ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ — দায়ী পুঁজিবাদী বিশ্বের মোড়লরা

8FD6B5F0-97C6-4937-870F-194BA57FF182_cx0_cy8_cw0_w1023_r1_s

না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায়, ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবার তীব্র কষ্টের ছবি আবারও দেখতে হবে দুনিয়ার মানুষকে। মানুষ যে এভাবে আজও-এখনও মরছে না, তা নয়। কিন্তু আমরা যে ঘটনাটির কথা বলছি, তাতে মৃত্যু আসন্ন মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় ৭০ লক্ষ! ভাবা যায়? সভ্যতার এমন দুঃসহ কলঙ্কের জন্ম হতে যাচ্ছে আরব অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইয়েমেনে। একসময়ের সমৃদ্ধশালী দেশ ইয়েমেন আজ দুর্ভিক্ষে পতিত, যুদ্ধে বিপর্যস্ত। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে দেশটির মানুষ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, জনগণ পরিণত হয়েছে দেশি-বিদেশি শাসকের হিংস্র খেলার পুতুলে। চারপাশ ঘিরে আছে আরব বিশ্বের মোড়ল সৌদি আরব। এই সৌদি আরবই ইয়েমেনের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি করার প্রধান কুশীলব।

গত ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ইয়েমেনে চলছে সৌদি আগ্রাসন। ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়াছে। গত আড়াই বছরে সৌদি আরবের উপর্যুপরি বোমা বর্ষণে ইয়েমেনে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে, জ্বালানি তেলের মূল্য হয়েছে আকাশচুম্বি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সৌদিদের বোমা হামলার লক্ষ্য এখন হাসপাতাল। ফলে চিকিৎসা নিতেও মানুষ মরছে। কলেরা ব্যাপক সংক্রমণে মৃত্যুর হার বাড়ছে হু হু করে।

এই আক্রমণ আরও তীব্র হয়েছে গত ৪ নভেম্বরের ঘটনায়। সৌদি আরব অভিযোগ করেছে তাদের রাজধানী রিয়াদের একটি বিমানবন্দরের কাছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি বোমা বর্ষণ করেছে। এর পিছনে ইরানের হাত রয়েছে — এই অভিযোগ তুলে সৌদি আরব এখন কেবল বোমা বর্ষণ নয়, ইয়েমেনের স্থল-নৌ-বিমান বন্দরের সীমানাতে অবরোধ আরোপ করেছে। ঢুকতে দিচ্ছে না বাইরে থেকে আসা কোনো সাহায্য। এমনকি জাতিসংঘের ‘মানবিক সাহায্য সংস্থার’ খাদ্য সহযোগিতাও তারা আটকে দিয়েছে।

এর ফলে অবস্থা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার কিছুটা বর্ণনা পাওয়া যায় জাতিসংঘের ‘মানবিক সাহায্য সংস্থা’র প্রধান জেনারেল লোককের মন্তব্য থেকে। তিনি বলেছেন, ‘এই দুর্ভিক্ষ দক্ষিণ সুদানের মতো হবে না যেটি আমরা এ বছরের শুরুতে দেখেছি। এমনকি ২০১১ সালে সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের মতোও হবে না, যেখানে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষ হবে বহু দশকের মধ্যে ভয়াবহতম।’ জাতিসংঘ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে যে, দ্রুত খাদ্য, পানীয় ও ওষুধ পৌঁছাতে না পারলে দেশটিতে ৭০ লাখের বেশি মানুষ না খেতে পেরে মরবে।

