বিপ্লবী চলচ্চিত্রঃ রোজা লুক্সেমবার্গ (১৯৮৬ সাল)

মহান মার্কসবাদী ও পোলিশ সমাজতন্ত্রী শহীদ কমরেড রোজা লুক্সেমবার্গ এর জীবন নিয়ে ১৯৮৬সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। ছবিটি ঐ বছরই সেরা ফিচার ফিল্ম হিসেবে জার্মান ফিল্ম এওয়ার্ড পুরস্কার অর্জন করেছিল। শহীদ কমরেড রোজা লুক্সেমবার্গ এর জীবনী সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন – বিশ্ব সমাজতন্ত্রী আন্দোলনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র – ‘কমরেড রোজা লুক্সেমবার্গ’

 


বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির ১২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির ১২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার খুলনার আড়ংঘাটা থানার শলুয়া পূর্ণচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সভাপতি ডা. এম. এ. করিম।

সম্মেলনে হাফিজুর রহমানকে সভাপতি, শাহজাহান কবিরকে সাধারণ সম্পাদক এবং কামরুল হক লিকুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের শপথ পাঠ করান বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম।

উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. জাহাঙ্গীর হুসাইন ও কৃষক সংগ্রাম সমিতির সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিক।

এ সময় ৩০টি জেলার সভাপতি দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নেতা আইনজীবী মনসুর হাবীব, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ভূইয়া, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ড. ওবায়দুল্লাহ সাগর, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির যুগ্ম-আহ্বায়ক রহিমা জামাল ও বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিক।

ভূমিহীন কৃষকের জমি ও কাজের দাবিতে আন্দোলন অগ্রসর করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, কৃষিকাজে ব্যবহৃত ডিজেল, বিদ্যুৎ, সার, কীটনাশক বিনামূল্যে প্রদান এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্য কৃষিকে যান্ত্রীকিকরণের নামে লগ্নিপুঁজি বিনিয়োগের চক্রান্ত রুখে দাঁড়াতে হবে।

কৃষি বিপ্লবের লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল শাসক-শোষক শ্রেণি ও জোতদার-মহাজনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তারা।


ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী হামলায় ৪ পুলিশ নিহত

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালে লাতেহার শহরে ভয়াবহ মাওবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এক অফিসারসহ অন্তত চার পুলিশ কর্মকর্তার প্রাণহানি হয়েছে। তাছাড়া আহত হয়েছে বাহিনীর আরও বেশকিছু সদস্য।

কর্তৃপক্ষের বরাতে গণমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানায়, শুক্রবার (২২ নভেম্বর) গভীর রাতে স্থানীয় থানার পাশেই মর্মান্তিক এই হামলাটি চালানো হয়। মাওবাদী স্কোয়াড টহলরত পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে অতর্কিতভাবে গুলি বর্ষণ করলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় মাওবাদীরা অন্তত ৭০-৮০ রাউন্ড গুলি চালায়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই লাতেহার শহরেই প্রথম জনসভা করেছিলেন বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

ঐ জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘বিজেপির আমলেই মাওবাদীদের আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড। মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের আমলেই এটা বাস্তবায়ন সম্ভব।’  তার এই জনসভার একদিনের মাথায় ভয়াবহ মাও হামলা হলো লাতেহার।

এ দিকে রাজ্য পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন রাতে পুলিশ একটি ভ্যান চান্দোয়া থানার পাশে টহল দিচ্ছিল। তখনই মাওবাদীরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে একের পর এক গুলি চালাতে শুরু করে। সশস্ত্র পুলিশের পক্ষ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত এক ওসিসহ ৪ পুলিশের প্রাণহানি হয়।

অপর দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য এরই মধ্যে লাতেহারে অবস্থান করছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ, তাই সড়কে টহল দিতে শুরু করেছেন সিআরপিএফ বাহিনীর জাওয়ানরা। মোট ৫ দফায় হবে এই নির্বাচন। তাই প্রতি দফাতেই মাওবাদী হামলার আশঙ্কা বেড়ে গেছে।


সূত্রঃ https://www.odhikar.news/international/106269


আগামীকাল ২৪শে নভেম্বর USDF এর তৃতীয় রাজ্য সম্মেলন

‘প্রতিষ্ঠান বিরুদ্ধ’ স্বরের চিৎকার আজ সারা পৃথিবীর ভূখণ্ড জুড়ে আছড়ে পড়ছে। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে খোদ মার্কিন মুলুক, রাশিয়া ও চীনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছিটকে আসছে প্রতিবাদ প্রতিরোধের অবিচ্ছিন্ন স্বর। সম্প্রতি চিলির জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্যের দাবিতে জঙ্গী আন্দোলন, হংকং থেকে শুরু করে ভেনিজুয়েলার প্রতিষ্ঠানবিরোধী জঙ্গী আন্দোলন, বাংলা দেশে কিছু বছর আগে VAT বিরোধী আন্দোলন, সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন, রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো বিরোধী আন্দোলন, কাশ্মীরের জনগণের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন,সম্প্রতি আমাজন অরণ্যের আদিবাসীদের সশস্ত্র আন্দোলন, কর্পোরেটদের হিংসার কবলে থাকা কঙ্গো ও তার আগুন, লেবাননের আন্দোলন, ফ্রান্সের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন, ফিলিপিন্সের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন থেকে শুরু করে কাতালোনিয়া, কুর্দিস্তান, বালুচিস্তান, কাশ্মীর, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, গোর্খাল্যান্ড, কামতাপুরির মুক্তিকামী জনগণের জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা আন্দোলন, প্যালেস্টাইনের সাধারণ জনমানুষের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন কোনোটাই আমাদের রাখা খবরের বাইরে নয়। সাধারণ মানুষের উপরে প্রতিষ্ঠানের জোর-জুলুমবাজের বিরুদ্ধে বরাবর সাধারন মানুষই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এবং এখনও করে চলেছে। খোদ আমাদের চারপাশে আমরা যদি দেখি, সংকটাপন্ন বিশ্ব পুঁজিবাদ ‘জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের’ মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে যতবার মানুষের সাধারন অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে চেয়েছে, যতবার সে আঁচড় বসিয়েছে মানুষের প্রতিদিনকার রুটি-রুজির যাপনের অধিকারের উপর, যতবার সে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের মৌলিক অধিকার, কৃষিক্ষেত্রে মেরেছে কৃষককে, কারখানার পর কারখানা বন্ধ করে ছাঁটাই করেছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, শিক্ষাকে প্রাইভেট মুনাফাখোরদের হাতে বিক্রি করে দিয়ে পরিণত করেছে ব্যাবসাক্ষেত্রে, কেড়ে নিয়েছে মানুষের কথা বলার অধিকার; ততবার এই মাটির সাধারন মানুষেরা নেমেছে রাস্তায় রাস্তায়, প্রতিবাদে গড়ে তুলেছে প্রতিরোধের ব্যারিকেড। সে ঔপনিবেশিক শাসকের করাল গ্রাস হোক, কিংবা তথাকথিত স্বাধীনতা পরবর্তী ব্রিটিশদের দালাল এদেশের মুৎসূদ্দি মুনাফাবাজরা হোক, কিংবা তেলেঙ্গানার জমিদাররা হোক, কিংবা নকশালবাড়ির জোতদারেরা হোক, কিংবা সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম লালগড়ের জনবিরোধী জমিলুটেরারা হোক; মানুষের বিক্ষুব্ধ প্রতিরোধের হাত থেকে রেহায় পায়নি কোনও শাসকই। বর্তমানের কাশ্মীর, বাংলাদেশ, হংকং, গোর্খাল্যান্ড কিংবা খোদ কলকাতা শহরেই, রাষ্ট্রের মস্তান বাহিনী, জলকামান ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ থামাতে পারছেনা।

আজকে সারা দেশজুড়ে চলমান ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন মানুষের যাপনের প্রতিটি উপাদানের উপর নেমেছে আক্রমণ, রক্তাক্ত হয়েছে মানুষের অর্থনীতি,সংস্কৃতি; ঠিক তেমনি ‘অত্যাচার থাকলে প্রতিরোধও থাকে’ এই সুরে তাল মিলিয়ে ইতিহাসের গতিও আবার এক ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজয়ের লক্ষ্যে তার নিজস্ব দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু এই পথ সুগম নয়। তাই আমাদের সমাজের মূল দ্বন্দ্ব শ্রেণীদ্বন্দ্ব- এই মার্ক্সবাদী শিক্ষাকে উর্দ্ধে তুলে ধরে শ্রেণীসংগ্রামের মাধ্যমে সমাজ বদলের মৌলিক প্রশ্নকে সামনে রেখেই সমস্ত ফ্যাসিস্ট শক্তির সামনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে নিও এডুকেশন পলিসি, সিবিসিএস এর মতন ছাত্রছাত্রী বিরোধী পরিকাঠামো লাগু করে শিক্ষাকে পুরোপুরি ব্যাবসার ক্ষেত্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র আগামী দিনের ছাত্রছাত্রী আন্দোলনের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ।

