১১টি কোলাজ ছবিতে “মহান রুশ বিপ্লবের শতবার্ষিকী”

1

. সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের রূপকার লেনিনের আবির্ভাব পর্ব

2

. বিপ্লবী সংগ্রাম সাধনায় লেনিন

3

. ১৯০৫ : রাশিয়ার বুকে জারের স্বৈরতন্ত্র বিরোধী গণঅভ্যুত্থান – বিপ্লবী আন্দোলনের ঝড়

4

. ১৯১৭-র এপ্রিল ; লেনিন দেশে ফিরে এলেন

5

. শ্রমিকশ্রণীর ক্ষমতা দখলের আহ্বান জানালেন লেনিন

6

. জনতার বিপ্লবী সংগ্রামে ক্ষমতাচ্যুত হল বুর্জোয়া সরকার

7

. বিপ্লবোত্তর লেনিন

8

. লেনিনেন নেতৃত্বে শুরু হল সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের কাজ

9

. ২১ জানুয়ারি ১৯২৪ কমরেড লেনিনের জীবনাবসান

10

১০. সমাজতন্ত্র নির্মাণের হাল ধরলেন স্তালিন

11

১১. অভূতপূর্ব সাফল্য বয়ে আনলো বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন


অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে সৃষ্ট নিপীড়িত জনগণের শিল্প-সাহিত্য

RussianRevsmall-48b84eb46f24673f0fb27995c4ca2921

অক্টোবর বিপ্লবই বুর্জোয়া শিল্প-সাহিত্যের বিপরীতে প্রথম বিপ্লবী শিল্প-সাহিত্যের শক্ত ভিত স্থাপন করে। শিল্প-সাহিত্যের বুর্জোয়া শ্লোগান ‘শিল্পের জন্য শিল্প’-কে মোকাবেলা করে ‘জনগণের জন্য শিল্প’ এই আওয়াজ তোলে এবং বুর্জোয়া সাহিত্য ও বিপ্লবী সাহিত্যের মধ্যে ভেদ রেখা টেনে দেয়।

মার্কসবাদীরা জানে, যেকোন সমাজের ক্ষেত্রে তার অর্থনীতিই হলো ভিত্তি। রাজনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও শিল্পকলা তার উপরিকাঠামো। যা অর্থনৈতিক ভিত্তি থেকে গড়ে ওঠে, আবার সেই অর্থনৈতিক ভিত্তিকে সেবা ও প্রভাবিত করে। পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির উপর দন্ডায়মান তাদের স্ব স্ব উপরিকাঠামো। শ্রেণি বিভক্ত সমাজে শ্রেণির রাজনীতির অধীন শাসন-ব্যবস্থায় সংস্কৃতি ও সাহিত্য-শিল্পকলা কখনই শ্রেণি নিরপেক্ষ হতে পারেনা। বুর্জোয়ারা এটাকে আড়াল করে সাহিত্য শিল্পকলা সকলের জন্য- এই কথা বলে। যেভাবে শাসক শ্রেণির বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে শাশ্বত ও সকলের জন্য একই- একথা বলে। অক্টোবর বিপ্লবই বুর্জোয়াদের এই মিথ্যাচারকে পুরোপুরি ভাবে উন্মোচন করে দেয়।

বুর্জোয়া শিল্প-সাহিত্য পুঁজিবাদী উৎপাদন ও বন্টন কর্তৃক সৃষ্ট যে সামাজিক সম্পর্ক ও সংস্কৃতি তৈরি হয় তাকেই তুলে ধরে। পুঁজিবাদের ব্যক্তিমালিকানা ভিত্তিক চিন্তা-চেতনা-ভাবাদর্শ তার সংস্কৃতি বা শিল্প-সাহিত্যে প্রকাশিত হয়। ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদ, ভোগবাদ, বিনিময় সম্পর্কের শ্রেণিভেদ বুর্জোয়া শিল্প-সাহিত্য তার দর্পন। বুর্জোয়া শিল্প-সাহিত্য শ্রমিক-কৃষক-নিপীড়িত জাতি-জনগণের সংগ্রামী চেতনা ভোতা করে দেয় এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বদলে তাদেরকে বিভক্ত রাখে।

