বগুড়ায় পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি – সিসি’র পোস্টারিং

image-104436-1507384391

বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি – সিসি পোস্টারিং করেছে। গত শনিবার সকালের দিকে এলাকাবাসীর নজরে আসে এই পোস্টারগুলো।  

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সরেজমনি দেখা যায়, উপজেলার মথুরাপুর গ্রাম থেকে শিমুলকান্দি গ্রাম পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে ঘরের বেড়া, স্কুলের নামফলক ও গাছের সাথে এসব পোস্টার সাটানো হয়েছে। এরমধ্যে মথুরাপুর গ্রামে জয়নাল আবেদীনের ঘরের বেড়ায়, উলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম ফলকে ও শিমুলকান্দি গ্রামে রাস্তার পাশে গাছের সাথে পোস্টারগুলো শোভা পাচ্ছে।

পোস্টারে লাল রঙের ছাপা অক্ষরে লেখা রয়েছে, সর্বহারা পার্টির ৪র্থ জাতীয় কংগ্রেসের আহ্বান-শোষনহীন শ্রেণিহীন বিশ্বসমাজ কমিউনিজমের লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য মার্কসবাদ লেলিনবাদ মাওবাদের মতবাদকে আঁকড়ে ধরুন। ঐক্যবদ্ধ হোন-একটি একক মাওবাদী পার্টি ও একটি নতুন ধরনের কমিউনিস্ট আর্ন্তজাতিক সংগঠন গড়ে তুলন। এছাড়া সরকার বিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান রয়েছে। প্রচারে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি।

মথুরাপুর গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র রাসেল মাহমুদ জানায়, সকাল বেলা ঘর থেকে বের হয়ে ঘরের বেড়ার সাথে এই পোস্টার লাগানো দেখেছে। কে বা কারা এই পোস্টার লাগিয়েছে তা বলতে পারছে না। তবে পোস্টারে সরকার বিরোধী বিদ্রোহের ভাব প্রকাশ করা হয়েছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী ভূইয়া বলেন, কে বা কারা কখন এই পোস্টারগুলো লাগিয়েছে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।

মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ সেলিম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আশির দশকে এই এলাকায় সর্বহারা পার্টির আখড়া ছিল। ওই সময় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সর্বহারাপার্টি এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছিল। কিন্ত আবারো পোস্টার লাগিয়ে এলাকায় সর্বহারা পার্টির আগমণের জানান দিচ্ছে। এ বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।

ধুনট থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, কতিপয় অসাধু ব্যক্তি তামাসা করার জন্যই এ ধরনের পোস্টার প্রচার করেন। প্রকৃত পক্ষে এই এলাকায় সর্বহারা পার্টির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারপরও এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্রঃ dainikamadershomoy


রাজবাড়ীঃ পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি(MBRM) এর সদস্য গ্রেফতার

1495557789

রাজবাড়ীতে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ আলমগীর খান (৩৫) নামে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি(MBRM) এর এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৩ মে) সন্ধ্যা ৭টায় জেলা সদরের দাদশী ইউনিয়নের আগমাড়াই গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আলমগীর রাজবাড়ী জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের গোপালবাড়ী গ্রামের মোসলেম খানের ছেলে।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. কামাল হোসেন ভূইয়া বাংলানিউজকে জানান, ২০১০ সালের রাজবাড়ী জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দার আলোচিত ফোর মার্ডার মামলার আসামি আলমগীর। তিনি ডিএসবি’র তালিকাভূক্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি(MBRM) এর সক্রিয় সদস্য।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় দাদশী ইউনিয়নের আগমাড়াই গ্রামের মাইনদ্দিনের বাড়ির পাশে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে আলমগীরের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

সূত্রঃ http://www.banglanews24.com/national/news/bd/576297.details


বাংলাদেশঃ মাওবাদী বলশেভিক রিঅর্গানাইজেশন মুভমেন্ট (এমবিআরএম) এর সদস্য গ্রেফতার

rajbari-arms-recovery

রাজবাড়ীতে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি – মাওবাদী বলশেভিক রিঅর্গানাইজেশন মুভমেন্ট (এমবিআরএম) এর সক্রিয় এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তার হেফাজত থেকে একটি রিভলবার ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত সেলিম প্রামাণিক (৩৮) জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা গ্রামের আক্কাছ প্রামাণিকের ছেলে।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকাল ১০টায় রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার মিয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।

ওসি জানান, গ্রেফতারকৃত সেলিম রাজবাড়ী জেলা সদরের ২০০৯ সালের উড়াকান্দার ফোর মার্ডার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।

বুধবার (১ মার্চ) রাত ৮টার দিকে রাজবাড়ী বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যমতে রাত ২টার দিকে উড়াকান্দা বাজারের একটি মুদি দোকানে তল্লাশি চালিয়ে একটি বিস্কুটের কার্টন থেকে একটি রিভলবার ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত সেলিমের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী থানায় অস্ত্র আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সূত্রঃ

http://bdnews24.com/samagrabangladesh/detail/home/1296853

http://banglanews24.com/national/news/bd/557773.details

 


‘আসুন জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবেলা করি’ – পূর্ববাংলার ও ফ্রান্সের মাওবাদী পার্টির যৌথ বিবৃতি

Maoist-Flag

যৌথ বিবৃতিঃ

নভেম্বর ৭, ২০১১

আসুন জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবেলা করি!

 