সারা দেশজুড়ে ফ্যাসিস্ট আগ্রাসন, অর্থনৈতিক কাঠামোর অসম্ভব নিষ্ফলতা, শিক্ষা থেকে শুরু করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান,রেল,ব্যাঙ্ক প্রাইভেট মুনাফাখোরদের হাতে তুলে দেওয়া, গত চার বছরের ৯৬ লক্ষ বেকারত্ব বৃদ্ধি, উগ্র হিন্দু, ব্রাহ্মণ্যবাদী, পিতৃতান্ত্রিক আগ্রাসনের দ্বারা সংখ্যালঘু,দলিত,নারী নির্যাতনের হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, NRC এর নামে কোটি কোটি মানুষের থেকে নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়ে তাদের সস্তার শ্রমিক তৈরী করার মাধ্যমে নতুন ক্রীতদাস ব্যাবস্থা লঞ্চ করার যোগাড়যন্তর, মানুষের কথা বলার,বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারের উপর আক্রমণ।
এমনই এক অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন আয়োজন করছি। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীতে আরও জোরদার ছাত্রছাত্রী আন্দোলনের প্রস্তুতি, আহবান ও অঙ্গীকার একইসাথে রেখে সকল প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ছাত্রছাত্রীশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে USDF এর পক্ষ থেকে আমরা আগামী ২৪শে নভেম্বর, ২০১৯(রবিবার) কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ হলে রাজ্য সম্মেলনের আয়োজন করছি। সকল গণতান্ত্রিক, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে আমরা আমাদের রাজ্য সম্মেলনে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আসুন সাথী, ‘আগামীর দ্রোহকাল আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধারণ করি।’


‘অন দা কালচারাল ফ্রন্ট’: ঋত্বিক ঘটক

 

অন দা কালচারাল ফ্রন্ট‘ নামে থিসিসটি ‘ঋত্বিক ঘটক’ ১৯৫৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’তে জমা দিয়েছিলেন –

বইটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে নীচে ক্লিক করুন

অন দা কালচারাল ফ্রন্ট ঋত্বিক ঘটক


কেরলে মাও পুস্তিকা প্রচারের অভিযোগে সিপিএমের ২ কর্মী UAPAতে গ্রেফতার

কেরলে ২ সিপিএম কর্মীকে মাওবাদী পুস্তিকা প্রচারের অভিযোগে গ্রেফতার করল পুলিস। এমনটাই জানাচ্ছে দ্য নিউজ মিনিট ওয়েবসাইট। শুক্রবার রাতে কোঝিকোড়ে আইনের ২ ছাত্র মাওবাদীদের সমর্থনে লেখা পুস্তিকা বিলি করছিল বলে অভিযোগ। ওই  ২ ছাত্র  মাওবাদীদের সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছিল বলেও পুলিসের অভিযোগ।  সেই সময় পুলিস UAPA আইনে তাদের গ্রেফতার করে। এলেন সুয়াইব ও থাহা ফয়সল কেরলের শাসকদলের কর্মী। এলেন কোজিকোড়ে দলের শাখা সদস্য। থাহা DYFI এর স্থানীয় নেতা।

মাওবাদী পুস্তিকা বিলির অভিযোগে ২ ছাত্রকে গ্রেফতারের  নিন্দা করে একে বর্বরোচিত কাজ বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলের নেতা রমেশ চেন্নিথালা। কংগ্রেসের এই নেতা স্মরণ করে দিয়েছেন আদর্শ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ওই আইন প্রযোজ্য করা যায় না। বাম সরকার গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস নেতা।

কয়েকেদিন আগেই পাল্লাকাডে ৩ মাওবাদীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। খোদ শাসকদলের শরিক সিপিআই এই প্রশ্ন তুলে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। পুনরায় বিজয়ন সরকারে আসার পর ৬জন মাওবাদীকে সংঘর্ষে হত্যা করা হয়েছে। সিপিআই এর তরফে জানান হয়েছে গুলি করে মাওবাদীদের হত্যার তারা সবসময়েই সমালোচনা করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এবার মাওবাদী পুস্তিকা প্রচারের অভিযোগে UAPAতে ২ ছাত্রের গ্রেফতার ঘটনা প্রমাণ করছে রাজ্য মাওবাদীদের মোকাবিলায় ক্রমশ পুলিস নির্ভর হয়ে পড়ছে শাসকদল। তোয়াক্কা করছে না গণতান্ত্রিক পদ্ধতির।

সূত্রঃ সাতদিন.ইন


হারাবার কিছুই নেই শৃঙ্খল এবং পলিটিক্যালি কারেক্টনেস ছাড়া!!- ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে নবারুণ ভট্টাচার্য

হোয়াট ড্যু ইউ মিন বাই ফিল্ম?

সত্যিই কি তুলসী চক্রবর্তী পরশ পাথরে কিছু করেছিলেন নাকি হ্যামলেটে আমরা যে স্মোকনোফস্কিকে দেখেছি সেটা কি খুব ভাল ছিল… কীরম যেন কনফিউজড হয়ে যাই! এই যে আমাদের দেশে এইভাবে একটা লুম্পেন কালচার তৈরি হয়ে গেছে, যেখানে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক টেলিভিশনে এই কথাও কবুল করেন যে উনি মেঘে ঢাকা তারার রিমেক করবেন! মানে অসভ্যতা, অভব্যতা যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে এই সময়ে…!

সত্যি, উনি যে বললেন ঋত্বিক আবিষ্কার- এই আবিষ্কার যত বেশি করে করানো যায় ততই মঙ্গল! আমার একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে- সেই অসামান্য সিকোয়েন্সটি তোলা হচ্ছে কোমল গান্ধারে যেখানে গিয়ে সেই বাফারের ট্রেনের ধাক্কাটা… সেই যে বাংলাদেশ বর্ডার… তো ঐখানে, আমি তখন খুব ছোট আর ঐ যে ট্রলিতে করে ক্যামেরা যাচ্ছে, ঐ ট্রলিতে আমি বসে আছি; তা লালগোলার কোন ফিল্মবেত্তা এসে হঠাৎ আমাকে বললো, ‘আচ্ছা খোকা শোন তুমি দেড়শো খোকার কাণ্ডতে ছিলে না?’ ঐ ধরেশ সিনেমা কোম্পানির সঙ্গেই সে সিনেমা করে বেড়ায়… আমি খুব স্মার্টলি উত্তর দিলাম- হ্যাঁ আমি ছিলাম! কথাটা কিন্তু খুব মিথ্যে নয়, কারণ আমার বন্ধু লোকনাথ দেড়শো খোকার একটি খোকা, আমরা একসঙ্গে পড়তাম অতএব সেই বন্ধুর গর্বে আমিও গর্বিত। যাইহোক, সেইখানে সেই লোকটিই ঋত্বিককে একটা কথা জিজ্ঞেস করেছিলো- ‘আচ্ছা এই ফিল্মে এমন কোন ক্যারেক্টার আছে যাকে নিয়ে আপনার ক্যামেরা এগোচ্ছে?!’ তো, ঋত্বিক বললো- কি বললে? তো, আবার বললো- ফিল্মে…? ঋত্বিক বললো, হোয়াট ড্যু ইউ মিন বাই ফিল্ম? এইটা একটা মারাত্মক প্রশ্ন কিন্তু!! ন্যাচারালি সে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি! ওর প্রশ্নের পালাতে পথ পাচ্ছে না লোকটি!!

ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে

কিন্তু হোয়াট ড্যু ইউ মিন বাই ফিল্ম? ফিল্ম বলতে আমরা কি বুঝি…? ফিল্ম কি…? ফিল্ম একটা স্টেটমেন্ট হতে পারে, ফিল্ম একটা দার্শনিক তাৎপর্য বহন করতে পারে, ফিল্ম একটা ট্রিটিজ হতে পারে, ফিল্ম একটা দাস ক্যাপিটাল হতে পারে… ফিল্ম অনেক কিছু হতে পারে। মুষ্টিমেয় চলচ্চিত্র পরিচালকই এই জায়গাটায় উত্তীর্ণ হন, সকলেই হন না! এবং সেখানে ঋত্বিক একজন, যেমন- তারকোভস্কি একজন, বার্গম্যান একজন, আকিরা কুরোশাওয়া একজন- যারা এই দর্শনের জায়গায় গিয়ে, ইতিহাসের জায়গায় গিয়ে অদ্ভুত একটা অবস্থান গ্রহণ করে- যেখানে সমস্ত শিল্পমাধ্যম গুলিয়ে যায়! তা, আমি এইটা নিয়ে একটা তত্ত্বে এসছি, ঋত্বিক ঘটক বা তার পাশাপাশি আমরা যাদের দেখতাম সেই বিজন ভট্টাচার্য, যতীন্দ্র মৈত্র, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, চিত্ত প্রসাদ, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, স্বর্ণকমল ভট্টাচার্য- এরা কারা? আজকে কোনো লোক এদের চেনে না! দু’দিন পর ঋত্বিককেও চিনবে না, সেটা ঠিক। কারণ, আমাকে যে নেমন্তন্নটা করা হয়েছিলো সেখানে বলা হয়েছে যে, বাঙ্গালির আধুনিকতা কোলন ঋত্বিক কুমার ঘটক। এখন, এই বাঙ্গালি যে রেটে আধুনিক হয়ে উঠেছে, তাতে তার কাছে ঋত্বিক ঘটক একটা উদ্বৃত্ত মানুষ! তা, আমি উদ্বৃত্ত মানুষটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। আমি সোভিয়েত দূতস্থানের প্রচার বিভাগে চাকরি করতাম। পাশের ঘরে বসতেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ছিলেন পিকিংপন্থি। মানে, মস্কোর হেডকোয়ার্টারে পিকিংপন্থি মানুষ- অতএব কেউ তার সাথে কথা বলতো না। আমি জন্ম থেকেই ওকে দেখে আসছি। তো, আমি গিয়ে কথা বলতাম, গল্প করতাম। আর ঋত্বিক প্রায়ই আসতেন পয়সার জন্য। একটু মদ খাওয়ার জন্য পয়সা দরকার। এলেই শিবদেবের কাছ থেকে কিছু, আমার কাছ থেকে কিছু, হেমাঙ্গদার কাছ থেকে কিছু নিয়ে বেরিয়ে যেতেন। খুব কম সময়ের জন্য আসতেন। এই মানুষটাকে কাছে দেখতে দেখতে একদিন হলো কি- এই যুক্তি-তক্কো-গপ্পোর ফেইজটাতে বা তার আগে ঋত্বিক ফুটপাতে থাকতো, রাস্তায় থাকতো। আমার বাড়ির উল্টোদিকে একটা বাড়ি ছিলম, তার রক ছিল, তার উপরে থাকতো। শুধু ঋত্বিক নয়, ঋত্বিকের মত আরো কিছু লোক যাদের পরিপূর্ণ উদ্বৃত্ত বলা যায়- দে ওয়্যার লুম্পেনস, তারাও থাকতো। ঋত্বিকও সেই লুম্পেনদের একজন। আমার মনে আছে- সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমি সিগ্রেট কিনতে গিয়েছি ঋত্বিক আমার কাছে পয়সা চেয়েছে… এক প্যাকেট চারমিনার কেনার পরে আমার কাছে আঠারো না আটাশ এরকম পয়সা আছে। তো, আমি বললাম এটা নেবে? ও বললো দে! আমি দিয়ে বললাম, এই পয়সায় কি হবে? ও বললো, চলে যাবে! ঋত্বিকের মৃত্যুর পর আমার বাবা একটা স্মরণ সভায় বলেছিলো, ‘ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে’। ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে- এই কথাটা যেন আমরা না ভুলি। কারণ, এই খুন নানাভাবে করা যায়! জাফর পানাহিকে যখন বলা হয় কুড়ি বছর তুমি ছবি করতে পারবে না, স্ক্রিপ্টও লিখতে পারবে না- এটা তাকে খুন করা। বিনায়ক সেন কে যখন বলা হয় তুমি ডাক্তারি করতে পারবে না, কিছুই করতে পারবে না- সেটাও তাকে খুন করা। এবং ঋত্বিক ছবি করার কি সুযোগ পেয়েছিলো তার সময়?! একটা স্ট্রাগ্লিং/ফাইটিং আর্টিস্ট বলতে যা বোঝায় ঋত্বিক পরিপূর্ণভাবে তাই ছিলো! আমি আপনাদের বলছি, সুবর্ণরেখার আউটডোর চাকুলিয়ায় হয়েছিলো। সেখানে রোজ রাত্তিরে সাড়ে নয়টায় কোলকাতা থেকে একটা ট্রেন এসে পৌঁছাতো। সাড়ে ন’টার আগে থেকে আমি ঋত্বিকের মধ্যে একটা অদ্ভুত টেনশন লক্ষ্য করতাম। টেনশনটা হচ্ছে ঐ ট্রেন এসে পৌঁছুবে কিনা! ট্রেনটা এলে তার থেকে কোন চেনা লোক নাববে কিনা! এবং সে ফিল্মের র’স্টক আনবে কিনা! সেইটা না আসলে শুটিং করা যাবে না! এসবের কারণে দিনের পর দিন শুটিং বন্ধ হয়ে গেছে, র’স্টক আসেনি। এইভাবে একটা মানুষকে কাজ করতে হয়েছে। ঋত্বিক যখন ছবি শ্যুট করতেন তখন তার মাথায় তো একটা অ্যাল্কেমি, একটা ক্যালকুলেশন সবই থাকতো…। কিন্তু, আরেকটা জিনিস করতেন- অনেক এক্সেস শ্যুট করতেন, ওগুলো সব এডিটিং টেবিলে ঠিক হবে। সুবর্ণরেখার সেই দুর্মূল্য বহু বহু ফুটেজ টালিগঞ্জে পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে… আমাদের দেশে সত্যি কোন আর্কাইভ, সত্যি কিছু থাকলে (হয়তোবা সংরক্ষিত হতো)… এগুলো অমূল্য সম্পদ। যেমন, আইজেনস্টাইনের এইরকমের বহু কাজ তারা নষ্ট করেনি। সেগুলো নিয়ে পরে এডিট করে অনেক কিছু বেরিয়েছে। কিন্তু, ঋত্বিকের ভাগ্যে সেটা জোটেনি!! এই জন্য বললাম, ঋত্বিককে খুন করা হয়েছে। ঋত্বিকের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ছে- ঋত্বিক যাদের বাজনা শুনতো, খুব পছন্দ করতো তার মধ্যে একজন মোজার্ট। মোজার্টের একটা জীবনী পড়েছিলাম সেখানে আছে যে, মোজার্ট কোথাও একটা, তার অর্কেস্ট্রা টিম দিয়ে একটা সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন, একটা সিম্ফোনি কম্পোজিশন, সামনে লোকের প্রচন্ড ওভেশন… তারা চিৎকার করছে লং লিভ মোজার্ট! আর মোজার্ট কানে শুনছেন লং স্টার্ভ মোজার্ট! তুমি না খেতে পেয়ে মরো! এইটা আমাদের দেশে হয়েছে! একাধিক শিল্পীর ক্ষেত্রে হয়েছে! আমি যাদের কথা বললাম এদের প্রত্যেকের হয়েছে। যেমন, যতিরীন্দ্র মৈত্র- তিনি কি মাপের একজন শিল্পী এটা কেউ ভাবতে পারে না! তার কাছে যখন কোন অর্কেস্টা নেই, কোন বাদ্যবৃন্দ নেই, কিচ্ছু নেই- তিনি ফুটপাতের, বস্তির বাচ্চাদের নিয়ে একটা টিম বানালেন। সেখানে ইন্সট্রুমেন্ট কি- একটা পাউডারের কৌটার মধ্যে ইট ভরে সেইটা দিয়ে একটা ইফেক্ট, এভাবে অন্যান্য ইফেক্ট এবং সেটার নাম দিলেন কী- জগঝম্প! তা জগঝম্পের সঙ্গে ঋত্বিকের যে সম্পর্ক, এই লোকটার সঙ্গে বিজন ভট্টাচার্যের যে সম্পর্ক… যেমন ধরুন একটা ঘটনা বলি- সুবর্ণরেখার ফাইনাল স্ক্রিপ্ট লেখা হচ্ছে, পরদিন শুটিং হবে… হরপ্রসাদ মানে যে চরিত্র আমার বাবা করেছিলেন, উনি সেই ডায়লগগুলিকে আবার লিখছেন- তখন ওকে একজন জিজ্ঞেস করেছে এই ডায়লগগুলি তো কালকে লেখা হয়ে গেছে আবার কেনো করছেন! বললেন, থামো! এশিয়ার গ্রেটেস্ট আর্টিস্ট তাকে আমায় প্রজেক্ট করতে হবে না!! এই বোধটা !!! এগুলি কিন্তু সবই উদ্বৃত্ত মানুষদের নিয়ে কথা। তারা কি ছিল আর বাঙ্গালির জানার কোন উপায় নেই।

