ভারতের নকশালপন্থী কবি ভারাভারা রাও এর কবিতা

কবি ও লেখক ভারাভারা রাও


কসাই কবিতাটি ভারাভারা রাও এর তেলেগু কবিতার কে বালাগোপালকৃত (k Balagopal) ইংরেজি অনুবাদ The Butcher থেকে অনুদিত। কবিতাটি লেখা হয় ৯ জুন ১৯৮৫ সালে

আমি মুক্তির সাগরে মুক্তি খুঁজে বেড়ানো একফোঁটা জল...”

কসাই
– – – ভারাভারা রাও

আমি একজন মাংসের ব্যবসায়ী
তুমি যদি আমাকে কসাই ডাকতে চাও
তবে তা তোমার ইচ্ছে
আমি রোজ পশু হত্যা করি
তাদের মাংস কেটে বিক্রি করি
রক্ত আমার কাছে এক পরিচিত দৃশ্য
কিন্তু
সেই দিন আমি দেখেছিলাম
কসাই শব্দের আক্ষরিক রূপ

আমার এই হাত দিয়ে রোজ পশু হত্যা করি
রক্ত আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেনি কোনদিন,
কিন্তু সেই দিন রক্ত রাজপথে গড়িয়ে পড়েনি
পড়েছিল আমার হৃৎপিণ্ডে
তুমি কি ধুয়ে দেবে সেই রক্ত ?

তোমাদের মাঝে কেউ কি আছো যে বাড়িয়ে দেবে
একটি মানবিক হাত
আর আমার হৃদয়কে করবে অবমুক্ত
সেই বিভৎস দৃশের অসহনীয় বোঝা থেকে ?

ছয়টি লাঠি তার অস্থিগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করেছিল
যেন-কোন উন্মাত্ত ক্রোধে-
রাইফেলের বাট তার দেহকে দুমড়ে মুচড়ে পরিণত করেছিল
একতাল মাংসপিণ্ডে

সেই মাংসপিণ্ডের মুখ আটকে দিয়েছিল পুলিশওয়ালাদের চোয়াল
তারা তখন বলেছিল
“নষ্ট যুবকটি একটি ছুরি নিয়ে হামলা চালায়
এবং সেখানে একটি ‘এনকাউন্টার’ ঘটে”

পশু হত্যা করি আমিও
কিন্তু তাদের আমি কখনো ঘৃণা করিনি ,
আমি মাংস বিক্রি করি
কিন্তু কখনো কারো কাছে
আমি নিজেকে বিক্রি করিনি

চুঁইয়ে পড়ছে রক্তধারা
তার দেহের সহস্র ক্ষতস্থান থেকে
জলে ভরা সহস্র দৃষ্টি
কিন্তু ছেলেটির শুষ্ক চোখ
আমার ছুরির ফলার নীচে ক্রন্দনরত ছাগলের মত
সে ’ব্যা ব্যা’ চিৎকার করে ওঠে না
মনে হয় তার দৃষ্টি যেন চেয়ে আছে ভবিষ্যতের পানে

গতকালের দৃষ্টি
না, এটি ইতোমধ্যেই পরশু দিনের
এটি ১৫ই মে’র বন্ধের দৃশ্য
আমার সে স্মৃতি তাড়ানো যাবে না কোনদিন
যতদিন নিঃশ্বাস বইবে এ দেহে

আজ আমি তোমাকে অনুভব করাতে পারছি
কারণ আমি নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখতে পারছি না
লুকিয়ে ফেলতে পারি কাল

আমার জীবিকা ওরা ধ্বংস করুক
কিন্তু সেই শিশুটি
আমাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে ।

শোনো আমার ভাই, বোন, তোমরা শোনো
একটি সাপও আমরা ওভাবে মারি না
যে আমি, রোজ পাঁঠা হত্যা করি, সেদিন বুঝেছিলাম
নিষ্ঠুরতা কী, যা সম্মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্র চালায়
একটি জীবনকে কেড়ে নেবার জন্য

আমি মাংসের ব্যবসায়ী
হ্যাঁ, আমি একজন কসাই
ভেড়ার মাংস আর পাঁঠার মাংস
আমি বিক্রি করি জীবিকার জন্য

সেই মন্ত্রী নিজে
পুলিশওয়ালাদের ভূষিত করে
পুরস্কার আর পদোন্নতি দিয়ে
পদক আর টাকার ওজন দিয়ে
মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার পুরস্কার হিসেবে
মন্ত্রী অর্থ সরকার
পুলিশ আমাদের রক্ষক
যাদের(যে মন্ত্রীদের) নিয়ে এ সরকার আর
যার রক্ষক হল তারা(পুলিশ)

অসীমে ভেসে চলা
সেই ছেলেটির প্রাণ
বলে গিয়েছিল আমাকে
জেনেছিলাম
প্রকৃত কসাই এর পরিচয়
রাষ্ট্র
***

৯ই জুন ১৯৮৫



Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.