ইয়েমেনের এই পরিস্থিতি কয়েকটি বিষয় গভীরভাবে দেখার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যারা বলেন সৌদি আরবে ইসলামী শাসন আছে, কিংবা ইসলামী শাসনেই মানুষের মুক্তি মেলে — তারা সৌদি আরবের আজকের ভূমিকাকে কীভাবে দেখবেন? যে কাবা শরীফ সৌদি আরবে, যেখানে সারা বিশ্বের মুসলমান জনগোষ্ঠী পারলৌকিক শান্তির জন্য যায়, আজ কোন শান্তি সৌদি আরব পৃথিবীকে উপহার দিচ্ছে? ইয়েমেনের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী তো মুসলমান, তারপরেও কেন সৌদি আরব এমন নির্মম আচরণ করছে? ব্যাপারগুলো পরিষ্কার হয়ে যায় একটি ঘটনার দিকে আলোকপাত করলে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্প যখন ক্ষমতায় এলেন, ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ছয়টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু সেই ট্র্যাম্প প্রথম যে মুসলিম দেশটি সফর করলেন, সেটি হলো সৌদি আরব। কেন? কারণ আমেরিকার অস্ত্রের বাজারে আজ সৌদি আরব হলো সবচেয়ে বড় ক্রেতা। শুধু ইয়েমেনের যুদ্ধের সময়ই তারা আমেরিকার কাছ থেকে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনেছে। এই বিপুল-বিশাল অস্ত্র বাণিজ্যের জন্য ক্রেতা-বিক্রেতা দুপক্ষের জন্যই এমন দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ প্রয়োজন। এগুলো থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়, ইয়েমেনের উপর সৌদি আরবের নিপীড়ন, যুদ্ধবাজ মার্কিনী শাসকদের সাথে তাদের সম্পর্ক আসলে কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য থেকে নয়, মুনাফা লোটার জন্য। ধর্ম তাদের লেবাস, আসল উদ্দেশ্য অস্ত্রের আধিপত্য চালিয়ে দেশে দেশে লুণ্ঠন-লুটপাট চালানো।

আরেকটি বিষয়ও এখানে উল্লেখ করতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ইরান। ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতিতেও আমরা দেখব সেখানে হুতি গোষ্ঠীর সাথে ইরানের সম্পর্ক আছে। আবার এই হুতিদের দখলে এখন ইয়েমেনের একটি বড় অংশ। তাই সৌদি আরব ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে- ইয়েমেন কার দখলে থাকবে? ইরান নাকি সৌদি আরবের? কেবলমাত্র এই হিসাব-নিকাশের জন্যই আজ ইসলাম ধর্মের ধ্বজাধারী সৌদি আরব বোমা বর্ষণ আর অবরোধ চাপিয়ে লক্ষ লক্ষ ইয়েমেনি মারার ব্যবস্থা করছে। জবর দখলের কাছে হেরে যাচ্ছে ধর্মীয় নৈতিকতা, মানবিকতা আর ভ্রাতৃত্ববোধ।

পুঁজিবাদী বিশ্বের এমন বিরোধের কারণেই সারা পৃথিবী বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য আজ হয়ে উঠেছে হিংসার অগ্নিকুন্ড। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাহরাইন, ইয়েমেন, লেবানন, ইরাক, সিরিয়ায়। এসব যুদ্ধে প্রাণ যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ নিরীহ-নিরাপরাধ নাগরিকের। তৈরি হচ্ছে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির। রাজায় রাজায় যুদ্ধে প্রাণ বের হচ্ছে উলুখাগড়ার।

পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব অস্ত্র ব্যবসা ছাড়া টিকতে পারে না। অস্ত্র বিক্রির জন্য তারা শত্রু তৈরি করে, আঞ্চলিক-জাতিগত বিরোধ উস্কায়। এতে মানুষের কী হবে তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না। এ এমন এক অসহনীয় সময় যখন সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো কোনো রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান নেই। বিশ্বব্যাপী তাই সাধারণ মানুষের করুণ পরিণতি। ইয়েমেনে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মরবে, তা সকলকে দেখতে হবে। এ অবস্থায় ভরসা কেবল দেশে দেশে সচেতন মানুষের যুদ্ধবিরোধী-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থান। ইয়েমেনের আজকের যে পরিস্থিতি, তাতে যদি প্রত্যেকটি বিবেকবান নাগরিক এবং তাদের সক্রিয় প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে যদি বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে, তাহলেই কেবল এমন অসহনীয় পরিণতি থেকে মুক্তি মিলবে। আমরাও সেই ভূমিকা আমাদের দেশে পালন করতে চাই।

