বাংলাদেশঃ মাওবাদপন্থীদের উদ্যোগে ‘সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ’ উদযাপিত

rrrrr

বাংলাদেশে শ্রমিকশ্রেণী ও শোষিত-নিপীড়িত জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষায় সজ্জিত করে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামকে বেগবান করার লক্ষ্যে গতকাল ১০ই নভেম্বর, শুক্রবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে ব্যাপক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে  মাওবাদপন্থীদের উদ্যোগে ‘মহান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ’ উদযাপিত হয়েছে।

ci

অনুষ্ঠানের ১ম পর্বেঃ সকাল ১০.৩০মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘মহান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ’ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে গণজমায়েত ও পথসংগীত শেষে লাল পতাকা মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব-হাইকোর্ট-দোয়েল চত্ত্বর-টিএসসি-শাহবাগ হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে এসে শেষ হয়। এসময় ‘মহান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ’ উপর বানানো টি শার্ট পরিহিত ছিল কর্মীরা ।

২য় পর্বেঃ দুপুর ১টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের হল রুমে শুরু হয় ‘অক্টোবর বিপ্লব’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, উদযাপন কমিটির আয়োজনে দুপুরের খাবার শেষে বেলা ৩.৩০মিনিটে শুরু হয় আলোচনা সভা। লেখক হাসান ফকরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন – লেখক বদরুদ্দিন উমর, সৈয়দ আবুল কালাম, সাংবাদিক বাদল শাহ আলম, রাজনৈতিক নেতৃত্ব জাফর হোসেন, মাসুদ খান, শাহজাহান সরকার, বিডি রহমতুল্লাহ, মঞ্জুরুল হক, বিপ্লব ভট্টাচার্য, হাসিবুর রহমান প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন – ‘মুক্তিকামী মানুষের মাঝে আজ সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদের সঠিক দিশা নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে বলশেভিক সংগ্রামী শিক্ষা, শ্রেণীসংগ্রাম, শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব, বলপ্রয়োগে শোষিতের ক্ষমতা দখল, একশ বছরে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে লেনিন-স্ট্যালিন-মাও সেতুঙ মার্কসবাদী শিক্ষকদের পথ এবং বাতিল করতে হবে শ্রেণীসংগ্রাম বিরোধী, শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব বিরোধী, মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্র বিরোধী পথকে। এটাই অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষা। কমরেড লেনিনের মৃত্যুর পর কমরেড স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিকে শ্রেণীসংগ্রামের মাঠে নেতৃত্ব দেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে মানুষকে চুড়ান্তভাবে মুক্ত করতে সমাজতন্ত্রের নির্মাণ এগিয়ে নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসীবাদকে পরাজিত করে শ্রমিকশ্রেণীর বিজয় নিশ্চিত করেন। কিন্তু, কমরেড স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর ক্রুশ্চেভ চক্র সমাজতন্ত্রের নামেই শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও শ্রেণী সমন্বয়বাদসহ শ্রেণীসংগ্রাম বিরোধী ও মার্কসবাদ বিরোধী তত্ত্ব ও পথ অবলম্বন করে রাশিয়ায় শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব ও সমাজতন্ত্রকে নস্যাত করে। অক্টোবর বিপ্লবে ক্ষমতা হারানো শোষক পুঁজিপতিশ্রেণীকে ক্ষমতা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯১ সালে এই পুঁজিপতিরা খোলাখুলিভাবে রাশিয়ায় পুঁজিবাদ ঘোষণা করে।

আবার, রুশ বিপ্লবের দিশা ও প্রেরণায় ঘটেছিল চীন বিপ্লব। কিন্তু, ১৯৭৬ সালে কমরেড মাও সেতুঙ এর মৃত্যুর পর চীনেও তেঙ চক্রের নেতৃত্বে নতুন বুর্জোয়ারা ক্ষমতা দখল করে। শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব ও শোষণ-বৈষম্য অবসানের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হটিয়ে ভুয়া সমাজতন্ত্র বা পুঁজিবাদ কায়েম করে। এভাবে, শোষকদের ক্ষমতা আপাতত ফিরে এলেও শোষিতের মুক্তির লক্ষ্যে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাকে হটিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছেই। গত একশ বছর ধরে শ্রমিকশ্রেণী ও শোষিত জনগণ সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা ও শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়েছে।