আজ পৃথিবীর জনগণ এক গুরুত্বপুর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেনঃ জলবায়ু পরিবর্তন।  পুঁজিবাদী, ঔপনিবেশিক ও আধা ঔপনিবেশিক বিকাশ পৃথিবীকে আকৃতি দান করেছে উৎপাদিকা শক্তিসমূহ উন্নীত করে সেইসাথে প্রকৃতিকে বাঁধাগ্রস্থ ও ধ্বংস করে।
দ্বান্দ্বিকভাবে দেখলে, একদিকে পুঁজিবাদ বিশ্বের জনগণকে এনে দিয়েছে তুলনামূলক ভাল জীবনের সম্ভাবনা আর অন্যদিকে গ্রহটিকে ধ্বংস করছে।
মার্কস ও এঙ্গেলস এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন ছিলেন, এঙ্গেলস শহর ও গ্রামের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে গুরুত্ব দিয়েছেন। শহরাঞ্চল বুর্জোয়াদের সাথে জন্ম নিয়েছে, তার মৃতু্যও তাদেরই সাথে। চীনে গড়ে ওঠা গণকমিউনগুলো এই পথ প্রদর্শন করে।
আমাদের নিজ নিজ দেশে বিকাশ একে প্রদর্শন করে এক তাৎপর্যপুর্ণ উপায়ে।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পেয় পানিতে আর্সেনিক দূষণ মোকাবেলা করছেন যার কারণ হ্েচছ ভূগর্ভস্থ পানির অবৈজ্ঞানিক অপব্যবহার।  উপনিবেশবাদ ও আধা-উপনিবেশবাদ শোষণের এক অন্ধ বিকাশের প্রক্রিয়ার দিকে ধাবিত করেছে এর এক মুল্য হিসেবে প্রকৃতির ভারসাম্য ধ্বংস করে।
ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা ও হেপাটাইটিসের মতো রোগগুলি কোনভাবেই ‘প্রাকৃতিক’ রোগ নয় বরং তাহচ্ছে স্রেফ উৎপাদিকা শক্তিগুলির অবৈজ্ঞানিক বিকাশের ফল।
বাংলাদেশের্ ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক বিকাশ জনগণকে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় অক্ষম করে তুলেছে আর যে-উৎপাদন জনগণের সেবায় নয় বরং সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানীসমূহের ও তাদের বুর্জোয়া দালালদের সেবায় নিয়োযিত তার ফল হিসেবে নদীগুলোকে ব্যাপক দূষণের মাধ্যমে জৈবিক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে আর একদা গহীন অরণ্য এই দেশকে করেছে বনশুণ্য।
সেইসব সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানীসমূহ, উদাহারণস্বরূপ যারা ফ্রান্সে সস্তা দরে পোষাক বিক্রী করছে।  এক শক্তিশালি বুর্জোয়া রাষ্ট্রসহকারে ফ্রান্স এক পুঁজিবাদী দেশ। সে বাংলাদেশের বাস্তবতা জানেনা। সে একটা শক্তিশালি সমাজ গণতন্ত্র সহযোগে সাম্রাজ্যবাদী বেলুনের মধ্যে বাস করে–বাংলাদেশ যা থেকে অনেক দুরে।
কিন্তু রকমফের থাকলেও বস্তুত একই সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।
প্যরিস শহরের জন্ম ফরাসী বুর্জোয়াদের শহর হিসেবে; আর ঊনিশ শতকের শেষে বুর্জোয়া ধ্রুপদীবাদ ও রোমান্টিকতাবাদে পুর্ণ এক সাধারণ চরিত্র প্রদান করে ব্যারন হফম্যান শহরটিকে পুননির্মণ করেন।
এই প্রক্রিয়ায় প্যরিস সারা দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রক্ত শুষে নিয়েছে এবং এখনো বাড়ছে দরিদ্রতমদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে শহরতলীতে ঠেলে দিয়ে, অন্য বড় শহরগুলিকে ৩০০ কিলেমিটার দুরে আটকে দিয়ে–যারা কিনা একই পথ অনুসরণ করছে তাদের জন্য মডেল হয়ে।
সবকিছুকে এই প্রক্রিয়ার জন্য নিবেদন করা হয়েছে।  ফ্রান্স নিজেকে রূপান্তর করছে প্যারিসীয় কেন্দ্রসমেত অন্য বড় শহরগুলিকে নিয়ে এক বৃহৎ শহরাঞ্চলে, আর তারপর রয়েছে সড়ক ও আধা শহরীকৃত এলাকা, বিচ্ছিন্ন বিপ্তি শিল্প কারখানার এক পুরো দেশ। প্রকৃতিকে মূল্যহীন বিবেচনা করা হয়েছে, এক মনুষ্য জীবনের প্রকাশের অসম্ভাবনা হতাশা আনে, জঙ্গী রোমান্টিকতাবাদ হিসেবে ফ্যাসিবাদ আনে-একটা মতাদর্শ যা দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনের ভাণ করে।
রকমফের সত্ত্বেও, এই ধরণের সমস্যাগুলো বাংলাদেশ ও ফ্রান্সে চুড়ান্ততঃ একই যা হচ্ছে পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, ঔপনিবেশিক ও আধা ঔপনিবেশিক বিকাশের ফল।
বিশ্বজনগণ শান্তিপুর্ণ ও প্রগতিশীল জীবন চান, যেখানে তারা সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিকশিত করতে পারবেন, তাঁরা এক মানবীয় সভ্যতার দাবী করেন।
আর তারা জানেন যে এর জন্য তাদের সংগ্রাম করতে হবে, তাদের প্রয়োজন নিপীড়ণ ও শোষণের বিরুদ্ধে এক গণযুদ্ধের। বিশ্বজনগণ পুঁজিবাদী শোষণ ও এর দূষণ কর্তৃক এই গ্রহের রূপান্তর হতে দেবেন না।
তাঁরা চান সুন্দরবনের সু্ন্দরী ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বেঁচে থাক, তাঁরা চান প্যারিসের আকাশে তারা দেখতে, ‘আলোঝলোমল শহর’ কৃত্রিম মরীচিকা ও লোভে পুর্ণ বুর্জোয়া জীবনের সেবাকারী সেই প্যারিস শহর নয়।
আসুন বিশ্ব বিপ্লবের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবেলা করি!

ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী)
পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি (মাওবাদী একতা গ্রুপ)

 

সূত্রঃ http://sarbaharapath.com/?p=100


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি(মাওবাদী বলশেভিক পুনর্গঠন আন্দোলন) এর দলিল-

poster

মিল-কারখানার রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর বিতর্কে আমাদের অবস্থান

 

সম্প্রতি কয়েকটি মিলকে রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তরের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খুলনার খালিশপুর শিল্পঞ্চলের শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদী আন্দোলনও করেছেন। আমাদেরখুলনা শাখার বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা পার্টির পরিচিতি গোপন রেখে এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন।  এটা খুবই ভালো। চলমান বিভিন্ন ধরনের শ্রেণিসংগ্রামে সর্বদাই অংশগ্রহণ করতে হবে।  শ্রেণির লোকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শ্রেণিসংগ্রামে সর্বদাই সামনের কাতারে থাকতে হবে। এবং শ্রেণিসংগ্রামের মধ্যে থেকেই শ্রেণিসংগ্রামের ভুলগুলোকে তুলে ধরতে হবে।  ভুলগুলো সম্পর্কে শ্রেণির লোকদেরকে সচেতন করতে হবে। ভুলগুলোকে শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শ্রেণিসংগ্রামের কর্মসূচিকে তথা তার আশু ও চূড়ান্ত লক্ষ্যকে স্পষ্ট করা, সেক্ষেত্রে কোনো ভুল থাকলে তাকে উদ্ঘাটন ও সংশোধনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শ্রেণিসংগ্রামকে বিপ্লবী শ্রেণিসংগ্রামে রূপান্তরিত করা যায় না। এবং তা দ্বারা বিপ্লবেরও সেবা করা যায় না। ফলে তা অর্থনীতিবাদী-সংস্কারবাদী কর্মসূচি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে অর্থনীতিবাদী-সংস্কারবাদী-ট্রেড ইউনিয়নবাদী আন্দোলনের স্তরেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এবং তা দ্বারা শেষাবধি শ্রেণীশত্রুরাই লাভবান হয়।  এসম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। অথচ এক্ষেত্রে আমাদের খুলনা শাখার নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশ পরিমাণে সমন্বয়বাদের ঝোক দেখা গিয়েছিল।  যা ভুল।  তারা বিষয়টি সম্পর্কে এমনভাবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন যাতে মনে হবার অবকাশ থেকে যায় যে, আমরা যেনো ব্যক্তি মালিকানার বিপক্ষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার পক্ষে।  অথচ আমরা দুটোরই বিপক্ষে এবং জনগণের মালিকানার পক্ষে।  আর জনগণের মালিকানা তো প্রতিষ্ঠিত হতে পারে গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।  তাই আমরা গণযুদ্ধের পক্ষে।  একথা সত্যি যে, রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা হয় শাসক বড় ধনীশ্রেণির স্বার্থেই।  এবং এ হস্তান্তরের অর্থ হচ্ছে তাদের বর্ধিত মুনাফা। যার অর্থ হচ্ছে শ্রমিকশ্রেণি ও শ্রমজীবী জনগণের ওপর বর্ধিত লুন্ঠন ও নিপীড়ন।  তাই শ্রমিকশ্রেণির তার বিরুদ্ধে ও সংগ্রাম করেন। আমরা কমিউনিস্টরা যেহেতু মানব কর্তৃক মানব শোষণের বিরুদ্ধে সেহেতু যে কোনো বর্ধিত লুন্ঠনেরও বিরুদ্ধে।  তাই আমরা শ্রমিকশ্রেণির ট্রেড ইউনিয়নধর্মী এই ধরনের আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করি। কিন্তু নিছক অংশগ্রহণের জন্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করাটা আমাদের কর্তব্য নয়। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তাকে বিপবের কর্মসূচিতে সজ্জিত করা ও তার ভিত্তিতে আন্দোলনকে পরিচালিত করার জোরালো চেষ্টা চালানো আমাদের দায়িত্ব।  এক্ষেত্রে খুলনা শাখার কমরেডদের মধ্যে যে ভুল প্রবণতা দেখা দিয়েছিল সেটা এসেছিল প্রাসঙ্গিক বিষয়টির রাজনৈতিক প্রকৃতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা থেকে। তাই প্রাসঙ্গিক বিষয়টির রাজনৈতিক প্রকৃতির উন্মোচনের মধ্য দিয়েই একে কাটিয়ে তুলতে সহায়তা করা সম্ভব। এই নিবন্ধের মধ্য দিয়ে সংক্ষেপে তাই করার চেষ্টা হয়েছে।

মিল-কারখানার রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর নিয়ে বিতর্কটি আমাদের দেশে নতুন নয়, বরং বেশ পুরাতনই।  এই বিতর্কে দুটো পক্ষই বেশ সোচ্চার।  এক পক্ষ হস্তান্তরের পক্ষে।  এবং অন্য পক্ষ হস্তান্তরের বিপক্ষে।  হস্তান্তরের পক্ষে যারা তাদের যুক্তি হচ্ছে হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে দেশ-জাতিজনগণ তথা রাষ্ট্র উপকৃত হবে। বিপরীত পক্ষের যুক্তি হচ্ছে, হস্তান্তর হলে তাতে দেশ-জাতি-জনগণ তথা রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে। অথচ কোনো পক্ষই প্রামাণ্যভাবে দেখাচ্ছেন না যে, ইতোপূর্বে যে সব হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে তাতে দেশজাতি-জনগণের কি সব উপকার হয়েছে? অথবা যে সব মিল-কারখানার হস্তান্তর প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি সেগুলো দ্বারাই বা দেশ-জাতি-জনগণ কিভাবে উপকৃত হচ্ছেন?

