আপনার শরীরের কোনও গতি নেই, আপনার কোনও চলাচল নেই৷
নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আপনি বাড়ি না ফেরায় এবং আপনার মোবাইল ফোনে কোনও সাড়া না পেয়ে আপনার সহধর্মিণী বসন্ত স্হানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন৷ তারপর জানা যায়, যারা আপনাকে অপহরণ করেছিল তারা আসলে মহারাষ্ট্র পুলিসের লোক এবং ওই অপহরণকে তারা গ্রেপ্তার আখ্যা দিয়েছিল৷ হায় আখ্যান! ওরা জানত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আপনার আবাস থেকে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলে ছাত্র, শিক্ষক, সমাজকর্মীদের এক প্রবল পরাক্রান্ত প্রতিরোধের মুখে ওদের পড়তে হবে, আপনি এতই নিবেদিতপ্রাণ অধ্যাপক, আপনি এমনই অকুতোভয় জনপ্রিয় মানুষ৷ তাই আখ্যান৷ ওরা গোপনে অপহরণ করে দেখাল যে ওরা আসলে এক দারুণ সক্রিয় রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসবাদীকে গ্রেপ্তার করার দক্ষতায় পৌঁছেছে৷ ওহ! রাষ্ট্রক্ষমতা, ওহ! রাজনৈতিক ক্ষমতা৷
কিন্তু ঘটনার এই আকস্মিকতার মধ্যেও ধারাবাহিক হল এই যে, ওই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ও দিল্লি শহরে আপনার পরিচিতরা সবাই জানত, আপনি গ্রেপ্তার হবেনই, একদিন না একদিন৷ কেন জানত, আপনি তো কোনওদিন ভাল কাজ ছাড়া খারাপ কাজ করেননি? বরং গত কয়েক বছর ধরে আপনার যে ডক্টরেট ডিগ্রির গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন তার বিষয় ছিল, ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্যের বিষয়গত রাজনীতি৷ এমন দারুণ আধুনিক বিষয়ের এক গবেষকের গ্রেপ্তার হওয়াও তবে কী করে পরিচিতদের কাছে প্রত্যাশিত? কী আপনার ক্রমাগত অপরাধ, ড. সাইবাবা? কী সেই অপরাধের সত্য আর মিথ্যা?
এখানেই কাহিনীর শুরু৷ ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম অপারেশন গ্রিন হান্ট অভিযান শুরু করেন৷ প্রধানত মধ্যভারতের বিস্তীর্ণ এলাকার জঙ্গলমহল থেকে আদিবাসী অরণ্যবাসীদের উচ্ছেদ করে ওই অঞ্চলকে মাওবাদী-মুক্ত পরিচ্ছন্ন অঞ্চল বানাতেই আধাসামরিক বাহিনীকে তলব করা হয়৷ আসলে তা ছিল অরণ্যের প্রকৃত বাসিন্দাদের উৎখাত করার অভিযান, যাতে বহুজাতিক খনি ও পরিকাঠামো তৈরির কোম্পানিগুলির তৎপরতার পথ অবাধ হয়ে যায়৷ অরণ্য আর প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরা ওই ভূগোলকে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আদিবাসী অরণ্যবাসীদের উৎখাত করা অসাংবিধানিক জেনেও ইউ পি এ সরকার তার তোয়াক্কা করেনি৷ সেই চরম নৈরাজ্য আর বেআইনকে আইনসিদ্ধ করতেই নতুন জমি অধিগ্রহণ বিল পাস করাতে তৎপর নরেন্দ্র মোদির সরকার৷ ড. সাইবাবা, আমাদের বাংলা ভাষায় একটি মহতী উপন্যাসের নাম ‘অরণ্যের অধিকার’৷ সেই অধিকার কেড়ে নিতে হাজার হাজার আধাসামরিক জওয়ান ঢুকে পড়ল জঙ্গলে৷ গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিল, খুন আর ধর্ষণ করল হাজারে হাজারে৷ আদিবাসীরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেল আরও গহন অরণ্যে৷ বেঁচে থাকল খোলা আকাশের নিচে৷ প্রতিবাদে, প্রতিরোধে, প্রতিশোধে গড়ে উঠল যে সংগঠন, তাদের তৎপরতাকে দেশের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ বিপদ বললেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং৷ তাঁর কথামতোই, ইতিহাস তো তাঁকে মনে রাখবেই, যে ইতিহাস আর কিছুর না হোক মধ্যভারতের অরণ্যবাসের, অরণ্যবাসীর৷
পৃথিবীর সব ভূগোলের, সব সময়ের ইতিহাসেই, বর্তমানেও অবশ্যই, কিছু সুবিধাভোগী, কিছু দালাল, কিছু দুষ্কৃতী, কিছু বিশ্বাসঘাতক হাজির থাকে৷ ক্ষমতার অবারিত প্রশ্রয় পেয়ে যায় তারা, কীভাবে যে! কেউ উন্নয়নকে বলে সন্ত্রাস, কেউ সন্ত্রাসকেই বলে উন্নয়ন৷ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই অপারেশন গ্রিন হান্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হল দেশে৷ বিভিন্ন শহরে সভা, সমিতি, মিছিল হল৷ সেই সব জমায়েতের অনেকগুলোরই প্রকাশ্য উদ্যোক্তা ছিলেন আপনি, অধ্যাপক সাইবাবা৷ তার সামনে পড়ে সরকার জানাল, অপারেশন গ্রিন হান্ট নামে কোনও অভিযানই নেই, সবটাই সংবাদমাধ্যমের বানানো গল্প৷ অনামে সেই অভিযান কিন্তু আরও তীব্রতর চলতে থাকল৷ সত্যিই তো, গোলাপের মতোই, নামে কী এসে যায়, উৎপীড়ন, নির্যাতন, উৎখাত, সন্ত্রাস বা হত্যার, ধর্ষণের?
