বাংলাদেশের গণযুদ্ধের ৬ গেরিলার বিপ্লবী কবিতা
Posted: April 16, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: বাংলাদেশের গণযুদ্ধ, বিপ্লবী কবিতা, বিপ্লবী সাহিত্য Leave a comment“আমাদের সাহিত্য ও শিল্পকলা হচ্ছে জনসাধারণের জন্যে, প্রথমতঃ শ্রমিক, কৃষক ও সৈন্যদের জন্যই এগুলো রচিত হয় এবং এগুলোকে শ্রমিক, কৃষক ও সৈন্যরাই ব্যবহার করে থাকেন” – কমরেড মাও সেতুং, [সাহিত্য ও শিল্পকলা সম্পর্কে ইয়েনানে প্রদত্ত ভাষণ- মে, ১৯৪২]
বিদায় চিয়াং চিং
– সাগর আলী
বিদায় চিয়াং চিং
কমরেড আমার
বিদায়, অকুতোভয়
বীর বিপ্লবী মাও প্রিয়া
বিদায় !
কারা প্রকোষ্ঠে পনের বছর
হার না মানা
ত্যাজি শির নিয়ে যে
মাও প্রদীপ জ্বালিয়ে
রেখেছিলে তুমি
তার আলো পৌঁছেছে
পেরু-ইরান-আমেরিকা
অন্ধ্র-বিহার
এই বাংলাদেশসহ
সারা দুনিয়ায়।
বুর্জোয়ারা পরম তৃপ্তিতে
তোমাকে ডেকেছে ‘কুচক্রি’
অভিধায় আমরা
তেমন কুচক্রি হতে
গর্ববোধ করি
মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লবে
বিশ্ব প্রলেতারীয় পতাকা
হাতে ঝলসে ওঠা
আমরা আজন্ম তেমন
কুচক্রিই হতে চাই।
শেকল পরা হাতে
ধনীক শুয়োরদের আদালতে
দাঁড়ানো শ্রমিক শ্রেণী
ও তার বিপ্লব হয়ে
তীব্র কটাক্ষে ঘায়েল করো
বুর্জোয়া পৃথিবীকে
পেরু-ইরান-বিহার-অন্ধ্রে
এবং এই বাংলায়
আমরা তেমন কুচক্রী
হতে নিয়তঃ প্রয়াস পাই
যারা পরম অবজ্ঞায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়
ওদের ‘মৃত্যু পরোয়ানা’
বিজয়ের হাস্যে।
মার্কিন আর পশ্চিমার কাছে
কাইশেকের উত্তরাধিকার
বুড়ো শকুন তেং
ও তার সাঙ্গাৎরা
বিকিয়ে দিয়েছে সেই
– স্বাধীনতা
– প্রলেতারীয় ক্ষমতা
– সাম্যবাদের অভিযান
সেই শোধনবাদী শুয়োরদের
সব কিছুকে আমরা
অবিশ্বাস করি।
অবজ্ঞা করি ! ঘৃণা করি !
ওরা বলছে
তুমি আত্মহত্যা করেছ
আমরা তা অবিশ্বাস করি।
ওরা তিলে তিলে
হত্যা করেছে তোমাকে
বলি আমরা।
ওরা বলছে
তোমার মৃত্যু হয়েছে
কমরেড, আমরা তা-ও
অবিশ্বাস করি।
তুমি বেঁচে আছো
যুগ যুগ রবে বেঁচে
যদ্দিন না
দুনিয়ার একটি দেং-ও
বেঁচে রবে
সাম্যবাদের পতাকা
যদ্দিন না
পত পত করে উড়বে
মনুষ্য পৃথিবীর
প্রতিটি প্রান্তরে।
– জুলাই, ’৯১
পেরুতে লাল আগুন
– আঃ ছাত্তার
[১৯৯১ সাল পেরুর গণযুদ্ধের সাথে আন্তর্জাতিক সংহতি বর্ষ উপলক্ষ্যে]
পেরুতে বিপ্লবের লাল আগুন
নিভিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা যখন চলছে,
আমাদের কাজ মার্কিন দূতাবাস উড়িয়ে দেওয়া
পেরুতে লাল আগুন
নেভানোর চেষ্টা যখন চলছে,
লিমা, আয়াকুচো, হুয়াল্লাগা ভ্যালীর
কোকো চাষীরা যখন রক্তাক্ত,
আন্দেজের স্বর্গীয় উদ্যান যখন তার সন্তানদের রক্তে প্লাবিত।
আমাদের কাজ মার্কিন দূতাবাস উড়িয়ে দেওয়া।
আমাদের মাথার উপর ডলারের খড়গ
এদেশের হৃৎপিণ্ড, ধমনি, শিরা-উপশিরাগুলি ফালি ফালি,
কুচি কুচি করে
চুষে নিচ্ছে যখন প্রতিফোঁটা তাজা রক্ত
তখনই আমাদের কাজ মার্কিন দূতাবাস উড়িয়ে দেওয়া।
প্রত্যেকটি দূতাবাসই যুদ্ধের কমান্ডিং পোষ্ট
আমাদের কাজ শত্রু’র কমান্ড পোষ্টগুলি উড়িয়ে দেওয়া
না হলে যতই মিটিং মিছিল করুন না কেন ………….
