কুর্দি জাতীয় মুক্তিকামী সংগঠন ‘পিকেকে’ এর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে তুরস্কের একটি আদালতের নির্দেশে পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক অ্যাসলি এরদোয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কুর্দিপন্থি সংবাদপত্র ওজগুর গানডেম এর দুই ডজনেরও বেশি সাংবাদিকসহ অ্যাসলিকে আটকের তিনদিন পর শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে হ্যাবেরতুর্ক সংবাদপত্র।
কুর্দি জাতীয় মুক্তিকামী সংগঠন সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) পক্ষে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর সূত্র ধরে মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে ৭,৫০০ প্রচার সংখ্যার সংবাদপত্র ওজগুর গানডেম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এর পরপরই গানডেমের ২৫ জন সাংবাদিককে পিকেকে-কে সমর্থন করার সন্দেহে আটক করা হয়।
ঔপন্যাসিক অ্যাসলি এরদোয়ান সংবাদপত্রটির উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য। তার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য’ ও ‘জাতীয় ঐক্য দুর্বল করার’ প্রাথমিক অভিযোগ আনা হয়েছ।
তাকে ইস্তানবুলের একটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারপন্থি ওয়েবসাইট হ্যাবেরতুর্ক। অন্যান্য গণমাধ্যমেও একই ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ওজগুর গানডেমের দুই সম্পাদক এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে হ্যাবেরতুর্ক।
১৫ জুলাইয়ের এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কজুড়ে ঘোষণা করা জরুরি অবস্থার মধ্যে ১৩০টিরও বেশি গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এতে তুরস্কে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠী।
ওজগুর গানডেমের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার সঙ্গে জরুরি অবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন এক তুর্কি কর্মকর্তা। তবে গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এই পদক্ষেপকে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া ব্যাপক দমনপীড়নের অংশ হিসেবেই দেখছে।
এই সংবাদপত্রটির সাংবাদিকদের আটকের মধ্যদিয়ে তুরস্কে আটক গণমাধ্যম কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (ইএফজে)। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠানো শীর্ষ দেশ হয়ে উঠেছে তুরস্ক।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পিকেকের সঙ্গে তুর্কি সরকারি বাহিনীর চলমান সংঘর্ষের ঘটনাগুলো তুলে ধরতো ওজগুর গানডেম। ২০১৪ সাল থেকে সংবাদপত্রটির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ডজনেরও বেশি তদন্ত হয়েছে, জরিমানা করা হয়েছে এবং এর প্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কুর্দিস্তান ও তুরস্কের ১০টি বিপ্লবী সংগঠন যৌথ ভাবে ‘Peoples’ United Revolutionary Movement প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। একটি গেরিলা জোনের মধ্যে এক যৌথ সংবাদ সভায় ১০টি বিপ্লবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তাদের জোটের ঘোষণা দেন। সভায় ফ্যাসিবাদী AKP সরকার ও তুর্কি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সকল এলাকায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে তাদের বিপ্লবী পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়।
এসময় পিকেকে’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ‘দুরান কাল্কান’ লিখিত বিবৃতি তুলে ধরেন এবং কুর্দিস্তান ও তুরস্কের ঐক্যবদ্ধ ১০টি বিপ্লবী সংগঠনের নাম ঘোষণা করেন। সংগঠনগুলো হলোঃ TKP/ML, PKK, THKP-C/MLSPB, MKP, TKEP-LENINIST, TEKP, DKP, DEVRÎMCÎ KARARGAH এবং MLKP ।
কাল্কান বলেন, AKP যে একটি নতুন ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে তার বিরুদ্ধে বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্যে এই ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবী বাহিনী গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া যে সকল বিপ্লবী সংগঠন ও সামাজিক পরিধির সংগঠন সমূহ, যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে অংশ নিতে চান, তাদের এই যৌথ সংগ্রামে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান কাল্কান।
সভায় কাল্কান, যৌথ ঘোষণাটি তুর্কি ও কুর্দি ভাষায় পড়ে শোনান, এতে সমগ্র মানবতার জন্যে হুমকি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধ ও সঙ্কটের প্রতি সকলকে মনোযোগ দিতে বলেন। এতে আরও জোর দিয়ে বলা হয় যে, AKP সরকার- আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো দ্বারা গঠিত কুৎসিততম জোটের শরীক হিসেবে এই রক্তাক্ত যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। যৌথ ঘোষণাপত্রে AKP সরকার আজ দেশের সব জাতি ও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যে সর্বাত্মক যুদ্ধ চালাচ্ছে তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
তুরস্কে কমিউনিস্টপন্থি সংগঠন ‘কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি’ পিকেকে’র আলাদা দুটি সশস্ত্র গেরিলা হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ৫ সদস্য খতম হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২ জন।
সোমবার রাজধানী আঙ্কারার পূর্বাঞ্চলের দিয়ারবাকির এলাকায় পিকেকে গেরিলারা সশস্ত্র হামলা চালায় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩ সদস্য নিহত হয়।
এ ঘটনায় আহত ২ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একইদিন সুর জেলায় পিকেকে’র আরও একটি হামলায় ২ সামরিক সদস্য নিহত হয়।
এর আগে ৩১ জানুয়ারি সিজার জেলায় পিকেকে’র সঙ্গে সংঘর্ষে তিন জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, একজন সামরিক সদস্য ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি থানায় শক্তিশালী গাড়িবোমা হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও ৩৯ জন আহত হয়েছে। দিয়ারবাকির প্রদেশের চিনার শহরে অবস্থিত থানাটিতে চালানো হামলায় এর প্রবেশপথ ও পার্শ্ববর্তী দেয়াল ধসে পড়েছে। এতে নিহতদের মধ্যে একজন নারী ও একটি শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে।