আসলে হস্তান্তরের পক্ষে-বিপক্ষে দেয়া বক্তব্যসমূহ হচ্ছে ফালতু প্যাঁচাল। এসব ফালতু প্যাঁচালের মধ্য দিয়ে আসল বিষয়টিকে আড়াল করে ফেলা হচ্ছে। এসব তুচ্ছ বিতর্ক ক্ষমতাসীন বড় ধনীশ্রেণি আর তাদের উচ্ছিষ্টভোগীদের স্বার্থেই করা হচ্ছে, জনগণের স্বার্থে নয়।

প্রকৃত বিষয় হচ্ছে এই যে, ক্ষমতাসীন শাসকশ্রেণির স্বার্থেই প্রয়োজন ভিত্তিক এক সময়ে মিল-কারখানাগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেয়া হয়েছিল এবং এখন আবার তাদের শ্রেণিস্বার্থেই সেগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে।  এক্ষেত্রে কখনো জনগণের স্বার্থ বিবেচ্য বিষয় ছিল না এবং এখনো নেই।

আমাদের দেশের বর্তমান শাসকশ্রেণি হচ্ছে বাঙালি আমলা মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াশ্রেণি।  এরা হচ্ছে মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দালাল। এবং দেশীয় সামন্তবাদের রক্ষক।  ৭২ সালের পূর্ববর্তী সময়কালে এরা প্রধানত শাসন ক্ষমতায় ছিল না, বা থাকলেও তা ছোট শরিক হিসেবেই ছিল। তখন আমাদের পূর্ববাংলা নামক ভূখণ্ডটি ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের অংশ। এবং অখণ্ড পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল প্রধানত পাকিস্তনপন্থী অবাঙালি আমলা মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াশ্রেণি।  তারাও ছিল মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের দালাল ও সামন্তবাদের রক্ষক।  পাকিস্তানি উপনেবেশিক শাসকগোষ্ঠীর জাতীয় নিপীড়নকে যখন আমাদের দেশের জনগণ বিরোধিতা করেছিলেন তখন তাতে বাঙালি জাতীয় বুর্জোয়াশ্রেণি এবং এমনকি বাঙালি আমলা মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াশ্রেণির একটা অংশও যোগ দিয়েছিল।  নিজেদের বিকাশের অপরিহার্য স্বার্থেই তারা তা করেছিল।  কেননা তারা ছোট পুঁজির মালিক ছিল এবং পুঁজিকে বড় করার জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন নিরাপদ বাজার তাদের জন্য অপরিহার্য ছিল।  ’৭১ সালে জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে কাজে লাগিয়ে এবং তাকে বিপথগামী করে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সহায়তায় ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের প্রত্যক্ষ মদদে এরা “বাংলাদেশ” নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে তার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল।  এবং রাষ্ট্রযন্ত্রটাকে পরিণত করেছিল নিজেদের স্বার্থরক্ষক রাষ্ট্রযন্ত্রে।  আর রাষ্ট্রব্যবস্থাটাকে পরিণত করেছিল নিজেদের স্বার্থরক্ষক রাষ্ট্রব্যবস্থায়।  ফলে তখন এই শাসকশ্রেণিটা নিজেদের বিকাশের স্বার্থে যা প্রয়োজন, ঠিক তাই করেছিল।  সে সময়ে পাকিস্তানি “বিগ-ব্রাদার”-দের ফেলে যাওয়া বড় বড় মিল-কারখানা ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালনা করার মতো পুঁজির জোর এবং ব্যবস্থাপনাগত সক্ষমত কোনোটাই এদের ছিল না।  ফলে পুঁজির দ্রুত বিকাশ এবং ব্যবস্থাপনা গত সক্ষমতা অর্জন করাটাই তখন তাদের আশু লক্ষ্য ছিল।  এবং যেহেতু পুঁজিবাদের প্রাথমিক অবস্থায় পুঁজির দ্রুত বৃদ্ধির স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে লুটেরা অর্থনীতি, সেহেতু আমাদের দেশের শাসকশ্রেণি তাদের দ্রুত বিকাশের স্বার্থে সেই লুটেরা অর্থনীতিকেই গ্রহণ করেছিল। এই লুটেরা অর্থনীতিরই প্রকাশ ছিল শত্রু  সম্পত্তি আইন ও অর্পিত সম্পত্তি আইনের ব্যানারে মিল-কারখানাগুলোকে রাষ্ট্রীয় খাতে নেয়া।  এবং তার মধ্য দিয়ে সেগুলোর ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানার প্রতারণাপূর্ণ সিল মারা।  বাস্তবে রাষ্ট্রের মালিকানা ছিল উঠতি বড় ধনীশ্রেণির এবং তাই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিল-কারখানাগুলোরও প্রকৃত মালিক বনে ছিল তারাই। ফলে তথাকথিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিল-কারখানাগুলো ছিল উঠতি ধনী শ্রেণির আর তাদের উচ্ছিষ্টভোগীদের সীমাহীন লুটপাটের দায় ভোগ করতে হয়েছে জনগণকে। ফলে জনগণ গরিব থেকে গরিবেতর হয়েছেন এবং মুষ্টিমেয় লুটেরা ধনী ফুলে কোলাব্যাঙ হয়েছে। এভাবে লুটেরা ধনীশ্রেণিটির বড় পুঁজি গড়ে উঠেছে।  তাদের পরিচালনাগত তথা চোট্টামীর বর্ধিত সামর্থ অর্জিত হয়েছে।  এদের দালালীর যোগ্যতা সম্পর্কে বিদেশী মুরুব্বীদের আস্থা সৃষ্টি হয়েছে।  এবং এদের মাধ্যমে তারা বর্ধিত মুনাফার জন্য বর্ধিত পুঁজি লগ্নি করাটাকে নিরাপদ ও প্রয়োজনীয় মনে করেছে।  ফলে বিদেশী প্রভু এবং এদেশীয় শাসকশ্রেণি- উভয়ের স্বার্থেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিল-কারখানাগুলোকে এখন ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। যাতে বর্ধিত মুনাফা লুটে এরা আরো স্ফীত হতে পারে এবং তার দায় যথারীতি জনগণকেই বহন করতে হয়।  শাসকশ্রেণির শ্রেণিহিসেবে সুসংহত ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য এখন যা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

ফলে এটা খুবই পরিষ্কার যে, জনগণের স্বার্থে নয় বরং শাসকশ্রেণির নিজস্ব শ্রেণিগত বিকাশের স্বার্থেই মিল-কারখানাগুলোকে এক সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেয়া হয়েছিল এবং নিজ শ্রেণির উচ্চতর বিকাশের স্বার্থেই এখন আবার মিলকারখানাগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে।  অর্থাৎ, মিলকারখানাগুলোকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয় খাতে লুটপাট চালিয়ে ধনীশ্রেণিকে আরো বড় ধনী হবার সুযোগ করে দেবার জন্য।  এবং বড় পুঁজি গড়ে ওঠার পর ও স্থূল লুটপাটের অর্থনীতির প্রতি জনগণের ঘৃণা সৃষ্টির কারণে ভিন্নরূপে বর্ধিত মুনাফার জন্যই এখন আবার মিল-কারখানাগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই বলী হয়েছেন ও হচ্ছেন সাধারণ জনগণ।

সুতরাং দাবি বা কর্মসূচি হতে পারে একটাই, এবং তা হচ্ছে, জনগণের সম্পদ জনগণের হাতে ফিরিয়ে আনা। মিল-কারখানা যেহেতু জনগণের সম্পদ,  তাদের রক্ত নিংড়ে বের করা প্রতিটা পয়সা এক জায়গায় জড় করেই এসব সম্পদ গড়ে উঠেছে ও টিকে আছে, সেহেতু তার প্রকৃত মালিক হচ্ছেন জনগণের হাতে জনগণের সম্পদ ফিরিয়ে আনার উপায় হচ্ছে একটাই।  এবং তা হচ্ছে গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে শাসকশ্রেণি আর তাদের বিদেশী প্রভু ও দেশীয় দোসরদেরকে উৎখাত করা। এদের স্বার্থরক্ষক রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করা। এবং শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত- জাতীয় বুর্জোয়াশ্রেণির নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবী রাষ্ট্রক্ষমতা, রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