ঋত্বিক সেই লোক যিনি ইংরেজি জানা ক্রিটিকদের কাল্টিভেট করতো না

আমি একটা ছোট্ট কথা বলছি, আপনাদের মধ্যে যারা আমার হারবার্ট উপন্যাসটা পড়েছেন… তা সেই হারবার্টকে নকশালি বুদ্ধি-টুদ্ধি শিখিয়েছিলো বিনু বলে একজন। এবং সুবর্ণরেখার বিনু, ছোট বিনু, যে আমার ভাই, যে মারা যায় লেকের জলে ডুবে… সুবর্ণরেখার শেষ হচ্ছে মামার সঙ্গে সে যাচ্ছে আর বলছে আমরা নতুন বাড়িতে যাবো যেখানে প্রজাপতি আছে, গান হয়, সেখানে গেলে মাকে পাবো, বাবা আছে… এই নতুন বাড়িতে যাচ্ছিলো বিনু। এখানেই ছবিটা শেষ হয়। এবং এর পরবর্তী যে বিনু, আমি যাকে কনশাসলি হারবার্টে নিয়ে এসেছিলাম; সেই বিনু তখন বড় হয়েছে। এবার সে নতুন বাড়িটা নিজে বানাবার চেষ্টা করছে। এবং আজকেও এই চেষ্টাটা ফুরিয়ে যায়নি। আজকে আমার যে মাওবাদী বন্ধুরা জঙ্গলে বা জেলে রয়েছেন তারা ঐ নতুন বাড়িটার জন্যই ভাবছেন… আর কিছু না। এবং প্রত্যেক যুগে, সমস্ত সময়ে বিনুদের এটা অধিকার! বিনুরা এটা করবেই, সেটা ঠিক হোক কি ভুল হোক! এবং সেইটাকে ক্যামেরায় এবং কলমে ধরবার লোকও থাকবে। যেমন, সত্যি সত্যি অমূল্য বাবুদের দলের সঙ্গে ঋত্বিকের কনফ্রন্টেশনটা… তা একটা ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট, অসামান্য ডকুমেন্ট। পার্টলি আপনারা এই রকম ডকুমেন্ট পাবেন বিজন ভট্টাচার্যের চলো সাগরে নাটকে। ওখানে একটা ডায়লগ আছে যেইটা একচুয়ালি নকশালবাড়িতে হয়েছিলো হরে কৃষ্ণ কুমারের সঙ্গে ঐখানকার নেতৃবৃন্দের- জঙ্গল সাঁওতাল, চারু বাবু এদের আলোচনা। এই ডকুমেন্টশনের যে কাজটা ঋত্বিক করে গেছেন, এটার মূল্য অপরিসীম। সেটা আজকেও টপিক্যাল। ঐ যে বলছেন- তোমরা সফল ও নিষ্ফল; সেখানে তিনি মোটামুটি একটা প্র্যাকটিসিং সোশালিজমের ইতিহাস বলছেন। ঋত্বিক কিন্তু সবটা জানতেন। তিনি সুসলভ থিসিস পড়েছিলেন, তিনি চেগুয়েভারার অন গেরিলা ওয়্যারফেয়ার জানতেন। এগুলো জেনে এই জিনিসটাকে করা। এবং কতটা তার ডিটেইল সেন্স… অনন্যর একটা সিকোয়েন্স আছে ব্রেনগান নিয়ে উলটে উলটে যায়, একচুয়ালি দ্যাট ইজ দ্য ওয়ে দ্যাট গান ইজ টু বি ট্যাকলড! এবং অন্যন্যর সঙ্গে একটা ছেলে ছিল সে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ঐ বন্দুকটা নিয়েই লড়াই করেছিলো এবং দে ওয়্যার প্রোপারলি ট্রেইন্ড। এখানে সবটা আবেগের বিষয় নয়, একটা সায়েন্টিফিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ফটোগ্রাফির এই যে সিদ্ধি দেখছি, এই যে আশ্চর্যের জায়গা ওর সিনেমায়, এরও কিন্তু একটা গুরু-শিষ্য পরম্পরা আছে। ঋত্বিকের এই কাজের অনেকটাই কিন্তু শেখা বিমল রায়ের কাছে। যার মত একজন টেকনিশিয়ান তখনকার যুগে কেন, এখনো নেই। বিমল রায় কি মানের টেকনিশিয়ান তার একটা উদাহরণ দেই- বিমল রায় শুটিং করছেন মীনা কুমারীকে নিয়ে। এমন সময় পাশের স্টুডিও থেকে কে.আসিফ একটা নোট পাঠায়- বিমলদা একবার আসবে? উনি গেলেন আর সেটে বলে গেলেন থাকো আমি আসছি। ওখানে গিয়ে দেখেন সব্বনাশে ব্যাপার! মুঘলে আযমের শুটিং হচ্ছে– আয়নায় মধুবালাকে দেখা যাচ্ছে, সেই সিকোয়েন্সেটা… ঐটা শুট করার সময় ক্যামেরা বারবার চলে আসছে আয়নায়। তো, কে.আসিফ বলছে এখন আমি কি করে শুট করবো!? ঐখানে ক্যামেরায় ছিলেন আর ডি মাথুর। তো, বিমল রায় ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা বসাচ্ছেন কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। তখন উনি নিজের ফ্লোরে একটা নোট পাঠালেন শুটিং প্যাকআপ করে দাও, মীনাকে বাড়ি চলে যেতে বলো। তিনি ঐ ফ্লোরের দায়িত্ব নিয়ে নিলেন এবং ছয়-সাত ঘন্টা থেকে প্রব্লেমটা সলভ করেন। সেই ফিনিশড প্রোডাক্টটা আমরা দেখি এখন। সেই লোকের সঙ্গে কাজ করেছেন। এদের ট্রেনিং, এদের আউকাত, এদের ঘারানাসবগুলোই অন্যরকম। কারণ, ঋত্বিক সমন্ধে একটা ইমেজ বাজারে দেওয়া হয়, ঐ পলিটিক্যালি কারেক্ট বাঙ্গালিরা করে…! এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলি ঋত্বিক সেই লোক যিনি ইংরেজি জানা ক্রিটিকদের কাল্টিভেট করতো না! বেশি তালেবড় লোক তার কাছে গেলে লাথ মেরে বের করে দিতেন, সোজা কথা। এবং আমি বাকি ডিরেকটদের জানি তারা এই হাফ সাহেবদের কালিটিভেট করেছিলেন এবং তারা তখনই বুঝতে পেরেছিলেন সাহেবদের বাজারে কল্কে না পেলে কিছু হবে না। ঋত্বিকের এসব মাথায় ছিলো না। একটা অ্যাওয়ার্ডও পায়নি, একটাও না! মানে কিচ্ছু পায়নি, কোন ফেস্টিভালে না… কিচ্ছু না! এবং আজকে সে সমস্ত ফেস্টিভালের বাইরে চলে গেছে, অন্য জায়গায় চলে গেছে। এবং এই যে, ফাইটিং স্পিরিট… ঠিক আছে ছবি করতে পারছে না, থিয়েটারের উপর ম্যাগাজিন করছে, নাম ছিল অভিনয় দর্পণ। সেটাও উইথ ইক্যুয়াল অনেস্টি। আমি নিজের চোখে দেখেছি। শেষে হলো প্রফেশনাল থিয়েটার করবো… শালা সিনেমা করতে দিবি না… যাহ থিয়েটারই করবো। এবং সেই প্রজেক্টও এগিয়েছিলো… সাথে ছিল তিনটা ছবি করা এবং প্রত্যেকটা বানচাল হয়ে যায়। ঐ মিসেস (ইন্দিরা)গান্ধী একটু স্পেশালি ফেভার করতেন বলে উনার কিছু কাজ-টাজ, তারপর ইমার্জেন্সি ফ্লাইটে করে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা-এগুলো হয়েছিলো। আদারওয়াইজ, কোন জায়গা থেকে কোন সহায়তা লোকটা পাননি। আমাদের সো-কল্ড ইন্ডাস্ট্রি, সো-কল্ড বিগ নেইমস কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এবং তার সময়ও তাকে কেউ বুঝতো না। ছবি তো ফ্লপ। ছবি যখন রিলিজ হতো, হলে কেউ নেই।