একদিকে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ আজ আবারও গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। নতুনভাবে ভাগবাটোয়ারার লড়াইয়ে পারমাণবিক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি করেছে। দেশে দেশে কায়েম করছে ফ্যাসীবাদ। জনগণকে বিভক্ত করে শোষণ-শাসনের জন্য উস্কে দিচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতাসহ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল ভাবধারা। চালিয়ে যাচ্ছে নজিরবিহীন শোষণ-লুন্ঠন-নিপীড়নের বিভীষিকা। প্রকৃতি-পরিবেশের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে চরম ধ্বংসাত্মক তৎপরতা। শোষণ-লুন্ঠণের নৈরাজ্যে মানব সমাজের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলছে। বাংলাদেশেও সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসী ভারতের অনুগত শাসকশ্রেণীর কয়েক দশকের শাসন-শোষণে জর্জরিত জনগণ। আওয়ামী সরকার কায়েম করেছে এক নজিরবিহীন ফ্যাসীবাদ।

অপরদিকে, অব্যাহত আছে জনগণের শোষণমুক্তির লড়াই। মুক্তিকামী জনগণ খুঁজছে মুক্তির দিশা, সঠিক পথ। এমন সময় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন মুক্তিকামী মানুষের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কেননা, সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শোষিতের ক্ষমতা কায়েম করেছিল, দেখিয়েছিল মানব মুক্তির প্রকৃত পথ। আর সমাজতান্ত্রিক সমাজকে নস্যাৎ করে শোষকরা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে শোষণের পুরনো ব্যবস্থা। ব্যাহত করেছে শোষিতের মুক্তির পথ।

কাজেই, মুক্তিকামী মানুষের মাঝে আজ সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদের সঠিক দিশা নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে বলশেভিক সংগ্রামী শিক্ষা, শ্রেণীসংগ্রাম, শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব, বলপ্রয়োগে শোষিতের ক্ষমতাদখল, একশ বছরে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে লেনিন-স্ট্যালিন-মাও সেতুঙ মার্কসবাদী শিক্ষকদের পথ। বাতিল করতে হবে শ্রেণী সংগ্রাম বিরোধী, শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব বিরোধী, মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্র বিরোধী পথকে। এটাই সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষা’।

r


সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’র সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

 

f

 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

  

সাংবাদিক সম্মেলনে শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করার আহ্বান

আজ ৩০ অক্টোবর, সোমবার, সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ঢাকায় ২, পুরানা পল্টন, মুক্তি ভবনের চতুর্থ তলায় প্রগতি সম্মেলন কক্ষে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আয়োজনে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক হাসান ফকরী কমিটির বক্তব্য তুলে ধরেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, মুক্তিকামী মানুষের মাঝে আজ সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদের সঠিক দিশা নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে বলশেভিক সংগ্রামী শিক্ষা, শ্রেণীসংগ্রাম, শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব, বলপ্রয়োগে শোষিতের ক্ষমতা দখল, একশ বছরে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে লেনিন-স্ট্যালিন-মাও সেতুঙ মার্কসবাদী শিক্ষকদের পথ এবং বাতিল করতে হবে শ্রেণীসংগ্রাম বিরোধী, শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব বিরোধী, মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্র বিরোধী পথকে। এটাই অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, আগামী ১০ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে প্রধান কর্মসূচি। এদিন শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ১১টা ৩০মিনিটে লাল পতাকাসহ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১২টা ৩০মিনিটে রুশ বিপ্লবের উপর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-এর দ্বিতীয় তলার সেমিনার কক্ষে। বিকেল ৩টা ৩০মিনিটে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এছাড়াও দেশের একাধিক জেলায়ও উদযাপন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে আগামী ১৭ নভেম্বর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হবে মিছিল ও আলোচনাসভা।

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক হাসান ফকরীসহ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- সৈয়দ আবুল কালাম, বি ডি রহমতুল্লাহ, জাফর হোসেন, অধ্যাপক ম. নুরুন্নবী, বাদল শাহ আলম, মাসুদ খান প্রমুখ।

ধন্যবাদসহ,

       