গাড়িবোমাটি থানায় প্রবেশের পথে পেতে রাখা হয়েছিল বলে তুর্কি গণমাধ্যম জানিয়েছে। বোমা বিস্ফোরণে নিকটবর্তী আবাসিক ভবনগুলোর ক্ষতি হয়েছে। এসব ভবনে পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারগুলো বসবাস করে। বিস্ফোরণের পরপরই গেরিলারা থানার দিকে লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করেছে বলে কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে।
কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার না করলেও সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, কুর্দি অধ্যুষিত প্রদেশটিতে পিকেকে গেরিলারা ব্যাপক সক্রিয় থাকায় ওই গোষ্ঠীই এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দিয়ারবাকির প্রদেশে তুরস্কের সেনাবাহিনীর সঙ্গে পিকেকে গেরিলাদের কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এমনকি সরকার দিয়ারবাকির শহরসহ আরো কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে।
১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর জন্য স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে সশন্ত্র আন্দোলন করে আসছে পিকেকে গেরিলারা।
২০১৫ সালে তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনী ৩ হাজার ১০০ জন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির(পিকেকে) সদস্যকে হত্যা করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) এক টেলিভিশন বক্তৃতায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোগান এ তথ্য জানিয়েছেন। কমিউনিস্ট পিকেকে গেরিলাদের দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও এ সময় তিনি জানান।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে দেশে ও বিদেশে ৩ হাজার ১০০ বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী। তুরস্কের পর্বত ও শহরগুলোর প্রতিটা ইঞ্চি সন্ত্রাস মুক্ত করতে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আর পিকেকে গেরিলাদের পাল্টা গেরিলা অভিযানে ২০১৫ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই শতাধিক সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানান এরদোগান। তবে এসব অভিযানে কত সংখ্যক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে তিনি কিছু বলেননি।
তুরস্কে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে কমিউনিস্ট ‘পিকেকে’র কয়েক দফা সংঘর্ষ
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে কমিউনিস্ট কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি(‘পিকেকে’)র আরও কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার সিজরে সরকারের জারি করা কারফিউ এর মধ্যেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
একই দিন সিরনাক প্রদেশেও সরকারি বাহিনীর অভিযানের সময় পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। গত জুলাইয়ে আঙ্কারা ও পিকেকের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেড়ে যায়।
গত তিন দশকের সংঘর্ষে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে চল্লিশ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানায় গণমাধ্যম। সরকারের কারফিউ ও সংঘর্ষের কারণে এসব এলাকায় স্কুল কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ব্যাপক অসুবিধার মধ্যে পড়েছে বলে জানায় গণমাধ্যম।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, টানা সংঘাত-সহিংসতায় হুমকির মুখে পড়েছে জনজীবন। অনেকেই এলাকা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানায় তারা।
তুরস্কের গোলযোগপূর্ণ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কমিউনিস্ট কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে গেরিলাদের বিরুদ্ধে চলছে তুর্কি সেনা অভিযান। গত পাঁচ দিনে/র টানা অভিযানে এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন অন্তত ১০২ গেরিলা নিহত হয়েছে। তুরস্কের একটি নিরাপত্তা সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেছে।
অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে তুরস্কের দু জন সেনা ও পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। তবে গেরিলা নিহতের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়েছে। গতকাল এ সংখ্যা ছিল ৭০ কিন্তু আজ একদিনেই নিহতের সংখ্যা ৩২ জন বাড়লো।
কমিউনিস্ট পিকেকে গেরিলা
গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে তুর্কি সেনাবাহিনী সিরনাক প্রদেশের সিজ্রে ও সিলোপি শহরে পিকেকে গেরিলাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। পাশের দিয়ারবাকির শহরেও চলছে এ অভিযান। এসব শহর থেকে কমিউনিস্ট পিকেকে সমর্থকদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য এ অভিযান শুরু হয়েছে। ট্যাংকসহ অন্তত ১০,০০০ সেনা এ অভিযানে অংশ নিচ্ছে। এদিকে, আজ (রোববার) ইরাকের উত্তর সীমান্তবর্তী কুর্দি গেরিলা অবস্থানে তুরস্ক বিমান হামলা চালিয়েছে।
শুক্রবার তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাক্কারি প্রদেশে তুর্কি সেনারা বিমান হামলা চালালে পিকেকে এর ১৩ জন গেরিলা নিহত হয়। এর আগে, ওই এলাকায় পিকেকের সঙ্গে সংঘর্ষে ১ তুর্কি সেনা খতম হলে তার জবাবে এ বিমান হামলা চালানো হয়।
“নারীরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, এটা নিয়ে পুরুষরা সবসময় ভীত থাকে। কারণ একজন নারীর শক্তি তার শাসন/আধিপত্য ধ্বংস করে দিতে পারে“ – আব্দুল্লাহ ওসালান, কুর্দি নেতা ও পিকেকে’র প্রতিষ্ঠাতা
গত বছর আইএসআইএস সন্ত্রাসীরা ইয়েজেদি সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে অপহরণ ও হত্যা করার পরে, তরুণ ইয়েজেদি নারীরা শিঙ্গালে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজেদের সশস্ত্র করছে। এই সব নারীদের অধিকাংশই আইএসআইএস বন্দিদশা থেকে পালিয়ে আসা, তারা প্রতিশোধ নিতে চান। এই জন্যেই তারা YPG ও কমিউনিস্ট ‘পিকেকে’ দ্বারা প্রশিক্ষিত হচ্ছেন…