ভারতঃ ‘বিপ্লবী আদর্শের প্রতি ভালোবাসা দুজনকে এক করেছিল’ – নকশাল কমরেড রূপেশ ও সাইনার কন্যা এ্যামি
Posted: May 22, 2015 Filed under: লাল সংবাদ/lal shongbad | Tags: এ্যামি, থ্রিশূর, মাওবাদ, রূপেশ, সমাজ, সাইনা Leave a commentরূপেশ ও সাইনা
কোয়েম্বাটোরঃ থ্রিশুরের শ্রী নারায়ণা কলেজে ছাত্রাবস্থাতেই দুজনের বিপ্লবী আদর্শ মিলে যায়, যা মাওবাদী দম্পতি রূপেশ ও সাইনার মাঝে বন্ধন গড়ে তুলেছিল।
দুজনের পারিবারিক অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। যাবতীয় সুযোগ সুবিধার মাঝে বেড়ে উঠা সাইনা ছিলেন বুর্জোয়া পরিবারের সন্তান। অন্যদিকে, তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় রূপেশের মা ছোটখাট চাকরী করে সংসার চালাতেন। প্রথম পরিচয়ের দিন থেকেই তদের দুজনের মাঝে নিবিড় বন্ধন তৈরী হয়।
তাদের বড় মেয়ে এ্যামি বলেন, তার বাবা ২০০২ সালে বাড়ি ছাড়েন, কদাচিৎ অল্প সময়ের জন্য আসতেন বাড়িতে। তাকে ও তার ছোট বোনকে দেখাশোনার জন্য তাদের মা সাইনা ছিলেন। তিনিও ২০০৮ সালে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। যাবার আগে কেরালার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস আচুথানন্দনের কাছে মাওবাদী আন্দোলনে তার যোগদানের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে জানান।
রূপেশের জন্য এক অনন্য আস্থা ও নির্ভরতার জায়গা ছিলেন সাইনা। কিশোর বেলা থেকেই বিপ্লবী চেতনা ধারণ করতেন সাইনা। আইরিশ লেখক এথেল লিলিয়ান ভয়নিখের উপন্যাস ‘The Gadfly’ এর মালয়ালম অনুবাদ ‘কাট্টু কদনাল’ বইটি থেকে তিনি বিপ্লবী ধারার প্রথম অনুপ্রেরণা পান। উপন্যাসটি একজন বিপ্লবী যাজককে নিয়ে লেখা। মার্কসবাদী বলয়ে এ বইটি একটি ভিত্তি বই হিসেবে বিশেষভাবে আলোচিত। বিশ শতকের মধ্য ভাগে ল্যাটিন আমেরিকায় মুক্ত ধর্মতত্ত্বের (Liberation Theology) প্রচলন ঘটানোর পিছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল উপন্যাসটি।
এ্যামি বলেন, বাবা মায়ের কাছে প্রগতিশীল ধ্যান ধারণায় দিক্ষিত সাইনা ১৪ বছর বয়সেই চলমান সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর কঠোর সমালোচক ছিলেন। ভারতীয় সমাজে নারীদের প্রতি বৈষম্য ও তাদের অবস্থান নিয়েও সমালোচনা করতেন তিনি।
অন্যদিকে, এক প্রকার বাবাকে ছাড়াই বেড়ে উঠেন রূপেশ। এ্যামি বলেন, রূপেশের বাবা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরী করতেন। মালিকের সাথে বিবাদের কারণে তিনি ভারতে ফিরে আসতে পারেননি। থ্রিশুর কলেজে পরিচয়ের পর সাইনা ও রূপেশ ছাত্র সংগঠনে যোগদান করেন।
এ্যামি বলেন, “সমাজের প্রতি তাদের দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা ছিল এক”। ভারতের মাওবাদ নিয়ে রূপেশের লেখা ‘বসন্তথিলে পুমারঙ্গল’(Vasanthathile Poomarangal) বইটিতে সাইনার অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন রূপেশ। এ্যামি বলেন, বইটি যে তারা দুজনে মিলেই লিখেছেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
বাবা মায়ের মতাদর্শিক প্রভাব বিষয়ে এ্যামি কিছুই জানতেন না। নানীর কাছ থেকে তার পরিবারের ইতিহাস জানতে পারেন এ্যামি। এ্যামি ও তার ছোট বোন সাভেরা বর্তমানে তাদের নানীর সাথে বসবাস করছে।
মায়ের সাথে কাটানো দিনগুলো স্মরণ করে এ্যামি জানান সাইনা কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতেন ও ঘুম পাড়ানোর সময় তাকে নিজের লেখা গল্প পড়ে শোনাতেন।
তাদের আত্মগোপনের দীর্ঘ অনেকগুলো বছর ধরে সাইনা ছিলেন রূপেশের ঘনিষ্ঠ সহচর। গ্রেফতারের সময়েও তাদের মতাদর্শ প্রভাবিত ব্যক্তিত্ব মিলিত আকারে তাদের বিপ্লবী চিন্তাধারাকে শক্তি যুগিয়েছে ও সক্রিয় হতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
এ্যামি বলেন, “ওদের দুজনের যদি বিয়ে না হত, তাহলে এসব কোন কিছুই সম্ভব হত না। দুজনের একই ধাঁচের চিন্তা ধারা তাদের বিপ্লবী সংগঠনে যোগদানের সংকল্পকে শক্তিশালী করেছে। বাবার সাথে যদি মায়ের পরিচয় না ঘটত, তাহলে মা হয়তো নিছক একজন গৃহিণী হয়েই জীবনটা কাটাতে বাধ্য হতেন আর বাবা হয়তো একজন ব্যবসায়ী হতেন”।
সূত্রঃ