বার্তা প্রেরক,

বিপ্লব ভট্টচার্য

সদস্য, সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি।

# ০১৭৩৭২৮৪০৬৩।

 

 

f

সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য –

৩০ অক্টোবর ২০১৭, প্রগতি সম্মেলন কক্ষ, মুক্তি ভবন, ঢাকা।

 

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

দুনিয়া কাঁপানো সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষে আপনাদের সবাইকে রক্তিম শুভেচ্ছা। আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শুরু করছি।

বন্ধুগণ,

অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের কারণে শ্রমিক কৃষক গরীব মেহনতী মানুষের ঘরে ঘরে আজ শুধু হাহাকার আর হাহাকার। মাত্র তিনদিন আগে শেরপুরে ভাতের অভাবে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো কিশোরী কনিকা। এ যেন কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষকের জীবনের করুন অবস্থার এক প্রতীকী চিত্র। অথচ, সরকারের কথিত উন্নয়নের গল্প এ নির্মম বাস্তবতাকে উপহাস করছে।

বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে আজ একদিকে বিভৎস নির্যাতন-গণহত্যার শিকার হয়ে দেশ ছাড়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার অসহায় আহাজারি; অন্যদিকে গুম, খুন, ধর্ষণসহ হরেক রকম নির্যাতনের শিকার মানুষ ও স্বজনের বুকচাপা কান্নার শব্দ। প্রতিদিনের সংবাদেই ফুটে উঠছে মানুষের নিরাপত্তাহীনতা আর অসহায়ত্বের ছবি। সীমান্তের ওপারে আরাকানে মানুষের বাড়ীঘরে আগুন অথবা নদী-সাগরে ভাসমান গলিত লাশ আপনারা দেখছেন। কদিন আগে গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ঘরে আগুন, ধানক্ষেতে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ লাশ অথবা বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে বুক ঝাঁঝড়া হওয়া কৃষকের লাশ আপনারা নিশ্চয় ভোলেননি।

শুধু বাংলাদেশ নয়, মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকাসহ দুনিয়াজুড়ে পুজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ ও দালালদের স্বার্থের সংঘাত-সংঘর্ষ-যুদ্ধ ও নির্যাতনে জর্জরিত লাখো কোটি মানুষ জীবন বাঁচাতে আজ এক দেশ থেকে আর এক দেশে অথবা দেশের ভেতরেই উদ্বাস্তু হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। নিপীড়িত মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছে। কিন্তু, সঠিক দিশার অভাবে যথাযথ সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারছে না, নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না। দিশাহীনতার এই সময়ে মুক্তির সঠিক দিশাটাই নিপীড়িত জনগণের জন্য সবচেয়ে বেশী দরকারি। একই সাথে দরকার ভুল পথগুলো চিহ্নিত করা। কারণ, ভুল পথে কখনোই মুক্তি আসে না। বরং শোষণ-নির্যাতনের পুরনো ব্যবস্থাই তাতে পুষ্ট হয়। অবরুদ্ধ হয় মুক্তির পথ।

বন্ধুগণ,

আজ থেকে একশো বছর আগে ১৯১৭ সালে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বাস্তবে দেখিয়েছিল মানুষের মুক্তির প্রকৃত পথ হলো সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ। রাশিয়ায় শ্রমিক ও গরীব কৃষক এবং সাধারণ সৈনিকরা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পুঁজিপতি ও জমিদারদের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করেছিল। ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল শোষকদের আধিপত্য ও নিপীড়নের হাতিয়ার-রাষ্ট্র। কায়েম করেছিল শ্রমিকশ্রেণীর নতুন ধরনের রাষ্ট্র, সোভিয়েত রাষ্ট্র ও নতুন সমাজ- সমাজতন্ত্র। সুবিধাবাদ, সংস্কারবাদসহ সব ধরনের বিপ্লববিরোধী ভুল পথ-পদ্ধতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে মার্কসবাদী পথ দেখিয়েছিলেন কমরেড লেনিন।