না না, মিটিং মিছিলের বিরোধিতা আমি করছি না,
মিটিং মিছিলকেই বরং বলছি
শত্রু’র কমান্ড পোষ্টগুলি উড়িয়ে দিন।
নাহলে আপনার সাম্যের রাজ্যের
বাস্তব ভিত্তিগুলো- ওরাই উড়িয়ে দেবে।
তাই যুদ্ধের কমান্ড পোষ্টগুলো উড়িয়ে দিন বন্ধুরা
শত্রু’র কমান্ড পোষ্টগুলো উড়িয়ে দিন।
– নভেম্বর, ’৯১
অপেক্ষা, আবার গরাদের ওপারে
– তসলিম
সারাকার অগ্নিকাণ্ডে যখন
দগ্ধ হয়েছে আমার বোন
আমি আমার বোনের লাশের জন্য
গার্মেন্টস কয়েদখানার
গরাদের এপাশে
অপেক্ষা করছিলাম নিস্তব্ধ, নিথর।
আজ বছর না ফুরোতেই
আবার গরাদের বাইরে
অপেক্ষা করছি
আমার বোনের জন্য
কিন্তু আজ বোনকে আমার
লাশ করে নিতে আসিনি
এসেছি জীবন্ত বোনদের
মিছিলে নিতে
এসেছি তাদের যুদ্ধে নিতে।
বারবার আমরা কেবল
লাশ হতে আসিনি দুনিয়ায়
বারবার গরাদের এপারে
দাঁড়াতে আসিনি কেবল
গরাদ ভাংতেও এসেছি
জীবনের ডাকে এসেছি
লড়াই করতে এসেছি।
বারবার মালিকের কাছে
অধিকার ভিক্ষা করতে নয়
এসেছি মালিকানা আদায় করতে
এসেছি অধিকার ছিনিয়ে নিতে।
তাই, প্রিয় বিদ্রোহী
বোনেরা আমার –
মিছিলে আসুন, আসুন গণযুদ্ধে
এবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেব
মালিক শ্রেণীর মৃত্যুতে।
আসুন, মাও-এর পথে
গণযুদ্ধে আসুন
বন্দুকের নলে ঝলসে উঠে
ভেঙ্গে যাক যত অধীনতার শেকল
কেবল আমরা লাশ হতে
আসিনি দুনিয়ায় ————-।
– ডিসেম্বর, ’৯১
নারী হতে লজ্জা কিসের !
– শ্যামল
[ ৮ মার্চ, ’৯২ নারী দিবস উপলক্ষ্যে ]
প্রতিবাদী নারী পুরুষের শ্লোগানে মুখরিত
নারী দিবসের র্যালী
যখন নারী মুক্তির
প্রলেতারী পতাকায়
করছিল শহর প্রদক্ষিণ
কটাক্ষ হানল কোন পুরুষ
সমবেত পুরুষদের দেখিয়ে বলল,
ঐ দেখ সব নারীরা।
পুরুষ এক কমরেড
জবাব দিলেন,
ঠিক তাই, নারী আমরা সবাই
যদি আরো জানতে চাও, শোন
পতিতা নারী আমরা।
পতিতাদের মুক্তির মিছিলে
নেমে পড়েছি বলে
যদি বলো আমরা পতিতার ছেলে,
জারজ- পরিচয়হীন
তবে আমরা তাও।
আমরাই ধর্ষিতা- এসিডদগ্ধা
স্বামী পরিত্যক্তা বা পরিবারের জোয়ালে
বাঁধা বধু বা বিধবা কলংকিনী
ধর্ম আর সতীত্বের বলি
না মানার নীরব চোখের কটাক্ষে
মৃত্যুবরণ, রাজতন্ত্রের পাথর নিক্ষেপে,
সহমরণের চিতায় জ্বলে ওঠা বিদ্রোহ
আমরাই দিনরাত্রের নারীযোদ্ধা
গার্মেন্টস মেয়ে
যাদের তোমরা ‘নষ্ট’ বলো।
আরো জানতে চাও ?