এই রাজনৈতিক কর্মসূচি ও লক্ষ্যকে স্পষ্ট না করে এবং তাকে বারংবার শ্রমিকদের সামনে না এনে, নিছক আন্দোলন কোনো বিপ্লবী আন্দোলনে পরিণত হতে পারে না।  এবং ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক ও শ্রমজীবী জনগণকেও ট্রেড ইউনিয়নবাদী অভিজাত সুবিধাবাদী তথাকথিত শ্রমিক নেতাদের খপ্পর থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় মিল-কারখানাগুলোকে হস্তান্তরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনের স্বাভাবিক অর্থ কী? তা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় রাখার পক্ষে আন্দোলন। এর দ্বারা কারা লাভবান হয়? তা কোন শ্রেণির স্বার্থের পক্ষে যায়? ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর যেমনি মালিক বড় ধনীদের পক্ষে যায় তেমনি রাষ্ট্র যেহেতু তাদের, তাই রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় রাখার দাবি ও আন্দোলনও তাদেরই স্বার্থের পক্ষে যায়।  এসব হচ্ছে জনগণের শত্রু  সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের দালাল ও সামন্তবাদের রক্ষক আমলা মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াশ্রেণির লেজুড় ও উচ্ছিষ্টভোগী ট্রেড ইউনিয়নবাদী অভিজাত সুবিধাবাদী তথাকথিত শ্রমিক নেতাদের চালবাজী।  রাষ্ট্রীয় মালিকানায় বড় ধনীদেরকে সীমাহীন লুটপাট চালানোর সুযোগ প্রদানের মধ্য দিয়ে এরা তার ভাগ পায়। ব্যক্তি মালিকানায় যা কমে যায়।  ফলে তারাই মিল-কারখানাকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তরের বিপক্ষে থাকে সর্বদাই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। অন্যদিকে, হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ইস্পিত ফললাভে বঞ্চিত বড় ধনীদের একটা অংশও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আপাতভাবে নির্দিষ্ট হস্তান্তরের বিরোধিতায় নামে। এক্ষেত্রে তারা কাজে লাগায় ট্রেড ইউনিয়নবাদী অভিজাত শ্রমিক নেতাদেরকে এবং তাদের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে সাধারণ শ্রমিক ও শ্রমজীবী জনগণকেও ব্যবহার করে।

এসবকে আমাদের বিরোধিতা করতে হবে। এসবের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।  এবং মিল-কারখানাসহ সকল সম্পদের ওপর, গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রক্ষমতার ওপর শ্রমিকশ্রেণির ও তার নেতৃত্বে অন্যান্য নিপীড়িত শ্রেণিগুলোর জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার দাবি বা কর্মসূচিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।  এটাই হচ্ছে আমাদের অবস্থান। এবং তার ভিত্তিতে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তরের বিরুদ্ধে আমাদের ধ্বনি হচ্ছে –

মিল-কারখানাসহ জনগণের সকল সম্পদ নিয়ে শাসক প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণির ক্রমাগত ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে বিরোধিতা করুন। জনগণের সম্পদের ওপর জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাজেয় গণযুদ্ধ গড়ে তুলুন।  নয়াগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন।  সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের লক্ষ্যে এগিয়ে চলুন। মানব কর্তৃক মানব শোষণের চির অবসান ঘটান।

 দ্বিতীয় সপ্তাহ, এপ্রিল ২০০২

[ নোট: আমাদের খুলনা শাখার দায়িত্বে নিয়োজিত উচ্চতর প্রতিনিধি কমরেডের প্রেরিত একটি লিফলেটের খসড়ার জবাবে কমরেড মোহাম্মদ শাহীন গত জানুয়ারিতে যে সমালোচনামূলক পত্র পাঠিয়েছিলেন তার ভিত্তিতে এই নিবন্ধটি রচিত হয়েছে।  নিবন্ধটি হচ্ছে মূলত পত্রে বর্ণিত দৃষ্টিভঙ্গিরই সারসংক্ষেপ।  -সম্পাদনা বোর্ড, স্ফুলিঙ্গ]

 

সূত্রঃ pbspmbrm


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি-র মতাদর্শগত তত্ত্বগত মুখপত্র “লালঝাণ্ডা”

poster

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি-র এর মতাদর্শগত তত্ত্বগত মুখপত্র “লালঝান্ডা”

(মাওবাদী বলশেভিক পুনর্গঠন আন্দোলনMBRM কর্তৃক প্রকাশিত প্রচারিত)

 

লালঝাণ্ডা – ১

লালঝাণ্ডা – ২

(উপরের “লালঝাণ্ডা- ” এবং “লালঝাণ্ডা- ক্লিক করে পুস্তকসমূহ পড়াdownload করা যাবে)

সূত্রঃ pbspmbrm


‘ভাষাগত-ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়ান’ -MBRM

poster

ভাষাগত-ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের ওপর নির্মম ধ্বংসাত্মক নিপীড়ন বেড়েই চলছে। তা বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভাষাগত সংখ্যালঘু জনগণ বিশেষত উর্দুভাষি জনগণ- যাদেরকে বিহারী বলা হয় – তারা তো এখন আর মানুষ বলেই গণ্য হচ্ছেন না। তারা এখন না এদেশের নাগরিক বলে বিবেচিত হচ্ছেন, না পাকিস্তান বা ভারতের বিহারের নাগরিক বলে গণ্য হচ্ছেন। এসব নাগরিকত্বের তথাকথিত বিচারের অজুহাতে তারা যে মানুষ – সেই বিবেচনার প্রধান ও মূল মাপকাঠিটাই এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব অন্যায় ও গুরুতর অপরাধ। তারা মানুষ, এখান থেকেই সব বিচার ও বিবেচনা শুরু করা আমাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। তারপর শ্রেণিবিভক্ত মানুষের সমাজে শ্রেণিসংগ্রামের মাপকাঠিই সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে। এসব মাপকাঠির বিচারে উর্দুভাষি জনগণ হচ্ছেন আমাদের মতোই মানুষ এবং তারা হচ্ছেন আমাদের দেশের শ্রেণিবিভক্ত সমাজের সবচেয়ে নিপীড়িত মানুষের অংশ। আর এ কারণেই তারা হচ্ছেন এদেশের অন্যান্য নিপীড়িত জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ ও সংগ্রামের প্রকৃত বন্ধু। এভাবেই আমাদেরকে দেখতে হবে ; তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে; তাদেরকে কাছে টানতে হবে ; তাদের সাথে একাত্ম হতে হবে ; তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন, সংগঠিত ও শ্রেণিসংগ্রামে সক্রিয় করতে হবে ; এবং তাদের দুঃসহ মানবেতর জীবনের অবসানের জন্য সামর্থের মধ্যে সবকিছু করতে হবে। বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগণ হচ্ছেন এদেশের উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ। ধর্মীয় কারণে এদের ওপর যে সব নিপীড়ন চলছে – তা এদেশের বিরাজমান শ্রেণিগত নিপীড়নেরই একটি রূপ ও অংশ মাত্র। তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও বিকশিত করাটা হচ্ছে এদেশের বিপ্লবী শ্রেণিসংগ্রামকে গড়ে তোলা ও বিকশিত করারই অবিচ্ছেদ্য একটি রূপ ও অংশ। এ বিষয়ে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের ওপর চালিত নিপীড়নের বিরোধিতা করাটাকে আমাদের নেতৃত্বাধীন প্রধান ও মূল শ্রেণিসংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য একটি রূপ ও অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং সেভাবেই তাকে পরিচালনা করতে হবে। জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের ওপর বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের ওপর যে নির্মম জাতিগত নিপীড়ন চলছে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে নিজ দেশে পরবাসী বানানো এবং নিজ ভূখণ্ডে তাদেরকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা। যার মধ্য দিয়ে তাদের নিজস্ব স্বাধীনতা ও স্বকীয়তাকে পরিপূর্ণভাবে শেষ করে দেয়া। এসব,পৃথক জাতিগত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জনগণকে নিজেদের অধীন তথা পরাধীন ও গোলাম বানানোর অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। একে প্রতিরোধ করা এবং এর বিরুদ্ধে জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের সংগ্রামকে সমর্থন ও সহযোগিতা করাটা হচ্ছে এদেশের সর্বহারা বিপ¬বের অগ্রগতির জন্যই প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য কর্তব্য। এদেশের ভাষাগত, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের ওপর বিরাজমান ও বিকাশমান নিপীড়নের জন্য প্রধানভাবে দায়ী হচ্ছে মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দালাল, আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিবাদের প্রতিনিধিত্বকারী ও সামন্তবাদের রক্ষক আমলা মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াশ্র্রেণী। এবং তাদের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি। এই শ্রেণিও তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থাই হচ্ছে আমাদের দেশের সকল প্রকার শ্রেণিগত, ভাষাগত, জাতিগত ও ধর্মীয় নিপীড়নের মূল উৎস ও ভিত্তি। যার প্রধান পাহারাদার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী। এদেরই সহযোগী হচ্ছে ভাষাগত, ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যকার উঠতি ধনী দালাল শ্রেণিটি। তাই বৃহত বাঙালি তথাকথিত মুসলিম আমলা মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণি ও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্র্ ব্যবস্থাকে উৎখাত করে নয়া বিপ্লবী রাষ্ট্রযন্ত্র ও বিপ্লবী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শ্রেণিগতভাষাগত-জাতিগত-ধর্মীয় নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত জনগণের ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবী যুদ্ধকে গড়ে তোলে ও বিকশিত করেই কেবলমাত্র বৃহত বাঙালি নিপীড়িত শ্রেণি ও জনগণের সাথে সাথে অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগণেরও প্রকৃত মুক্তি আসতে পারে- নতুবা নয়। এই কথাটিই আমরা সর্বদা বলে এসেছি। এবং এই লক্ষ্যকে পূরণের জন্যই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি। তাই পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির লাল পতাকাই হচ্ছে এদেশের শ্রেণিগত-ভাষাগত-জাতিগত-ধর্মীয় নিপীড়িত জনগণের মুক্তির পতাকা। তাই এই পতাকার পিছনে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং তার নেতৃত্বে জোরালো সংগ্রাম গড়ে তোলাটাই হচ্ছে এদেশের সকল নিপীড়নের অবসানের একমাত্র উপায় বা পথ। ভাষাগত-ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের জন্য যে নীতিকে তুলে ধরেছিলেন আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদার, এবং যা প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছিল আমাদের পার্টির প্রস্তুতি সংগঠন পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন-এর ১৯৬৮ সালের ৮ জানুয়ারির থিসিসে, তা এখনো বলবত রয়েছে এবং তাকেই আমরা অনুশীলন করি ও করব। এসব নীতিগত অবস্থানসমূহ হচ্ছে :