অন্যদিকে জনগণের বিপ্লবী শিল্প-সাহিত্য পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ উন্মোচন ও উচ্ছেদের জন্য ঐক্যবদ্ধ করে, শ্রেণি সচেতনতাকে তীক্ষ্ণ করে এবং সংগ্রামের দিশা দেয়। শিক্ষা দেয় শ্রমিকশ্রেণির হাতে রাষ্ট্র-ক্ষমতা ব্যতীত শ্রমিকশ্রেণি ও নিপীড়িত জনগণের মুক্তি নেই। মাও বলেছেন- “সর্বহারা শ্রেণির সাহিত্য ও শিল্পকলা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণির সমগ্র বিপ্লবী কর্মকা-ের একটা অংশ”। লেনিন বলেছেন, সমগ্র বিপ্লবী যন্ত্রের “দাঁতওয়ালা চাকা ও ইস্ক্রুপ”। এই সাহিত্য, শিল্পকলা ব্যক্তি মানুষকে বিজ্ঞান ও বস্তুবাদী ধারণায় সজ্জিত করে এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য জনগণের মধ্যে বিপ্লবী মতাদর্শের বীজ বপন করে। ফলে পুঁজিবাদে বিভক্ত জনগণ শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়, লড়াই করে। অতএব বিপ্লবী সাহিত্য বিপ্লবী সংগ্রামকে জাগরিত করে; আবার বিপ্লবী সংগ্রাম বিপ্লবী সাহিত্যকদের প্রেরণা জোগায়, তাদেরকে সৃষ্টির বিষয়বস্তুর জোগান দেয়। বিপ্লবী সংগ্রামী তৎপরতা কর্মকা- থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থের  বিপ্লবী সাহিত্য নির্মাণ করা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামে অংশগ্রহণ ও তার মতাদর্শে সজ্জিত হওয়া। প্রগতিশীল লেখক-সাহিত্যিকদের এর জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বিপ্লব গড়ে উঠার পূর্বে তাকে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখা, বিপ্লব হলে পরে তাকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে যুক্ত হওয়া।

অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে দেখি ম্যাক্সিম গোর্কির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, তার উপন্যাস, গল্প, নাটক, কবিতা বিপ্লব সংগঠিত করতে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। তার ‘মা’ উপন্যাস পড়ে লেনিন প্রশংসা করেছিলেন যে, “এটি একটি দরকারী বই, বহু মজুর বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন অসচেতন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে, এবার ‘মা’ পড়ে তাদের মহা উপকার হবে…… খুবই যুগোপযোগী বই।” বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও সাহিত্য নির্মাণের জন্য গোর্কিকে নির্বাসন, কারাবরণ ও গোপনে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। সাহিত্য, সাংস্কৃতিক কর্মীদের এর জন্যও প্রস্তুত থাকতে হয়। দেশে দেশে বিপ্লবী সংগ্রামে এরকমটাই দেখা যায়। অক্টোবর বিপ্লবী সাহিত্যের মধ্যে আলোচিত কিছু হলো- মা, ইস্পাত, কুমারী মাটির ঘুম ভাঙ্গলো, জীবন জয়ের পথে, ভলকলামস্কয়ে সড়ক, গোত্রান্তর ইত্যাদি। এই সব সাহিত্য সমাজতান্ত্রিক সমাজের বিনির্মাণ এবং শ্রমিক-কৃষক নিপীড়িত জনগণকে পুনর্গঠনে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখে।

যেমন, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ একটি রাজনৈতিক ভাবাদর্শের উপন্যাস। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামকে রূপায়িত করে এটি রচিত হয়। এ উপন্যাসের নায়ক পাভেল একজন শ্রমিক। পাভেলের রাজনৈতিক দৃঢ় আদর্শ জারতন্ত্রের জেল জুলুম শত নির্যাতনও তাকে দমাতে পারেনা, বরং আরও ইস্পাত দৃঢ় করে। শ্রমিক পাভেলের মা নিলভনা সাধারণ শ্রমিকের মায়ের মতই বস্তিতে থাকত। পাভেলের রাজনৈতিক আদর্শ ও সংগ্রাম তার মাকে বিপ্লবী প্রেরণা জোগায়। মা নিলভনা সাধারণ গৃহিনী থেকে আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হয়ে উঠেন। উপন্যাসে জারতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বাধীন প্রকৃত মানবিক সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার চেতনায় জনগণকে উজ্জীবিত করে। একই সাথে জনগণের মধ্যে আন্তর্জাতিক চেতনার শিক্ষাও তুলে ধরে।