ঘোষণা করছি,
আজকের পুরুষতন্ত্রের সব থেকে
বড় দৈত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত
গর্ভপাতের অধিকারের দাবীতে সোচ্চার
আমেরিকার গর্ভবতী নারীদের মিছিলে
আমরা গর্ভবতী নারী।
আমরাই রোজা- ক্লারাসেৎকিন
আমরাই কমরেড চিয়াং চিং
আমরা এডিথ লাগোস হত্যার
প্রতিশোধের প্রত্যয়ে অনড়
পেরুর নারী গেরিলা
আমরাই কমরেড মিচি।
নারী পুরুষ নই
আমরা সবাই মাও- লেনিন
আমরাই ষ্ট্যালিন ক্রুপস্কায়া
আমরা সর্বহারা
জাত নেই যার, দেশ নেই যার
জয়ের জন্য আছে সারা দুনিয়া।
– মার্চ, ’৯২
একজন বদলী শ্রমিক
– সবুজ
শ্রম চা – – – – – – ই – – – – – –
এই শব্দে একটু আগেই
ক্ষুধার্ত চিৎকার দিয়েছে
নিউজপ্রিন্ট
আরো অন্ধকার- ফাঁক করে
এই আঙ্গিনায় এসে দাঁড়িয়েছি
কতিপয় বেকার মানুষ
– কাজ চাই আমরা
মেশিন বার্কার থেকে হ্যান্ড বার্কার
প্রতিটি বার্কারে
কাজ চাই আমরা
-‘নিতে হবে বাকলের আটি ?’
ব্যর্থ বেকার বাকল বাহকেরা
ভৈরবীর পাড়ে এসে দাঁড়ায়
ওপাড়ে স্বল্প উজ্জ্বল সূর্য
তীর ঘেষে দাঁড়ানো প্রহরী ঘরবাড়ি
গাছ-গাছালী ভরা সবুজ প্রাচীর কিংবা
ঘনগ্রাম।
এ পাড়ে
দুর্বা ঘাসগুলো এখনো গোছল সারছে
হালকা কুয়াশায়
ডানপার্শ্বে
ঝরণার শব্দে ভাটার ভৈরবীতে নামছে
রাসায়নিক গন্ধে ভরা খয়েরী জল
বাঁ পাশে
ষ্টিমারের ডেক থেকে ফোস ফোস ফণা
তুলে উঠে নামে ক্রেন
আধুনিক সভ্যতার বাহক কাগজের
বেলগুলো
কি সুন্দরভাবেই না গুছিয়ে রাখা হচ্ছে
ষ্টিমারের বড় পেটে
গ্রাইন্ডার প্লান্টের গম্ভীর শব্দে আমার
দেহের নীচের মাটি তখন কাঁপছে
সামনে ক্ষুধার্ত পেটে শুয়ে আছে ভাটার
ভৈরবী নদী
তীরে দাঁড়িয়ে আছি
– এক ক্ষুধার্ত বেকার শ্রমিক
পেছনে ক্যান্টিন
প্লেট-চামচ-জগ ও গামলার শব্দ
শুনছি আমি
ভক্ষক নরদের কোলাহল আসছে ভেসে
হাওয়ায় ভাসছে চাপাতি, পরোটা,
হালুয়া ও ভাজির শব্দ
আর রাত থেকে
যদিও বেকার ও অনাহারী আমি
যদিও মোচড় দিয়ে উঠছে
পেটের ভিতরকার পাকানো দড়িগুলো
তবু
এই ক্যান্টিনে প্রবেশাধিকার নেই
আমার
এই যে ক্রেন উঠাচ্ছে- নামাচ্ছে টন টন
কাগজের বেল
তার জন্য সামান্যতম
শ্রম হলেও আমি দিয়েছি
এই যে বয়লার থেকে উঠছে সাদা
ধোঁয়া
এর সচলতার জন্য সামান্যতম শ্রম
হলেও আমি দিয়েছি