) বিচ্ছিন্ন হবার অধিকারসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিকে স্বায়ত্বশাসন ও বিভিন্ন উপজাতিকে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন দেয়া হবে।

) সকল অবাঙালি দেশপ্রেমিক জনগণের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বিকাশের পূর্ণ সুযোগ দেয়া হবে।

) জনগণের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করা হবে। এর সাথে আমরা শুধুমাত্র একটি নীতিকেই সংযুক্ত করেছি এবং তা হচ্ছে “শ্রেণিগত-ভাষাগত-জাতিগত-ধর্মীয় নির্বিশেষে সকলের অধিকার ও মর্যাদা হবে সমান”।

এটাই হবে আমাদের পার্টির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত নয়াগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার প্রজাতন্ত্রের অন্যতম একটি প্রধান নীতিগত ভিত্তি। এসব নীতিগত ও দৃষ্টিভঙ্গিগত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আমরা সকলের প্রতি আহ্বান জানাই- আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, ভাষাগত-ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণসহ সকল নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়াই, তাদের পক্ষ নেই, তাদেরকে সর্বতোভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করি এবং তার মধ্য দিয়ে শ্রেণিগত-ভাষাগত-জাতিগত-ধর্মীয় নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত জনগণের একটি ঐক্যবদ্ধ অপরাজেয় গণযুদ্ধ গড়ে তুলি। যার লক্ষ্য হবে অবশ্যই নয়াগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের লক্ষ্যে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলা।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি(মাওবাদী বলশেভিক পুনর্গঠন আন্দোলন-MBRM)

শেষ সপ্তাহ, নভেম্বর ২০০১

সূত্রঃ https://pbspmbrm.files.wordpress.com/2012/09/spark-collections.pdf


বাংলাদেশের গণযুদ্ধে শহীদ কমরেড ‘জয়দেব’

কমরেড জয়দেব

কমরেড জয়দেব

কালিগঞ্জ/খুলনা

কমরেড জয়দেব বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন। ’৭৩-’৭৪ সালে সিরাজ সিকদারের পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বে দেশব্যাপী সশস্ত্র সংগ্রামের প্রভাবে তিনি সর্বহারা পার্টিতে যুক্ত হন। যোগদানের পর থেকেই পার্টির নেতৃত্বাধীন সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভুমিকা রাখেন।

সিরাজ সিকদার শহীদ হওয়ার পর জয়দেব সর্বহারা পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।  কিন্তু বিচ্ছিন্ন অবস্থায়ও তিনি পার্টির বিপ্লবী রাজনীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেন এবং বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি অত্যন্ত বলিষ্ঠ ছিলেন। এ সময়ে প্রকাশ্যভাবে তিনি ইউপিপি’র ব্যানারে কাজ করতেন। এই পর্যায়ে জয়দেব গ্রেফতার হন।

জেলখানার বন্দীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে জয়দেব আপোষহীন ভূমিকা রাখেন। ৮০ সালে রাজশাহী-খুলনা-ঢাকা সহ সারা দেশের জেলখানাগুলোতে দ্রুত বিচার নিস্পত্তি, খাবারের মান উন্নত, পরিবেশের উন্নয়ন, কুখ্যাত ব্রিটিশ জেল কোড বাতিল প্রভৃতি দাবীতে ব্যপক আন্দোলন গড়ে উঠে।

খুলনায় জেল আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে জয়দেব ছিলেন অন্যতম। দাবী আদায়ের জন্যে খুলনা জেলের সকল বন্দীরা অনশন ধর্মঘট করলেও গণতন্ত্রের গলাবাজীওয়ালা বিএনপি’র জিয়াউর রহমান সরকার বন্দিদের সাথে কোন আলোচনা না করে দমন-নির্যাতন চালাতে থাকে। এ অবস্থায় বন্দীরা সরকারকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করার জন্য ২৪জন জেল কর্মচারীকে বন্দী হিসেবে আটক করেন।  বন্দীরা বিএনপি সরকারের প্রতিনিধিসহ বিরোধী দলের নেতাদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বিরোধী দলসহ সরকার এই আলোচনার প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান(খালেদা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী)- এর উপস্থিতিতে ২১শে অক্টোবর রাতে জেলখানায় হামলা করে নারকীয় গণহত্যা সংগঠিত করে। পরের দিন সরকারী প্রেস নোটে ৪০জন বন্দির হত্যার কথা বলা হলেও বেসরকারি মতে ২-৩শ বন্দীকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, খুলনা জেল সরকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর পুরো জেলখানা তল্লাশি করে বিপ্লবী জয়দেবকে ধরে এনে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। এই জেল হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বন্দিদের প্রতিরোধের নেতা জয়দেব আগামী বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।


পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল)-এর উদ্দেশ্যে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি (সিসি)’র খোলাচিঠি

Maoist-Flag

পূবাকপা (এম-এল)-এর সাথে সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মী-জনগণের উদ্দেশ্যে পূবাসপা (সিসি)’র খোলাচিঠি

কমরেডগণ,

লাল সালাম।

বিগত শতাব্দীর ’৬০-এর দশকের শেষ দিকে রুশ-চীন মহাবির্তক, চেয়ারম্যান মাওয়ের নেতৃত্বে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব (জিপিসিআর) এবং কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে ভারতের নকশালবাড়ীর সশস্ত্র কৃষক অভ্যুত্থানের প্রভাবে আমাদের দেশে মাওবাদী (তখন “মাও চিন্তাধারা” বলা হতো) আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। সেই আন্দোলনের অংশ হচ্ছে আপনাদের পার্টি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) এবং আমাদের পার্টি পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর রুশ-ভারতের দালাল শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী-বাকশালী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ’৭১-’৭৪ সালে এই দুই পার্টিসহ অন্যান্য মাওবাদী পার্টি ও সংগঠনসমূহ গৌরবময় সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করেছিল। এই সংগ্রামেই আমাদের ও আপনাদের পার্টি-নেতা কমরেড সিরাজ সিকদার ও কমরেড মনিরুজ্জামান তারাসহ অনেক মাওবাদী শহীদ হন।

’৭৬ সালে চেয়ারম্যান মাওয়ের মৃত্যুর পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের মহাসংকটকালে মাওবাদ অনুসারী কোন কোন সংগঠন ও বেশিরভাগ নেতা সংশোধনবাদে গড়িয়ে পড়ে। কোন কোন সংগঠন বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু আপনাদের ও আমাদের এই দুই পার্টিসহ কমরেড ননী দত্ত (ক. মোশতাক)-এর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মা-লে) মাওবাদী পতাকা, বিশেষত মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। এই প্রক্রিয়ায়

’৮০-র দশকে আমাদের পার্টি মাদারীপুর-শরীয়তপুর-নরসিংদী-ময়মনসিংহ-রাজবাড়ী-উত্তরাঞ্চলসহ ২৪টি জেলায় এবং ’৯০-এর দশকে আপনাদের পার্টি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে দৃষ্টিকাড়া সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলে। যদিও শাসকশ্রেণি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের দমন-নির্যাতন এবং মাওবাদী আন্দোলনের মধ্যে বিরাজমান ভুল-ত্রুটির কারণে সেই সংগ্রাম পরাজিত হয়।

’৭৯ সাল থেকেই রাজনীতি ও মতাদর্শকে কেন্দ্রে রেখে আমাদের সংগঠন ধাপে ধাপে তত্ত্ব-অনুশীলন-তত্ত্ব- এই মালেমা প্রক্রিয়ায় অতীত সংগ্রামের সারসংকলন চালাতে থাকে। ইতিপূর্বে ’৮০-র দশকেই আমাদের পার্টি বিশ্ব মাওবাদীদের ঐক্য-কেন্দ্র আর.আই.এম. (রিম) এবং দক্ষিণ এশিয়ার মাওবাদীদের সমন্বয় কমিটি কমপোসা’র সদস্য হয়েছিল। এই আন্তর্জাতিকতাবাদী নতুন ভূমিকাও আমাদের সারসংকলন কাজকে বিরাটভাবে প্রভাবিত করে।

 স্বাভাবিকভাবে এই সারসংকলনকে কেন্দ্র করে পার্টিতে দুই লাইনের সংগ্রামও চলে। একবার পার্টি বড় আকারে বিভক্তও হয়। এসবেরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত পার্টির একটি জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে “মাওবাদী আন্দোলনের চার দশকের সারসংকলন” নামে একটি “নতুন থিসিস” আমাদের পার্টি গ্রহণ করেছে। যার ভিত্তিতে এখন দেশের সমগ্র মাওবাদী আন্দোলনকে পুনর্গঠন করে একটি নতুন ধরনের ঐক্যবদ্ধ মাওবাদী পার্টি গঠন এবং নতুন ধরনের গণযুদ্ধ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা আমাদের পার্টি চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে আপনাদের পার্টি পশ্চিম অঞ্চলের সংগ্রাম, বিপর্যয় ও পরাজয়ের পরবর্তীতে বিভিন্ন বিতর্কের প্রক্রিয়ায় তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ বিভক্তিতে লাইনগত সংগ্রাম খুব একটা স্পষ্টভাবে উঠে আসেনি বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, যদিও পরবর্তীতে রাজনৈতিক-মতাদর্শগত লাইনগত প্রশ্নাবলীর পার্থক্য কিছু কিছু স্পষ্ট হতে থাকে।

এই বিভক্ত অংশগুলোর মধ্যে ক. রাকেশ কামাল (ক. রাকা)-এর নেতৃত্বাধীন “লাল পতাকা” গ্রুপ নামের অংশটি কমপোসা’য় যোগদান করে এবং পূবাকপা’র বিগত সংগ্রামের সারসংকলন প্রক্রিয়া শুরু করে। সে প্রক্রিয়ায় ক. রাকা “সারসংকলন প্রতিবেদন (প্রাথমিক) খসড়া রূপরেখা” নামক একটি দলিল প্রণয়ন করেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দলিলটি সিসি কর্তৃক অনুমোদন এবং পার্টি-ব্যাপী ব্যাপক কোন আলোচনার পূর্বেই তিনি র‌্যাবের ভুয়া ক্রসফায়ারে শহীদ হন। এর আগেই ক. মোফাখ্খার চেীধুরী এবং ক. তপন একইভাবে শহীদ হন। শুধু এই নেতৃত্বগণই নন, আপনাদের পার্টির তিনটি কেন্দ্রের অধিকাংশ নেতৃত্বই শত্রুর হাতে শহীদ হন অথবা গ্রেফতার হন। এভাবে, আমরা ধারণা করি যে, তিনটি কেন্দ্রই অকার্যকর হয়ে যায়।

এভাবে আপনাদের পার্টি গুরুতর সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। কর্মী-জনগণ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন ও দিশাহীন হয়ে পড়েছেন। কোন কেন্দ্রই পার্টির নেতৃত্বাধীন সংগ্রামকে অব্যাহত রাখতে পারেনি বা সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি। বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও সুসংগঠিত কোন সাংগঠনিক কাঠামো পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

 পার্টি-পুনর্গঠনের বিষয়ে আমাদের জানা কিছু পর্যবেক্ষণ এখানে তুলে ধরছি

– ক. চেীধুরী শহীদ হওয়ার পর সেই কেন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং এখনও তার লাইনের অনুসারী দাবিদার একটি ধারাকে ক্রিয়াশীল দেখা যায়। আমাদের জানামতে এই ধারাটি এখনো পর্যন্ত পার্টির কোন দলিলপত্র-পত্রিকা-লিফলেট কিছুই প্রকাশ করেনি। এরা সাংস্কৃতিক গণসংগঠনসহ বিভিন্ন ধরনের গণসংগঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম চালান। যা কমরেড চেীধুরীর লাইনের সাথে মেলে না। আবার তারা চেীধুরী-লাইনের কোন সারসংকলনের কথাও বলছেন না।

-ক. রাকেশ কামাল এবং তার পরবর্তী নেতৃত্ব ক. এনামুল শহীদ হওয়ার পর তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এমন কয়েকজন কমরেড শত্রুর দমন থেকে আত্মরক্ষার জন্য কৌশল হিসেবে পার্র্র্টির নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)” নামে সংগঠন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একটা বৈঠকের পর তাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকেনি। এই ধারাতেই অন্য একটি অংশ ২০১১ সালে “২২ মে শহীদ দিবসে” (ক. তারার মৃত্যুবার্ষিকীতে) “পূর্ব বাংলার মাওবাদী” নাম দিয়ে সংগঠনের একটি পোস্টার প্রকাশ করেছিল। পরে আর এই নামে কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। এই ধারারই অন্য একটি অংশ ১৯/০৩/’১১ তারিখে সার্কুলার- ১ নামে একটি দলিল প্রকাশ করেছিল যাদের কেন্দ্র পূবাকপা (মা-লে) (লাল পতাকা) নামটি উল্লেখ করেছে। এতে ক. রাকা’র সারসংকলনের ভিত্তিতে পার্টি পুনর্গঠনের কথা বলা হলেও বাস্তব অনুশীলনে সেই লাইনের কোন প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না বলে আমাদের মনে হয়। এই সার্কুলার অনুসারীরা এখনো সক্রিয়। এরা এখনো খতম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন। তাদের কৌশল হচ্ছে, শত্রুর চাপ এড়ানোর জন্য কিছু অনিবার্য খতম করলেও তা প্রচার করেন না। পার্টির দায় স্বীকার করেন না।

-সম্প্রতি আরো একজন নেতৃত্ব যিনি অতীতে জনযুদ্ধের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি পার্টি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন বলে শোনা যায়। যতদূর জানা যায় তিনিও মতাদর্শগত-রাজনৈতিক লাইনকে কেন্দ্রবিন্দু করছেন না। বরং পূর্বের ধারাতেই সামরিক এ্যাকশন, তথা খতমকে কেন্দ্রবিন্দু করছেন। তার বা তার অনুসারীদের পক্ষ থেকে এখনো কোন দলিলপত্র প্রকাশ হয়েছে বলে আমরা জানি না।