পাশাপাশি সামন্ত বুর্জোয়া সাহিত্য রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে এর রচনাকাল ছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের অধীনে ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক বিরোধী জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীদের নেতৃত্বে জনগণের বিদ্রোহের যুগ। এ সময় রচিত উপন্যাসে দেখানো হয়েছে বিপ্লবীদেরকে উশৃঙ্খল-চরমপন্থী হিসেবে, আড়াল করা হয়েছে বৃটিশ, জমিদার, সামন্তদের কৃষক জনগণের উপর শোষণ, লুন্ঠন, লুটতরাজের ফলে দুর্ভিক্ষ, লক্ষ-কোটি কৃষকের না খেয়ে মরার চিত্রকে। এ রচনায় রবীন্দ্রনাথ তার শ্রেণি চেতনারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সংক্ষেপে এ হলো সামন্ত, বুর্জোয়া শোষক শ্রেণির গণবিরোধী সাহিত্যর নমুনা।

কাজেই প্রগতিশীল, বিপ্লবী শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠনের দায়িত্ব হলো গণবিরোধী বুর্জোয়া শিল্প সাহিত্যের সমালোচনা ও তাকে উন্মোচন করা এবং শ্রমিকশ্রেণির সাহিত্য নির্মাণের জন্য তার সংগ্রামে একাত্ম হওয়া। এটাই হলো সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে সাম্রাজ্যবাদ, দালাল আমলা-মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াই। এ লড়াই নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে সমাজতান্ত্রিক-কমিউনিজম ব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করবে।

সূত্রঃ আন্দোলন পত্রিকা, অক্টোবর ’১৭ সংখ্যা


পুঁজিবাদ উচ্ছেদ করে শেষ পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাই কায়েম হবে — মাও সে তুঙ

mao-zedong-456x300

নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার সুপ্রিম সোভিয়েত আহূত সমাবেশে ১৯৫৭ সালের ৬ নভেম্বর মহান নেতা মাও সেতুঙের ভাষণ৷ এটি ওই বছরই পিপলস চায়না পত্রিকার ১ ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়৷

প্রিয় কমরেডগণ,

মহান নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস, জনগণতান্ত্রিক চীনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, পার্টি সদস্য ও দেশের সমস্ত মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে আমি এবং চীনের প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যরা মহান সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি, সরকার, এদেশের মানুষ এবং এখানে উপস্থিত সমস্ত কমরেড ও বন্ধুদের উষ্ণ ভ্রাতৃত্বমূলক অভিনন্দন জানাবার সুযোগ পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি (উৎসাহব্যঞ্জক করতালি)৷ আমাদের বিপ্লবী শিক্ষক লেনিন বার বার উল্লেখ করেছেন, ৪০ বছর আগে সোভিয়েতের জনগণ যে মহান বিপ্লব সংঘটিত করেছিলেন, তা বিশ্ব ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা করেছিল৷

ইতিহাসে বহু ধরনের বিপ্লব ঘটেছে, কিন্তু এর কোনওটিই নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সঙ্গে তুলনীয় নয়৷