মার্কস-এঙ্গেলস শিখিয়েছিলেন শ্রেণীসংগ্রামই হলো ইতিহাসের চালিকা শক্তি। শোষণ-নিপীড়নের উৎস হলো শ্রেণীবিভক্ত শোষণমূলক সমাজ ব্যবস্থা। শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্ত হতে হলে শোষণমুলক ব্যবস্থাকেই বিদায় করতে হবে, কায়েম করতে হবে শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব। কেননা, শোষণমূলক ব্যবস্থা দূর করার উপায় হলো শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব। শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্বে শোষণের যাবতীয় ভিত্তি, উপায়-উপকরণ বিলুপ্ত করার সমাজ সমাজতন্ত্র। যা এগিয়ে যাবে শোষণ-বৈষম্যহীন মুক্ত মানুষের সমাজ- সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে। ইতিহাসের অনিবার্য গতি সেদিকেই।

এই শিক্ষায় অবিচল থেকে রাশিয়ায় শ্রমিকশ্রেণী গড়ে তুলেছিল শ্রেণীসংগ্রামের সুশৃঙ্খল অগ্রবাহিনী- বলশেভিক কমিউনিস্ট পার্টি। এমন এক বিপ্লবী পার্টি, যা বিপ্লবী সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে পারে এবং যা গড়ে তুলতে পারলেই কেবল প্রলেতারিয় বিপ্লব করা যায়। বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে রাশিয়ায় শোষক-নিপীড়কদের বিরুদ্ধে কায়েম হয়েছিল শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব। শ্রমিকশ্রেণী সুদৃঢ় জোট বেঁধেছিল গরীব কৃষকের সাথে এবং মৈত্রী গড়ে তুলেছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সঙ্গে। শ্রমিক কৃষক মেহনতী জনগণের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিল এক অভূতপূর্ব স্বাধীনতা, গণতন্ত্রসহ তাদের সার্বিক অধিকার।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,

কমরেড লেনিনের মৃত্যুর পর কমরেড স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিকে শ্রেণীসংগ্রামের মাঠে নেতৃত্ব দেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে মানুষকে চুড়ান্তভাবে মুক্ত করতে সমাজতন্ত্রের নির্মাণ এগিয়ে নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসীবাদকে পরাজিত করে শ্রমিকশ্রেণীর বিজয় নিশ্চিত করেন। কিন্তু, কমরেড স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর ক্রুশ্চেভ চক্র সমাজতন্ত্রের নামেই শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও শ্রেণী সমন্বয়বাদসহ শ্রেণীসংগ্রাম বিরোধী ও মার্কসবাদ বিরোধী তত্ত্ব ও পথ অবলম্বন করে রাশিয়ায় শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব ও সমাজতন্ত্রকে নস্যাত করে। অক্টোবর বিপ্লবে ক্ষমতা হারানো শোষক পুঁজিপতিশ্রেণীকে ক্ষমতা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯১ সালে এই পুঁজিপতিরা খোলাখুলিভাবে রাশিয়ায় পুঁজিবাদ ঘোষণা করে।

আবার, রুশ বিপ্লবের দিশা ও প্রেরণায় ঘটেছিল চীন বিপ্লব। কিন্তু, ১৯৭৬ সালে কমরেড মাও সেতুঙ এর মৃত্যুর পর চীনেও তেঙ চক্রের নেতৃত্বে নতুন বুর্জোয়ারা ক্ষমতা দখল করে। শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব ও শোষণ-বৈষম্য অবসানের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হটিয়ে ভুয়া সমাজতন্ত্র বা পুঁজিবাদ কায়েম করে। এভাবে, শোষকদের ক্ষমতা আপাতত ফিরে এলেও শোষিতের মুক্তির লক্ষ্যে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাকে হটিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছেই। গত একশ বছর ধরে শ্রমিকশ্রেণী ও শোষিত জনগণ সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা ও শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়েছে।

একদিকে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ আজ আবারও গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। নতুনভাবে ভাগবাটোয়ারার লড়াইয়ে পারমাণবিক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি করেছে। দেশে দেশে কায়েম করছে ফ্যাসীবাদ। জনগণকে বিভক্ত করে শোষণ-শাসনের জন্য উস্কে দিচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতাসহ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল ভাবধারা। চালিয়ে যাচ্ছে নজিরবিহীন শোষণ-লুন্ঠন-নিপীড়নের বিভীষিকা। প্রকৃতি-পরিবেশের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে চরম ধ্বংসাত্মক তৎপরতা। শোষণ-লুন্ঠণের নৈরাজ্যে মানব সমাজের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলছে। বাংলাদেশেও সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসী ভারতের অনুগত শাসকশ্রেণীর কয়েক দশকের শাসন-শোষণে জর্জরিত জনগণ। আওয়ামী সরকার কায়েম করেছে এক নজিরবিহীন ফ্যাসীবাদ।