ঋত্বিক ওয়াজ দ্য ওনলি ম্যান

বাঙ্গালি শুধু বোঝেনি তা নয়… ঋত্বিক ওয়াজ দ্য ওনলি ম্যান যার হাত থেকে কোন ডিরেকটর বের হয়নি। তার সঙ্গে যারা ছিলো তারা কোন কাজ করতে পারেনি। এইটা একটা পিকুইলিয়ার ঘটনা কিন্তু! লোকে গিয়ে শেখে অথচ অত বড় লোকের কাছে থেকেও কেউ শিখতে পারেনি। কারণ, তারা তার অরাতে এত বেশি আচ্ছন্ন যে শুধু মদ খাওয়াটা শিখে নিলো কিন্তু কাজের কাজটা শিখলো না। যার ফলে কিছুই হয়নি। এ্যাটলিস্ট মিডিয়োক্রিটও তৈরি হয়নি। আমি ঋত্বিকের কাজের কতগুলি ধারার সাথে পরিচিত যার মধ্যে একটা স্পট ইম্প্রোভাইজেশন। ঐযে অসামান্য বহুরুপী এয়ারপোর্টে যার সামনে সীতা গিয়ে পড়ে, এই বহুরূপীর কোন সিকোয়েন্স স্ক্রিপ্টে ছিল না। আমরা গিয়েছিলাম ওখানে একটা বাজারে, সেইখানে ঐ বহুরূপী ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। তখন ওকে দেখে ইম্প্রোভাইজ করে তুলে নিয়ে যায় এয়ারপোর্টে। নিয়ে গিয়ে শ্যুট করা হয়। এবং তখন আমি অবাক হয়ে গেছলাম ওরে! বাবা! ওত বড় এয়ারপোর্টে আমি ঘুরে বেড়ালাম কই প্লেনটা তো দেখি নি… কিন্তু ছবিতে প্লেনের একটা রেকেজ ছিল… সিনেমায় তো এটাই মজা কোথায় কিসের সাথে কি জুড়ে দেয় বোঝা যায় না! তবে, চাখলিয়ার যে এয়ারপোর্ট ওখানে ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের প্র্যাক্টিস করার জায়গা ছিল… তারা মেশিনগান মানে পোর্টেবল গান নিয়ে মহড়া দিতো। আমি ওখান থেকে মেশিনগানের অনেক বুলেট খুলে এনেছিলাম কিন্তু বুলেটগুলো মরচে পড়ে পড়ে খুলে খুলে নষ্ট হয়ে গেছে। এটা সুবর্ণরেখার শুটিংয়ের সময় দেখা যেত, সেখানে রয়্যাল এয়ারফোর্সের ইন্সিগ্নিয়া লাগানো ছিল। কিন্তু সবই নষ্ট হয়ে গেছে… এখন আর কিচ্ছু নেই।

বাংলায় ঋত্বিকের কোন ঘারানা তৈরি হলো না কেন?

এবং এটাও ঠিক যে বাংলায় তার কোন ঘারানা তৈরি হলো না কেন? অন্য জায়াগায় কিন্তু অন্ধ ভক্ত ফিল্মমেকার জুটলো, বিশেষত জন এব্রাহাম; কিন্তু বাংলায় কোন কিছু হলো না। কারণ, এই এত আধুনিক বাঙ্গালি উদ্বৃত্ত মানুষটাকে আর রাখার দরকার মনে করেনি!! কেননা, এই লোকটা খুব ঝামেলা। আপনার লক্ষ্য করবেন এই ঝামেলাবাজ লোকগুলোর হাতে আর বাঙ্গালি কুক্ষিগত হয়ে থাকতে চাইছে না! এখন তার ফ্লাইট এত বেশি, এখন তার বহুমুখী ইয়ে এত বেশি মানে তার সাহিত্যই বলুন, চলচ্চিত্রই বলুন সব খানেই ঐ যে- কে যেন বলছিলেন হরমোনাল ডিজঅর্ডার না কি যেন…! তো, যাই হোক মানে প্রব্লেম বলবো না… এগুলোর কোন সোশ্যাল রিলেভেন্স আছে কি না…  মানে, এক পার্সেন্ট লোকের মধ্যে কে হোমোসেক্সুয়াল আর কে নয়, তার রাইট নিয়ে উচ্চবাচ্য হচ্ছে আর এদিকে ওয়ার্কারদের রাইট নিয়ে কোন কথা হবে না, কেউ কোন ফিল্ম করবে না। লাখের ওপর কারখানা বন্ধ তাই নিয়ে কোন ফিল্ম হবে না। চা-বাগানে হাজার হাজার মানুষ কাজ করে মরে গেলো সেসব নিয়ে কিচ্ছু হবে না! আর ননসেন্স, ইডিয়োটিক ইস্যুজ নিয়ে যত কথা… আসল কথা কি, একটা সোসাইটি যখন ডি-পলিটিসাইজড হয়ে যায় তখন এইসব হয়। যেমন, আজকে হচ্ছে ফলস থিয়েট্রিক্যাল, ফলস স্পেক্টাকলস ভঙ্গি; এইভাবে যখন রাজনীতিটা এগোয়, শিল্পীরাও এই গড্ডলিকায় ভিড়ে পরে পয়সা খেয়ে এবং না খেয়ে। তো, এই কারবারের মধ্যে ঋত্বিকের কথা আনা, এ্যাট অল আলোচনা করা সম্ভব কি!

ঋত্বিকের রাজনীতি

আমি ঋত্বিকের রাজনীতি নিয়ে দু’একটা কথা বলছি। মেঘে ঢাকা তারার দুই ছেলে একজন কন্ঠশিল্পী হবে, হয়ও, প্রতিষ্ঠিত হয়। আরেকজন ফুটবলার হবে, হতে পারে না… কারখানায় চাকরি নেয় এবং সেখানে তার অঙ্গহানি ঘটে। ঐ যে আমার বাবার একটা ডায়লগ আছে ‘যন্ত্র গ্রাস করতে পারে নাই’। ষাটের দশকে বা পঞ্চাশের দশকের পর থেকে আমাদের দেশে এই যে একটা নতুন দশা এলো… এবার চিন্তা করুন সুবর্ণরেখায় রবিরাম- যে লেখক হবে তাকে হতে হলো বাস ড্রাইভার। একটা বিরাট মধ্যবিত্তের জীবনে পরিবর্তন এসে গিয়েছিলো; অসংখ্য বাঙ্গালি ছেলে ওয়ার্কার হয়ে দুর্গাপুর চলে গিয়েছিলো। সেই পুরো পিকচারটা, সমস্ত কিছু ঋত্বিকের ছবিতে রয়েছে। ঋত্বিকের মার্কস-এঙ্গেলস প্রীতি, যে টা সে বলছে- ‘এটা কিন্তু ফেলনা নয়’!উনি একমাত্র ডিরেকটর যার প্রতিটি ফ্রেম পলিটিক্যাল। প্রত্যেকটা ফ্রেম বারুদে ভর্তি। সে যখন একটা অপমানিত মানুষকে দেখায়… সে এই বার্তাই আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়-মানুষের অপমানকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে!! এবং সাঙ্ঘাতিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজগুলো করা। তার দায়িত্ববোধের চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে যুক্তি-তক্কো-গপ্পো। আমার মজাটা হচ্ছে, ছবিটা যখন তৈরি হয় আমি তখন কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। বরং আমি ঋত্বিকের সঙ্গে একটা ফ্যানাটিক ঝগড়া করেছি। আমি বলেছি এনাফ ইজ এনাফ!! তুমি ক্যামেরার ফ্রেমে মদ ঢেলে দিবে আর যা ইচ্ছা তাই করবে… ইন ডিফেন্সে অভ ইউর অ্যালকোহলিজম- এটা আমি মানবো না! প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছিলো এবং তখনকার মত ঋত্বিক কিন্তুকন্সিডারড হিজ ডিফিট। সে বলছে- ‘না, আমি আর পারছি না’! ঐ কথাটাও মনে আছে, সেটা ক্যোওট করছে কিং লিয়ার থেকে ‘ডিনাওন্সড দ্য ওয়ার্ড’… আমি বললাম হ্যা… চুপ করে থাকো আর কিচ্ছু করতে হবে না। এবং তারপর আমি যতবার ছবিটা দেখেছি, তার আধুনিকতার দিকটি আমাকে পাগল করে দিয়েছে। কোথায় নিয়ে গেছে একটা ছবিকে… কোথায় চলে গেছে একেকটা ইমেজ… এবং তৎকালীন বাংলায় যা কিছু ঘটেছে পলিটিক্যাল, বিশ্বে যা কিছু ঘটেছে পলিটিক্যাল সমস্ত কিছু ঐ ছবিটাতে সারৎসার হয়ে ঢুকে গেছে। এবং ঋত্বিকের ফ্রেমের এপিক কোয়ালিটি… এটা আমাকে অসম্ভব মোটিভেইট করে। কোলকাতা শহরে রোজ অনেক মেয়ে নতুন করে বেশ্যা হয় তাদের কাছে তাদের দাদারা গিয়ে পৌঁছয়, প্রমত্ত অবস্থাতেই গিয়ে পৌঁছয় কিন্তু এটা ক্যামেরার ফ্রেমে অরকম একটা বোল্ড সিকোয়েন্সে দেখানো… এটা ঋত্বিক ছাড়া আর কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিলো না। কারণ, গ্রেট আর্টিস্টরা খুব নিষ্ঠুর হয়। ঋত্বিকও নিষ্ঠুর। মারাত্মক নিষ্ঠুর। এবং তার নিষ্ঠুরতার চাবুক দিয়ে মেরে মেরে মেরে সে সম্বিৎ ফেরাবার চেষ্টা করেছে মানুষের! কতটা পেরেছে আমরা জানি না।