বিশ্বের সমস্ত প্রগতিশীল ও খেটে–খাওয়ামানুষ হাজার হাজার বছর ধরে এমন এক সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছেন যেখানে মানুষের উপর মানুষের শোষণ থাকবে না৷ নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে প্রথম বার পৃথিবীর ছয়ভাগের একভাগ ভূখণ্ডে সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে৷ এই বিপ্লব প্রমাণ করেছে, জমিদার ও পুঁজিপতিদের বাদ দিয়েই সাধারণ মানুষ পরিকল্পিত উপায়ে স্বাধীন ও সুখী এক নতুন জীবন গড়ে তুলতে পারেন৷ এই বিপ্লব এ–ও প্রমাণ করেছে যে, সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়ন না থাকলেই বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রগুলি মিলেমিশে বন্ধুর মতো এক সাথে বসবাস করতে পারে৷ গত ৪০ বছর সোভিয়েতের জনগণ দুর্গম পথ অতিক্রম করেছেন৷ বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশটিকে ধ্বংস করার জন্য সাম্রাজ্যবাদীরা সমস্ত রকমের অপচেষ্টা চালিয়েছে৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের শত্রুদের একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলনায় বেশি শক্তিশালী বলে মনে হয়েছিল এবং তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর দু–দু’বার সশস্ত্র আক্রমণও চালায়৷ কিন্তু সাহসী সোভিয়েত জনগণ তাঁদের মহান কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে হামলাকারীদের সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন৷ (করতালি)৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন অপরাজেয় থেকেছে কারণ, এই দেশ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে হঠিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং শোষক শ্রেণির একনায়কত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রতিষ্ঠা করেছে সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্বকে৷ এই দেশে সামাজিক উৎপাদিকা শক্তির উন্নয়ন হয়েছে এমন তীব্র গতিতে, যার ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি পুঁজিবাদী দেশগুলি৷ এই দেশ প্রকৃত অর্থে সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদের চর্চা করে, জাতীয় নিপীড়নের প্রকৃত বিরুদ্ধতা করে এবং নিপীড়িত দেশগুলিকে মুক্ত হতে সাহায্য করে৷ এমন একটি দেশকে সমস্ত দেশবাসী ও বিশ্বের সকল দেশের জনসাধারণ উৎসাহভরে সমর্থন করে৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি এই দু’ধরনের সমর্থন এমন উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, রাষ্ট্রগুলির ইতিহাসে যার তুলনা নেই৷ গত ৪০ বছরে সোভিয়েত ইউনিয়নের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে গেছে৷ বিপ্লবের আগে অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে রাশিয়া ছিল একটি পিছিয়ে পড়া দেশ৷ বর্তমানে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের প্রথম সারির শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম৷ সোভিয়েতের জনগণের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত উন্নত হয়ে চলেছে৷ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলির উন্নয়নের মাপকাঠিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পুঁজিবাদী দেশগুলিকে অনেক পিছনে ফেলেছে৷ বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র স্থাপন করেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ এই দেশই দুনিয়ার মধ্যে প্রথম তৈরি করেছে যাত্রীবাহী জেট প্লেন, আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক রকেট এবং উৎক্ষেপণ করেছে মনুষ্যনির্মিত প্রথম ও দ্বিতীয় পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী কৃত্রিম উপগ্রহ৷ দু’বার মানুষের তৈরি করা পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাফল্যকে গোটা বিশ্বই এই বলে স্বীকৃতি দিয়েছে যে, এর দ্বারা প্রকৃতির উপর মানুষের বিজয়ের এক নতুন যুগের সূচনা হল৷ শুধু সোভিয়েত জনগণই নয়, গোটা বিশ্বের সর্বহারা শ্রেণি ও সমগ্র মানবজাতি এর জন্য গর্ব অনুভব করে (করতালি)৷ কেবল অল্প কিছু প্রতিক্রিয়াশীলই এ সবে অখুশি৷ বাস্তব কর্তব্য সমাধা করার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি যে সৃজনশীলতার সঙ্গে মার্কসবাদ–লেনিনব প্রয়োগ করেছে, তা সোভিয়েত জনগণের নির্মাণ কার্যে অটুট সাফল্য নিশ্চিত করেছে৷ বিশ্বজুড়ে জনগণ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ আরও সুস্পষ্টরূপে দেখতে শুরু করেছে সোভিয়েত জনগণের সাফল্যকে ঘিরে৷ বস্তুতপক্ষে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পথ, নভেম্বর বিপ্লবের পথ হল সমগ্র মানবজাতির অগ্রগতির আলোকোজ্জ্বল সাধারণ পথ (করতালি)৷ বিশ্বের জনগণ নভেম্বর বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উষ্ণ আন্তরিকতায় উদযাপন করছে, কারণ গত ৪০ বছরের ইতিহাস তাদের মধ্যে এই প্রত্যয় এনে দিয়েছে যে, সর্বহারা শ্রেণি বুর্জোয়া শ্রেণিকে নিশ্চিতরূপে পরাজিত করতে সক্ষম, সমাজতন্ত্র নিশ্চিতভাবে পুঁজিবাদকে খতম করতে সক্ষম এবং নিপীড়িত জাতি সাম্রাজ্যবাদীদের পরাস্ত করতে সক্ষম৷ অবশ্য নানা প্রতিবন্ধকতা, নানা বাঁক ও মোড়ের সামনে পড়তে হবে জনগণকে৷ ৩০ বছর আগে লেনিন যথার্থই বলেছিলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বরফ গলে গেছে৷ পথ আজ উন্মুক্ত এবং আলোকোজ্জ্বল’৷ (তীব্র হর্ষধ্বনি) চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব নভেম্বর বিপ্লবের আলোকে উদ্ভাসিত সর্বহারা শ্রেণির বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ৷ চীনের বিপ্লবের কতকগুলি নিজস্ব জাতীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং সেগুলি বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে৷ কিন্তু আমাদের বিপ্লব এবং সমাজতান্ত্রিক নির্মাণকার্যে আমরা সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি এবং জনগণের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতাকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগিয়েছি৷ চীনের জনগণের সৌভাগ্য যে, তাদের সামনে রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের নভেম্বর বিপ্লবের অভিজ্ঞতা ও সমাজতান্ত্রিক নির্মাণকার্যের অভিজ্ঞতা, যার ফলে ভুল হয়েছে কম, বহু ভ্রান্তি এড়ানো গেছে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোনো গেছে সহজে, সাবলীলভাবে, যদিও এখনও বহু বাধা মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ এটা স্পষ্ট যে, নভেম্বর বিপ্লবের পর কোনও দেশের সর্বহারা বিপ্লবী যদি রাশিয়ার বিপ্লব সম্পর্কে উপেক্ষার মনোভাব নেন অথবা এই বিপ্লবের অভিজ্ঞতা, সর্বহারা একনায়কত্ব এবং সমাজতান্ত্রিক নির্মাণ সম্পর্কে খুঁটিয়ে চর্চা না করেন, এই বিপ্লবের অভিজ্ঞতা নিজ নিজ দেশের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণ করে সৃজনশীল ভাবে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি লেনিনবাদ যা মার্কসবাদের সমৃদ্ধির নয়া স্তরকে বোঝায়, তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হবেন এবং বিপ্লব ও নিজ দেশের নির্মাণ কার্যের সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না৷ হয় তিনি সূত্রবাদিতার ভ্রান্তিতে পড়বেন অথবা সংশোধনবাদে৷ উভয় বিচ্যুতির বিরুদ্ধেই আমাদের একসঙ্গে লড়তে হবে৷ কিন্তু এখন সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামটাই বিশেষভাবে জরুরি৷ নভেম্বর বিপ্লবের পর এটা আজ স্পষ্ট যে, কোনও দেশের সরকার যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে অস্বীকার করেন, তাহলে সেই সরকার নিজ নিজ দেশের জনস্বার্থের মারাত্মক ক্ষতি করবেন৷ (দীর্ঘক্ষণ ধরে করতালি)৷ বিশ্বে এখন ইউরোপ ও এশিয়ার একের পর এক দেশ, যাদের জনসংখ্যা ৯০ কোটিরও বেশি, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ সফলতার সাথে গ্রহণ করেছে এবং শক্তিশালী বিশ্বসমাজতান্ত্রিক শিবির গঠন করেছে৷ কিছুদিন হল পুঁজিবাদ তার শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়েছে, সমাজতন্ত্র অজেয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে৷ পুঁজিবাদ উচ্ছেদ করে শেষ পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাই কায়েম হবে৷ এটা বাস্তব নিয়ম যা মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না৷ প্রতিক্রিয়াশীলরা ইতিহাসের অগ্রগতির চাকা রোধ করার যত চেষ্টাই করুক না কেন, দ্রুত বা বিলম্বে হলেও বিপ্লব হবে এবং নিশ্চিত রূপে জয়ী হবে৷ (দীর্ঘক্ষণ হাততালি)৷ ‘পাথর সরাতে গিয়ে নিজের পা ভেঙে ফেলা’ একটি চীনা প্রবাদ৷ মূর্খের কাজ বোঝাতে কথাটি ব্যবহূত হয়৷ প্রত্যেক দেশের প্রতিক্রিয়াশীলরা এমনই মূর্খ৷ বিপ্লবীদের নির্যাতন করে খতম করে দেওয়ার তাদের মনোবাসনা ব্যর্থ হবে বিপ্লবের বৃহত্তর এবং কঠোরতর কর্মকাণ্ডে জনতার জাগরণের ফলে৷ রুশ জারের নির্যাতন বা চিয়াং কাই–শেকের নির্যাতন কি রুশ বিপ্লব বা চীন বিপ্লবকে উদ্দীপিত করেনি? একইভাবে সাম্রাজ্যবাদীরা নিজ দেশে, উপনিবেশ ও আধা উপনিবেশগুলিতে জনগণের উপর নির্যাতন করে যুদ্ধই ডেকে এনেছে৷ যুদ্ধ থেকে কী তারা আশা করতে পারে? বিগত অর্ধশতকে আমাদের দু’টি বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মহান নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হল রাশিয়ায়৷ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ইউরোপ এবং প্রাচ্যে আরও অনেকগুলি বিপ্লব ঘটল৷ সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজরা যদি একটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে বদ্ধপরিকর হয়, তাতে একমাত্র একটি ফলই ফলবে– বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান হবে৷ (প্রবল হর্ষধ্বনি)৷ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সরকার ও জনগণ এক নতুন শান্তিপূর্ণ জীবনের স্রষ্টা৷ আমরা কোনও অবস্থাতেই যুদ্ধ চাই না এবং একটা নতুন বিশ্বযুদ্ধের আমরা ঘোরতর বিরোধী৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন এবং অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ নিরবচ্ছিন্নভাবে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ নিরস্ত্রীকরণ, গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের উৎপাদন, ব্যবহার ও পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন যে বারবার প্রস্তাব দিচ্ছে তা সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সাধারণ অবস্থানকেই তুলে ধরছে৷ এই প্রস্তাব একই সাথে বিশ্বের সমস্ত জনগণের স্বার্থের অনুকূল৷ সমাজতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদী দেশগুলির শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতার আমরা দৃঢ় সমর্থক৷ প্রত্যেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলির সমাধান সেই দেশের জনগণের ইচ্ছা অনুসারে এবং তাদের দ্বারাই হওয়া উচিত, এই আমাদের দৃঢ় অভিমত৷ আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি সমস্ত দেশেরই একে অপরের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, অনাক্রমণ, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা, পারস্পরিক কল্যাণ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান– সর্বজনবিদিত এই পাঁচটি নীতিমেনে চলা উচিত৷ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা গোঁয়ারের মতো সমাজতান্ত্রিক দেশ সহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করছে৷ যেমন, তাইওয়ানের মুক্তির নামে চীনের উপর তারা হস্তক্ষেপ করছে৷ হাঙ্গেরিতে প্রতিবিপ্লবী দাঙ্গায় তারা মদত দিয়েছে৷ বিশেষত আমেরিকা এবং সমাজতান্ত্রিক শিবিরের মধ্যবর্তী এলাকার দেশগুলিতে হস্তক্ষেপের জন্য ওরা একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে৷ তুরস্ক্ অথবা ইজরায়েলের মাধ্যমে স্বাধীন সিরিয়াকে দখল করার জন্য মার্কিনীরা এখনও ছক কষছে৷ মিশরের উপনিবেশ বিরোধী সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য ওরা চক্রান্ত করে চলেছে৷ উন্মত্ত আগ্রাসী মার্কিন নীতি মধ্যপ্রাচ্যে শুধু সংকটের জন্ম দিচ্ছে না, নতুন একটা বিশ্বযুদ্ধের বিপদ ডেকে আনছে৷ শান্তি ও স্বাধীনতাকে ভালবাসেন– সারা বিশ্বের এমন সমস্ত মানুষ সিরিয়ার পাশে দাঁড়ান এবং মার্কিন ও তুর্কি আগ্রাসনকারীদের বিরোধিতা