এই যে গ্রাইন্ডার প্লান্ট ঘর ঘর করে
ভাঙ্গছে কাঠের গুঁড়ি তার সচলতার
জন্য
সামান্যতম শ্রম হলেও আমি দিয়েছি।
কিন্তু সরকারী রেটের ডাল, ভাজি,
চাপাতি ও পরাটাগুলো
আমার জন্য অবৈধ
যদিও আমি ক্ষুধার্ত, খুবই ক্ষুধার্ত,
মোচড় দিয়ে উঠছে, রাক্ষুসে পেট
তবু পাঁচ গজ কাছে এই ক্যান্টিনে
প্রবেশাধিকার নেই আমার
যেখানে দাঁড়িয়ে আছি
এমনকি এই মাটিও আমার জন্য অবৈধ
ঘাড় ধাক্কাদের দয়ায় বা ফাঁকি দিয়ে
শকুন চোখ
যখনি দাঁড়াই এই ইয়ার্ডের
আত্মগর্বী শব্দ আর কেমিক্যাল দুর্গন্ধের
ভেতর
কেবলি ভাবি
এই ক্যান্টিন, এই ইয়ার্ড, এই শ্রমডাকু
নিউজপ্রিন্ট
কবে যে আমাদের হবে
এবং
সমুদ্র গর্জনের মতো দৃঢ় উচ্চারণ করে
কবে যে বলে উঠতে পারবো
এই ভূমি, কলকব্জা ও উৎপাদনগুলো
সব আমাদেরই !
সব আমাদেরই !!
– মে, ’৯২
মৃত্যু একটি গতিহীন শব্দ
– রাজু
(কমরেড শিবলী কাইয়ুম স্মরণে)
সামরিক বা সংসদীয় স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে
অগ্রসেনা সে, বুর্জোয়া গণতন্ত্রে ভণ্ডামী অমানবিক
শ্রেণী শোষণ প্রণালীবদ্ধ ব্যাখ্যা করতো।
আহা
বলতো যখন সে,
জনগণের কী চমৎকার মনঃসংযোগ !
সামনে সংসদীয় গণতন্ত্রের সংবিধান
পেছনে জনজীবন বিপন্ন করা পুঁজির কালো
হাত,
কলকাঠি নাড়ায়, কলকাঠি নাড়ায়।
বলতো
সংসদ, যেন অনেকগুলো কুকুরের বৈঠক
হাউ হাউ কাউ কাউ ঘোঁৎ ঘোঁৎ।
জনসভার মঞ্চে গম গম আওয়াজে
তার কণ্ঠ যেন
হাজার বছর ধরে
শোষণের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক।
আজ সে প্রাণহীন
তার শেষকৃত্যে সে গতিহীন
আর সবাই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে
লাল পতাকায় গতিশীল।
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১৯) ‘বিহারী’
Posted: January 11, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
বিহারী
অনেক অপেক্ষার পর
এলো ট্রেন।
যাত্রীদের উঠানামার চঞ্চলতা
কুলিদের হাঁকাহাঁকি।
তার পাশে চোখে পড়ে
অস্থিসার ছিন্নবস্ত্র-
কতগুলো বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের
বোঝা নামানোর ব্যস্ততা-
হাঁক-ডাক।
বিবর্ণ-স্বাস্থ্যহীন- হাড়-বেরোনো
মনে হয় প্রাণ ওষ্ঠাগত
তবুও তারা কি কর্মব্যস্ত!