অপরদিকে, অব্যাহত আছে জনগণের শোষণমুক্তির লড়াই। মুক্তিকামী জনগণ খুঁজছে মুক্তির দিশা, সঠিক পথ। এমন সময় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন মুক্তিকামী মানুষের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কেননা, সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শোষিতের ক্ষমতা কায়েম করেছিল, দেখিয়েছিল মানব মুক্তির প্রকৃত পথ। আর সমাজতান্ত্রিক সমাজকে নস্যাৎ করে শোষকরা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে শোষণের পুরনো ব্যবস্থা। ব্যাহত করেছে শোষিতের মুক্তির পথ।

কাজেই, মুক্তিকামী মানুষের মাঝে আজ সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদের সঠিক দিশা নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে বলশেভিক সংগ্রামী শিক্ষা, শ্রেণীসংগ্রাম, শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব, বলপ্রয়োগে শোষিতের ক্ষমতাদখল, একশ বছরে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে লেনিন-স্ট্যালিন-মাও সেতুঙ মার্কসবাদী শিক্ষকদের পথ। বাতিল করতে হবে শ্রেণী সংগ্রাম বিরোধী, শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব বিরোধী, মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্র বিরোধী পথকে। এটাই সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষা।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,

বাংলাদেশে শ্রমিকশ্রেণী ও শোষিত-নিপীড়িত জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষায় সজ্জিত করে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামকে বেগবান করার জন্য আমরা অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আগামী ১০ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে প্রধান কর্মসূচি। এদিন শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ১১টা ৩০মিনিটে লাল পতাকাসহ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১২টা ৩০মিনিটে রুশ বিপ্লবের উপর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-এর দ্বিতীয় তলার সেমিনার কক্ষে। বিকেল ৩টা ৩০মিনিটে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এই প্রধান কর্মসূচির পর দেশের একাধিক জেলায়ও আমরা উদযাপন কর্মসূচি আয়োজন করছি। যার মধ্যে আগামী ১৭ নভেম্বর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হবে মিছিল ও আলোচনাসভা। এসব কর্মসূচির খবর এবং সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষা জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরার জন্য আমরা আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। আশা করছি, আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে এসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ/প্রচার করে আমাদের সহযোগিতা করবেন। জনগণের কাছে রুশ বিপ্লবের শিক্ষা ও মুক্তির সঠিক দিশা তুলে ধরায় আপনাদের ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসবেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ধৈর্য্য ধরে এতক্ষণ আমাদের বক্তব্য শোনার জন্য আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।

 

হাসান ফকরী,

আহ্বায়ক

সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি

পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ- ধ্বংস হোক, নিপাত যাক !

ভূয়া সমাজতন্ত্র- নিপাত যাক !

সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের বিশ্বব্যবস্থা- জিন্দাবাদ !


১৭ই নভেম্বরঃ রাজশাহীতে উদযাপন হবে ‘সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ’

17 nov

দুনিয়ার মজদুর এক হও!
মহান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরুন!
সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম এগিয়ে নিন!