করুন৷ যেমন করে তাঁরা ব্রিটিশ, ফরাসি এবং ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতায় গত অক্টোবরে মিশরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন৷ সোভিয়েত সরকার অবিলম্বে আগ্রাসী পরিকল্পনা প্রত্যাহার করার জন্য আমেরিকা ও তুরস্কে হুঁশিয়ারি দিয়েছে৷ চীন সরকার এবং জনগণ সিরিয়ার আত্মরক্ষার লড়াইকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানাচ্ছে এবং সোভিয়েতের সঠিক অবস্থানকেও সমর্থন করছে৷ (দীর্ঘক্ষণ করতালি)৷ সাম্রাজ্যবাদী নেকড়েদের মনে রাখা দরকার, তারা যেভাবে আগে মানবজাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারত এবং তাদের মর্জিমাফিক এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলিকে কাটাছেঁড়া করতে পারত, তাদের সে দিন চিরতরে বিদায় নিয়েছে৷ চীনের জনগণের মুক্তিসংগ্রামকে হেয় করার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা আগেও চেষ্টা করেছে এবং এখনও করে চলেছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত চীনের ষাট কোটি জনগণের সমাজতন্ত্রের পথ অবলম্বন করার সাহসী লড়াইকে তারা রুখতে পারেনি৷ (করতালি)৷ মাত্র আট বছরের স্বল্প সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গঠনমূলক কাজে চীন যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা বিগত একশো বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি৷ চীনে হাতে গোনা কিছু বুর্জোয়া দক্ষিণপন্থী সমাজতন্ত্রের পথে চলার বিরোধিতা করছে৷ তারা জাতীয় জীবনে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বকারী ভূমিকারও বিরোধী৷ চীন, সোভিয়েত এবং অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের নিবিড় যোগাযোগেরও তারা বিরোধী৷ সমগ্র চীন জুড়ে জনগণের পাল্টা আঘাতে তাদের নিষ্ফল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে৷ (হর্ষধ্বনি)৷ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনের জনগণ সমাজতন্ত্রকে চীনের মাটিতে আরও উন্নত ও দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ত্রুটিমুক্ত হওয়ার এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম চালাচ্ছে৷ চীনের জনগণের মধ্যে যে দ্বন্দ্বগুলি বাস্তবে বিদ্যমান তার সঠিক সমাধান এবং যেগুলির সমাধান এখনই করতে হবে, সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে এই সংগ্রাম৷ দেশব্যাপী বিতর্কের মাধ্যমে তা চলছে৷ এই বিতর্ক একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত, আবার মুক্ত–ও৷ সমাজতান্ত্রিক পথ না পুঁজিবাদী পথ, রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তার প্রধান নীতিসমূহ, কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারি পদাধিকারীদের কাজের ধরন, জনগণের কল্যাণ– এই সমস্ত বিষয়ে শহরে ও গ্রামে তথ্য–যুক্তি দিয়ে বিতর্ক চালানো হচ্ছে৷ আত্মশিক্ষা এবং নিজেকে নতুন করে গড়ার জন্য জনগণের মধ্যে এই সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম চলছে৷ ইতিমধ্যেই এই কাজে বিরাট সাফল্য লক্ষ করা যাচ্ছে৷ যেখানেই এই সংগ্রাম চলছে সেখানেই জনগণের সমাজতান্ত্রিক চেতনা দ্রুত উন্নত হচ্ছে, মিথ্যা ধারণা কাটছে, কাজের খামতি দূর হচ্ছে, জনগণের সমস্ত স্তরের মধ্যে ঐক্য দৃঢ়তর হচ্ছে, শ্রমের শৃঙ্খলা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ছে৷ (করতালি)৷ এখন আমরা এই আত্মশিক্ষার সংগ্রামকে আমাদের ৬০ কোটি মানুষের মধ্যে ধাপে ধাপে এবং প্রতিটি স্তর থেকে স্তরে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ আশা করা যায় আর কয়েক মাসের মধ্যেই দেশব্যাপী ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হবে৷ ভবিষ্যতে আমরা চাই প্রতিবছর অথবা এক বছর অন্তর ত্রুটি মুক্ত করার এই সংগ্রাম চালাতে৷ উত্তরণের পথে চলার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে বিভিন্ন সামাজিক দ্বন্দ্বগুলির সমাধানের এটাই অন্যতম প্রধান পথ৷ যদিও এর জন্য প্রয়োজনীয় সময় অনেকটাই কমানো যেতে পারে৷ এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে শুরু করার