হয়তো দূর থেকে আনা গম-ডাব
বেচে সামান্য লাভে-
বাঁচার প্রহসন করছে তারা।
কেউ উঠে পড়ে আরেক চলন্ত ট্রেনে।
অনেক কষ্টে কেউ মাল উঠায়।
একজন পাদানিতে দাঁড়িয়ে
হাতল ধরে বুক দিয়ে
বস্তা ঠেলে রাখে।
কিন্তু ভারী বস্তা, শীর্ণ শক্তিহীন বক্ষ
ধারণ করতে পারে না।
চলন্ত ট্রেন থেকে
বস্তা সমেত পড়ে যায়-
আমি চমকে উঠি
আসন্ন দুর্ঘটনার সম্ভাবনায়।
পাশ দিয়ে যেতে যেতে
বাঙালী কুলি
তাকে সরিয়ে আনে
ট্রেনের পাদানী
তার পাঁজরার পাশ দিয়ে
চলে যায়।
ব্যথাকাতর মহিলার হাতে
পক্ককেশ বৃদ্ধা
হাত বুলায়।
এরা আমাদের দেশের বিহারী।
এদের বিষণ্ণ স্বরভাঙ্গা
কান্নারুদ্ধ
মৃত-শিশু কোলে মিছিল দেখেছি
ফাইস্যাতলায়।
মা-বোনদের অত্যাচার
আর নিরীহ লোকদের
সার বেঁধে গুলি করে হত্যার ঘটনা
শুনেছি ময়মনসিংহে
দিনাজপুরে
আরো অনেক স্থানে।
লাইনের ধারে
সারি সারি ঘর দেখেছি
ক্ষয়ে যাওয়া মাটির-দেয়াল সাক্ষী
শূন্য কলোনির সারি
অথচ, এখানেও প্রাণের স্পন্দন
ছিল এককালে।
পাক ফ্যাসিস্টদের সাথে
আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টদের
কোন তফাৎ রয়েছে কি?
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১৮) ‘সন্ধ্যা’
Posted: January 9, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, নাট্যমঞ্চ, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
সন্ধ্যা
জলে ভরা মাঠ-
ডুবে যাওয়া পাটের মাথা
ঝোপ-ঝাড় কচুরিপানা।
কালো জলে-
শাখা-পাতা-গুঁড়ির ছায়া মিলে
সন্ধ্যার অন্ধকারে
রহস্য গড়েছে।
ওপারে গ্রামগুলো
কালো বনের রেখা-
তারপরে শেষ সূর্যচ্ছটায়
রঙীন আকাশ।
শোঁ-শোঁ-শন-শন
দখিনা বাতাস।
গুরু গুরু মেঘের ডাক।
ব্যস্ত গৃহিনীরা
পাট তোলে ঘরে-
ছোট্ট মেয়েরাও কি কর্মব্যস্ত-
প্রাণভরা জীবনের ছবি।
আম-কাঁঠালের সারি
কুমড়োর ঝাঁকা-
ঘরের ছায়া
ত্বরায় ডেকে আনে
সন্ধ্যার অন্ধকার।
ক্লান্ত গৃহিনীরা
রাতের আহার যোগায়-
বেড়ার খোলা পাকের ঘরে
রুটি বেলা আর সেঁকা-
কাঠের চুলো-
পাতার আগুন
ধোঁয়ায় ভরা।
তবুও তারা কষ্ট করে যায়।
আসন্ন মুক্তির সংগ্রামে
কষ্টের শোধ তারা তুলবেই-
সুখময় জীবন তারা গড়বেই।
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১৭) ‘নাট্যমঞ্চ’
Posted: January 8, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, নাট্যমঞ্চ, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
নাট্যমঞ্চ
পূর্ববাংলা একটি নাট্যমঞ্চ!
দর্শক জনতা।
সত্যিকার নায়কের আশায় উন্মুখ!
তারাও নায়কের সাথে
অংশ নেবে নাটকে
দুনিয়া আর সমাজকে পাল্টাবে।
নাটকটি তিন অংকের।
প্রথম অংক-
সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর
চব্বিশ বছর।
প্রথম দৃশ্য-
দুর্দান্ত-প্রতাপ
পাক-সামরিক দস্যুদের
হুংকার লম্ফঝম্প
নির্মম শোষণ লুণ্ঠন
তার সাথে আওয়ামী লীগের
বড় বড় বুলি আর রণধ্বনি।
বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী
কুকুরগুলো পা-চাটা
আর ঘেউ ঘেউ।
নাটক জমে ওঠে।
তৃতীয় দৃশ্যে শিশুর প্রবেশ-
হাতে রক্ত পতাকা-
দৃঢ় পদক্ষেপ!