১৯১৭ সালে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রুশ শ্রমিক ও গরীব কৃষক এবং সাধারণ সৈনিকরা সীমাহীন ঔদ্ধত্যে সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পুঁজিপতি ও জমিদারদের উচ্ছেদ করেছিল রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে, ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল তাদের আধিপত্য-অহঙ্কার ও রাষ্ট্র। কায়েম করেছিল শ্রমিকশ্রেণীর নতুন ধরনের রাষ্ট্র, সোভিয়েত রাষ্ট্র ও নতুন সমাজ- সমাজতন্ত্র। বুর্জোয়া উদারনৈতিকতা, সুবিধাবাদ, সংস্কারবাদ, অর্থনীতিবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ, বিলোপবাদসহ সব ধরনের বিপ্লববিরোধী ধারার বিরুদ্ধে অবিচল সংগ্রাম চালিয়ে এই বিপ্লবকে পথ দেখিয়েছিলেন লেনিন, নেতৃত্ব দিয়েছিল রুশ বলশেভিক পার্টি।
১৭৮৯ সালের ফরাসী বিপ্লবের সময় থেকে পশ্চিমা বুর্জোয়াশ্রেণী নিজেদের সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা, মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে দাবী করে আসছিল। তাদের সাম্য ছিল বুর্জোয়া রাষ্ট্রের আইনে ধনী-গরীবের সমান অধিকারের ঘোষণা- যা কখনোই হতে পারে না। তাদের মৈত্রী ও স্বাধীনতা ছিল মেহনতীদের বিরুদ্ধে ধনীদের মৈত্রী ও শোষণ-লুণ্ঠনের স্বাধীনতা। ইতিহাসে বুর্জোয়া গণতন্ত্র সর্বদাই ধনীকশ্রেণীর জন্য গণতন্ত্র ও গরীব জনগণের জন্য ধনীর দাসত্ব তথা একনায়কত্ব হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। বিপরীতে রুশ বিপ্লব সেদেশের জনগণকে পুঁজিপতি ও জমিদারদের একনায়কত্ব ও শোষণমূলক সমাজব্যবস্থা থেকে মুক্ত করেছিল।
নতুন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল পুঁজিপতি-জমিদার ও নতুন-পুরাতন শোষক-নিপীড়কদের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব। রুশ শ্রমিকশ্রেণী এজন্য সুদৃঢ় জোট বেঁধেছিল গরীব কৃষকের সঙ্গে এবং মৈত্রী গড়ে তুলেছিল মধ্যকৃষক, মধ্যবিত্ত শ্রেণী, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়সহ সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সঙ্গে। জনগণ, বিশেষভাবে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী জনগণের জন্য তা কায়েম করেছিল এক অভূতপূর্ব স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকার। যা তাদের সৃজনশীলতা, উদ্যোগ ও সচেতনতার এমন বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছিলÑবুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তা অচিন্তনীয় ও অসম্ভব।
শ্রমিকশ্রেণী ও জনগণের এই গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ওপর ভর করেই রুশ দেশের কোটি কোটি কৃষক বিপ্লবী অভ্যুত্থানে জেগে উঠেছিল- অবসান ঘটিয়েছিল জমিদার, চার্চ ও অভিজাতদের ভূমি মালিকানার এবং জমি পরিণত হয়েছিল জনগণের সম্পত্তিতে। দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী কলকারখানা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে পুঁজিবাদী মালিকানার বিলোপ ঘটিয়ে কায়েম হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও শ্রমিক কর্তৃত্ব। লেনিনের মৃত্যুর পর স্ট্যালিনের নেতৃত্বে শ্রমিক ও গরীব কৃষকের সচেতন উত্থানের মধ্য দিয়ে অর্থনীতির সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সম্পন্ন হয়েছিল। বিদায় নিয়েছিল অশিক্ষা, নারীরা পেয়েছিল মুক্তি, নিপীড়িত জাতিসমূহ পেয়েছিল আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার। আধুনিক শিল্পোন্নত ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন সারা পৃথিবীর শোষিত-নিপীড়িত জনগণের আশা-ভরসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
রুশ বিপ্লবের দিশা ও প্রেরণায় ঘটেছিল চীন বিপ্লব। বিশ্বের এক চতুর্থাংশে জন্ম নিয়েছিল একগুচ্ছ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল জনগণের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মুক্তিসংগ্রাম। ১৯১৭ থেকে ১৯৫০ সাল- সাম্রাজ্যবাদীদের অব্যাহত সামরিক আগ্রাসন, সামরিক-অর্থনৈতিক অবরোধ, অন্তর্ঘাত ও মিথ্যাচার- সবকিছু ব্যর্থ করে দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল পৃথিবীর এই প্রথম সমাজতন্ত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তা পরাজিত করেছিল পশ্চিমা সাহায্য ও প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা নাৎসী জার্মানিকে। এককভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন সম্পন্ন করেছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন।
কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পুরনো সমাজের বুর্জোয়া অধিকার, অসাম্য ও পচা-গলা ধ্যানধারণা রাতারাতি বিলুপ্ত হয় না- অব্যাহতভাবে জন্ম দেয় নতুন বুর্জোয়া। ক্ষমতার উচ্চস্তরে সৃষ্ট এই নতুন বুর্জোয়ারা স্ট্যালিনের মৃত্যুর সুযোগে ১৯৫৬ সালে ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বে সোভিয়েত রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে। মাও সে-তুঙ-এর মৃত্যুর পর ১৯৭৬ সালে তেঙ শিয়াও পিং চক্রের নেতৃত্বে চীনেও একই ঘটনা ঘটে। সমাজতন্ত্রকে হটিয়ে এরা কায়েম করে ভুয়া সমাজতন্ত্র তথা পুঁজিবাদ।
আমাদের দেশে বামপন্থী মহলে ক্রুশ্চেভের রাশিয়া ও বর্তমান চীনকে পুঁজিবাদী হিসেবে চিহ্নিত না করে সমাজতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করার বিভ্রান্তি অদ্যাবধি বিদ্যমান। ফলে এই বামপন্থীরা কার্যত সমাজতন্ত্রের পক্ষে নয়, পুঁজিবাদের পক্ষেই দাঁড়াচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ বর্তমান সরকার ও শাসকশ্রেণীর লেজুড়বৃত্তিও করছে।
আজ দুনিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র আর নেই। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ গোটা বিশ্বকে আবারও গ্রাস করেছে। এরা দুনিয়াকে নতুনভাবে ভাগবাটোয়ারার লড়াইয়ে লিপ্ত। ফলে মানব সমাজ পারমাণবিক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদের মুখোমুখি। আজ সারা দুনিয়ার মানুষের পরিশ্রমলব্ধ সম্পদ কেন্দ্রীভূত মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি-সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। ক্ষুধা-দারিদ্র-অনাহার-দুর্ভিক্ষ-অনিরাপত্তা-অনিশ্চয়তাগ্রাস করেছে বিশ্বকে এবং প্রকৃতি-পরিবেশের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে চরম ধ্বংসাত্মক তৎপরতা। দেশে দেশে এরা উসকে দিচ্ছে উগ্র ধর্মান্ধতা-মৌলবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং আঞ্চলিক বিভেদ ও যুদ্ধ। সদ্য রোহিঙ্গা সমস্যা এরই এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। পুঁজিবাদী শোষণ-লুণ্ঠন ও নৈরাজ্য এভাবে চলতে থাকলে গোটা মানব সমাজের অস্তিত্বই ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়াবে।
বাংলাদেশের জনগণও সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতের অনুগত বুর্জোয়াশ্রেণী এবং তাদের দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও সামরিক স্বৈরতন্ত্রের কয়েক দশকের শাসন-শোষণ লুণ্ঠনে চরম বিপর্যস্ত। তাদের ওপর অব্যাহতভাবে চেপে রয়েছে শাসকশ্রেণীর স্বৈরতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচার। আওয়ামী সরকার উসকে দিচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মান্ধতা ও ফ্যাসিবাদ। জনগণ যে কোনো সময় গুম-খুন কিংবা লোপাট হয়ে যাওয়ার বিপদে রয়েছে।
রুশ বিপ্লব ছিল পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী যুগের অবসান ঘটিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে বিশ্ববিপ্লবের নতুন যুগের দুনিয়াকাঁপানো সূচনা। এই যুগ দেশে দেশে শ্রমিকশ্রেণী ও শোষিত-নিপীড়িত জনগণের রাষ্ট্রক্ষমতা, শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা ও সমাজতন্ত্রকে জয়যুক্ত করার বিপ্লবী যুগ। একমাত্র এর মধ্য দিয়েই পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের করাল গ্রাস, শোষণ-নিপীড়ন, শ্রেণীবৈষম্য ও ব্যক্তি স্বার্থের পচা-গলা ধ্যানধারণা থেকে মানববিশ্ব মুক্ত হতে পারে। মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন ও মাও সেতুঙ-এর বিপ্লবী শিক্ষা এটাই। আসুন, আমরা নতুন যুগের বিপ্লবী পথে সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করি।


বাংলাদেশঃ ‘সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ’ উদযাপন কমিটির আহবান

22447651_1697675476909987_1331662182_n

22551473_1697675563576645_94247588_n


বাংলাদেশে ১০ই নভেম্বর উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ’

 

22471586_1697675343576667_1400848975_n