প্রধান ভিত্তিটি হল জনগণের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত আমাদের পক্ষে আছে এবং তারা আমাদের যুক্তি শুনবে–এই নিশ্চিত প্রত্যয়৷ বহু বছরের বিপ্লবী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জনগণের সাথে নিবিড় সংযোগের লেনিনীয় নীতির ভিত্তিতে জনগণের উদ্যোগকে মূল্য দিয়ে, সমালোচনা, আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত হওয়ার সংগ্রামের পথটিকে তৈরি করতে পেরেছি আমরা৷ এই পদ্ধতির সঠিকতা আবার প্রমাণিত হল বর্তমান সমাজতান্ত্রিক আত্মশিক্ষার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে৷ সমাজতন্ত্রের গঠনে নানা ক্ষেত্রে চীন ভ্রাতৃত্বমূলক সাহায্য পেয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে৷ নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী পালন করার সময় চীনকে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সাহায্য দেওয়ার জন্য আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি, সরকার এবং জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানোর অনুমতি প্রার্থনা করছি৷ (দীর্ঘক্ষণ করতালি)৷ গঠিত হওয়ার ঠিক পরেই গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বন্ধুত্ব, জোটবদ্ধতা ও পারস্পরিক সহায়তার চুক্তি সম্পাদন করেছে৷ দু’টি মহান সমাজতান্ত্রিক দেশের এক মহান চুক্তি৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমগ্র সমাজতান্ত্রিক শিবিরের সঙ্গে একই ভবিষ্যৎ এবং জীবনস্রোতের আমরা শরিক৷ (হর্ষধ্বনি)৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমস্ত সমাজতান্ত্রিক দেশের ঐক্য ও সংহতিকে সুদৃঢ় করাকে আমরা পবিত্র আন্তর্জাতিক দায়িত্ব হিসাবে সম্মান করি৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বন্ধুত্ব ও ঐক্য ভাঙার মতলবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমাদের মধ্যে বিবাদের বীজ বুনতে সম্ভাব্য সমস্ত রকম উপায় গ্রহণ করেছে৷ কিন্তু বাস্তব অবস্থা নিশ্চিত ভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের আশাহত করবে৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি এখন আগের চেয়েও বেশি ঘনিষ্ঠভাবে ঐক্যবদ্ধ৷ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যেকার সম্পর্কের ভিত্তি হল সমস্বার্থবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থা, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণা৷ ইতিহাসের সূচনা পর্ব থেকে কখনওই দেশে দেশে এমন সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব হয়নি৷ এর কারণ, সমাজতান্ত্রিক দেশ হল এমন এক নতুন ধরনের দেশ যেখানে শোষক শ্রেণিগুলিকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং শ্রমিক শ্রেণিকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে৷ এই দেশগুলির মধ্যেকার সম্পর্কে ঐক্য বজায় রাখতে স্বদেশপ্রেমের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের নীতি অনুসরণ করা হয়৷ আমরা সাধারণ স্বার্থ ও আদর্শের বন্ধনে ঘনিষ্ঠভাবে বাঁধা৷

প্রিয় কমরেডগণ,

নভেম্বর বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রিম সোভিয়েত আহূত এই বিশাল সমাবেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক শ্রেণি ও সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি থেকেই বিশ্ব জনশক্তির মহান ঐক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বিকাশমানতার প্রতীক৷ আসুন, আরও অনেক নতুন ও মহান বিজয় অর্জন করার লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি, বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণি এবং নিপীড়িত জাতিগুলির ঐক্য শক্তিশালী করতে আমাদের প্রচেষ্টা জারি রাখি৷ মহান নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক! সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সংহতি ও বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক! মার্কসবাদী–লেনিনবাদী আন্তর্জাতিকতাবাদের মহান পতাকা দীর্ঘজীবী হোক! দুনিয়ার শ্রমিক ও শান্তিপ্রিয় জনগণ, এক হোন!