পাক-সামরিক দস্যুদের চরম হামলা।
আওয়ামী লীগের পলায়ন।
এর মাঝে শিশুর লড়াই-
স্ফুলিঙ্গ দাবানল জ্বালে;
অভিজ্ঞতা আর শক্তির সঞ্চয়।
ভারতের আগমন-
শিশুকে হত্যার চক্রান্ত,
পাকিস্তানের পরাজয়
পূর্ববাংলা ভারতের উপনিবেশ।
প্রথম অংক
এই ভাবে হলো শেষ।
দ্বিতীয় অংকের শুরু।
জনগণের কঠোর উপলব্ধি-
বৃথা হলো তাদের রক্তপাত।
ক্রোধে তারা ফেটে পড়ে-
রক্তের শোধ তারা তুলবেই।
বিশ্বাসঘাতকদের তারা খতম করবেই।
সরল স্মিত-হাসি শিশু-
কৈশোরে পৌঁছায়।
সংশোধনবাদী কুকুরগুলো
নিজেদের মাঝে কামড়া-কামড়ি করে।
কিশোরের পদাঘাতে তারা
ছিটকে পড়ে ড্রেনে।
আওয়ামী লীগের নায়কের বেশ খসে পড়ে-
পাক-দস্যুর মত ভিলেন বেরোয়।
জনগণ তাকে মার মার বলে তেড়ে আসে।
কিশোর দ্রুত যুবকের বয়সে পৌঁছায়
জনগণ তাকেই নায়কে বরণ করে।
দ্বিতীয় অংকের গতি দ্রুততর।
তৃতীয় অংক সমাগত প্রায়।
নায়কের সাথে জনগণ
আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টদের
তমের দুর্বার সংগ্রাম চালায়।
গড়ে ওঠে ঘাঁটি এলাকা
বিস্তীর্ণ গেরিলা অঞ্চল।
এভাবে দ্বিতীয় অংকের
হলো অবসান।
তৃতীয় অংক-
গণযুদ্ধের রোমাঞ্চকর দৃশ্য।
যুবক, নায়ক, জনগণ
আর শত্রু-
ঘেরাও দমন-পাল্টা ঘেরাও দমন,
গণযুদ্ধের চমৎকার খেলা।
প্যাঁচে প্যাঁচে ফ্যাসিস্টরা খতম।
সচল যুদ্ধ, ঘেরাও যুদ্ধ, অবস্থান যুদ্ধ
কামান-বন্দুক-ট্যাংক।
কী রোমাঞ্চকর, অদ্ভুত শিহরণ!
বিশ্বজনগণেরও দৃষ্টি টানে।
গ্রাম দখল, শহর ঘেরাও
অবশেষে শহর দখল।
যুবক আর জনগণের মহান বিজয়
সমাপ্ত হলো তৃতীয় অংক।
অবশেষে পূর্ববাংলা হলো মুক্ত।
(শিশু হচ্ছে অনভিজ্ঞ সর্বহারা বিপ্লবীরা যারা প্রথম সংগঠিত হয় পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনে। কিশোর, যুবক হচ্ছে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি)
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১৬) ‘দশ হাজার ফুট উপরে’
Posted: January 7, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
দশ হাজার ফুট উপরে
দশ হাজার ফুট
উপরে
শরতের বিকালে
আকাশটা উজ্জ্বল নীল।
নীচে সাদা মেঘের মিনার-
দিগন্ত বিস্তৃত।
কোথাও উত্তুঙ্গ চূড়া
খাড়া ধ্বংস
উপত্যকা-
মনে হয় বরফ ঢাকা পর্বতমালা।
মেঘের নীচে
সবুজ শ্যামল ভূমি-
খাল-নদী-নালা-
আঁকাবাঁকা।
আলেভরা ক্ষেতগুলো-
চতুষ্কোণে মোড়া।
বিমানবন্দরে
দক্ষিণা বাতাসে
দূরে রানওয়ে ছাড়িয়ে
দোলায়িত কাশবন-
ফুলে ফুলে সাদা।
মনে পড়ে যায়
বিয়েনহোয়া।
সেখানেও কাশবন-
আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল
গেরিলাদের সন্তর্পণ ক্রলিং-এ।
সহসা প্রলয় ঘটেছিল-
মার্কিন আগ্রাসী ঘাঁটিতে-
গেরিলাদের প্রবল আক্রমণে।
এখানেও
আমাদের দেশের শত্রু বিমানঘাঁটিতে
কাশবন আন্দোলিত হবে-
গেরিলাদের আক্রমনে-
মুহূর্তে প্রলয় ঘটবে-
বিমানবন্দরে।
পথ-ঘাট-ঘর-বাড়ি-
চলন্ত নৌকা-ট্রাক-বাস-মানুষ-
শিশুর সাজানো খেলনা।
দ্রুতগামী
শত্রু বিমান
বাজপাখীর মত ছুটে আসবে
শিশুর সাজানো ঘর ভেঙ্গে দিতে।
আকাশের মেঘের মিনার
ঝোপঝাড়-
আচ্ছাদন