মেকানিক্যাল মার্ক্সিজম দিয়ে ঋত্বিককে বোঝা যাবে না

কিন্তু, আজকে আমার নিজের খুব ভালো লাগছে যে, এই ধরনের একটা আলোচনা সম্ভব হয়েছে। এতটা ভালোবাসা, এতটা রেস্পেক্ট নিয়ে ঋত্বিকের ব্যাপারটা ডিস্কাসড হচ্ছে। ঋত্বিকের জীবনদর্শন, ঋত্বিকের রাজনৈতিক আদর্শ প্লাস তার বহু বিশ্রুত ইয়ুং প্রীতি এইসবগুলি নিয়ে আরো বিশদ গবেষণা-আলোচনা করা দরকার। ঋত্বিকের দুটো বই ইনফ্যাক্ট আমার কাছে আছে, একটা হলো মডার্ন ম্যান ইন সার্চ অভ স্যোওল- কেউ গবেষণা করলে আমি দিতে পারি। ঐ বইটার পাতায় ঋত্বিকের কমেন্টস আছে। এবং আমার পরিচিত এক বন্ধুর কাছে আছে এরিখ নিউম্যানের দ্য গ্রেট মাদার। এবং সত্যি কথা বলতে কি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে- এই অন্তর্জগতের যে রহস্য আর বহির্জগতের যে সমস্যা এদের মধ্যে কিন্তু ভয়ংকর বিরোধের কিছু নেই। একটা ইন্ডিভিজুয়ালকে বুঝতে গেলে তার প্রব্লেমসকে বুঝতে গেলে, সে কিভাবে তার রিয়ালিটির সঙ্গে লড়াই করছে সেটা বুঝতে গেলে, তার এক্সিজটেনশিয়াল ফ্রেমটাকে বুঝতে গেলে আমাদের ইয়ুংকে দরকার, ফ্রয়েডকে দরকার, অ্যাডলারকে দরকার- প্রত্যেককে দরকার। ইভেন আব্রাহাম ম্যাসলোকেও দরকার। ম্যাসলো যে সাতটা ক্যাটাগরি বলছেন অর্থাৎ সাতটা ক্রাইসিস আছে মানুষের… একটা শেল্টারের ক্রাইসিস, একটা সান্নিধ্যের ক্রাইসিস, একটা খাবারের ক্রাইসিস… এগুলো মিট আপ করতে প্রতিটি স্তরে মানুষের লড়াই চলে। কাজেই, এই যে ট্রেন্ডটা ঋত্বিক আমাদের চিনিয়ে দিলো, এটারও অপরিসীম মূল্য আছে। কারণ, এই মেকানিক্যাল মার্ক্সিজম দিয়ে (জীবন-বাস্তবতা) বোঝা যাবে না! ইটালিতে মার্ক্সবাদের প্রতিষ্ঠাতা যিনি গ্যাব্রিওলা, তিনি বলেছিলেন- দান্তের সময়ে গম কত দামে বিক্রি হতো আর সিল্কের কাপড়ের কি দাম ছিলো- এইগুলো জানলেই সেই সোসাইটিকে এক্সপ্লেইন করা যাবে না, দান্তেকে তো নয়ই! এই ভুল মার্ক্সবাদ আমাদের দেশের অনেক বারোটা বাজিয়েছে। যার ফলে, একটা সময় এই তথাকথিত মার্ক্সিস্ট ক্যাম্পে আমরা দেখেছি যেটাকে আজকে ভুল রাজনীতির জন্য এক্সপ্লোয়েট করা হচ্ছে, তা হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে শিল্পীদের বিরোধের প্রেসনোট। আর মজাটা ছিলো- শিল্পীরা অনেক অ্যাডভান্সড লুকিং, তারা এগিয়ে ভেবেছিলেন আর কমিউনিস্ট পার্টি ছিলো ব্যাকোয়ার্ড, কমিউনিস্ট পার্টি ছিলোঅজিফায়েড চিন্তাধারার বাহক; কাজেই তারা সেই শিল্পীকে বুঝতে পারেনি। এই একই অভিযোগ ঋত্বিকের বিরুদ্ধেও এসছে, উনি কিসব গ্রেট মাদার পড়েন, আমার বাবার সমন্ধে এসছে… উনিও তো মাদার-কাল্টে বিশ্বাসী…। এই মেকানিক্যাল মার্ক্সিজমে যেটাকে আমি ভালগার মার্ক্সিজমই বলি- এটা নিজেকে এনরিচ করতে পারেনি, এনরিচ করতে না পেরে দিনের পর দিন নতুন নতুন গাড্ডায় গিয়ে পড়েছে এবং প্রচুর ভুল ব্যাখ্যা এবং ইন্টারপ্রিটেশনের সুযোগ ঘটেছে।

কালচার ইন্ডাস্ট্রির যে খেলা, মুনাফার যে খেলা, সেখানে ঋত্বিক চলে না

আমি আর কিছু বলবো না… সাম্প্রতিক একটা নাটক দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে, সেখানে কতটা ঐতিহাসিক ফ্যাক্ট আছে এবং সেখানে যা যা সমস্যার কথা বলা হয়েছে সেগুলো কোন লেভেলের সমস্যা… এগুলো একটু ভাববার দরকার। অ্যাকচুয়ালি ঋত্বিকের সঙ্গে কি হয়েছিলো, হোয়াট সর্ট অভ ডিফারেন্স হি হ্যাড এবং সো ফার মাই নলেজ গোজ জর্জ বিশ্বাসের সঙ্গে এরকম ভয়ংকর কিছু টাসেল হয়েছিলো বলে আমার জানা নেই! এই ইতিহাসের অনেকটার সঙ্গেই আমি জড়িত খুব কাছ থেক জড়িত। আমার বাবাও একজন ভুক্তভোগী প্লাস আমি বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে এসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি, যেমন- সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন চট্টোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র, বিষ্ণু দে… আমি কোথাও বাবা এসব পাইনি! এখন সব অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস উঠে আসছে এবং আমি দেখছি এগুলোকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অস্ত্র সমস্ত যদি প্রতিপক্ষের হাতে চলে যায়, আমরা কি নিয়ে লড়বো?! এটাও একটা সমস্যা। কাজেই ঋত্বিক চান যে আমরা তাকে সেফগার্ড করি, আমিও চাই আজকের ইয়ঙ ফিল্মমেকাররা এ্যাটলিস্ট একটা অটোগ্রাফ কাজ করুক যেখানে বলা যাবে যে, ঋত্বিক বেঁচে আছেন। সেরকম একটা অবস্থা আসবে কি কখনো, কখনো কি দেখতে পাবো? নাকি বাঙ্গালি আরো আধুনিক হতে থাকবে! এ একটা জটিল সংকটের সময়, সংকটটাকে আমি অস্বীকার করি না… ম্যাসিভ একটা মার্কেট, একটা কালচার ইন্ডাস্ট্রি আছে… কালচার ইন্ডাস্ট্রির যে খেলা, মুনাফার যে খেলা সেখানে ঋত্বিক চলে না। বরং বলা হয়, ঋত্বিকের ছবির কদর এখন হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি- যারা তাদের সময় অনেক এগিয়ে থাকে, তাদের লেখার কদর পরে হয় বা শিল্পকর্মের! যেমন, সেইদিন কাফকাকে কেউ বুঝতে পারেনি কিন্তু এখন দিন কে দিন কাফকার রেলিভেন্সি প্রত্যেকদিন বাড়ছে। এই নতুন ম্যানুস্ক্রিপ্টগুলো বেরোলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তা বোঝা যাচ্ছে না। যেমন, আন্তোনিও গ্রামসি। তাকে কুড়ি বছরের জন্য এই ব্রেনটাকে কাজ করতে দেবো না বলে জেলে দেয়া হলো; আর তিনি টুকরা পেন্সিল আর কাগজেলিখে ফেললেন প্রিজনারস ডায়েরি! সেটার রেলেভেন্স ভয়ংকরভাবে বেড়ে যাচ্ছে দিন কে দিন… সমাজকে দেখার চোখগুলো পালটে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এই যে চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে রদবদল, এই রদবদলের যে দর্শন সেখানে ঋত্বিক একদম প্রথম সারির সৈনিক হয়ে থাকবেন।