সাম্যবাদ নভেম্বর ২০১৭


মহারাষ্ট্রে CRPF কনভয়ে মাওবাদীদের হামলায় নিহত ১ জওয়ান, গুরুতর আহত ২

crpf-attack.jpg.image_.784.410-678x381

মহারাষ্ট্রের গডচিরোলিতে CRPF কনভয়ে মাওবাদী হামলা। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, মাওবাদীদের গুলিতে এক জওয়ান নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে দুজন। সূত্রের খবর, নিহত জওয়ানের নাম মঞ্জুনাথ। News 18 এর খবর অনুযায়ী, নিহত জওয়ান কর্ণাটকের বাসিন্দা।

গত ২ নভেম্বরই গোয়েন্দা সংস্থার তরফে মাওবাদী হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে সিআরপিএফকে সতর্ক করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, মাওবাদীরা রেড করিডোর এলাকায় নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টায় রয়েছে। তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে হামলা করতে পারে বলে আগেই গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু তবু হামলা না রুখতে পারায় প্রশ্ন উঠছে বাহিনী ও গোয়েন্দাদের মধ্যে সমন্বয়ের ত্রুটি নিয়ে। সিআরপিএফের যে ক্যাম্পে হামলা হয়েছে, সেটি গনিডা ও গডচিরোলিতা সীমান্তের মাঝে রয়েছে।

সূত্রঃ  http://zeenews.india.com/bengali/nation/maoists-ambush-crpf-team-in-gadchiroli-1-jawan-killed-2-others-injured_179667.html


বস্তারের শৈশব বিপন্নঃ সোনি সোরি

soni-sori-lead_730x419

সোনি সোরি

বস্তারের সাধারণ মানুষের অধিকার আন্দোলনের অন্যতম মুখ সোনি সোরি। সেখানকার আদিবাসীদের জল জঙ্গল ও জমির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন করে পুলিশ ও আধা সেনার নিপীড়নের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। ২০১১ সালে তাঁকে নিয়ে শোরগোল পড়েছিল গোটা দেশজুড়ে, অভিযোগ উঠেছিল ছত্তিশগড়ের পুলিশ তাঁকে ধর্ষণ করে তাঁর যৌনাঙ্গে পাথরের কুঁচি ঢুকিয়ে দেয়। এরপর তাঁর উপর এ্যাসিড হামলাও চালানো হয়, কিন্তু কোনভাবেই ছত্তিশগড়ের সাধারণ নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন থেকে তাঁকে সরানো যায় নি, সেই তিনি সোনি সোরি এবার কলকাতায় এসে বলে গেলেন, বস্তারে প্রশাসনের অত্যাচারে সেখানকার শৈশব কিভাবে বিপন্ন হতে বসেছে সে কথা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আপেনাআপ ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে শনিবার এক সভায় উপস্থিত হয়ে সোনি সোরি ছত্তিশগড়ে বর্তমানে যে গণতন্ত্র হরণ করে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলছে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। সোনি জানান বস্তারে এখন সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা সেখানকার শৈশবের, একদিকে পুলিশের অত্যাচার, আধা সেনার নিপীড়ন অন্যদিকে মাওবাদীদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেহাদ, এই দুয়ের টানাপোড়েন শিশুদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে। সোনি সোরির মতে নিদারুন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মোকাবিলা করতেই সেখানকার শিশুরা মাওবাদী দলে নাম লিখিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। সোনির মতে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতিক্রিয়াতেই গোটা ছত্তিশগড় জুড়ে মাওবাদী আন্দোলন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। জল জমি জঙ্গল বড় বড় কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দিতে সেখানকার প্রশাসন যে আচরণ করছে তা যে কোন সভ্য মানুষকে কষ্ট দেবে বলে তাঁর মত। সোনি আবেদন করেন ছত্তিশগড়, বিশেষ করে বস্তারের শৈশবকে বাঁচাতে সকল পক্ষ যেন আলোচনায় বসে সেই দাবিতে সোচ্চার হোন দেশের গণতন্ত্র প্রিয় প্রতিটি মানুষ।

সূত্রঃ satdin.in