অন্তরায় গড়বে
দ্রুতগামী বিমান আক্রমণে।
বাধ্য হয়ে নীচে দিয়ে
শ্লথ গতিতে চলা বিমান-
পাখীর মত সহজ নিশান।
আমাদের গেরিলাদের গুলি খেয়ে-
গোত্তা মেরে পড়বে ধরণীতে
বা
ফেটে যাবে আকাশে
ধোঁয়ার কুণ্ডলী রেখে।
সেদিন আর বেশি দূর নয়।
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১৫) ‘সন্ধ্যা’
Posted: January 6, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
সন্ধ্যা
শেষ বিকেলে-
বাতায়ন পথে
শিশুদের কোলাহল
শোনা যায়।
মাঠের শিশুদের মাতামাতি
ছাড়িয়ে-
কলোনির হলদে বাড়িগুলোর
খোলা জানালা
তারপর
আবছা আঁধার ঘর-
এখনো বাতিগুলো জ্বলেনি।
হয়ত গৃহিনীরা
সারাদিনের খাটুনি
আর-
স্বাধীনতার ব্যর্থ পরিহাস-
অভাব-অনটন
নিরাপত্তার চিন্তার ক্লেশ সেরে
বারান্দায় দাঁড়িয়েছে,
দিগন্তের পানে চেয়ে।
হয়ত ক্ষণিকের জন্য
থেমে গেছে তারা।
সন্ধ্যার আগমনে
কালো হয়ে আসা জগৎটা-
নীড়ে ফেরা পাখীর কাকলি;
শিশুদের কোলাহল।
তারপর-
জ্বলে ওঠে বাতিগুলো।
ঘরে ঘরে আলো।
শিশুরা ফিরে আসে।
শেষ সন্ধ্যায় শূন্য মাঠ।
গৃহিনীরা ফিরে আসে
কষ্টকর জীবনের মাঝে।
তাদেরও মনে জেগে উঠে
স্বাধীনতার পরিহাস থেকে
মুক্তির আকুতি।
(নোটঃ কবি এ কবিতাটিকে গানে রূপ দিয়েছেন)
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১৪) ‘একটি সংগ্রামী এলাকা সফর’
Posted: January 5, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad, সাহিত্য ও সংস্কৃতি | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
একটি সংগ্রামী এলাকা সফর
বাস থেকে নেমে চলেছি আমরা
হাটের মাঝ দিয়ে।
মনে হয় কতকালের চেনা পথ
অথচ কখনো আসিনি এখানে!
অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা কুরিয়ার
পথ দেখায়।
হাটের কেরোসিনের কুপি
দোকান ফেলে চলি
গ্রামের পথ বেয়ে।
কুরিয়ার চলে
দূরত্ব রেখে
বিরাট কোট গায়ে
মাফলার জড়িয়ে
একা একা দ্রুত পায়ে।
মনে হয় আমাদের সাথে নেই কোনো পরিচয়।
অন্ধকার রাত
ভীষণ কুয়াশা।
চুল ভিজে আসে
অল্প দূরেও দেখা যায় না।
রাস্তার পাশে
মাঝে মাঝে এক আধটা দোকান-
টিম টিমে বাতি আর-
আবছা লোকজন চোখে পড়ে।
অনেক পথ-আর ফুরোয় না
চুপ চাপ হাঁটা-
কথাও অসুবিধা।
অবশেষে ক্ষেত ভেঙ্গে
আশ্রয়।
কমরেডদের সান্নিধ্য।
অনেক কথা-
অনেক ভালোবাসা
অনেক আলোচনা
নিস্তব্ধ রাত
শেয়ালের ডাক-
আমাদের বিশ্রামের ইঙ্গিত জানায়।
ফেরার পথে লঞ্চে
বসে আছি অপেক্ষায়।
অনেক রাত, কুয়াশা
খালপাড়ে বাঁধা নৌকো।
জলের মাঝে বাতিগুলো
লাল আলোর স্তম্ভ-
ছোট ছোট ঢেউয়ে কম্পমান!
অবশেষে রাত ভোরে
কুয়াশার মাঝ দিয়ে
লঞ্চ চলে-
বিশাল তেঁতুলিয়ায়।
এই নদী বেয়ে চলে গেছে
আমাদের গেরিলারা সমুদ্র পাড়ে।
কুকরী-মুকরী আরো
অজানা চরে-
শত্রু সংহারে।
লঞ্চ থেকে নেমে
কৃষকের দেওয়া
খেজুরের রস খেয়ে
ফিরে আসি গন্তব্যস্থানে।
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১৩) ‘নবীনতারা’
Posted: January 4, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
নবীনতারা
নবীনতারা
তোমার নাম!