অ্যাপারেন্টলি কিচ্ছু জানতোনা

এবং আমি এই মানুষটাকে এত কাছ থেকে দেখেছি, তিনি আমাকে এত কিছু জানিয়েছেন, বুঝিয়েছেন, শিখিয়েছেন… যেমন ধরুন মিউজিক শোনা- এই লোকটা ভারতীর মার্গ সঙ্গীত থেকে শুরু করে ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিক্যাল ইভেন জ্যাজ ইভেন বিং ক্রসবির গান- এ সমস্ত কিছুর উপরে এন্সাইক্লোপিডিক নলেজ থাকতো। সেই লোকটা আমাকে মদেস মুশোভস্কির মিউজিক শোনালো। লং প্লেয়িং রেকর্ডের উপর মদের গেলাশ রাখতো ফলে গোল গোল দাগ হয়ে যেত… একটা বাজিয়ে একদিন শোনালো নাইট অন দ্য বেয়ার মাউন্টেন। পরে যখন চাকরি-বাকরি করেছিতখন এগুলো সংগ্রহ করেছি। একবার বসুশ্রী কফি হাউসে ক্রিকেট নিয়ে কিছু কথা বলেছিলো… সেখানে তো বাঙ্গালির ক্রিকেট নিয়ে বিশাল আড্ডা… সব একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে, এগুলো জানেই না! ক্রিকেটের সবচাইতে বড় যে লেখক সি এল আর জেমস- ওয়েস্ট ইন্ডিজের, হি ওয়াজ প্রোটেস্টান্ট অ্যান্ড আ জায়ান্ট ইন্টেলেকচুয়াল। তার লেখারও হদিশ জানতেন ঋত্বিক। এই যে ব্যাপারটা… সত্যি কি জানতেন আর জানতেন না… আমি তাকে কন্ঠস্থ শেক্সপিয়ার বলতে শুনেছি কিং লিয়ার থেকে। আমি ঋত্বিককে স্টেজে আশ্চর্য আলোর কাজ করতে দেখেছি, কিছু না জেনে। তিনি আমার বাবার নাটক দেখতে গেছেন, সেই নাটকে আলোর কাজ করছেন তাপস সেন। ঋত্বিক গিয়ে তাপস সেনকে গলাধাক্কা দিয়ে বললো, বেরো এখান থেকে! আমি আলো করবো, যা শালা ভাগ! তাপস আর কি করবে… ইয়ে মদটদ খেয়ে এসেছে… কিন্তু তারপর ও যে কাজটা করলো অসাধারণ। জাস্ট একটা ডিমার আর একটা স্পট লাইট কমিয়ে বাড়িয়ে পুরো ডাইমেনশনটা পালটে দিলো! ঋত্বিক থিয়েটারেরও লোক, ছবি আঁকার লোক ছিলেন, স্কেচ করতে পারতেন, তিনি মিউজিকের লোক…। এইবার বলি, ঋত্বিকের ক্যামেরার কথা, ওঁর প্রত্যেকটা ছবিতে ক্যামেরাম্যানের নাম থাকতো কিন্তু বেশিরভাগ কাজ ঋত্বিকের নিজের করা। ক্যামেরায় যখন লুক থ্রু করছে, সেখান থেকে বলে দিচ্ছে রোল-ক্যামেরা-অ্যাকশন… চললো! একটা লোক সবকিছু করতে পারতো। আর এডিটিংটা তো রমেশ যোশীর সাথে বসে ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করতেন। যাই হোক, ঋত্বিক ঘটক কিরকম ছিলেন… তার বন্ধুবান্ধব অনেকে নেই দুই একজন যারা আছেন তারা কতটুকু বলবেন তাও জানি না। কিন্তু, আবার নতুন করে তথ্য যদি কিছু পাওয়া যায় সেগুলো যোগাড় করার এখন হাইটাইম! ঋত্বিকের সিনেমার মেকআপের কাজটা করতেন মূলত শক্তি সেন, শক্তি দা নেই, আমি নিজে দেখেছি ঋত্বিক নিজে বলে দিচ্ছেন এই শেডটা মার, ঐটা কর। মানে, এই লোকটা কি জানতো আর কি জানতো না সেইটাই একটা রহস্য। বাট, অ্যাপারেন্টলি কিচ্ছু জানতো না। সরোদ বাজাতে পারতো, বাঁশি বাজাতে পারতো। কিন্তু, কিচ্ছু নয়।

আরে! শালা! ও গ্রামার বানাচ্ছে! ওর গ্রামারটাকে শেখ!

আর বাঙ্গালি ক্রিটিকরা লেখলো- এনার একটু ডিসিপ্লিনের অভাব আছে! এনার সিনেমায় কোন গ্রামার নেই! আরে! শালা! ও গ্রামার বানাচ্ছে! ওর গ্রামারটাকে শেখ! চিরকাল এরা গোল গোল, নিটোল জিনিস মানে ঐ ক্যালেন্ডার ফটোগ্রাফি টাইপ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে গেলো!! খালি চিন্তা জিনিসটা কত নিটোল হবে! আরে, একটা বীভৎস ,ভাঙ্গাচোরা জিনিসকে নিটোল করা যায় না! দ্যাট ইজ নট দ্য নিউ এস্থেটিক! নিউ এস্থেটিক হলো মন্তাজ, সেটাও কিন্তু পলিটিক্যাল কারণেই ওয়ার্ক করেছে। ঐ যে সিকোয়েন্সটা- মা বলছে, ক্যামেরা উপরে ঘুরছে, সেখানে একটা জিনিস আছে, একটা বাচ্চা ছেলে দোলনায় দুলছে, এখানে বাচ্চা ছেলেটা হচ্ছে অনন্ত সময়ের মধ্যে একটা পেন্ডুলাম, সে কোথায় যাচ্ছে ডাইনে না বায়ে সে জানে না! কারণ, ঐ ছেলেটার এখন কেউ নেই… মা নেই, বাবা নেই, প্রেমিকা নেই, কেউ নেই! ওর লেখা নেই, কিচ্ছু নেই, টোটালি লস্ট! যেকোন সময় পেন্ডুলাম থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাবে, ও তখন ট্রাপিজের খেলোয়াড়! এই একটা সিকোয়েন্স তোলেন তিনি। আরেকটা সিকোয়েন্সে হরপ্রসাদকে যখন ঈশ্বর বলছে, তুমি আমাকে কোলকাতায় নিয়া যাবা? কোলকাতায় এখন মজা, সে যে কি বীভৎস মজা! তখন হরপ্রসাদ বলছে, নিয়ে যাবো… ওখান থেকে কাট করছে রেসের মাঠ, একটা ঘোড়া লাফ দিয়ে বের হচ্ছে, আর সীতার গলায় একটা পোকার হার…। চিন্তা করা যায় না! বিশ্ব সিনেমাতে নেই, কোথাও নেই এমন একটা সিকোয়েন্স! আমাদের যা বড় বড় নাম, যাদের নামে আকাডেমি, ইন্সটিটিউট হয়েছে তাদের কোন কাজে নেই, কিচ্ছু নেই! কিন্তু, এই লোকটার আছে! এই লোকটা বিশ্বসিনেমাতে রুথলেসলি অটোগ্রাফ করে গেছে, খোদাই করে দিয়ে গেছে! এবং আমাদের এটা গর্বের বিষয় তিনি আমাদেরই লোক, আমরা তাকে কাছে পেয়েছি দেখেছি।

হারাবার কিছুই নেই শৃঙ্খল এবং পলিটিক্যালি কারেক্টনেস ছাড়া!!

তার স্পিরিটটা খুব সহজ কিন্তু- মানুষের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া! গরিব মানুষের প্রতি অনেস্টি বজায় রাখা! বেশি বড়লোকের সঙ্গে মাখামাখি করার দরকার নেই- তাতে কখনো শিল্প হয় না, দালালি হয়! এগুলো হচ্ছে প্রত্যক্ষ শিক্ষা এবং পলিটিক্যালি অ্যালাইভ হওয়া। এবং আই স্ট্যান্ড ফর লেফট উইং আর্ট বাট নো ফারদার লেফট ইন দ্য আর্ট! এই জায়গায় দাঁড়িয়ে কবুল করা এবং কবুল করতে করতে করতে করতে মরে যাওয়া একসময়! এইটাই স্বাভাবিক। এইটাই একটা শিল্পীর জীবন! এইখানেই সে বাঁচে। এবং শিল্পীরা পৃথিবীর কোন দেশে খুব একটা আনন্দে খেয়েছে আর থেকেছে এমনটা কেউ দেখাতে পারবে না! মদিলিয়ানির মত শিল্পী একটা ব্রেডরোল খাবার জন্য কাফেতে বসে সাদা কাপড়ে ছবি এঁকে দিতেন। সেই ছবিগুলি পরে কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছে। এই মার্কেট তো রয়েছে চারদিকে…। তো, যাইহোক- আমাদের এই পলিটিক্যালি কারেক্ট ও কালচারালি কারেক্ট বাঙ্গালিরা নিপাত যাক!! তাদের আধুনিকতা নিপাত যাক!! আমরা যারা প্রিমিটিভ, পুরোনোপন্থি আমরা থাকবো! আমরাও বুঝি- এই হোমোসেক্সুয়ালিটি নিয়ে দেবেশ রায়ের দাদা দীনেশ রায় একটা গল্প লিখেছিলেন, অসামান্য গল্প, সেই গল্প আমরা প্রোমোট করেছিলাম… আমরা হোমোসেক্সুয়ালিটিকে প্রোমোট করিনি, আমরা প্রোমোট করেছিলাম একটা অসামান্য শিল্পকর্মকে- যার বিষয় হোমোসেক্সুয়ালিটি হতেই পারে!! আমরাও কিছু জানি না, বুঝি না এমন নয়! আমরা রামছাগল এরকম মনে করো না! আমরা ডেথ ইন ভেনিস দেখেছি। উই ক্যান টিচ ইউ হোয়াট ইজ হোমোসেক্সুয়ালিটি! এরা যেন আজকে আবিষ্কার করলো এমন ভাব! এগুলো অনেক প্রিমিটিভ ব্যাপার-স্যাপার! এসব হয়ে গেছে অনেক আগে! এগুলো আমরা জানি! কাজেই, হারাবার কিছুই নেই শৃঙ্খল এবং পলিটিক্যালি কারেক্টনেস ছাড়া!!