ওই অনাম্নী অভিযানের যারাই প্রতিবাদ করল তাদেরকেই ‘মাওবাদী’ আখ্যা দিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হল৷ কত হাজার হাজার দলিত, আদিবাসীকে, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে, কে হিসেব বা খোঁজ রাখে তার? তারা কেউ আইনি সাহায্য পায় না, কোন অপরাধে জেলে আছে, তাও জানে না, কোনও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশাও করে না৷ আপনি খোঁজ রাখতেন অধ্যাপক সাইবাবা৷ আপনার মতো সহমর্মীদের বিরুদ্ধে এবার মাঠে নামল সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিল আপনার মতো সহমর্মীদের সম্বন্ধে৷ বলল, এরা অরণ্যের মাওবাদীদের চেয়েও অনেক বেশি বিপজ্জনক৷ এ হলফনামা ২০১৩ সালের৷
ওই হলফনামার পরই সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে আপনার বাড়িতে তল্লাশি চালাল পঞ্চাশ জন পুলিসের একটি দল৷ কোনও এক চুরির মাল খোঁজার অজুহাতে৷ সে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের আহেরির এক ম্যাজিস্ট্রেট৷ চুরির মাল তো সেই পুলিস-দল পেলই না, উল্টে আপনার নিজস্ব ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেল তারা৷ দু’সপ্তাহ পর তদন্তকারী অফিসার সুহাস বাওয়াচে আপনাকে ফোন করে আপনার হার্ডডিস্কের পাসওয়ার্ড জানতে চাইলে আপনি তা দিয়ে দিলেন৷ পরের জানুয়ারিতে পুলিস আপনার বাড়িতে এসে কয়েক ঘণ্টা ধরে আপনাকে জেরা করে৷ আর মে মাসের ৯ তারিখে আপনাকে অপহরণ, যা আসলে গ্রেপ্তার৷
সেই রাতেই ওরা আপনাকে নাগপুর উড়িয়ে নিয়ে যায়৷ ফের গাড়িতে নিয়ে যায় আহেরিতে৷ ফের ফিরিয়ে আনে নাগপুরে৷ এই সড়কযাত্রায় আপনার নিরাপত্তায় ছিল এক বিশাল পুলিসবাহিনী ও বুলেটপ্রুফ কনভয়৷ তারপর থেকে আপনার ঠিকানা নাগপুর সেন্ট্রাল জেল৷ দেশের আরও ত্রিশ লক্ষ কারাবাসীর একজন৷ ওরা আপনার হুইলচেয়ার ভেঙে দিয়ে সেই ভাঙা হুইলচেয়ারে সঙ্গে আপনার মৃত শরীরকে বসিয়ে নিজেদের ছবি কাগজে ছাপিয়ে দেবে, যেন শচীনের হাতে বিশ্বকাপ৷ আপনি নব্বই শতাংশ প্রতিবন্ধী, আপনার শরীরের যত্ন, নিয়মিত ওষুধ, খাবার, ফিজিওথেরাপির ওরা তোয়াক্কা করে না৷ আপনার সলিটরি সেলে কেউ আপনাকে দেখার বা সাহায্য করার নেই৷ বাথরুমে যেতেও না৷ আপনাকে বিশেষ সম্মান দিয়ে ওরা আসলে আপনার ওপর যেমন খুশি অত্যাচার ও আপনাকে যখন খুশি হত্যার অধিকার অর্জন করেছে৷
ওরা আপনাকে জামিন দেবে না৷ দু’বার বাতিল করেছে আবেদন, আরও করবে৷ দেশের সংবিধান মেনে এভাবে কি একজন প্রতিবন্ধীকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে বন্দী করে রাখা যায়? আমি জানি না৷ আপনার শরীর কেবলই খারাপ হচ্ছে৷ ডাক্তাররা আপনার শরীর তথা হৃদযন্ত্রের ক্রমাগত দেখভালের কথা বলছেন৷ তবু আপনি চিকিৎসাধীন এক কারাবাসী৷ আপনার জীবন অথবা মৃত্যুতে ওদের কিছুই যে যায় আসে না৷
২০০২ সালে নারোদা পাটিয়া হত্যাকাণ্ডে দিবালোকে ৯৭ জনকে খুন করার ঘটনার আসামি বাবু বজরঙ্গীর জামিন হয়, গুজরাটে নরেন্দ্র মোদি সরকারের মন্ত্রী মায়া কোদনানিকে আটাশ বছরের কারাবাসের দণ্ড দিয়েও, ওই একই মামলায়, গুজরাট হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করে৷ সবই শরীরের কারণে৷ সোহরাবুদ্দিন শেখ, আরও দুজনকে হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষ অভিযুক্ত অমিত শাহের জামিন হয়, যিনি এখন বি জে পি-র সর্বভারতীয় সভাপতি, কিন্তু আপনার হয় না৷ আপনাদের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক আপনার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে গিয়েছিলেন আপনারই মুক্তির ব্যাপারে৷ কয়েক মিনিটের জন্য৷ এক নিরাপত্তারক্ষী হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আপনাদের দুজনের মাথার দিকে সারাক্ষণ তাক করেছিল, পাছে প্রতিবন্ধী আপনি ওই অধ্যাপকের সঙ্গে পালানোর কর্মসূচি বাস্তবায়িত করেন৷