মহাকাশের কোলে
জ্বলছো উজ্জ্বল ঝিকিমিকি করে।
কত তারা জ্বলে-
গেছে নিভে,
আরো কত তারা জ্বলছে
আরো কত তারা রয়েছে অপেক্ষায়।
নবীনতারা
স্বাগত তোমায়।
মহাকাশ-তারকামণ্ডল-
তার মাঝে নবীন তারা
জ্বলছো উজ্জ্বল।
কিন্তু তুমিও যাবে নিভে
জ্বলা আর নেভার
অন্তহীন আবর্তে
তুমিও যাবে হারিয়ে
সীমাহীন মহাকাশে।
নবীনতারা
স্বাগত তোমায়।
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১২) ‘ট্রেনের বাইরে রাত’
Posted: January 3, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
ট্রেনের বাইরে রাত
চাঁদনী রাত, হিমেল হাওয়া।
দ্রুতগামী ট্রেনে চলেছি আমরা।
আবছা আঁধারে
লাইনের ধারে
ঝোপ-ঝাড় গাছগুলো
দ্রুতবেগে চলে যায়।
ফালি ফালি আঁকাবাঁকা
পায়েচলা পথ-
আলেভরা ক্ষেতগুলো
মিশে গেছে গ্রামে।
ঝোপ-ঝাড়-গাছ-গাছালি;
ছনেঢাকা কুঁড়ের ছায়া;
মাঝে মাঝে ছোট ছোট খাল-
জলের রেখা;
ক্ষেতগুলো জলে ভরা
তার মাঝে আকাশের ছায়া;
আবছা রহস্য ঘেরা।
মাঝে মাঝে চমকে উঠে আলোর মেলা
আধুনিক কারখানা।
তার পাশে, আবছা আঁধারে
ছনে ঢাকা কুঁড়ের ছায়া-
ক্লান্ত শ্রমিকেরা
ঘুমিয়েছে মাটির বিছানায়।
অতিরিক্ত বোঝাই কামরায়
ক্লান্ত কমরেড ঘুমে ভেঙ্গে পড়ে।
বাইরে আলোর মশাল হাতে স্টেশন
ঝোপ-ঝাড়-গাছ-গাছালি-
দ্রুতবেগে চলে যায়।
তারপর আলেভরা ক্ষেত
দূরে বনের দেয়াল;
মেঘহীন আকাশ
মিটমিটে তারা
আধখানা চাঁদ
চলছে আমাদের সাথে।
ঐ আলগুলো কবে উঠে যাবে!
রাতেও কর্মব্যস্ত ক্ষেতগুলো
কবে জনগণের সম্পদ যোগাবে!
আলোয় উজ্জ্বল কারখানা-
তার পাশে আবছা আঁধারে-
ছনেঢাকা কুঁড়ের শ্রমিকেরা
কবে মানুষের মত বাঁচবে?
প্রতিদিন কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা- (১১) ‘ডি.এন.এ’
Posted: January 2, 2016 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: কমরেড সিরাজ সিকদারের কবিতা, বিপ্লবী কবিতা Leave a comment
ডি.এন.এ
ডি.এন.এ’র সর্পিল সিঁড়ি-
এর মাঝে আঁকা জীবনের জটিল কোড।
ধাপে ধাপে কোড থেকে নির্দেশ যায়ঃ
ডি.এন.এ-
আর.এন.এ-
-প্রোটিন কোষ।
এমনি ভাবে গড়ে উঠে
মানব আর জীবন্ত জগত।
হাজার বছরের অজানা রহস্য
কত ভাববাদ- আর অধিবিদ্যার
দুর্ভেদ্য রাজত্ব,
কত শোষণ আর লুণ্ঠনের হাতিয়ার;
অবশেষে ভেঙ্গে যায়
বিজ্ঞানের দুর্বার যাত্রায়।
জীবন-রহস্য উদঘাটিত
সকল কুসংস্কার ভাববাদ-অধিবিদ্যা
উড়ে যায় ধোঁয়ার মত।
সমাজ আর প্রকৃতির বিকাশে
বিজ্ঞান রেখে যায় মহান অবদান।