থ্যাঙ্কিউ !!

ভিডিওঃ https://www.youtube.com/watch?v=VIuC9Gv-R2o


কেরলে ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা ৪ মাওবাদীকেঃ অভিযোগ কেরল সিপিআই এর

তামিলনাড়ুর থেকে আসা ‘মনিভাসাকাম ও কার্ত্তিক’ এবং কর্ণাটক থেকে আগত ‘শ্রীমতী ও সুরেশ’ নামে ৪ সন্দেহভাজন নিহত মাওবাদী’র ৩জন

গত সোমবার ও মঙ্গলবার কেরলের প্রক্কালাদ জেলার আদালিতে তামিলনাড়ুর থেকে আসা ‘মনিভাসাকাম ও কার্ত্তিক’ এবং কর্ণাটক থেকে আগত ‘শ্রীমতী ও সুরেশ’ নামে ৪ সন্দেহভাজন মাওবাদীকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে ভুয়ো সংঘর্ষ বলে জানাল কেরলের বাম শরিক সিপিআই। সিপিআই রাজ্য কাউন্সিলের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্মীদের থেকে পাওয়া তথ্যে এটা মনে করা  হচ্ছে একটি ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনা। ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছে সিপিআই। এমনটাই জানাচ্ছে the newindian express ওয়েবসাইট। মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়ন দাবি করেছেন- আত্মরক্ষার জন্যই পুলিস গুলি চালায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি মানতে নারাজ শরিক সিপিআই। সিপিআই এর তরফে জানান হয়েছে নিহতদের মধ্যে একজন মাওবাদী অসুস্থ ছিলেন । তার পক্ষে একে ৪৭ ধরা সম্ভবই নয়। সিপিআই তরফে পুলিসের শাস্তি দেওয়ার এই পদ্ধতিকে নিন্দা করা হয়েছে।

কেরল পুলিসের থান্ডারবোল্ট বাহিনী গত সোমবার পাল্লকাডের জঙ্গলে ৩ মাওবাদী ও পরদিন আত্তাপাদিতে ১ মাওবাদীকে সংঘর্ষে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছিল। নিহতদের মধ্যে ১জন মহিলা। সোমবার খুব ভোরে পালাক্কাড জেলার আগালির জঙ্গলে এই তথাকথিত সংঘর্ষটি হয় বলে জানাচ্ছে সংবাদ মাধ্যম। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, মাওবাদীদের লুকিয়ে থাকার খোঁজ পেয়ে তল্লাশির সময় এই সংঘর্ষ হয়। অধিকাংশ সংঘর্ষের মত এখানেও শুধু মাওবাদীরাই নিহত হয়েছেন। পুলিসকর্মীদের আহত হওয়ার কোন খবর নেই। কেরল গত কয়েক বছরে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন মাওবাদী নেতা ও কর্মী নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার কর্মীদের তরফে ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ করা হয়েছিল আগেই এবার সিপিএমের শরিক সিপিআইও সংঘর্ষকে ভুয়ো বলাই রাজ্য সরকারের অস্বস্তিতে আরো বাড়ল বলে মনে করছে অনেকে।

সূত্রঃ সাতদিন.ইন

http://en.maktoobmedia.com/2019/10/30/4-maoists-were-shot-and-killed-by-kerala-police/

 

 


Fellows remember Comrade Nizamuddin Matin

Comrade Nizamuddin Matin was a legend among the youths during 1980’s and also played a vital role during the Liberation War of 1971

Associates, co-workers and fellows remembered Comrade Nizamuddin Matin, a revolutionist left politician, widely known for his role in left-leaning politics in Bangladesh.

Prominent left politicians and comrades came up with the memories during a remembrance program held for Comrade Nizamuddin Matin at the Rc Majumdar Auditorium, Dhaka University (DU) on Friday.

Comrade Nizamuddin Matin was a legend among the youths during 1980’s and also played a vital role during the Liberation War of 1971, said his fellows and associates.

Comrade Nizamuddin Matin was a life-time revolutionist who tried to form a strong base of left-leaning politics according to Marx-Lenin and Mao’s theories, added the speakers.

Hasan Fakri was in the commemoration chair while Bangladesh Samajtantrik Andolon Convener Hamidul Haque, Jatiya Ganatantrik Ganomoncha President Masud Khan, Nayaganatantrik Gano Morcha President Zafor Hassain, Jatiya Mukti Council General Secretary Faizul Hakim, energy expert Rahamatullah and Khanon Editor Badol Sha Alam spoke at the event.

Comrade Matin was born in 1955 in Barisal and joined politics while he was a student of class nine in 1969. 

He was in prison for ten years after the Liberation War.

He died on August 11, 2019 due to old-age complications.

Source: https://www.dhakatribune.com/bangladesh/dhaka/2019/10/19/fellows-remember-comrade-nazimuddin-matin?fbclid=IwAR1M7lQz3mCqejul_aWhumUq0aRiYz036BUIlkCtTpeUBsQQjJ2uIUw45ds


মহান মাওবাদী নেতা কমরেড নিজামউদ্দিন মতিনের স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত

 

 

কমরেড নিজামউদ্দিন মতিন ১৯৮০এর দশকে তরুণ-যুবকদের মধ্যে একজন কিংবদন্তি ছিলেন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার  জন্য মহান মাওবাদী নেতা কমরেড নিজামউদ্দিন মতিনকে গতকাল তাঁর সহযোগী, সহকর্মী এবং অনুগামীরা প্রাণভরে স্মরণ করেন।

গতকাল ১৮ই অক্টোবর, বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘মাওবাদী নেতা কমরেড নিজামউদ্দিন মতিন স্মরণ কমিটি’র উদ্যোগে কমিটির আহায়ক কমরেড হাসান ফকরীর সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশিষ্ট বাম রাজনীতিবিদ, প্রগতিশীল গণমাধ্যমের প্রকাশক ও কমরেডরা আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন। এদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহায়ক হামিদুল হক, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নিরুপমা চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনায়ার হোসেন, বিপ্লবী বুদ্ধিজীবী ও জালানী বিশেষজ্ঞ বিডি রহমতুলাহ এবং খনন পত্রিকা’র সম্পাদক বাদল শাহ আলম প্রমুখ। সভায় সঞ্চালনা করেন প্রগতিশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঘাস ফুল নদী’র প্রকাশক মুনির মোর্শেদ।  

বক্তারা কমরেড মতিনের আমৃত্যু বিপ্লবের প্রতি অঙ্গীকার, অধ্যবসায়, ত্যাগ, অবিরাম বিপ্লবী অনুশীলন ও জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে তার অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তাগণ কমরেড নিজামউদ্দিন মতিনের অনুকরণীয় শিক্ষা ও দিশাকে আত্মস্থ করে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ বিনির্মাণের আহবান জানান।

কমরেড নিজামউদ্দিন মতিন ছিলেন একজন জীবনকালীন বিপ্লববাদী, যিনি মার্কস-লেনিন এবং মাওয়ের তত্ত্ব অনুসারে কমিউনিস্ট রাজনীতির একটি শক্ত ভিত্তি গঠনের চেষ্টা করেছিলেন বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।

কমরেড মতিন ১৯৫৫ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৬৮ সালে ৯ম শ্রেণির ছাত্র অবস্থায় তিনি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১০ বছর কারাগারে ছিলেন। বার্ধক্যজনিত জটিলতার কারণে তিনি গত ১১ই আগস্ট ২০১৯ এ মারা যান।