অধ্যাপক সাইবাবা, ব্যক্তিপ্রতাপ, সঙঘপ্রতাপ, সংগঠনপ্রতাপ, অর্থপ্রতাপ জীবনভর, জীবিকাভর প্রতিদিন প্রতিরাত দেখেছি অনেক, দেখছি, দেখব নিশ্চয়ই আমৃত্যু৷ আপনি দেখছেন ও সহ্য করছেন রাষ্ট্রপ্রতাপ, কতদিন, তা রাষ্ট্রও জানে না৷ এমন সহনের দৈনন্দিন আমার কল্পনা-আশঙ্কার অতীত না ভবিষ্যৎ, তা আমিও যে জানি না৷ আপনাকে ব্যক্তিগত প্রণাম৷
( লেখকঃ অনিশ্চয় চক্রবর্তী ০৭/০২/২০১৫ )
সূত্রঃ http://aajkaal.in/uncategorized/%E0%A6%8F-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%A8%E0%A7%9F/
ভারতঃ অধ্যাপক সাইবাবার জামিন নাকচ করল আদালত
Posted: December 25, 2015 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: জিএন সাইবাবা Leave a commentমাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত জেএন সাইবাবার জামিন বাতিল করল বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ। ২৫ ডিসেম্বর , ৯০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী, সাইবাবাকে পুলিসের কাছে আত্মসমপর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালতে। সেই সঙ্গে লেখিকা অরুন্ধতি রায়কে সাইবাবার সমর্থনে outlook পত্রিকায় লেখার জন্য নোটিস দিয়ে জবাব তলব করেছে আদালত। ২৬ জানুয়ারির মধ্যে এই জবাব দিতে হবে অরুন্ধতি রায়কে।
প্রায় ১৪ মাস জেলে থাকার পর চিকিত্সার জন্য গত ৩ জুলাই সাইবাবাকে জামিন দেয় বোম্বে হাইকোর্ট। এখন আদালত জানাচ্ছে সাইবাবার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের যথেষ্ট সত্যতা আছে। আর তাই ৯০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ফিরতে হবে নাগপুর জেলের কুখ্যাত আন্ডা সেলে।
সাইবাবার জামিন নাকচ হওয়ার প্রেক্ষিতে অনেকেই বলছেন এদেশে চোর চিটিংবাজ-খুনিরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর শারীরিকভাবে ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী এক অধ্যাপককে হয়তো জেলেই মরতে হবে!
সূত্রঃ http://satdin.in/?p=6624
ভারতঃ অধ্যাপক সাইবাবার জামিনের মেয়াদ বাড়ল ৩ মাস
Posted: September 6, 2015 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: জিএন সাইবাবা, মাওবাদী, সাইবাবা, gn saibaba Leave a commentআরো ৩ মাসের জন্য জেএন সাইবাবার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিল বোম্বে হাইকোর্ট। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সন্দেহে ১ বছরের বেশি সময় জেলে বন্দি থাকার পর অবশেষে ৩০ জুন চিকিত্সার জন্য ৩ মাসের জামিন পান জেএন সাইবাবা।গত বছর মে মাসে দিল্লির ফ্ল্যাট থেকে কার্যত অপহরণের কায়দায় ৯০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী সাইবাবাকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্রের পুলিস। এর পর তাঁকে রাখা হয় নাগপুরের কুখ্যাত আন্ডা সেলে। সাইবাবার মুক্তির দাবিতে সরব হন বহু বিশিষ্টজন। কিন্তু আজও সারাদেশে অসংখ্য গরীব মানুষ বিনা বিচারে বা জামিনের অর্থ জোগার করতে না পেরে পেটি কেসে জেলেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
সূত্রঃ http://satdin.in/?p=4619