এইসব উদ্যোগে বিপ্লবের প্রতি গভীর আন্তরিকতা থাকলেও সেগুলো মাওবাদী রাজনীতি ও মতাদর্শকে চাবিকাঠি হিসেবে আঁকড়ে ধরছে না বলেই আমাদের ধারণা। পার্টি-গঠনের ৪০ বছর পর পার্টির আজকের বিপর্যস্ত ও ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার কারণ অনুসন্ধানের জন্য লাইনগত সারসংকলনের ভিত্তিতে পার্টি-পুনর্গঠনকে কেউই কেন্দ্রবিন্দু করছেন না।

মনে রাখতে হবে পূবাকপা একটা মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ছিল। যার রাজনীতিক লক্ষ্য ছিল নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব, সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রধান ধরনের সংগ্রাম ছিলো সশস্ত্র সংগ্রাম। তার মতবাদ ছিল মালেমা। সেই পার্টি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে শত্রু-দমনে। এ অবস্থায় প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে সেই পার্টিকে গঠন বা পুনর্গঠন করা। যেহেতু সশস্ত্র সংগ্রামের পার্টি তাই আজকের বাস্তব ও আত্মগত অবস্থা বিবেচনা করে পার্টি পুনর্গঠন করতে হবে। এখন লাইন বিনির্মাণ তথা লাইনগত সারসংকলন না করে এই পার্টির পক্ষে আর ইতিবাচকভাবে এগুনো সম্ভব নয় বলেই আমরা মনেকরি। ঠিক যে কাজটিতে হাত দিয়েছিলেন ক. রাকা ৫ বছর আগেই। এবং তার একটি বড় ও মৌলিক কাজ তিনি সম্পন্ন করে গিয়েছিলেন। অথচ বিগত ৫ বছরে সেকাজে আর কোন অগ্রগতি দূরের কথা, সে কাজটিকেই প্রায় বিস্মৃত করে দিয়ে পুরনো ধারায় বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত এ্যাকশনের প্রচেষ্টা এই পার্টিকে কোন অগ্রগতিই এনে দিতে পারে না।

আজকে সংগ্রামের/এ্যাকশনের নেতৃত্ব কে দিবে? নিশ্চয়ই পার্টি। সেই পার্টি কোথায়? চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ বলেছিলেন, “যদি বিপ্লব করতে হয়, তাহলে অবশ্যই একটা বিপ্লবী পার্টি থাকতে হবে। একটা বিপ্লবী পার্টি ছাড়া, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বিপ্লবী তত্ত্ব এবং বিপ্লবী রীতিতে গড়ে ওঠা একটা বিপ্লবী পার্টি ছাড়া, শ্রমিক শ্রেণি ও ব্যাপক জনসাধারণকে সা¤্রাজ্যবাদ ও তার পদলেহী কুকুরদের পরাজিত করতে নেতৃত্বদান করা অসম্ভব।” (উদ্ধৃতি পৃঃ ২-৩)। কয়েকটি ব্যক্তি হলেই পার্টি হয় না। প্রথমত একটি সামগ্রিক লাইন তার থাকতে হবে, তার একটি কেন্দ্র ও গঠন কাঠামো থাকতে হবে। একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেগুলো সুদূর অতীতে আপনাদের ছিল। তার ভিত্তিতে সংগ্রামও হয়েছে। কিন্তু তার ভাল-মন্দ সবই প্রকাশিত হয়ে সেসব অতীতের বিষয় হয়ে গেছে। এখন পরিবর্তিত বাস্তব ও আত্মগত অবস্থার প্রেক্ষিতে সেসবকেই নতুন করে নির্মাণ না করলে পার্টির কার্যত কোন সঠিক লাইন থাকতে পারে না। আর এ অবস্থায় কোন পার্টিও গড়ে উঠতে পারে না। তাহলে কে করবে এ্যাকশনের নেতৃত্বদান?

কমরেডগণ,

এটা খুবই জটিল পরিস্থিতি। একটা বিকাশমান সংগ্রাম পরাজিত হয়েছে। পার্টি যখন সংগ্রামে ছিল তখনকার কৌশল-পরিকল্পনা আজকের বিপর্যয়ের বাস্তবতায় আর কার্যকর করা সম্ভব নয়। আজকের আত্মগত অবস্থা মূল্যায়নের ভিত্তিতে নতুন করে কৌশল-পরিকল্পনাও করতে হবে।

পূবাকপা’র বিচ্ছিন্ন কমরেডদেরকে আমরা মনে করি এ দেশের মাওবাদী আন্দোলনেরই অংশ। আমরা ভিন্ন ভিন্ন পার্টি থেকে চল্লিশ বছরের বেশি এই ভূখণ্ডে সংগ্রাম করছি। পূবাকপা এখন শত্রুর দমনে বিপর্যস্ত। আমাদেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শত্রুপক্ষ এই দেশ থেকে মাওবাদী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আন্দোলনকে রক্ষা ও বিকশিত করতে হবে। সেজন্য আমাদের অতীত সংগ্রামের পর্যালোচনা-সারসংকলনের ভিত্তিতে নতুন পরিকল্পনার ভিত্তিতে আগাতে হবে। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে পূবাকপা’র বিচ্ছিন্ন-বিপর্যস্ত কমরেডদেরকে পরামর্শ দেয়া, সহযোগিতা করার দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা এই খোলাচিঠি প্রকাশ করছি, যাতে আমরা কিছু পরামর্শও উল্লেখ করতে চাই। আমরা এসব পরামর্শ আপনাদের উপর চাপিয়ে দিতে চাই না। লাইন-নীতি-পরিকল্পনা নির্ধারণ করা প্রধানত আপনাদেরই দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ যদি কোন সহায়তা করে সে আশাতেই আমরা এসব কথা বলছি।

কমরেডদেরকে মনে রাখতে হবে নানান জায়গা থেকে নানান ধরনের মতামত আসবে। সুবিধাবাদী-বিলোপবাদী মতও আসবে। মালেমা’র বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে তা গ্রহণ বা বর্জন করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না সেক্ষেত্রে আপনাদের বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গিই আপনাদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে, অন্য কেউ নয়।

* সংকীর্ণতাবাদী চেতনা থেকে বিভক্ত কোন কেন্দ্র নয়- সমগ্র পূবাকপা-কে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে, যা কিনা হবে বাস্তবে এদেশের সামগ্রিক মাওবাদী আন্দোলনের পুনর্গঠনেরই অংশ।

* পুনর্গঠনের জন্য প্রথম আঁকড়ে ধরতে হবে লাইন বিনির্মাণকে, যার মতাদর্শগত ভিত্তি হবে মালেমা।

আরও নির্দিষ্টভাবে এজন্য-

– বিগত শতকে শেষাংশে আন্তর্জাতিক মাওবাদীদের ঐক্যকেন্দ্র “রিম” (যা এখন কার্যত বিলুপ্ত) ও তার সদস্য

   গুরুত্বপূর্ণ পার্টিগুলোর মূল্যায়ন ও সারসংকলনকে বিবেচনায় নেয়া;

– ক. সিএম প্রতিষ্ঠিত ভারতের মাওবাদী আন্দোলনের সারসংকলনকে বিবেচনায় নেয়া;

– পূবাকপা’র সংগ্রাম সম্পর্কে পূবাসপা’র পর্যালোচনাকে বিবেচনায় নেয়া;

– ক. রাকেশ কামালের সারসংকলনকে বিবেচনায় নেয়া;

– অন্য যে কোন মত আসলে সেগুলোকেও বিবেচনায় নেয়া।

* এই দৃষ্টিভঙ্গিতে নি¤œতমভাবে নি¤েœর মৌলিক বিষয়গুলোতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করা-

– মতবাদগত;

– গণযুদ্ধ;

– আর্থ-সামাজিক;

– আন্তর্জাতিক লাইন।

* লাইন-বিনির্মাণ ও সারসংকলনকে কেন্দ্রবিন্দু করার জন্য ও তার স্বার্থে পুরনো ধারার সকল অনুশীলনকে স্থগিত করা উচিত বলে আমরা মনেকরি। যার মাধ্যমে শত্রুর দমনকে এড়িয়ে নিজেদের অবশিষ্ট শক্তিকে সংরক্ষণ করা যায় এবং তাকে সুসংগঠিত করা যায়।

যারা এভাবে পার্টিকে পুনর্গঠনে আগ্রহী তাদের মানোন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু করা। এজন্য নিম্নতম পাঠ্যসূচি ঠিক করা। পাঠ্যসূচির লক্ষ্য হবে- মৌলিক মালেমা-কে আত্মস্থ করা এবং তার ভিত্তিতে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোতে অধ্যয়ন, আলোচনা, পর্যালোচনাকে বিকশিত করা এবং একটি একটি করে বিষয়গুলোতে মতাবস্থান গ্রহণ করা।

* লাইন-বিনির্মাণের প্রক্রিয়ায় বাস্তব সাংগঠনিক-সাংগ্রামিক অনুশীলন কী হবে তাও নির্ধারিত থাকতে হবে। এজন্য যা যা করা যেতে পারে বলে আমাদের ধারণা-

– অবিলম্বে একটি কেন্দ্রীয় পরিচালনা সেল গঠন করে সমগ্র কাজের সূচনা করা। পরবর্তীতে কোন প্রতিনিধি সভার মাধ্যমে তাকে কমিটিতে রূপ দেয়া যেতে পারে।

– একটি বা দু’টি অঞ্চলকে নির্দিষ্ট করে সেখানে শক্তি কেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে ঘাসমূলের সংগঠন গড়ার প্রক্রিয়া চালানো।

– উপরোক্ত কাজকে ভিত্তি করে দেশব্যাপী বিচ্ছিন্ন যোগাযোগগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করা। যতটা সম্ভব সেটা করা। কিন্তু তাকে কেন্দ্রবিন্দু না করা।

– রাজনৈতিক প্রচারকে গুরুত্ব দিয়ে পার্টিজান ও গেরিলা ধরনের কর্মী গড়ে তোলা।

– আর্থিক সামর্থ্য ও যোগ্যতা বিচার করে একজন একজন করে সার্বক্ষণিক কর্মী গড়ে তোলা; সার্বক্ষণিক কর্মীদের নিয়োগদানে সংগঠন-সংগ্রামের রণনৈতিক পরিকল্পনাকে ভিত্তি করায় গুরুত্ব দান।

– শ্রেণি লাইনকে আঁকড়ে ধরে আর্থিক পলিসি নির্ধারণ করা। পেশা, চাঁদা ও ব্যক্তিগত সম্পদের উপর নির্ভর করা। জরিমানা, শত্রুর সম্পত্তি দখল- ইত্যাকার সামরিক যুগের পদ্ধতিকে এড়ানো।

– নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার উপর অত্যধিক জোর দেয়া। শত্রুর অনুপ্রবেশকে ঠেকানো, আবার বেহুদা কাউকে শত্রু মনে না করা।

* উপরোক্ত কাজগুলোকে ভিত্তি করে এগুলে সামরিক এ্যাকশনের স্থানটি কী হবে সেটা বাইরে থেকে আমাদের পক্ষে নির্ধারণ করা সম্ভব নয় ও উচিত নয়। একটি সশস্ত্র সংগ্রামের পার্টি হিসেবে কোন কোন অঞ্চল/এলাকায় নিরস্ত্র কাজ আত্মঘাতী হতে পারে। আবার বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত সামরিক এ্যাকশন আরো বড় বিপর্যয়কর হতে পারে।

তবে এটা সহজবোধ্য যে, লাইন-বিনির্মাণ ও পার্টি-পুনর্গঠনের কাজ একটা পর্যায় পর্যন্ত সম্পন্ন না করে সামরিক কাজ/এ্যাকশনকে কেন্দ্রবিন্দু করাটা সঠিক হবে না বলেই আমরা মনে করি। কারণ, একবার শুরু করলে তা থেকে পিছন ফেরা যাবে না। সর্বোপরি, সংগ্রাম ও এ্যাকশনের মতাদর্শগত-রাজনৈতিক লাইন ও রণনৈতিক পরিকল্পনা কী হবে, যুদ্ধের/সশস্ত্র সংগ্রামের সামরিক লাইনের রূপরেখাটি কী হবে তা খুবই সুবিবেচিতভাবে নির্ধারণ না করে এখন আর আপনাদের পক্ষে কোন ইতিবাচক সংগ্রাম গড়া সম্ভব হবে না বলেই আমরা মনেকরি। তাই, আজকের পরিস্থিতিতে কোন্ অঞ্চল/এলাকাকে আপনারা কেন্দ্রীভূত করার জন্য বেছে নেবেন, এবং সেখানে কী ধরনের কাজ করবেন সেটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে নির্ধারণ করতে হবে।

উপরোক্ত অনেক বিষয়েই আমরা আরো সুনির্দিষ্ট কথা বলতে পারি, আলোচনা করতে পারি, যা এই খোলাচিঠিতে সম্ভব নয়। আমরা মনেকরি, শুধু আমাদের সাথেই নয়, অন্য সকল আন্তরিক মাওবাদী সংগঠন, ব্যক্তি ও শক্তির সাথেই এসব বিষয়েও আপনাদের প্রচুর আলোচনা ও মত বিনিময় করা উচিত। যাতে করে আপনারা সবচাইতে সঠিক নীতি-পরিকল্পনা ও পদ্ধতিগুলো অনুশীলনে নিয়ে আসতে পারেন।

** পরিশেষে বলতে চাই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রায় ৪২ বছর পার হয়েছে। এই সময়ে দেশ শাসন করেছে বাঙালি বড় ধনী শ্রেণির প্রতিনিধি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত এবং সেনা-আমলারা। এরা ধনীক শ্রেণি এবং তাদের প্রভু মার্কিনের নেতৃত্বে সা¤্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের স্বার্থ রক্ষা ছাড়া শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তসহ ব্যাপক জনগণের জন্য কোন কিছুই করেনি। বরং সব সরকারই বিপ্লবীদের, প্রতিবাদকারীদের হত্যা করে বিপ্লবী আন্দোলন দমন করে চলেছে। তাই, বিপ্লবীদের বিগত সংগ্রামের সারসংকলনের ভিত্তিতে নতুনভাবে সংগঠিত হতে হবে। উচ্চতর একটি লাইন, ঐক্যবদ্ধ ও নতুন ধরনের একটি পার্টির নেতৃত্বে একটা সত্যিকার সফল গণযুদ্ধ গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই।

পিবিএসপি/সিসি

তৃতীয় সপ্তাহ, নভেম্বর, ২০১৪

নোট– পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল)-[পূবাকপা (এম-এল)

           পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি (সিসি) [পূবাসপা (সিসি)]

সূত্রঃ http://pbsp-cc.blogspot.com/2016/03/blog-post_6.html


বাংলাদেশঃ পাবনায় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকে খতম করেছে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্যরা

maoist1-655x360

পাবনা আটঘরিয়ার উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নে ওয়ার্কার্স পার্টি, পাবনা জেলা শাখার সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় কৃষক ক্ষেত মজুর সমিতির আটঘরিয়া উপজেলা শাখার সহ সভাপতি আব্দুর রশিদকে(৪০) গুলি করে খতম করেছে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্যরা। ২০শে জানুয়ারি বুধবার রাত ৯টার দিকে চাচকিয়ার দিয়ারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জিএম মিজানুর রহমান জানান, সন্ধার দিকে রশিদ তার দুলাভাই রুহুল এর বাড়িতে বেড়াতে যায়। এরপর ফিরে আসার সময় দিয়ারপাড়া নামকস্থানে পৌছালে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন সর্বহারা গ্রুপের চিহিৃত সদস্যরা তার বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেয় রশিদের মৃত্যু হয়। পুলিশ রাত ৯টায় ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করে আটঘরিয়া থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক রাউন্ড তাজা গুলি ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করে।

আবদুর রশিদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টি পাবনা জেলা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে স্থানীয় চরমপন্থী সর্বহারারা তাঁকে বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমিরুল ইসলাম নামের একজনকে আটক করে। নিহত রশিদ আটরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের চাঁচকিয়া মধ্য পাড়া গ্রামের মৃত বাহাদুর প্রামানিতের ছেলে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমিরুল ইসলাম নামের একজনকে আটক করেছে।

সুত্রঃ  

http://www.bd-pratidin.com/country/2016/01/20/122120

http://desherbarta.com/article.php?home/8419

http://www.khabarpatrabd.com/details.php?nid=50060

http://amarbangladesh-online.com/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%80-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%97/#.VqNMV5p97Mw